ঢাকা ১৩ চৈত্র ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১

তিন বিষয়ে ঐকমত্য হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম
তিন বিষয়ে ঐকমত্য হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে-এ প্রশ্নে দ্বিমত থাকলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করছে। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার- এই ৩টি বিষয়ে একসঙ্গে চলার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বৈঠক অংশ নেওয়া দলগুলো।

গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এ মতামত দেন। 

রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেলা ৩টার দিকে ঢাকার বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়। আড়াই ঘণ্ট্যাব্যাপী এই বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের শতাধিক নেতা অংশ নেন। তবে আওয়ামী লীগের জোটে থাকা কোনো দল ও জাতীয় পার্টিকে এই বৈঠকে ডাকা হয়নি। এর আগে দুপুর ২টার পর থেকেই দলগুলোর নেতারা প্রবেশ করেন। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা চতুর্থ দফায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘দেশ, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দল ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন গড়ে উঠেছে। সে কারণে অপর পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে তারা ব্যাহত হচ্ছে। বহুবার প্ররোচনা করেও গল্প টিকাতে পারছে না তারা। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অপপ্রচার চালাতে গিয়েও পারেনি। যত ছোট-বড়, মাঝারি ও ধনী রাষ্ট্র- সবাই আমাদের পক্ষে। কারও কোনো দ্বিধা নেই।’ 

জানা গেছে, জাতীয় ঐকমত্যের কমিশনের বৈঠকে প্রথম দিনে পরিচিত সভা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো বই আকারে প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠনো হবে। আগামী দিনে প্রতিটি দল ও জোটের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

বৈঠক সূত্র জানায়, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। 

তবে বিএনপি, বিজেপি ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাকি দলগুলো এর বিরোধিতা করেছে। ওই সব দলের নেতাদের দাবি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে দেশে সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা ফাঁকফোকড় দিয়ে ঢুকে পড়বে। তারা দেশ আবারও অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাবে। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা বলেছেন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদে কোথাও মেয়র বা চেয়ারম্যান নেই। নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে এবং উন্নয়ন কাজ থেমে আছে। তাই প্রশাসক বা নির্বাচন দেওয়া জরুরি। 

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে বেশির ভাগ দলই জাতীয় নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার- এই তিনটি বিষয়ে একসঙ্গে চলার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। সব দলই এই তিন বিষয়ে একসঙ্গে চলার ব্যাপারে মতামত দেন। তবে জাতীয় নির্বাচন গতানুগতি নাকি সংখ্যানুপাতিক (পিআর)- কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে আয়োজনের কথা বলেছেন। নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে বলে সরকারের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে সংস্কার কমিশনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সুনির্দিষ্ট মতামত পরর্বতী সময়ে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি। 

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। তবে ২০২৪ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন এলডিপির একাংশের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ কোনো কোনো নেতা। ওই দুটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুটি দলকে আমন্ত্রণ জানানোয় উষ্মা প্রকাশ করেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। 

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব দ্রুত এই সংস্কারের ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে। ন্যূনতম সংস্কার শেষে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলোর ওপর প্রতিটি দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হবে। দলগুলো এটা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে এবং একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সে জন্য আজকে প্রাথমিক আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে।’ 

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সব পজিটিভ (ইতিবাচক) সিদ্ধান্তকে জামায়াত ইসলামী সমর্থন জানাবে। আমরা বলেছি এই সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। তারা আমাদের সংস্কারের রিপোর্ট বই আকারে দেবেন, সেই বই পর্যালোচনা করে জামায়াত এবং সরকারের যে টিম রয়েছে তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হবে। সেখানে আমরা আলোচনা করে মূল সিদ্ধান্ত জানাব।’ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে বিষয়ভিত্তিক কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, কোনো প্রস্তাব চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব তাদের নেই। আলাপ-আলোচনা করে একটি বোঝাপড়া তৈরি করে যে প্রশ্নে আমরা একমত হতে পারব, সেই ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ তৈরির চেষ্টা হবে। জাতীয় সনদের ভিত্তিতে পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচন বা সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে আলোচনা হবে।’ 

বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘বৈঠকে ছোট ছোট পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কবে হবে, কোন কোন দল দ্রুত নির্বাচন চায়, এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই না। কোনো ধরনের সংস্কারের জন্য যেন জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না হয়, সে বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।’ তিনি বলেন, সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। 

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক জায়গা থেকে আশ্বাস পেয়েছি। আমরা যদি সেই সহযোগিতা পাই তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। জাতিসংঘের যে সহযোগিতার কথা বলেছে, সেটি আমাদের জন্য বিরাট মাইলফলক। কিন্তু বিদেশিরা বলেছেন আমরা তোমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারব কিন্তু তোমাদের যে সংস্কার সেটি আমরা করতে পারব না।’ তাই তিনি বলেছেন, এই সংস্কারের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে মানুষের অগ্রাধিকার বদলে যাবে। তাতে অনেক নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। যারা এই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে সবার কথা হলো জনগণ যেন অভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকে, অভ্যুত্থানের শক্তি যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে পারি সেটাই হলো একান্ত কাম্য।’

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অংশ নেওয়া দলগুলো হলো- জাতীয় নাগরিক কমিটি, এলডিপি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ডেমোক্রেটিক লেফট ইউনিটি, লেবার পার্টি, জাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণফোরাম, আমজনতার দল, লেফট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, সাইফুল আলম খান মিলন, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম। এ ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমেদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এহসানুল হুদা, মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধানসহ ১১জন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্ব গণতন্ত্র মঞ্চের ৬ জন, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩ জন, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

টার্মিনালে বাড়ছে যাত্রীদের চাপ

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০২:২০ এএম
টার্মিনালে বাড়ছে যাত্রীদের চাপ
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষ। ছবি: খবরের কাগজ

ধীরে ধীরে টার্মিনালগুলোতে বাড়ছে বাড়িফেরার মানুষের চাপ। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিকতার রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখী মানুষ। গতকাল বুধবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রায় বিগত দুই দিনের তুলনায় গতকাল বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর অধিকাংশ টার্মিনাল ও বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের বেশ উপস্থিতি দেখা যায়। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পর্যায়ক্রমে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘরমুখী মানুষের চাপ আরও অনেক বেড়ে যাবে। অফিস শেষ করেই অনেকেই দৌড়াবেন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও লঞ্চঘাটের দিকে।

কমলাপুরে ভিড় বেড়েছে, নেই শিডিউলজট 

ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কিছুটা বেড়েছে। পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রামকেন্দ্রিক) ও পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী-রংপুরকেন্দ্রিক) রেলওয়ের বেশ কিছু আন্তনগর ট্রেন গতকাল প্রায় যথাসময়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের দু-একটি ট্রেন সামান্য কিছু বিলম্বে ছাড়লেও শিডিউলজট বা বিপর্যয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্টেশনসংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আন্তনগর ট্রেনগুলো প্রায় সঠিক সময়ে ছেড়ে যায়। 

এদিকে নরসিংদী কমিউটার-১ ও ৪ নামে একজোড়া ট্রেন যুক্ত হওয়ায় গতকাল ঢাকা থেকে ৬৯টি আন্তনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেন ছাড়ার ২ ঘণ্টা আগে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ ট্রেন চলবে। যাত্রীসেবায় প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। স্টেশন থেকে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যাত্রীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টিকিট চেক করা হচ্ছে।

গাবতলীতে যাত্রীর ভিড়, কাউন্টারে মিলছে না টিকিট 

গতকাল সন্ধ্যার পর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে, মূল সড়কের এক পাশ উত্তরবঙ্গমুখী দূরপাল্লার বাসগুলোয় ডেকে ডেকে যাত্রীদের ওঠানো হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রী এবং বাসের সুপারভাইজার-চালকদের মধ্যে দর-কষাকষি বা কোথাও কোথাও বাগবিতণ্ডাও দেখা গেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু মাইক্রোবাসচালকও বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রী ডাকছিলেন। 

এদিকে গতকাল অনেকেই গাবতলীর দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে এসে টিকিট চান আজ বৃহস্পতিবারের জন্য। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই এসি বাস বা দামি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। যাত্রীদের অভিযোগ, বাস কর্মকর্তারা আগে থেকেই টিকিট সরিয়ে রেখেছেন। মোটামুটি বাড়তি টাকা দিলে তারা টিকিট দিচ্ছেন। 

গাবতলীর হানিফ কাউন্টারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল হেলালের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার রাতের জন্য টিকিট কাটতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয়েছে, কোনো টিকিট নেই। এ বিষয়ে আবদুল হেলাল খবরের কাগজকে অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানকার কাউন্টারের লোকেরা ছুটির দিনগুলোর টিকিট আগে থেকে সরিয়ে রেখেছেন। হয়তো তারা পরিচিত যাত্রীদের টিকিট দেবেন, তা না হলে বেশি মূল্যে অন্যদের কাছে বিক্রি করবেন।’

হানিফ কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আল-আমিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিকিট এখন অনলাইনে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাই কাউন্টারে ভিড় কম। কয়েক দিন আগে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বাসের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীদের অনেকেই এখন কাউন্টার এসে টিকিট চাইছেন, কিন্তু আমরা তো তা দিতে পারছি না।’ এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি রয়েছে। ফলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যেই রাজধানী ছাড়ছেন। সড়ক-মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতির ভয়ে যাত্রীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভালো সেবাদানকারী বা অভিজাত পরিবহনগুলো যাতায়াতের জন্য বেছে নিচ্ছেন। এ জন্য গাবতলীর পাশাপাশি ভালো মানের পরিবহনগুলোর যাত্রীদের ভিড় বেশি কল্যাণপুরে দেখা যায়। এর মধ্যে আগে থেকে অনলাইনে যারা টিকিট কেটে রেখেছেন তারা অনায়াসে গাড়িতে যেতে পারলেও সরাসরি যারা কাউন্টারে আসছেন তারা কিছুটা দুর্ভোগে পড়ছেন। তৎক্ষণাৎ টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রী লোকাল বাসে ওঠেন। এই সুযোগে লোকাল বাসের কর্মচারীরা ভাড়া বেশি নেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
যাত্রীর চাপ বেড়েছে মহাখালী বাস টার্মিনালে 

গতকাল সরেজমিনে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় দুপুরের পর থেকে টার্মিনালে ঈদে বাড়িফেরা মানুষের ভিড় বেড়েছে। গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে যাত্রীদের চাপ ভালোই ছিল। 

গতকাল এই বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ জামালপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ রুটের বাস চলাচল করছে। উত্তরবঙ্গগামী শাহ ফতেহ আলী, এসআর ট্র্যাভেলস, এনা পরিবহন, অভি এন্টারপ্রাইজ, এসআই এন্টারপ্রাইজ, রাজিব এন্টারপ্রাইজ ও একতা পরিবহনের যাত্রীদের চাপ রয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুরগামী লোকাল বাসও চলছে। 

ব্যাংক কর্মকর্তা সবুর আলম পরিবারসহ যাবেন ময়মনসিংহ। তিনি গতকাল বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। টার্মিনালে যাত্রীর চাপ আছে, বাসও আছে। ভোগান্তি কমাতে হাতে সময় রেখেই যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এনা পরিবহনের টিকিট কেটেছি। এখন বাসের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করছি।’

আলম এশিয়া বাসের সুপারভাইজার আল-আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকালের চেয়ে আজ (বুধবার) যাত্রীর চাপ বেশি। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।’ ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের ভাড়াই আছে। বাড়তি কোনো বকশিশ নেওয়া হচ্ছে না। 

এদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও জনপদ মোড়েও গতকাল বিকেল থেকে ঘুরমুখী মানুষের যথেষ্ট ভিড় ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সায়েদাবাদ, জনপদের মোড়, মানিকনগর এলাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট অঞ্চলের পরিবহনগুলো যাতায়াত করে থাকে। 

ঈদযাত্রায় ভিড় বেড়েছে সদরঘাটে 

ঈদে বাড়ি ফেরায় বাস, ট্রেনের পাশাপাশি ভিড় বেড়েছে ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট)। যাত্রীদের লঞ্চে নিতে হাঁকডাক বেড়েছে সদরঘাটে। যাত্রীদের নিজ লঞ্চে তুলতে প্রচেষ্টার শেষ নেই সংশ্লিষ্ট লঞ্চশ্রমিকদের। তবে বাড়তি ভোগান্তি বা বিশৃঙ্খলা এখনো দেখা যায়নি সদরঘাটে। অনেকটা নির্বিঘ্নে লঞ্চে রওনা দিচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ। 

গতকাল সদরঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়। দুই দিন আগেও এতটা ভিড় ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যাত্রীদের চাপ আরও অনেকটা বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সদরঘাটের টার্মিনালসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যমতে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে বরিশাল, চাঁদপুর, ভোলা, দৌলতখাঁ, হাকিমুদ্দিন, হিজলা, ভান্ডারিয়া, চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা, পটুয়াখালী বরিশাল, ঝালকাঠির উদ্দেশে ৪৬টি লঞ্চ।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, রাজধানীর সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সদরঘাট থেকে ৫০টি রুটে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে ১৭৫টি লঞ্চ। 

কর্ণফুলী-১৩ লঞ্চের টিকিট মাস্টার ফাহিম মিয়া বলেন, আজ (বুধবার) একটু বেশি ভিড়। ছুটির দিন হওয়ায় লোকসমাগম বেশি। পদ্মা সেতু চলার পর ঈদ ছাড়া ভিড় হয় না লঞ্চে।

এমভি তাসরিফ-৩ লঞ্চের শ্রমিক নুরে আলম বলেন, ঈদের জন্য আমরা আশা করছি ভিড় বাড়বে। আজ (বুধবার) থেকেই সেটা শুরু হয়েছে। আমরা চাই, লঞ্চ ব্যবসা তার সোনালি দিন ফিরে পাক।’

বরিশালগামী যাত্রী মুনতাসির রহমান বলেন, ‘আজ (বুধবার) ভিড় বেশি। রিলাক্সে যাওয়ার জন্য লঞ্চে যাওয়া। পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। তাই লঞ্চে যাচ্ছি।’

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সব লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। সব রুটের জন্য একাধিক লঞ্চ রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার (আজ) বা শুক্রবার থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়-জরিমানা

ঈদযাত্রায় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বিভিন্ন বাস কোম্পানি থেকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, ফুলবাড়িয়া ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই জরিমানা আদায় করা হয়।

তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে রামগতি, লক্ষ্মীপুরগামী নীলাচল পরিবহনে ১০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া কামারপাড়ায় গাইবান্ধাগামী নিউসাফা পরিবহনে দুজন ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার অপরাধে নিউসাফা পরিবহনকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং মিরপুর ডি-লিংক, নীলাচল পরিবহনে ভাড়ার চার্ট বা তালিকা না থাকায় চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করে দোলা পরিবহন, গোল্ডেন লাইন ও এমাদ পরিবহনে ভাড়ার তালিকা না থাকায় ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঈদযাত্রায় চার কোটি মানুষের জন্য নেই মানসম্মত গণপরিবহন

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ঈদযাত্রায় মাত্র ৩-৪ দিনে ঢাকা থেকে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করবেন। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে আন্তজেলায় প্রায় চার কোটি মানুষ যাতায়াত করবেন। এত অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ পরিবহন করার মতো মানসম্মত গণপরিবহন দেশে নেই। 

সড়কের চাঁদাবাজি, বাড়তি ভাড়া আদায় এবং অনিরাপদ যানবাহন চলাচল বন্ধে সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রা নিরাপদ করার জন্য সরকারি উদ্যোগ ঈদ-পূর্ব ঘরমুখী যাত্রায় যতটা সক্রিয় থাকে, ঈদের ফিরতি যাত্রায় ততটা সক্রিয় থাকে না। ফলে ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। 

নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে অনুরোধ জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। 

৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছে 

ঈদযাত্রায় ঢাকার বিভিন্ন গণপরিবহনে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা থেকে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে ২২ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার ট্রিপে মানুষের যাতায়াত হতে পারে। এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। এসব যাত্রীর কাছ থেকে ঈদ বকশিশ বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। 

(এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রিনা আক্তার তুলি, জয়ন্ত সাহা, জিয়াউদ্দিন রাজু ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মুজাহিদ বিল্লাহ)

 

 

দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব ড. ইউনূস চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
ড. ইউনূস চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে বুধবার (২৬ মার্চ) চীনে গেছেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এটি তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। তবে চীন সফরের আগে তিনি ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছ থেকে সে ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে। 

শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চান, বাংলাদেশকে চীন তার বিনিয়োগের গন্তব্য করে তুলুক, বিশেষ করে উৎপাদন শিল্পে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায় উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে ভারতে প্রধান উপদেষ্টার একটি দ্বিপক্ষীয় সফরের ব্যাপারে আমরা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ভারতীয় পক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। চীনে সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে ওই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।’ 

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চীন থেকে ফিরেই প্রধান উপদেষ্টা ব্যাংককে যাবেন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। ৩ ও ৪ এপ্রিল ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস চেয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে।’

এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘অনেক দিন আগে এই ইচ্ছা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে বার্তা দিয়েছে। কিন্তু বৈঠক নিয়ে ভারত এখনো কিছু জানায়নি। তবে আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘সফরকালে চীনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত করতে চান। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘বহু দেশ নানা কারণে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত। বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওয়াং ই সেই সময় ইউনূসকে ‘চীনের পুরোনো বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেন। সেই বৈঠকে চীনকে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্যানেল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।

গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশকে তিনি দ্রুত দক্ষিণ এশিয়ার ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক অবস্থান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের অর্থনীতি বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’ 

অধ্যাপক ইউনূসকে মালয়েশিয়াও দ্বিপক্ষীয় সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি তা গ্রহণও করেছেন। সূত্র: হ্য হিন্দু 

স্বাধীনতা দিবসে রোগীদের জন্য ইফতার ও দোয়া মাহফিল

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:২৫ পিএম
স্বাধীনতা দিবসে রোগীদের জন্য ইফতার ও দোয়া মাহফিল
রোগী ও রোগীর স্বজনদের জন্য ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি ফাউন্ডেশন

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগী ও রোগীর স্বজনদের জন্য ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি ফাউন্ডেশন।

বুধবার (২৬ মার্চ) হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি রোগী ও রোগীর স্বজনদের জন্য এই আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে রোগীদের রোগমুক্তি কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিশু সার্জন অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ টাবলু। আরও উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ, সেক্রেটারি মোহাম্মদ নাইমুল হাসান, ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. মনিরুল ইসলাম মিলন, প্রীতম ভৌমিক, সাগর হালদার, মিটু খান এবং অন্য সদস্যরা।

সালমান/

রাজধানীর মালিবাগে দিনে ছিনতাই, রাতে চুরি

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
রাজধানীর মালিবাগে দিনে ছিনতাই, রাতে চুরি
প্রতীকী ছবি

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে রাজধানীতে মালিবাগ প্রথম লেনে ১২৮ নম্বর বাড়ির সামনে এক নারী পথচারীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে প্রথম লেনেরই ১১৯ নম্বর কাজী বাড়িতে পুলিশের এক সিআইডি সদস্যের বাসায় ঘটে চুরির ঘটনা। তবে এসব ঘটনার কোনোটিরই তথ্য জানে না বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

কাজী বাড়ির ঈষিকা নারগীস দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, আমাদের বাড়ির যে ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনা ঘটেছে, ওই ফ্ল্যাটে একজন সিআইডি সদস্য পরিবার নিয়ে থাকেন। শিশুদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোজার ছুটির শুরুর দিকেই উনার পরিবার গ্রামে চলে যায়। সেই থেকে সিআইডি সদস্য নিজেও বাসায় অনিয়মিত। তবে যে রাতে চুরির ঘটনা ঘটে, তার আগের বিকালেও তিনি বাসায় ঘুরে গেছেন। সোমবার রাতে তাদের বাসার গ্রিল কেটে চোর ঢোকে। বাসা থেকে তাদের টেলিভিশন, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা নিয়ে গেছে। সকালে আমরা বাসার নিচের গেট খুলতে গিয়ে দেখি তাদের বাসার জানালার গ্রিল কাটা। তারপর তাদের খবর দেই।

ঈষিকা বলেন, এই ঘটনায় উনি (সিআইডি সদস্য) সম্ভবত থানায় জিডি করেছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা মালিবাগ নিয়ে নবগঠিত সামাজিক সংগঠন ‘মালিবাগ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ (এমডব্লিউএস)। সংগঠনের প্রধান তুষার জোয়ার্দার ১২৮ ও ১১৯ নম্বর বাড়ির সাম্প্রতিক উদাহরণ দিয়ে বলেন, হরহামেশাই চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পাচ্ছি। নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত রবিবার দিনের বেলায় তিনটার দিকে তিনটা টোকাই চুরির উদ্দেশে আমার এক বিল্ডিংয়ের সানসেড দিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। চোর চোর বলে চিৎকার করতেই তারা চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ঈদ সামনে। অনেকেই এখন বাড়ি যাওয়ার জন্যে ভোররাতে সেহেরী খেয়েই বের হবেন। কিন্তু বাসা থেকে বের হলে আবছা অন্ধকার ওই সময়ে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা আরও বেশি।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে প্রধান সড়কে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও তারা গলিতে ঢোকেন না, চুরি-ছিনতাইকারীরাও তা পর্যবেক্ষণ করে এবং নিশ্চিন্তে অপকর্ম চালিয়ে যায়।
তারা বলেন, কাজী বাড়ির পশ্চিম পাশে গলির কোনা থেকে পূর্বদিকে গলির প্রান্ত পর্যন্ত এই জায়গায় রাতে তো বটেই, দিন দুপুরেও ছিনতাইয়ের আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়।

মালিবাগের সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে, স্থানীয় শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন- গত এক সপ্তাহেও ওই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। ভূক্তভোগীকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, আমরা ব্যবস্থা নেব। 

মাহমুদুল আলম/মাহফুজ

মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে সিভিল সার্জন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে সিভিল সার্জন
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন ২০২৫-এর আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ’৭১-এর সঙ্গে তুলনা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। পরে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।

বুধবার (২৬ মার্চ) ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। 

এর আগে এদিন বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতিথিরা আসন গ্রহণ করলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ।

সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া হয়।

এরপর অতিথিরা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন। এই ধারাবাহিকতায় সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম এখনো তার অপূর্ণতা রয়ে গেছে, যার কারণে ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলন হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সংবর্ধনা দিয়েছি, জুলাই আন্দোলনকারীদেরও সংবর্ধনা দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে দুই কারণে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল, একই কারণে ২০২৪-এ যুদ্ধ হয়েছে।’

এ সময় সামনে বসে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, ‘আপনি বলছেন একই কারণে যুদ্ধ হয়েছে। একই কারণে না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪-এর আন্দোলনের তুলনা হয় না। আপনার কথা উইথড্র করেন।’

পরে সিভিল সার্জন ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর অনুষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয়।