
শেষ সময়ে ঈদের কেনাকাটার জন্য রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। এর আগে কখনো ক্রেতাদের এত ভিড় দেখা যায়নি। চিত্রটি বৃহস্পতিবারের নিউ মার্কেটসংলগ্ন এলাকার। তবে সব দোকানে যে ভিড় হচ্ছে, তা নয়। পাঞ্জাবির কিছু দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কিছু দোকানে আবার ক্রেতা নেই। শেষ সময়ে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও দোকানিরা বলেন, বিক্রি গত বছরের তুলনায় অনেক কম। ভেতরের দোকানে দরদাম করে অনেক ক্রেতা কিনছেন ফুটপাতের পণ্য।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বেলা ১টায় সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেটের দিকে যেতে ফুটপাতে বেশ ভিড় চোখে পড়ে। ভিড় ঠেলে সামনের দিকে যেতে হচ্ছিল। প্রায় সবাই এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। যে যার মতো পণ্য পছন্দ দরদাম ও কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। দু-তিন দিন আগে এখানে এসে এতটা ভিড় দেখিনি। হেঁটে যেতে বেগ পেতে হয়নি। কয়েকটি পাঞ্জাবির দোকানে খুব ভিড় দেখা যায়। ফুটপাত ও ফুটপাতসংলগ্ন দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে শার্ট-প্যান্টসহ অন্য পোশাকের দোকানে খুব একটা ভিড় দেখা গেল না।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতাদের কেউ কেউ মূল্যছাড়ের ঘোষণা লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ হ্যান্ডমাইকে হাঁকডাক দিচ্ছেন। ‘দুই শ দুই শ দুই শ। যেটা ধরবেন দুই শ। ওয়ান পিস দুই শ। টু পিস তিন শ।’ এভাবেই হাঁকডাক দিচ্ছিলেন ফুটপাতের বিক্রেতা খোকন।
তিনি বলেন, ‘এত দিন খুব একটা ক্রেতা ছিল না। বিক্রি ভালো হয়নি। অন্য বছরের তুলনায় খুব কম। রোজার এত দিনে ক্রেতা কম থাকলেও শেষ সময়ে এখন কিছুটা বাড়ছে।’
তার দোকানে দাঁড়ানো এক ক্রেতা বললেন, ‘মার্কেটের ওপরের দোকানগুলোতে দরদাম করেছি। সেখানে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। এখন ফুটপাতে দেখছি। ফুটপাতে বাজেটের মধ্যে পেলে কিনব। যেহেতু ঈদ, কিছু না কিছু কিনতে তো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাতে এখন কম দামে অনেক কোয়ালিটিসম্পন্ন জিনিস পাওয়া যায়। সেসব জিনিস আপনাকে অবশ্য দেখেশুনে কিনতে হবে।’
সবুজ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এতদিন সময় পাইনি কিনতে আসার। তা ছাড়া বাড়ি যাব শেষ রোজার দিন। ভেবেছি যাওয়ার আগে কিনব। সে জন্য আগে মার্কেটে আসিনি। আজ এসেছি কিনব বলে।’
বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিক্রি নেই। আজ কত রোজা বলেন? অন্য বছর হলে এমন সময়ে আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় থাকত না। পরিচিত কেউ এলে বলতাম, ভাই, ঈদের পরে আইসেন, তখন কথা বলব। কারণ এত কাস্টমার থাকত যে কথা বলা তো দূরের কথা, ডানে-বাঁয়ে তাকানোরও সুযোগ থাকত না। আর এখন মাছি মারছি। তাইলে বোঝেন কী অবস্থা।’
পাশের একটি দোকানে চোখ পড়লে দেখা যায়, সেখানে এক নারী একটি শার্ট দেখছেন। দেখার পর তিনি দাম জিজ্ঞেস করলেন। বিক্রেতা ১ হাজার ২০০ টাকা চাইলেন। ওই নারী ৩০০ টাকা দাম বললেন। পরে তিনি না নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে বিক্রেতা তাকে ডাকলেন, ‘কত দাম হলে নেবেন?’ ওই নারী জানালেন, তিনি নেবেন না। পরে ছেলেকে নিয়ে এসে নেবেন। মাপে ঠিক না-ও হতে পারে। বিক্রেতা বললেন, ‘সাইজ ঠিক না হলে পরে এসে চেঞ্জ করে নিয়েন।’ কিন্তু অনেক অনুরোধের পরেও শার্টটা তিনি বিক্রি করতে পারলেন না।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন যতই ভিড় হোক, মন্দা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। ১৫ রোজা থেকে শুরু করে চাঁদ রাত পর্যন্ত বিক্রি ভালো হয়। এবার ২৫ রোজা পর্যন্ত তেমন একটা বিক্রি নেই। বাকি কয়েক দিনে খুব একটা বিক্রি হবে তা মনে হচ্ছে না।’