ভ্যাপসা গরমের মধ্যে অবশেষে নেমেছে স্বস্তির বৃষ্টি। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করে। এরপর ঝোড়ো হাওয়া উড়িয়ে নামে তুমুল বৃষ্টি। তীব্র গরমের পর বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে নগরজীবনে এসেছে প্রশান্তি। তবে নগরবাসী পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেননি এ বৃষ্টি। যারা কর্মব্যস্ততার কারণে ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলেন, তাদের যানজটের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচির কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল
তখন ঘড়ির কাঁটায় বেলা আড়াইটা। রাজধানীর হাতিরঝিলসংলগ্ন কুনিপাড়া এলাকায় তখন তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রাঙ্গণে শ্রমিকদের দল বেঁধে ভিজতে দেখা গেল এ সময়। একটু দূরেই ভারী শিল্প এলাকায় শ্রমিকরাও সড়কে নেমে আসেন। এদের একজন বলেন, ‘অনেক গরম গেল কয়টা দিন। এ বৃষ্টিটার জন্য ওয়েট করতে ছিলাম। কী যে শান্তি লাগতেসে।’
মগবাজারের আমবাগান এলাকার একটি গলিতে শিশু-কিশোরদের দল বৃষ্টির মধ্যে মেতে ওঠে খেলায়। মধুবাগ মাঠে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ে দস্যি ছেলের দল। হাতিরঝিলের পার্কে বসে থাকা ভবঘুরের দলও ভিজেছিল আনমনে। মগবাজার মোড় থেকে মৌচাক যাচ্ছিলেন শ্রাবণী হালদার। তুমুল বৃষ্টিতে রিকশা পাচ্ছিলেন না, মিনিট ১৫ অপেক্ষা করার পর একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা পেয়ে যান তিনি। তারপর রিকশার হুড খুলে রওনা হন গন্তব্যে।

তীব্র যানজটে নাকাল
তবে এই বৃষ্টিবিলাস সব নগরবাসীর ভাগ্যে সয়নি। বুধবার বেলা ১১টা থেকে সাতরাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি চলে রাত পর্যন্ত। পুরো সময় রাজধানীর মহাখালী থেকে মগবাজার পর্যন্ত শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সড়ক ছিল স্থবির। এ সড়কটির আশপাশে তেজগাঁওয়ের লাভ রোড, নাবিস্কো, দক্ষিণ বেগুনবাড়িসহ পুরো হাতিরঝিলে যানজট পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। শুধু তা-ই নয়, এ এলাকার যানজটের প্রভাব পড়ে ধানমন্ডির মিরপুর রোড, শাহবাগ, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, রামপুরা-বাড্ডার প্রগতি সরণিতে। যানজট ছড়িয়ে পড়ে গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকাতেও।
বুধবার বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর রামপুরা থেকে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন মোস্তাকিম ভূঁইয়া। পেশায় ব্যবসায়ী এই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি এক ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে ছিলেন হাতিরঝিলেই। তিনি বলেন, ‘চক্রাকার বাসে কোনোভাবে মহানগর আবাসিক এলাকা পার হতেই জ্যাম শুরু হলো। মধুবাগ ব্রিজ থেকে এফডিসি মোড় আসতে সোয়া এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। বাস থেকে নেমে যাব সে উপায়ও নেই।’
বুধবার সকালে অবরোধের পর মগবাজার-সাতরাস্তা ফ্লাইওভারেও অনেক যানবাহন আটকে থাকে। সাতরাস্তা মোড়ে বলাকা পরিবহনের চালক টিটু মিয়া বলেন, ‘সকালে সাতরাস্তা মোড়ে আইস্যাই দেখি অবরোধ শুরু হইসে। আর আগাইতে পারি নাই। আমার হেল্পার আর আমি বাস নিয়া বইস্যা আছি। সারা দিনে অন্তত তিনটা ট্রিপ মারতে পারতাম। আজ এক ট্রিপও হইল না। মহাজনরে জমাটা দিমু কী আর নিজে খামু কী?’
সংগীতশিল্পী নির্ঝর চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় বনশ্রীর একটি রেকর্ডিং স্টুডিওতে আমার গান রেকর্ড করার কথা। কিন্তু যেতেই পারলাম না। আটকে রইলাম ধানমন্ডি।’ শফিকুল ইসলাম গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসের অপেক্ষায়। কোনো বাসে উঠতে না পেরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার খোঁজ করেন। উপায়ান্তর না পেয়ে পরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই তিনি রওনা হন। কিন্তু পরীবাগ মোড়ে এসে তিনি আটকে যান যানজটে। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় যানজট বসে থেকে আবারও হাঁটতে শুরু করেন শফিকুল। ঢাকার আকাশ তখন প্রবল বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।
বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। যানজটে এমনিতেই গতিসীমা ছিল কম, জলাবদ্ধতায় সড়কে নেমে আসে স্থবিরতা। মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক, মোহাম্মদপুরের বছিলা চৌরাস্তা, মালিবাগ রেলগেট এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পুরান ঢাকার অলিগলিতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে ।
একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান তুর্য বলেন, ‘মালিবাগের চৌধুরীপাড়া থেকে দুই ঘণ্টায়ও আমি লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় ফিরতে পারিনি।’