সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের বিদেশ-ফেরতদের জরুরি সেবা পাওয়া যাবে। দেশে আসামাত্রই বিমানবন্দর থেকে ব্রাকের অভিবাসী সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রসারিত করতেই এই উদ্যোগ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনফারেন্স হলে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তপৃক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, দেশে ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে গত আট বছরে ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষ সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশ-ফেরত মানুষ যেন দেশে আয় করতে পারেন, সেজন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ।
সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রবাসীকল্যাণ শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার) পলি রাণী দেব বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মূল বিষয়বস্তুর ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থান করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল ইসলাম হাসান।
সভা সমন্বয়কের বক্তব্যে শরিফুল হাসান বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রামের পাশাপাশি সিলেটে ও বিদেশ-ফেরতদের পাশে আমরা আছি। ব্র্যাক গত আট বছরে ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা দিয়েছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় মনে করি বিদেশ-ফেরতদের সহায়তায় বিমানবন্দরে একটি কাঠামো বা এসওপি থাকা উচিত। যেখানে কার কী কাজ উল্লেখ থাকবে। আর শুধু জরুরি সহায়তা নয়, বিদেশ-ফেরতদের কাউন্সেলিং ও অর্থ সহায়তাও করছি আমরা।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ-ফেরতদের জরুরি সেবা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সিলেট বিমানবন্দরে ব্রাকের জরুরি সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করবে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, এপিবিএন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরসহ কর্মরত সকল সংস্থা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রতিনিয়ত সহায়তা করে আসছে বলেই আমরা বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদের জরুরি সহায়তা প্রদান করতে পেরেছি। এই সহায়তা বিস্তৃত করতে ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে প্রত্যাশা-২ নামে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বিমানবন্দরে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশ-ফেরত মানুষ যেন ফের দেশে আয় করতে পারেন, সে জন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে আর্থিক সহায়তা করা হবে। সিলেটে যে কারো জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হলে ব্রাক তার পাশে থাকবে।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, সেবা মানে মানবিকতা। প্রবাসীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে সবাইকে। আমরা এই কাজটা সবসময় করার চেষ্টা করি। অভিবাসনপ্রবণ জেলা হওয়ায় বিদেশ থেকে ফেরত আসার তালিকায়ও সিলেটের অনেক মানুষ আছেন। ঢাকার পাশাপাশি যেহেতু সিলেটেও অনেক ফ্লাইট আসে, তাই অনেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই ফেরত আসেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এখানে বিদেশ-ফেরতদের নানা জরুরি সহায়তা দিচ্ছে। বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই এই তথ্য জানলে আরও বেশি মানুষ এই সেবা পাবেন। সমন্বিতভাবে কাজ করলে আরও বেশি মানুষকে সহায়তা করা যাবে বলে আমরা মনে করি।
বিশেষ অতিথি সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রবাসীকল্যাণ শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার) পলি রাণী দেব বলেন, প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন রেমিট্যান্স-বিনিয়োগের বিষয়ে সচেতন থাকেন সেটা নিশ্চিত করতে শুধু অভিবাসীদেরকেই না, তাদের পরিবারকেও আমাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনের পর যৌথসভায় শরিফুল হাসানের সমন্বয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়।
আলোচনায় অংশ নেন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রিয়াজ আহমেদ, উপ-পরিচালক (ফায়ার) আবু মোহাম্মদ ওমর শরীফ, সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক নাজমুস সাকিব, সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আসিফ আজিজ, সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ নাহিদ নিয়াজ ও খবরের কাগজের সিলেট ব্যুরোপ্রধান উজ্জ্বল মেহেদী।
সমন্বয় সভায় ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মরত সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কসহ সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান কার্যালয় ও সিলেটের মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অমিয়/