
চাঁদাবাজি, টিকেট কালোবাজারি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করে সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কাছে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
সোমবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি তুলে ধরেন৷
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাইফুল আলম৷
১০ দফা দাবি হলো- (১) ঈদের ৫ দিন আগে থেকে ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ঢাকার সব বাস টার্মিনাল এবং আশেপাশের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা। (২) ঢাকার চারপাশের চিহ্নিত স্থানগুলো যেমন- চন্দ্রা, বাইপাল, গাজীপুর বাইপাস, সাইন বোর্ড, শনির আখড়া, কেরানীগঞ্জ, ভূলতা, গাউসিয়া, মদনপুর, সাভার, নবীনগর, হেমায়েতপুর এলাকায় স্থানীয় ও হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে যানজটমুক্ত রাখা। (৩) ২৫ মার্চ থেকে ঈদ পর্যন্ত এবং ঈদের পরের তিন দিন পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। (৪) সড়ক ও মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধ-সহ সড়কপথে যেকোনো নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করার লক্ষ্যে সারা দেশের থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ টহলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। (৫) ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে যাত্রীদের যাত্রাপথে সহযোগিতার জন্য ঢাকার সব টার্মিনালে একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ থাকবে। যাদের কাজ হবে যাত্রীদের তাৎক্ষণিক অভিযোগ নিষ্পত্তি ও যাতায়াতে সার্বিক সহযোগিতা করা। এই হেল্প ডেস্ক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট টার্মিনালের মালিক-শ্রমিকদের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক তদারকিতে নিয়োজিত থাকবে। যাত্রীদের যে কোনো প্রয়োজনে এই হেল্প ডেস্ক সেবা দিতে হবে৷ (৬) স্ব স্ব কোম্পানি/কাউন্টারে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখা। এর ব্যত্যয় ঘটলে বা বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা। (৭) কোনো অবস্থাতেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় যাত্রী বহন করিতে না দেওয়া। এ বিষয়ে প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। (৮) ঢাকা সিটিতে চলাচলরত গাড়ি দূরপাল্লায় যাত্রী নিয়ে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া৷ (৯) লাইসেন্সবিহীন/অপেশাদার চালক যেন কোনো যাত্রীবাহী বাস না চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া। (১০) ঈদ বকশিশ বা অন্য যেকোনো নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া বন্ধ করা৷
পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির ঘটনায় পরিবহন মালিকদের নাম গণমাধ্যমে আসায় উষ্মা প্রকাশ করেন পরিবহন নেতা সাইফুল আলম বলেন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রকৃত ঘটনা ও সঠিকভাবে অনুসন্ধান না করে সড়ক পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক নেতাদের নামে চাঁদাবাজির খবরের সঙ্গে সংযুক্ত করে শিরোনাম করা হচ্ছে। যাহা তথ্যভিত্তিক ও সত্য নয়। আমরা এ সব খবরের প্রতিবাদ পাঠালেও সংবাদে তা ছাপানো হয় না, যা দুঃখজনক। এ ঘটনা প্রকৃত সাংবাদিকতার পরিপন্থি বলে আমরা মনে করি।
সড়কে চাঁদাবাজি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল আলম বলেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে সব ধরনের চাঁদা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র স্ব স্ব পরিবহন কোম্পানি ও কাউন্টার মালিকেরা তাদের নিজ নিজ পরিবহন পরিচালনার প্রয়োজনে মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালনা ব্যয় মিটিয়ে থাকেন৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি বা কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট বা জড়িত নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, স্ব-স্ব পরিবহন কোম্পানি ও কাউন্টার পরিচালনার জন্য যে অর্থ আদায় ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য খরচ করা হয় সেসব অর্থ দৈনিক, মাসিক বা বাৎসরিক আয় দেখিয়ে একটি বিশাল অঙ্কের দায়ভার কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/