
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবস্থাপনায় সংকট দেখা দিয়েছে। ঈদুল আজহার এই সময়ে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়েকে দুই অঞ্চলে ভাগ করে ব্যবস্থাপনা সমন্বয় করা হয়। একটি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে (সদর দপ্তর চট্টগ্রাম) এবং অপরটি, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে (সদর দপ্তর রাজশাহী)। একজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আঞ্চলিক রেলওয়ের প্রধান কর্মকর্তা। অথচ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে শূন্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশ্চিমাঞ্চল জিএম পদটি (গ্রেড-২) শূন্য হওয়ার পর গত ২০ এপ্রিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আহম্মদ হোসেন মাসুমকে অতিরিক্ত (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে একই সঙ্গে মহাব্যবস্থাপকের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ আরও একটি পদে দায়িত্ব দেওয়ায় ব্যবস্থাপনাগত নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নিয়মিত ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল ট্রেন পরিচালনায় বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ব্যবস্থাপনার অভাবে ট্রেনের শিডিউল ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) সুজিত কুমার বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, সাধারণত রেলের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে রাজধানী থেকে নিয়মিতভাবে ৫৮টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এর সঙ্গে লোকাল ট্রেন, কমিউটার ট্রেন ও মেইল ট্রেন চলাচল করে ৭০টি। সাধারণ সময়েই এই ১২৮টি ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত আন্তনগর ও স্পেশাল ট্রেন। এতে পশ্চিমাঞ্চলের এসব ট্রেনে ঈদ উপলক্ষে দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করা হবে। তা ছাড়া ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন রাজধানী থেকে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে আরও প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে।
এমন অবস্থায় নিয়মিত ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ট্রেনের বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পশ্চিমাঞ্চল রেলেওয়ের প্রধান প্রকৌশলী জিএম পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘কত মন্ত্রণালয়ে এখনো কত সচিব রুটিন দায়িত্বে আছেন। কাজেই এটা কোনো সমস্যা হবে না। কোনো অসুবিধা নেই। কবে নাগাদ জিএম পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে রেল সচিব বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারব না। তবে দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া হবে। কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলের শূন্য পদে (জিএম) নিয়োগের লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে রেলওয়ে থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ এই পদে এখনো কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়নি রেলপথ মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ এই দুটি পদের কর্মকর্তারাই নির্দিষ্ট জোনের সার্বিক বিষয় দেখভাল করে থাকেন।
আগামী ৭ জুন পালিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই উপলক্ষে গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে ঈদের যাত্রী পরিবহন। এর আগে ২১ মে থেকে শুরু হয়েছে ঈদ উপলক্ষে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। বিশেষ এই ট্রেনগুলো ঈদের আগে ৪ থেকে ৬ জুন এবং ঈদের পরে ৯ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত চলাচল করবে। ঈদের দিনও কয়েকটি বিশেষ ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
রেল সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ৪৩টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। এতে আসন থাকবে প্রায় ৩৩ হাজার ৩১৫টি। এ ছাড়াও, প্রতিটি ট্রেনে মোট আসনের ২৫ শতাংশ টিকিট দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই টিকিট শুধুমাত্র স্টেশনের কাউন্টারে বিক্রি করা হবে।