
‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের রোমফেরত একটি উড়োজাহাজে বোমা বা বিস্ফোরক দ্রব্য আছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরণের পর এগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হবে।’ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কন্ট্রোল রুমে পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে এই মেসেজ দেওয়া হয়। তবে অবতরণের পর অভিযান চালিয়ে শঙ্কাজনক কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিস্ফোরক থাকার তথ্য প্রথম আসে এপিবিএনের কাছে। বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আমরা এ খবর পাই। সেখান থেকে অপারেশন কন্ট্রোল রুমে জানানো হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করি। আমি এয়ার চিফকে বিষয়টি জানানোর পর পরই সেখান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বিমানটিকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে আমরা যাত্রীদের কোনো প্রকার লাগেজ বা হ্যান্ডব্যাগ ছাড়াই বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে আসি। পরে তল্লাশি চালানোসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে যখন আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে কিছুই নেই, তখন যাত্রীদের তাদের ব্যাগ ও লাগেজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক যাত্রী সহযোগিতা করেছেন। তাদের কোনো কিছু খোয়া যায়নি। খুব সুন্দরভাবে এই কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করেছি।’
তিনি বলেন, এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সসহ বিমানবন্দরে কর্মরত অন্য সব সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটিকে আমরা হুমকি বলছি না। আমাদের কাছে তথ্য এসেছিল। এপিবিএনের কন্ট্রোল রুমে পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে এই মেসেজ দেওয়া হয়। সম্ভাব্য লাগেজের ছবিও পাঠায় ওই নম্বর থেকে। আমাদের সঙ্গে খুদে বার্তায় কথা হয়, তবে কল দিলে অপর প্রান্ত থেকে কল রিসিভ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য দিয়ে আমাদের একদিকে ব্যস্ত রেখে অন্যদিকে কেউ যেন কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সে কারণে বিমানবন্দরজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। এ সময় ইমিগ্রেশন-কাস্টম সবকিছুই সচল ছিল। বিমান ওঠানামাও স্বাভাবিক ছিল। আমরা আমাদের এই বিমানবন্দরকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিকিউরিটি প্রসিডিউর অনুযায়ী উড়োজাহাজটি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর পরই বিমানবন্দরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে ফ্লাইটটিকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে নেওয়া হয়। যাত্রীদের নিরাপদে নামানো হয় এবং সব যাত্রী ও ব্যাগেজসহ এয়ারক্রাফট তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তা তল্লাশিতে কোনো কিছু না পাওয়ায় ‘সিকিউরিটি থ্রেট ক্লিয়ার’ ঘোষণা করা হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। এরপর যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে বেলা দেড়টার মধ্যে সব যাত্রী নিরাপদে বিমানবন্দর ছাড়েন। বিমানবন্দরে অবস্থানের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে যাত্রীদের দুপুরের খাবারসহ সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার উদ্দেশে ইতালির রোম থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশি এক ফ্লাইটে বিস্ফোরক দ্রব্য আছে বলে বুধবার সকালে তথ্য আসে। পরে ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিমানবন্দরে কর্মরত নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনেন। সেই সঙ্গে বিমানে তল্লাশি চালানো হয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা এই অভিযান চললেও কিছু পাওয়া যায়নি।