
পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, মার্কেট ও শপিংমলের নিরাপত্তায় অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
ডিএমপির কমিশনার বলেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনবলে অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা আমার আছে। আমি সেই মোতাবেক অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে যারা প্রাইভেট নিরাপত্তার লোকেরা আছে ওনাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছি।’
আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মলে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে কাজ করানো হবে। তাদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতাও থাকবে।
এই অক্সিলারি ফোর্স আসলে কি?
রোজা ও ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার আবাসিক এলাকা ও বিভিন্ন মার্কেটে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা ‘অক্সিলারি (সহযোগী) পুলিশ ফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ ধারা মোতাবেক ডিএমপি কমিশনার যদি মনে করেন, যেকোনো ব্যক্তিকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন।’
মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী এই সহযোগী পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝায় পুরো ফোর্স না, তবে আধা সরকারি ফোর্স, পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এ ধরনের ফোর্স ব্যবহার করার বিষয়টি পুলিশ আইনেই আছে।’
যুক্তরাজ্যে এমন বাহিনী ব্যবহারের নজির আছে উল্লেখ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘অল্প সময়ের জন্য এই ধরনের সহযোগী ফোর্স ব্যবহার করার নজির আছে। এটা খরচও যেমন বাচায়, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকরীও। আমাদের বিদ্যমান আইনে স্পেশাল পুলিশ ব্যবহার করা যায়। পুলিশ নিজের কাজের সুবিধার জন্য এটি ব্যবহার করে থাকে।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, এই ফোর্সের হাতে একটি ব্যান্ড থাকবে, যাতে লেখা থাকবে সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা। আইন অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। পুলিশ অফিসার যেভাবে আইনগতভাবে প্রটেকশন পান, এই অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যরাও সেই প্রটেকশন পাবেন।
দায়িত্ব পালন শেষে এই বাহিনীকে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে বলেও জানান ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান।
কী কী করতে পারবে অক্সিলারি ফোর্স?
পুলিশের সহযোগী এই বাহিনী কবে থেকে রাস্তায় নামবে সেটি এখনো নির্দিষ্ট করে জানায়নি পুলিশ। এই অক্সিলারি বাহিনী বা সহযোগী ফোর্স কি কি করতে পারবে এ নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া শাখার ডিসি তালেবুর রহমান জানান, পুলিশ যেমন দায়িত্ব পালন করে ঠিক একই ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আটক বা নিয়মিত টহলের মতো দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে। তবে এই অক্সিলারি বাহিনী পুলিশের মতো বেশ কিছু কাজ করতে পারলেও তারা কোনো ধরনের ইনভেস্টিগেশন বা তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে না।
মাঠে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ আর এই বাহিনীটির কাজে কি কি পার্থক্য রয়েছে? এমন প্রশ্নের ডিএমপির উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান জানান, পুলিশ বাহিনীর মতো প্রশিক্ষণ, দক্ষতা কিংবা দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো থাকবে না এই সহযোগী ফোর্সের কাছে। এমন কী তাদেরকে কোনো ধরনের অস্ত্র সহযোগিতা দেওয়া হবে কী-না সেটি নিয়েও আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে তারা পুলিশের সহযোগী ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। পুলিশের অথরিটি তাদের আছে সেটা বোঝানোর জন্যই তাদের আর্মড ব্যান্ড দেওয়া হবে।
তবে কী পরিমাণ অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেওয়া হবে এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
পুলিশ বাহিনীর বাইরে হঠাৎ করে নিয়োগপ্রাপ্ত লোক যখন পুলিশের ক্ষমতা পাবে সেটির ব্যবহারে কতখানি স্বচ্ছতা থাকবে এই প্রশ্নও উঠছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ঠিকমতো লোক যদি না নে ওয়া হয়, ভেরিফাইড লোক না নেওয়া হয়, তাহলে এর অপব্যবহার হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভেরিফাইড লোক নেওয়া জরুরি।
তাহলে এই সহযোগী বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কোন অন্যায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বড় অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। আর ছোটখাটো অন্যায় করলে তাকে যে কোনো মুহূর্তে চাকুরিচ্যুত করা যাবে, তাতে খুব বেশি আইনকানুন মানতে হবে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা
দিনা/অমিয়/