জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ পৃথক করার পদক্ষেপ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবিদাওয়া বিবেচনায় নিয়ে পৃথক করার অনুরোধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কথা বলার পর মৌখিকভাবে এ আদেশ স্থগিত করা হয়েছে বলে এনবিআর চেয়ারম্যান আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জানিয়েছেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, এনবিআরের সংস্কার কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের ছয় হাজারের বেশি নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। সংস্কারের সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও কোনো আলোচনা ছাড়াই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে এমন অভিযোগ তোলে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএভ) ও আয়কর পরিদর্শকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে বৈঠক করে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে তাদের মতামত জানান। এনবিআর সংস্কার ও একে দুভাগে বিভক্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। এনবিআরের বাইরে থেকে অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে দুই ভাগের প্রধানদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা তারা মানবেন না বলেও জানিয়ে দেন। এনবিআর থেকে আদায় ও নীতি বিভাগের প্রধান হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে।
তারা আরও বলেন, সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন মাঠপর্যায়ের কর্মীরা। তাই সংস্কার এবং এনবিআর পৃথক করা হলে তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে বা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তা মাঠপর্যায়ের হাজার হাজার কর্মকর্তার মতামতের ভিত্তিতেই উঠে আসতে পারত। এ ছাড়া এনবিআর পৃথক হলে মাঠপর্যায়ে কী প্রভাব পড়বে, এখন থেকে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, রাজস্ব ঝুঁকি কোথায়, কী ধরনের প্রযুক্তি ও সহায়তা প্রয়োজন- এসব বিষয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল।
কর্মকর্তারা রাজস্ব খাতে কর্মরতদের জন্য রেশন, ঝুঁকি ভাতা, আবাসন ও যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন। রাজস্ব বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়টিও তুলে ধরেন। আয়কর ও কাস্টমস-ভ্যাট অনুবিভাগের মাঠপর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি হলেও সংস্কার কমিশন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সংগঠনের নেতারা বলেন, রাজস্ব রাষ্ট্রের অক্সিজেন। এনবিআর রাষ্ট্রের আয়ের সিংহভাগ জোগান দেয়। অথচ ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সময় তাদের কথা কেউ মনে রাখে না। মাঠপর্যায়ে সরাসরি রাজস্ব আহরণে নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাই দিনরাত পরিশ্রম করেন, কিন্তু লজিস্টিক সাপোর্ট অপ্রতুল। তবুও তারা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে বদ্ধপরিকর। তারা মনে করেন, যে বিভাগে সরকারের ব্যয় বিনিয়োগের মতো, সেখানে কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার করা কার স্বার্থে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খসড়া অধ্যাদেশের প্রস্তাব গৃহীত মতামতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও অভিযোগ করেন কর্মকর্তারা। অন্যান্য সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করলেও রাজস্ব বোর্ড সংস্কার কমিশন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বলে মনে করেন তারা।
সব আইন-বিধি যুগোপযোগীকরণ, রেশন, ঝুঁকি ভাতা, আবাসন, যানবাহন, বদলি নীতিমালা, প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিংসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে আলোচনা না করে শুধু এনবিআর দুভাগ করার ফলপ্রসূতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, সব পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই কেবল টেকসই সংস্কার সম্ভব।