ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

স্থিতিশীল বাজারে স্বস্তিতে ক্রেতারা: আসিফ মাহমুদ

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
স্থিতিশীল বাজারে স্বস্তিতে ক্রেতারা: আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘এবার স্থিতিশীল বাজারে স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছেন ক্রেতারা।’

মঙ্গলবার (৩ জুন) উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুকের এক পোস্টে এ কথা বলেন। 

পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে এবার তা হয়নি। গত বছরের কোরবানির তুলনায় কমেছে অধিকাংশ মসলার দাম।’

উপদেষ্টা নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু মসলার বাজারমূল্য তুলে ধরেন। যেমন- গত বছর কোরবানি ঈদের সময় পেঁয়াজের কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ৭০-৮০ টাকা। এখন ৪৫-৫০ টাকা। দেশি রসুনের কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ১৯০-২০০ টাকা। এখন ১১০-১২০ টাকা। আদার কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ২২০-২৬০ টাকা। এখন ১১০-১২০ টাকা। এরকম অধিকাংশ মসলার মূল্য গত বছরের চেয়ে কম।

লিবিয়ায় আটক ১৬২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
লিবিয়ায় আটক ১৬২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটকসহ মোট ১৬২ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন। 

বুধবার (৯ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়ার ধারাবাহিক ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

তাদের মধ্যে বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে ১৪১ জন এবং ত্রিপলির তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে ১৬ জন অভিবাসী আটক ছিলেন। এ ছাড়াও ৫ জন ত্রিপলীতে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। 

এর আগে আইওএম কর্তৃক ভাড়া করা বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট বেনগাজীর বেনিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বেনগাজীর বেনিনা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাদের বিদায় জানান। এ সময় তারা অভিবাসীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দূতাবাসের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। 

দূতাবাসের প্রতিনিধি দল ইতোপূর্বে গানফুদা ও তাজুরা ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের অনুকূলে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং আইওএম-এর সার্বিক সহযোগিতায় তাদের বিনা খরচে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।

অমিয়/

বাংলাদেশে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ নিয়ে চীন কাজ করছে: রাষ্ট্রদূত

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
বাংলাদেশে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ নিয়ে চীন কাজ করছে: রাষ্ট্রদূত
ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা বিবেচনায় নিয়েই চীন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘বাংলাদেশ-চায়না শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে সহযোগিতা দিতে একটি সেন্টার খোলা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে চায়না টাউন নেই। এখানে একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।’

রবিউল/সালমান/

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:০২ পিএম
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শুরু হচ্ছে আজ
প্রতীকী ছবি

পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর)। এ আলোচনা বুধবার (৯ জুলাই) শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প গত ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকার প্রধানের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া বাণিজ্য সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

মেহেদী/

গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিশ্চিত করল বিবিসি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:১৪ পিএম
গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিশ্চিত করল বিবিসি
খবরের কাগজ (ফাইল ফটো)

গত বছরের ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি দায়ী - এমন অভিযোগ উঠেছে একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে, যেটি বিবিসি আই (BBC Eye) ও বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি বিভাগ যাচাই করেছে।

এই অডিওটি গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হয়। তাতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি তার নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ অনুমতি দিয়েছেন এবং বলেন- ‘তাদের যেখানে পাবে, সেখানেই গুলি করবে।’

বাংলাদেশের সরকারি কৌঁসুলিরা এই রেকর্ডিংটিকে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।

জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে, এই সহিংসতায় প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন।

তবে ভারত পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দল এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, অডিওটিতে কোনো ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ বা ‘বাড়তি বল প্রয়োগের’ প্রমাণ নেই।

অজ্ঞাত এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া এই অডিও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ যে, তিনিই সরাসরি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন।

এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে। পরে এটি একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়। যার ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এটি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।

সবচেয়ে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে ৫ আগস্ট - যেদিন হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান, আর বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়েন।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের তদন্তে ঢাকার এক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে গণহত্যার আগে অজানা অনেক তথ্য পাওয়া গেছে - এবং নিহতের সংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

১৮ জুলাই এই ফোন কলের সময় শেখ হাসিনা গণভবনে অবস্থান করছিলেন বলে একটি সূত্র বিবিসিকে জানায়।

এই সময়টিতে আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পুলিশের গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ঘিরে তৈরি জনরোষের জবাব দিচ্ছিলেন। ফোন কলের পরদিনই সামরিক মানের অস্ত্র ঢাকায় মোতায়েন ও ব্যবহার করা হয় - এমনটি পুলিশের নথিপত্র থেকে বিবিসি নিশ্চিত করেছে।

এই অডিও রেকর্ডটি জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) কর্তৃক রেকর্ড করা ফোনকলগুলোর একটি, যারা সরকারিভাবে যোগাযোগ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।

অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। আন্দোলনের পর থেকে শেখ হাসিনার অনেক ফোনকলের ক্লিপ অনলাইনে ছড়িয়েছে, তবে অনেকগুলো যাচাই হয়নি।

১৮ জুলাইয়ের কলটি বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শেখ হাসিনার পরিচিত কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত করেছে।

বিবিসি স্বাধীনভাবে এই অডিওর সত্যতা যাচাই করেছে ব্রিটিশ অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশটের (Earshot) মাধ্যমে। তারা নিশ্চিত করেছে অডিওটি এডিট বা বিকৃত করা হয়নি। তাছাড়া এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ‘অত্যন্ত কম’।

ইয়ারশট জানায়, কলটি সম্ভবত কোনো কক্ষে স্পিকারে বাজিয়ে রেকর্ড করা হয়, কারণ অডিওতে ফোনের ফ্রিকোয়েন্সি এবং  ব্যাকগ্রাউন্ডে শব্দ রয়েছে। অডিওটিতে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত করা গেছে, যা প্রমাণ করে রেকর্ডিংটি আসল এবং বিকৃত করা হয়নি।

তারা শেখ হাসিনার কথা বলার ছন্দ, স্বর এবং নিঃশ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করে বলেছে, অডিওটিতে কৃত্রিমতা বা কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।

ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান, যিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এই রেকর্ডিংগুলো তার ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পরিষ্কার, সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।’

আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বিবিসি যে রেকর্ডিংয়ের কথা বলছে, তা আসল কি না তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।’

শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সরকার ও পুলিশের বহু কর্মকর্তাকে বিক্ষোভ দমনে দায়ী করা হয়েছে। মোট ২০৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন কারাগারে রয়েছেন।

বিবিসি আই ৩৬ দিনের বিক্ষোভে পুলিশের হামলা-সংক্রান্ত শত শত ভিডিও, ছবি ও নথি বিশ্লেষণ করেছে। তদন্তে দেখা যায়, ৫ আগস্ট ঢাকার ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা। সে সময় প্রাথমিক প্রতিবেদনে মৃতের সংখ্যা ৩০ বলা হয়েছিল।

বিবিসির অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড শুরু এবং শেষ হয়। ভিডিও, সিসিটিভি ও ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেনাবাহিনী যে স্থান বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে আলাদা রেখেছিল, সেখান থেকে চলে যাওয়ার পরপরই পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ দৌড়ে পালাতে থাকা বিক্ষোভকারীদের গুলি করে। পরে পুলিশ সদস্যরাই নিকটবর্তী সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। ওইদিন রাতে বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় আগুন দিলে ছয় পুলিশ সদস্য নিহত হন।

বাংলাদেশ পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘গত বছরের জুলাই ও আগস্টের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু দুঃখজনক ঘটনায় তৎকালীন পুলিশের কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত চালাচ্ছে।’

গত মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার নির্দেশ, সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে সহিংসতা, উসকানি, ষড়যন্ত্র ও গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত এখনো হাসিনার প্রত্যর্পণে রাজি হয়নি। হাসিনা দেশে ফিরে বিচারে অংশ নেবেন না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ দাবি করে, দলীয় নেতারা এই সহিংসতার জন্য দায়ী নন।

দলের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘দলের কোনো শীর্ষ নেতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই অভিযোগ আওয়ামী লীগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল অনুপাতিক, সদ্বিচারে গৃহীত এবং প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যেই নেওয়া।’

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে - তবে আওয়ামী লীগ এই তদন্তের ফলাফলও প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবিসি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাছে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল, তবে কোনো উত্তর পায়নি।

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই সরকার এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। - সূত্র: বিবিসি

অমিয়/

মেট্রোরেলের পিলারে ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
মেট্রোরেলের পিলারে ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মেট্রোরেল পিলারে চলছে গ্রাফিতি অঙ্কন। ছবি: খবরের কাগজ

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। এই দিন সকালে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে খুন হন দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ দাস। বিরোধী দলের কর্মী ভেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী রামদা, কিরিচ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে তাকে ঘিরে একের পর এক আক্রমণ করেন। মুহূর্তেই রক্তে লাল হয়ে যায় পুরো শার্ট। নির্মম নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের শাসনামলে এ ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। সেই দিনের ঘটনার প্রতীকী চিত্রায়ণ করা হয়েছে মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার স্টেশন থেকে ফার্মগেটমুখী পিলারে।

শুধু বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড নয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে পিলারগুলোতে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে দেখা যায়, পিলারগুলোতে গ্রাফিতি আঁকছেন শিল্পীরা। ২০০৯ সাল দিয়ে শুরু। প্রতিটি পিলারের মধ্যভাগে সালগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার নিচেই লেখা ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’। পিলারের বাকি তিন দিকে সেই বছরের আলোচিত তিন অনিয়মের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ক্যাঙ্গারু কোর্ট, খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ, ফেলানী হত্যাকাণ্ড, শেয়ারবাজারের পতন, ইলিয়াস আলীকে গুম, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, সন্ত্রাস, ব্লগার হত্যাকাণ্ড, রিজার্ভ চুরি, হোলি আর্টিজানে হামলা, তনু ধর্ষণসহ ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে। 

গ্রাফিতি আঁকার কাজটি তদারকি করছেন শিল্পী সোহাগ খান। তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন সবাইকে। কোন চিত্রের পর কোনটা আঁকা হবে বলে দিচ্ছেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘সরকার যে জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তি পালন করবে, তার আগেই গ্রাফিতি আঁকা শেষ হবে। জুলাই উপলক্ষে এটি করা হচ্ছে। আশা করছি আমরা ২০ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এটা সম্পন্ন করতে পারব। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে প্রতিবছরের আলোচিত হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আঁকা হবে। সর্বমোট ৭০ পিলারে এই গ্রাফিতি অঙ্কন করা হবে।’

এই গ্রাফিতি অঙ্কনের পরিকল্পনা এবং বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি একটি লিখিত বক্তব্য দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মূলত এখানে দুটি কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি। ১. যেখানে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব গণহত্যা, দুর্নীতি, অনিয়মগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য সেগুলোর গ্রাফিক আর্টওয়ার্ক করা হচ্ছে। ২. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ৩৬ দিনের সব কর্মসূচি ও কার্যক্রমকে আমরা এখানে চিত্রায়িত করব, যাতে করে জুলাইয়ের কার্যক্রমকে আমরা স্মরণীয় করতে পারি। এ কার্যক্রম পরিচালনায় উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং তারাও সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে এই কার্যক্রমের ব্যয়ভার বহনের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সহায়তা (স্পন্সর) নিয়েছি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।’

আরেক শিল্পী শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা ৩০-৪০ জন কাজ করছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে অন্যায়গুলো হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষ যেন সেসব দিনের কথা স্মরণ করতে পারে।’