আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটা হচ্ছে। একই ছাতার নিচে নামিদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিক্স কিনতে ক্রেতারা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন। দুপুরে ও ইফতারির পর মানুষ বেশি আসছেন। তবে ১৭ রমজান চলে গেলেও গত বছরের মতো এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। গত বছরের তুলনায় সব জিনিসের দাম বেশি। কেনাবেচা কম হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন তলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে এই শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় অবস্থিত জেন্টলপার্কের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সকাল থেকেই কাস্টমার আসছেন। এটা-সেটা দেখছেন। কিন্তু গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। আমাদের এখানে পাঞ্জাবি ২ হাজার ৪৯০ থেকে ৩ হাজার ৪৯০ টাকা, শার্ট ১ হাজার ৯৯০ থেকে ২ হাজার ৮৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ সময় মানিকগঞ্জ থেকে আসা টিপু নামে এক ক্রেতা জানান, ‘অন্য বছরের মতো এবারও বসুন্ধরায় কেনাকাটা করতে এসেছি। কারণ এখানে একসঙ্গে সব নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক পাওয়া যায়। বিভিন্ন দোকানে ঘোরাঘুরির পর পছন্দ হওয়ায় শার্ট কিনলাম। দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।’ এর পাশে স্মার্টেক্সের বিক্রয়কর্মী সুজনও জানান, ‘বাচ্চা, লেডিস ও জেন্টস আইটেম বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিনের তুলনায় ছুটির দিনে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে কম হলেও সামনে ভালো বিক্রি হবে সেই আশায় আছি।’
এদিকে বাচ্চাদের জন্যও বিভিন্ন দোকান সাজিয়ে রেখেছে হরেক রকমের পোশাক। নিচতলার বেবি ড্রিমসের ম্যানেজার মো. ফয়সাল বলেন, ‘ভারত ও চীনের বিভিন্ন দামের পোশাক আনা হয়েছে। তবে যেভাবে আশা করেছিলাম এখনো বিক্রি হচ্ছে না। বাচ্চাদের ফ্রক দেড় হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, ছেলেদের গেঞ্জি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।’
নিচ তলার মতো বসুন্ধরা সিটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ইজি ফ্যাশন, আর্টিসান, টুয়েলভ, জেন্টলপার্ক, ইনফিনিটি, রিচম্যান, লুবনান, দর্জিবাড়ি, ইল্লিয়্যিন, ক্যাটস আই, এমব্রেলা, ফিট এলিগ্যান্স, রাইজ, র’নেশন, প্লাস পয়েন্ট, আড়ং, স্টাইল ইকো ফ্যাশন ব্র্যান্ডের শোরুম।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমের বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতাদের দেখে ডাক দিচ্ছেন। এই তলার রিচম্যান শোরুমে কথা হয় ম্যানেজার নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্য এলাকার মতো এই মার্কেটেও আমরা বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শার্ট ও গেঞ্জি নিয়ে এসেছি। পাঞ্জাবি ২ হাজার ৭৫০ থেকে ৮ হাজার টাকা, শার্ট ২ হাজার ১৫০ থেকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা ও গেঞ্জি ১ হাজার ৯০ থেকে ২ হাজার ৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় কম।’
শুধু এই সব দোকানেই নয়, ইজি ফ্যাশন, আড়ং, ইনফিনিটিসহ অন্য শোরুমেও ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে। তারা পছন্দের পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি দেখছেন। দামে মিললেই কিনছেন। আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী রোকন আহমেদ বলেন, ‘ ঈদ ঘনিয়ে আসায় বিক্রি মোটামুটি ভালো। বাচ্চাদের ড্রেস, থ্রি-পিস, শাড়ি, জুতা, পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুপুর ও ইফতারির পর বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ক্রেতা আসছেন। পছন্দ হলে কিনছেন। এ সময় আড়ংয়ের কাউন্টারে দেখা যায় লম্বা লাইন। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা মাসুম জানান, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে ঘোরাঘুরি করে অবশেষে আড়ং থেকে স্ত্রীর জন্য ৩ হাজার টাকায় একটা থ্রি-পিস কিনেছি। কিন্তু ক্যাশ কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। বাচ্চা কোলে নিয়ে ১৫ মিনিট থেকে দাঁড়িয়ে আছি। ভ্যাটের কারণে দাম বেশি দিতে হচ্ছে।’
বসুন্ধরা শপিং মলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, সকাল থেকেই কেনাকাটা করতে প্রচুর মানুষ আসছেন। অনেকে বিকেলে কেনাকাটা করতে এসে এখানেই ইফতার করছেন। লেভেল ফোরে রয়েছে জ্যোতি, জামদানি হাউস, নীল আঁচল শাড়িজ, কালাঞ্জলী শাড়িজ, ঢাকা জামদানি কুটির, শাড়িবাজার, শালিমার, অর্চিসহ অনেক অভিজাত শাড়ির দোকান। লেভেল ফাইভে লারিভ, রেড এবং লেভেল সিক্সে বাটা, এপেক্স, ওরিয়ন, বে ইত্যাদির শোরুমে বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। পোশাকের মতো বিভিন্ন কসমেটিক্স ও জুতা-স্যান্ডেলের দোকানেও দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। দামদরে মিললেই পছন্দের জিনিস কিনছেন। বিক্রেতারা বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসছে। বিক্রি বাড়বে। সেই আশায় আছি।