
অর্থায়নের অভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত তহবিল পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গাদের মাসিক রেশন কমিয়ে অর্ধেক করতে হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
শুক্রবার (৭ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে শরণার্থীদের মাসিক রেশন ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আর এ সংকট এমন একসময়ে আসতে যাচ্ছে, যখন শরণার্থীরা রমজান শেষে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ডব্লিউএফপির রেশনের অংশ হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গারা নির্ধারিত দোকান থেকে ভাউচারের মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার কিনতে পারে। তবে পূর্ণ রেশন চালিয়ে যেতে এপ্রিলে জরুরিভাবে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত মোট ৮১ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেলি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা গভীর সংকটে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মায়ানমারের সংঘাত থেকে পালিয়ে আরও নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে সংকটে থাকা শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য রেশন কাটছাঁট সম্পর্কে ডব্লিউএফপি এরই মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
স্ক্যালপেলি বলেন, ‘এখন আগের চেয়েও বেশি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রয়োজন। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার নেই এবং ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তা হলো বেঁচে থাকা এবং হতাশার মধ্যে পার্থক্য। এই সংকটকে আরও বাড়তে না দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা জরুরিভাবে প্রয়োজন।’
এর আগে ২০২৩ সালে তীব্র তহবিল-সংকটের কারণে ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে জনপ্রতি রেশন ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়, যার ফলে খাদ্য গ্রহণে তীব্র হ্রাস ঘটে। এতে ২০১৭ সালের পর থেকে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা সবচেয়ে খারাপ হয়ে যায়, যা ১৫ শতাংশেরও বেশি। পরে তহবিল পাওয়ার পর রেশন বৃদ্ধি করা হয়।
তবে ঢাকায় ডব্লিউএফপির একজন মুখপাত্র বলেছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে সংস্থাটি পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করলে এই কাটছাঁট এড়ানো সম্ভব হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ডব্লিউএফপি ৮১ মিলিয়ন ডলার তহবিলের সন্ধানে রয়েছে।
শরণার্থী শিবিরের তত্ত্বাবধানকারী বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘৪ মার্চ আমাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল এবং ৫ মার্চ আমি সাড়ে ৬ ডলার কমানোর তথ্য নিশ্চিত করে চিঠি পেয়েছি। ১ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে।’ তিনি জানান, তারা এখন যা পাচ্ছে সেটিই যথেষ্ট নয়, তাই এই নতুন সিদ্ধান্তের পরিণতি কল্পনা করা কঠিন।
চিঠিতে ডব্লিউএফপি এটিও স্বীকার করেছে যে ‘মানবিক সাহায্যের ওপর শরণার্থীদের সম্পূর্ণ নির্ভরতার কারণে’ রেশন কমানোর সিদ্ধান্ত মৌলিক চাহিদা পূরণে ধুঁকতে থাকা পরিবারগুলোকে চাপে ফেলবে এবং শিবিরের মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা’ আরও বাড়িয়ে তুলবে।
মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের প্রভাবে এই রেশন কমানো হয়েছে কি না, সেটা ডব্লিউএফপি স্পষ্ট করে বলেনি। তবে তিনি মনে করেন, ডব্লিউএফপির শীর্ষ দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এটিই সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও মন্তব্য চেয়ে রয়টার্সের করা অনুরোধে সাড়া দেয়নি।