রানা প্লাজা ধসের ভয়াবহ ঘটনার এক যুগ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো দিনটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও এদিন রানা প্লাজা জোনে কর্মসূচি পালন করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
এসব কর্মসূচি থেকে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের পাশাপাশি দোষী রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবি জানান বক্তারা।
রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক নিলুফা বেগম বলেন, দীর্ঘ এক যুগ হয়ে গেলেও তদন্তসাপেক্ষে এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। নিহত শ্রমিকদের স্বজন এবং আহত যে শ্রমিকরা আছেন, তাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এটা রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক! অবিলম্বে রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সারা জীবনের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া দোষীদের বিচার করে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবিও জানান তিনি।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনার পর দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার কোটি টাকার সাহায্য এসেছে। আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জেনেছি, শ্রমিকরা সেই পরিমাণ টাকা পায়নি। কিছু টাকা পেয়েছে। আমরা আজ বর্তমান অন্তর্বর্তী অরাজনৈতিক সরকারের কাছে দাবি করছি। এই ঘটনায় কোনো দুর্নীতি আছে কি না, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোসরেফা মিশু বলেন, ‘এতদিন পর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আসলে কি পেল, এটাই সবার প্রশ্ন। আগের সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়েও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। সেই সরকারের পতনের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন, জীবন দিয়েছেন। এ জন্য আমরা মনে করি, এই সরকারের শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর ৯ মাস হয়ে গেলেও তারা কেন রানা প্লাজার শ্রমিকদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করল না, বাস্তবায়ন করল না? এতে আমরা আহত হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের বিচারের দাবি পূরণ করা সরকারের পক্ষে কঠিন কিছু বলে আমরা মনে করি না। আমরা শ্রমিকদের কান্না আর দেখতে চাই না। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। সরকার অবিলম্বে যেন তাদের দাবি মেনে নেয়।’
এদিকে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছরে শ্রমিকদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ‘১৩ থেকে ২৪: স্মরণ ও সংস্কারে শ্রমিকের বন্দোবস্ত’ ব্যানারে রানা প্লাজা জোনে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।
সমাবেশে দলটির মুখ্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তাদের বাধা প্রদান করেছে। অনুমতি পর্যন্ত দেয়নি। তার পরের ঘটনা আরও বীভৎস। সেই মানুষগুলোকে উদ্ধারের নাম করে তাদের লাশগুলোকে গুম করার মেকানিজম করেছিল এই অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এনাম। সেই এনামরা, সেই সোহেল রানারা, রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে শ্রমিক হত্যার মহোৎসব করেছিল।
জুরাইনে শ্রমিকদের কবরে শ্রম সচিবের শ্রদ্ধা
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১২ বছর উপলক্ষে গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর জুরাইনে অবস্থিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত শেষে শ্রম সচিব সাংবাদিকদের বলেন, জুরাইন কবরস্থানে ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের এক অংশ, অর্থাৎ ২৯১ জনকে সমাহিত করা হয়েছিল, যাদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। যারা আহত তাদের সুস্থতা কামনা করছি।
এ সময় শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিথি/সিফাত/