
শুধু ২০২৪ সালের ১ থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত নয়, অতীতের বড় বড় ঘটনার ডকুমেন্টেশন তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে তিনি জানিয়েছেন, এই কাজটি সরকারি কোনো সংস্থা করবে না। কাজটি করতে প্রাইভেট থিংক ট্যাংকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বরিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ নামে একটি সংগঠন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘জার্নালিজমের একটা বড় বিষয় হচ্ছে, আপনি দালালি করবেন আর মানুষ তা ডকুমেন্টেড করবে না, এটা ভাববেন না। প্রত্যেকটা দালালি খুব ভালোভাবে ডকুমেনটেড হয়ে গেছে। আপনি দালালি শুধু ১ থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত করেননি। আপনার দালালি শুরু হয়েছে সেই ২০০৯ সাল থেকে। আপনি বড় বড় ম্যাসাকারের পক্ষে বয়ান তৈরি করেছেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশে হত্যাকাণ্ড, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে হত্যাকাণ্ড, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বালুর ট্রাক রাখার ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রচার করেছে সংবাদিকদের একটা অংশ।’ এগুলোসহ আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের বড় ঘটনাগুলোরও ডকুমেন্টেশন করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের উদ্দেশে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ওরা যেটা করত, যেমন পুলিশ বা সিকিউরিটি ফোর্স বড় রকমের ম্যাসাকার করত, তখনই দেখতেন যে ফেসবুকে ওদের হয়ে একটা বড় গ্রুপ বা জার্নালিস্টদের একটা বড় গ্রুপ বয়ান তৈরি করত। মানে এই গ্রুপটি বিষয়টিকে নরমালাইজ করত। যেন এই লোকটাকে মারার দরকার ছিল। এই লোকটাকে না মারলে দেশ এগোতে পারবে না। এই যে একটা বয়ান তৈরি করা, এটা কারা করেছে? প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভে এই ডকুমেন্টেশনগুলো করুন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি এই কাজটা করে, তাহলে মানুষ বলবে, সরকারের একটা মোটিভেটেট বিষয় হয়েছে। আমরা চাই প্রাইভেট থিংক ট্যাংকরা এটা করুক। এটা প্রতিটা দেশেই হয়।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনাকে মারবে, আবার বলবে মারাটা যৌক্তিক ছিল। আপনার অধিকার হরণ করে নেবে, তখন কিছু সাংবাদিক বলবেন ওর অধিকার হরণ করা সঠিক ছিল। ১৫ বছরে অনেক ঘটনা। শাপলা চত্বরের ঘটনা বলেন, মাওলানা সাঈদীর রায়ের পরের দিন দেখুন। একদিকে মানুষ মারছে, কিন্তু হাসি-ঠাট্টা হচ্ছে। চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে। আপনার পুরো অ্যাটেনশন ওই দিকে নিয়ে ১৬০ জনের মতো লোককে গুলি করে মারা হয়েছে। ভয়াবহ একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আপনি দেখুন কীভাবে এগুলো নরমালাইজ করেছে। মানে এই লোকগুলোকে মারা যৌক্তিক ছিল বলে বয়ান তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে আপনি বালুর ট্রাক দিয়ে দিচ্ছেন, কিছু সংস্কৃতিকর্মী আবার ওখানে যাচ্ছেনও। ওই সময়ে ফেসবুক দেখেন। আমরা এই ঘটনাগুলো রিসার্চের মধ্যে রাখতে চাই।’
এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের জেনারেশন এটা ফেল করেছে। ’৭৪-এর ঘটনা, রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার নিয়ে লিখতে ফেল করেছে। এর আগে প্রচুর সমস্যা হয়েছে, প্রচুর ভ্যালু ছিল প্রত্যেকটা জায়গায়। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ডকুমেন্টেশনে ফেল করেছি। এবার যেন ফেল না করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আমরা যেটা ফেস করেছি, তাদের যেন তা ফেস করতে না হয়।’