
চার বিভাগে ভারী এবং অন্য বিভাগগুলোতে কম-বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমবার (২ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল রবিবার জানায়, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা নদীগুলোর ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীগুলোর পানি সমতল সোম ও মঙ্গলবার বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে; সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই ও সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার ওই নদীগুলোসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে ও যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলোর পানি সমতল আগামী চার দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি সমতল আজ সোমবার বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীগুলোর পানি সমতলও বৃদ্ধি পেতে পারে জানানো হয় পূর্বাভাসে।
টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বাড়তে শুরু করেছে পানি। বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ছয় গ্রামে ঘরবাড়ি ডুবে দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। জেলার কাউখালী ও জুরাছড়িতে সড়কধসে সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। একদিকে পাহাড়ধসে বন্ধ হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ, অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ বন্যার আতঙ্কে রয়েছে।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনার এক দিন পর লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার সকালে রামগতির বিবির হাটের কাছে মেঘনা নদীতে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। এদিকে জোয়ারের স্রোতে উপকূলে ভেসে এসেছে এক জোড়া ডলফিন। জোয়ারের পানি নিচে নেমে গেলেও নামতে পারেনি ডলফিনগুলো। সেই ডলফিন নিয়ে দুষ্টুমিতে মেতেছে স্থানীয় জেলেরা। অনেকে তা ভিডিও করে ছেড়ে দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ভারত সীমান্তবর্তী কালিকাপুর, আবদুল্লাহপুর, ইটনাসহ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে থাকে। বৃষ্টিপাতের কারণে পানিও বাড়ছে গ্রামগুলোতে। বর্তমানে অন্তত ১৫টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে।
(এ প্রতিবেদন তৈরিতে সিলেট, রাঙামাটি, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী ও হাতিয়া প্রতিনিধি সহায়তা করেছেন)