ঢাকা ১ শ্রাবণ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
English

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আস্থা ভোটের পক্ষে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০০ পিএম
আস্থা ভোটের পক্ষে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক। ছবি: পিআইডি

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের আস্থা ভোটের পক্ষে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দলই ঐকমত্য পোষণ করেছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায় বেশির ভাগ দল। তবে দলগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কার অধীনে হবে তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন চায় না বিএনপি। ঠিক বিপরীত অবস্থানে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই স্থানীয় নির্বাচন চায় জামায়াত ও এনসিপি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় এ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে আলোচনা শুরু হয়ে শেষ হয় ৬টার দিকে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল ও দুটি জোট অংশ নেয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নিম্নকক্ষে নারী আসন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধি নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে আর হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি ও সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে এবং উপমহাদেশের চর্চা বিবেচনা করে তার দলের পক্ষ থেকে উপযুক্ত মত হচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আস্থা ভোট না থাকলে সরকার পরিচালনায় স্থায়িত্ব থাকবে না। প্রতিনিয়ত সরকার পরিবর্তিত হতে থাকবে, যা শোভনীয় হবে না। আস্থা ভোট, অর্থবিল এবং সংবিধান সংশোধন এই তিনটি ছাড়া সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান করবেন, এতে বিএনপি একমত। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে এই আস্থা ভোটের বিষয়টি ৭০ অনুচ্ছেদে যুক্ত করতে বিএনপি প্রস্তাব করেছে। যদি কোনো সময় যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তাহলে যাতে পার্লামেন্ট মেম্বাররা তার জন্য ভোট দিতে পারেন, সেটা ৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার পক্ষে আমরা মতামত দিয়েছি।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘অর্থ বিলের পাশাপাশি আস্থা ভোট থাকতে হবে। কারণ সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনি সরকারের স্থিতিশীলতা দরকার।’

আস্থা ভোট রেখে দিলে প্রধানমন্ত্রী আনচ্যালেঞ্জড থেকে যাবেন, উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে কোনো উপায় বের করতে হবে। এক দিনে শেষ না করে আরেকটি আলোচনায় বসে কোথায় ঐকমত্য হলেও তা চূড়ান্ত করতে হবে।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে মতামত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বিএনপি।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, আমাদের প্রস্তাব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে।

অপরদিকে, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হোক সবাই চায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে ভালো হবে। কারিগরি দিক নিয়ে আমাদের আরও আলোচনা করতে হবে।’

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্ধারণ

বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে ৫০ শতাংশ বিরোধী দল থেকে করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বিএনপিসহ সব দলই একমত পোষণ করে। তবে বিএনপি চারটি কমিটির সভাপতি পদে বিশেষ করে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি, প্রিভিলেজ ও এস্টিমেট কমিটির ছাড়া বাকিগুলোর ব্যাপারে একমত বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কয়েকটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিরোধীদলীয় সদস্যদের দেওয়ার ব্যাপারে তখনই প্রায় সব দল একমত হয়েছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি এ জাতীয় সংসদীয় কমিটি দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে সংসদে জবাবদিহি এবং ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হয়।’

তিনি বলেন, ‘কয়টি সংখ্যা ও কী কী মন্ত্রণালয় সেটি এখনই নির্ধারণ হবে না। সেটি জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এবং সাইজ অব দ্য অপজিশন পার্টি, সেটিও ম্যাটার করে। সেই সংখ্যা তখন নির্ধারণ করা যাবে। কারণ, বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা কম হলে এখনই পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করা হলে সেটি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি মৌলিক চারটি কমিটি- পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি, প্রিভিলেজ ও এস্টিমেট কমিটিতে বিরোধী দলের নির্বাচিত এমপিদের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে। আর বাকি যে কমিটিগুলো সেখানে সংখ্যানুপাতিক হারে বিরোধী দল থেকে করা হবে।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় প্রস্তাবিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি। কারণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সরকার দলের সদস্য সংখ্যাই বেশি থাকে। 

নারীদের আসন ১০০ করার ব্যাপারে একমত সব দল, পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত

বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদের আসন ৩৫০ থেকে ৪০০ আসনে করার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সব দলই নীতিগতভাবে একমত পোষণ করছে। তবে নারীরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, ভোট না বর্তমান পদ্ধতি থাকবে, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসন চায়, আবার কোনো কোনো দল চলমান পদ্ধতি চায়। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংরক্ষিত আসন বাড়ানো হলেও এটিতে আপাতত মনোনয়নের পক্ষে বিএনপি। আমরা মনে করি, নারীর সংরক্ষিত আসনে এখনই নির্বাচনের সময় হয়নি। তবে এর নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে, এ বিষয়ে কোনো ঐক্য এখনো হয়নি। আরও আলোচনা হবে। দেশের নারী সমাজকে আরও বেশি এগিয়ে নেওয়ার জন্য বর্তমান বিধান রাখা উচিত।’

নারী আসন প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসলিম জারা বলেন, ‘আমরা চাই জাতীয় সংসদের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ নারী জনপ্রতিনিধি সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হোক। ৩০০ আসন বাড়িয়ে ৪০০ করা হলে ১০০ আসনে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং সেখান থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব উঠে আসবে। তিনি বলেন, নারীরা নিজস্ব আসন থেকে নির্বাচিত হলে তারা নির্বাচনী মাঠ, প্রচারণা, জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি এবং কাজের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ পান।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন চায় বিএনপি, বিপক্ষে এনসিপি

চার মাস নয়, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন রাখা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শুধু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন মাসের বেশি হওয়া উচিত নয়। যদিও কমিশন প্রস্তাব করেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস হওয়া উচিত।’

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাসের প্রস্তাবে এনসিপি একমত বলে জানিয়ে সরোয়ার তুষার বলেন, ‘কয়েকটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছয় মাস রাখার পক্ষে। বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। মেয়াদ তিন মাস বা চার মাসের বিষয়ে আমরা নমনীয় থাকব। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত হলে চার মাস প্রয়োজন হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন, গণফোরাম, সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, আমজনতার দল, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।

দলগুলোকে ঐক্যে আনার নীতিগত দিক পর্যালোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম
দলগুলোকে ঐক্যে আনার নীতিগত দিক পর্যালোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন
ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়োগ ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য দূর করতে সম্ভাব্য প্রস্তাব ও নীতিগত দিক পর্যালোচনা সভা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সভার শুরুতে ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উপলক্ষ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় গত ১৪ দিন ধরে কমিশনের সঙ্গে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক আলোচনার বিভিন্ন দিক ও অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় কমিশনের সদস্যরা বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত এবং গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। 

একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়োগ এবং দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য, সেগুলো দূর করার সম্ভাব্য প্রস্তাব ও নীতিগত দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

এলিস/সুমন/

গুরুতর অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৬ পিএম
গুরুতর অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান
ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রবীণতম ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বন্ধু ও অনুসারীরা জানিয়েছেন, তিনি নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) তাকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিউ) নেওয়া হয়েছে।

১৯৭০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ১৯৭৬ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় তিনি নির্মাণ করেন ‘একাত্তর স্মরণে’ ভাস্কর্য। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজধানী সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে ‘স্টেপস’ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এরপর আন্তর্জাতিক পরিসরেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ক্যানভাসে হামিদুজ্জামান খান জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিমূর্ত ধারায় ফুটিয়ে তুলেন নিসর্গ ও মানবশরীর।

সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ‘হামলা’, বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘শান্তির পায়রা’- তার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ‘হামিদুজ্জামান খান ১৯৬৪-২০১৭’ শিরোনামে তার রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ফেলোশিপ দিয়েছে।

দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ তার ভাস্কর্য সংগ্রহ দিয়ে বড় এক ভাস্কর্য বাগান নির্মাণ করেছে গাজীপুরের কড্ডায়। পাঁচ দশকেরও অধিক সময়ের কর্মজীবনে তার শিল্পকর্ম বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, বুলগেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত বা স্থাপিত হয়েছে।

জয়ন্ত সাহা/

নতুন করে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা যাবে না: অন্তর্বর্তী সরকারকে বাম জোটের নেতারা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম
নতুন করে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা যাবে না: অন্তর্বর্তী সরকারকে বাম জোটের নেতারা
ছবি: সংগৃহীত

নতুন করে কোনো ভয়ের রাজত্ব তৈরি করা চলবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন বাম জোটের নেতারা।

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটেরা। দেশে কোনো কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী ধারার উত্থান হলে জনগণ তা রুখে দেবেও বিশ্বাস বাম নেতাদের।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদসহ সব শহিদদের স্মরণে স্মরণ সভার আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ডা. জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।

সভার শুরুতে সিপিবি কার্যালয়ে শহিদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় বাম জোট নেতারা এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে নীরবতা পালন করেন। 

সভায় সরকারের উদ্দেশে বাম নেতারা বলেন, ‘কোনোভাবেই জনগণের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার খর্ব করা চলবে না। নতুনভাবে কোনো ভয়ের রাজত্ব তৈরি করা চলবে না। যেকোনো কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী ধারার উত্থানকে মোকাবিলা করতে জনগণকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বাম জোট নেতারা বলেন, ‘আমরা জানি দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতির ধারা পরিবর্তন না করতে পারলে, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। মানুষের মুক্তি আসবে না। এজন্য আমরা ব্যবস্থা বদলে কথা বলেছি। গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়াই ছিল গণঅভ্যুত্থানের সাধারণ আকাঙ্ক্ষা। দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থ প্রাধাণ্য না দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। এই কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হলে অপশক্তি দেশকে নানা ভাবে অস্থিতিশীল করতে চাইবে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দল নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’ 

সভায় গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়। বাম নেতারা বলেন, ‘সরকারের এ ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ আগামী দিনের গণতন্ত্রের পথ চলাকে ব্যহত করতে পারে।’

দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে তারা বলেন, ‘কোনোভাবেই যেন পতিত স্বৈরাচার, দেশের অভ্যন্তরে থাকা অপশক্তি এবং আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনকে সজাগ থাকতে হবে।’ 

জয়ন্ত সাহা/সুৃমন/

গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না: রিজওয়ানা হাসান

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম
গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না: রিজওয়ানা হাসান
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেছেন, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা তদন্ত করে দায়িত্বহীনতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় তারা রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার প্রাক্কালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের মুখোমুখি হলে তাদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। 

সৈয়দা রিজওয়ান হাসান আরও বলেন, প্রথমত এই হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবশ্যই এর দ্রুত একশন নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টাও নিন্দা জানিয়েছেন এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু এনসিপি নয়, যেকোনো দলের ওপর যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাস্ত করব না।

তিনি বলেন, এতবড় একটা গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। সারাদেশে সার্বিকভাবে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এনসিপি বেশ কয়েক জেলায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমন ঘটনা কোথাও ঘটেনি। যারাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বেও আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীকে অবরুদ্ধ করে নৈরাজ্য করার অপচেষ্টা চালায়। আসলে আওয়ামী লীগ এখনো প্রশাসনের সর্বস্তরে রয়ে গেছে। গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গেড়েছে। এদের কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। দ্রুত আমরা বিচার সম্পন্ন হতে দেখতে পাব। 

জুলাই সনদ সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই সনদ আমাদেরই বেশি প্রয়োজন। কারণ আমরা থাকব না। এটা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। সনদের অনেকগুলো বিষয় আছে। এ ব্যাপারে দলগুলোকে ডেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। সবার খসড়া একত্রে নিয়ে আমরা খসড়া তৈরি করার চেষ্টা করছি। যত দ্রুত সম্ভব এটা করা হবে। 

আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে গেছে। সেখান থেকে নতুন করে গড়ার কাজ করছি আমরা। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে তাদের লোক। তাই বেগ পেতে হচ্ছে। পুলিশকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। সে পর্যন্ত গোপালগঞ্জের মত ঘটনার মোকাবিলা করতে হবে। 

আজ এনসিপির সঙ্গে যা করা হয়েছে তা মূলত নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা। আমরা এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাস্ত করব না। পুলিশসহ যাদেরই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। 

মমিনুর আজাদ/মাহফুজ

 

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৩

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৮ পিএম
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৩
ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক-পুলিশসহ অনেকেই আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- জেলা শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে যুবদলকর্মী দীপ্ত সাহা (২৫), শহরের থানাপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার আড়পাড়া এলাকার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮)।

বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শেখ মো. নাবিল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তারা সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।

এর আগে, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়তে দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার প্লাটুন সদস্য।

সংঘর্ষের ঘটনায় বিকেলে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।  

এদিকে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, বুধবার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী দিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। 

বাদল/সালমান/