
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে বুধবার (২৬ মার্চ) চীনে গেছেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এটি তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। তবে চীন সফরের আগে তিনি ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছ থেকে সে ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে।
শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চান, বাংলাদেশকে চীন তার বিনিয়োগের গন্তব্য করে তুলুক, বিশেষ করে উৎপাদন শিল্পে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায় উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে ভারতে প্রধান উপদেষ্টার একটি দ্বিপক্ষীয় সফরের ব্যাপারে আমরা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ভারতীয় পক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। চীনে সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে ওই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চীন থেকে ফিরেই প্রধান উপদেষ্টা ব্যাংককে যাবেন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। ৩ ও ৪ এপ্রিল ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস চেয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে।’
এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘অনেক দিন আগে এই ইচ্ছা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে বার্তা দিয়েছে। কিন্তু বৈঠক নিয়ে ভারত এখনো কিছু জানায়নি। তবে আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘সফরকালে চীনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত করতে চান। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘বহু দেশ নানা কারণে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত। বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওয়াং ই সেই সময় ইউনূসকে ‘চীনের পুরোনো বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেন। সেই বৈঠকে চীনকে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্যানেল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশকে তিনি দ্রুত দক্ষিণ এশিয়ার ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক অবস্থান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের অর্থনীতি বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’
অধ্যাপক ইউনূসকে মালয়েশিয়াও দ্বিপক্ষীয় সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি তা গ্রহণও করেছেন। সূত্র: হ্য হিন্দু