জুলাই গণহত্যার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে সরকারকে ১০০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। এই সময়ের মধ্যে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী ৫ আগস্ট শাহবাগ থেকে সচিবালয় অভিমুখে ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে জুলাই, পিলখানা ও শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ‘শহিদি সমাবেশ’ এই আলটিমেটাম দেন শরিফ ওসমান হাদি।
তিনি বলেন, ‘আগামী ১০০ দিন ৬৪ জেলায় গণসংযোগ করবে ইনকিলাব মঞ্চ। যদি এই সময়ের মধ্যে সরকার কার্যকর কোন ভূমিকা গ্রহণ না করে, তাহলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ অগাস্ট) শাহবাগ থেকে ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ ’কর্মসূচি থেকে সচিবালয় ঘেরাও করবে জুলাই জনতা।’
এর আগে ওই সমাবেশ জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ সাইমের মা এদেশে আওয়ামী লীগ যেন রাজনীতি করতে না পারে সেই দাবি তুলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল, যে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হলো? আমি শহিদের মা হিসেবে বলছি, আওয়ামী লীগ যেন আর কখনও এই দেশে রাজনীতি করতে না পারে।’
সরকারকে বিচারের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহিদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের শহিদ পরিবারের কষ্টটা অন্যরা বাইরে থেকে বুঝতে পারবে না। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য এমন কোন দরজা নাই যে আমরা যাই নাই। আমাদের কেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে! সংস্কার ও নির্বাচন চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার। আমরা সরকারকে বলব বিচার কার্যক্রমের দিকে নজর দেন।’
সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘যেই ভারত এতগুলো খুনের হুকুমকারীদের আশ্রয় দিয়েছে, সেই হাসিনাকে ফেরত দেওয়া না পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। খাতা-কলমের সম্পর্ক এবং জনগণের সম্পর্ক কোনদিন এক নয়। আমরা স্পষ্ট করে ভারতকে বলতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি তারা প্রতিবেশীর সম্পর্ক দেখতে চায়, তারা যেই খুনিদের তাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের বাংলাদেশের মাটিতে ফেরত দিতে হবে।’
নির্বাচনের আগে জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দশমাস আগে কখন স্যাংশন, আমেরিকার হস্তক্ষেপ করবে কিংবা হাসিনা মারা যাবে বা নির্বাচন আসবে সেটি অপেক্ষা করা লাগত, তারপরে তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে হতো কিন্তু যখন ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করল; তখন তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখে অন্য কিছু মানায় না। রাজনৈতিক দলগুলো সময়ের বিবেচনায় প্রতিযোগিতায় নেমেছে, আগে সংস্কার না-কি নির্বাচন? মাথায় স্পষ্ট করে ঢুকিয়ে রাখুন, এই খেলা বাদ দিয়ে সবার আগে হতে হবে এই খুনিদের বিচার।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনূভা মাহা, আপ বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ওই সমাবেশ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহিদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে; পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আরিফ জাওয়াদ/এমএ/