
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি গত বুধবার রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া হামলা, ভাঙচুর-লুটপাট চলে গতকাল শনিবারও। ধানমন্ডির ৫ নম্বরে বিধ্বস্ত সুধা সদনেও চলছিল একই অবস্থা। ভাঙচুর ও লুটেরাদের বেশির ভাগই ভাঙারি শ্রমিক, দিনমজুর ও টোকাই। বাড়ি দুটি থেকে রড, বৈদ্যুতিক তার, স্যানিটারি পাইপ, আসবাবপত্র, ইটসহ সবকিছু নিয়ে যান তারা।
ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। মুঠোফোনে ছবি তোলাসহ বিধ্বস্ত বাড়ি দুটি ঘুরে দেখেন তারা। কেউ কেউ ভবন থেকে খুলে রাখা ইট নিয়ে রিকশাযোগে চলে যান গন্তব্যে। গতকাল শনিবার বিকেলে ৩২ নম্বর এবং সুধা সদনে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের চৌরাস্তায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকাসংবলিত স্মৃতিফলক ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়িটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বাড়িটির সামনের অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও পেছনের কিছু অংশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে অবশিষ্ট অংশটুকু ভাঙার কাজ করছেন ভাঙারি শ্রমিক, দিনমজুর ও টোকাই প্রকৃতির লোকেরা। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির প্রবেশ ফটক নেই। বাউন্ডারি দেয়াল নেই। রাস্তায় একটি অটোরিকশায় ইট তুলছিলেন এক ব্যক্তি। আরেক ব্যক্তি পূর্ণ ইটগুলো বাছাই করে সড়কের পাশে রাখছিলেন। প্রবেশ গেটের সামনে আরসিসি ঢালাই ভেঙে লোহার রড বের করছিলেন দুই শ্রমিক। উৎসুক জনতা সেখানে ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
ভবনের ইট দিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে টোকাই প্রকৃতির এক লোক বলেন, ‘ইট দিয়া বাড়ি বানামু। তাই নিয়া যাইতাছি।’ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন- জানতে চাইলে ওই লোক বলেন, ‘যামু মোহাম্মদপুর বছিলায়।’ কয়টা ইট নিচ্ছেন জানতে চাইলে ওই লোক বলেন, ‘আজকেই আইছি, যতগুলা ইট পারি নিয়া যামু। অটোরিকশায় কইরা নিমু।’ কথা বলতে বলতে ইটগুলো তুলছিলেন তিনি। উৎসুক জনতার অনেকেই বাড়ি ভাঙার ছবি তুলছিলেন।
সুধা সদন
গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত সুধা সদনে যান এ প্রতিবেদক। তখনো সেখানে ভাঙার কাজ চলছিল। হাতুড়ি ও বাটালের আঘাতের শব্দ দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। তবে সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল না। টোকাইদের আনাগোনা বেশি ছিল। আশপাশের বাড়ির প্রতিটি গেটেই সিকিউরিটি গার্ড পাহারায় ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার বোয়ালমারী উপজেলা সদরের চৌরাস্তায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকাসংবলিত স্মৃতিফলক ভেঙে দিয়েছেন উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ভেকু দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করেন ছাত্র-জনতা। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক আব্দুস সবুরের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা ভাঙার কাজ চালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় ‘তিনকোনা’ নামে পরিচিত চত্বরটি দখল করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’সংবলিত স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হাসান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘটনাস্থলে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম রসুল কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।