
আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত সোমবার বাজেট উপস্থাপনকালে বেশ কিছু পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার (৩ জুন) তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে পণ্য নতুন করে উৎপাদন বা আমদানি করার পর বাজারে এলে তখন দাম বাড়তে পারে। গতকাল মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কৃষিমার্কেট, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানা গেছে।
বাজেট ঘোষণার পর নতুন শুল্ক ও করহার কার্যকর হলে সিগারেট, রড, প্রসাধনীসামগ্রী, সাবান-শ্যাম্পু, শিশুদের খেলনা, দেশে তৈরি মোবাইল ফোন, গৃহস্থালির প্লাস্টিকসামগ্রী, এলপিজি, দেশে তৈরি এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্ল্যাট, বলপয়েন্ট কলম, হেলিকপ্টার সার্ভিস, দেশে তৈরি ওয়াশিং মেশিন, দেশে তৈরি মাইক্রো ওভেন, দেশে তৈরি ইলেকট্রিক ওভেন, দেশে তৈরি ব্লেন্ডার-জুসার-মিক্সার-গ্রাইন্ডার, দেশে তৈরি ইলেকট্রিক কেটলি-ইস্ত্রি, দেশে তৈরি রাইস কুকার-প্রেসার কুকার, ব্লেড, দেশে তৈরি লিফট, দেশে তৈরি ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান, ওটিটি কনটেন্ট, বাণিজ্যিক ভবন (কমার্শিয়াল স্পেস), সেলফ-কপি পেপার-ডুপ্লেক্স বোর্ড-কোটেড পেপার, সুতা, বিদেশি চকলেট, ম্যানমেড ফাইবার, স্ক্রু-নাট-বোল্ট, সার্জিক্যাল কিটস, শিপ স্ক্র্যাপস গুডস, সিমেন্ট শিট, ক্রেডিট রেটিং সার্ভিস, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলারের দাম বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব পণ্যের দাম আসলে বেড়েছে কি-না তা জানতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়। টাউন হল বাজারের আলম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সোহাগ আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্লাস্টিকের বালতিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। কোম্পানি থেকে এখনো আসেনি বাড়তি দামের পণ্য। না এলে তো আমরা বিক্রি করতে পারি না। তবে বাড়তে কয়দিন সময় লাগবে।’
এদিকে রডের দামও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের বিক্রমপুর স্টিল হাউসের ম্যানেজার মাসুদ বলেন, ‘আগের কেনা দামেই বিভিন্ন কোম্পানির রড বিক্রি করা হচ্ছে। রহিম স্টিল, একেএসসহ সব কোম্পানির রড আগের রেটে বিক্রি করা হচ্ছে।’ অন্য খাতের খুচরা বিক্রেতারাও জানান, কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার আগের মতোই বাজেট ঘোষণা করেছে। রাজস্ব আদায়ের জন্য অনেক পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বাড়িয়েছে। তবে এর প্রভাব হুট করেই পড়বে না। তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য চাপে পড়বে অনেক কারখানা। তাই কিছু দিনের মধ্যেই অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।’
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী কিছু পণ্য ও সেবার দাম কমতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে গতকাল বাজারে এসব পণ্যের দাম কমেনি। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে তো দাম কমানো হয়নি। হাতিরপুল বাজারের মাসুম স্টোরের মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘কারখানা থেকে তো আসতে সময় লাগবে। কোম্পানি থেকে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অর্থ উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, এলএনজি, মাটির তৈজসপত্র, দেশীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন, দেশীয় ডায়াপার, প্যাকেটকৃত তরল দুধ, বলপয়েন্ট, ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার, উড়োজাহাজের লিজ রেন্ট, হাসপাতালের বেড, ওষুধের কাঁচামাল, হাসপাতালের যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি, কীটনাশক, ফ্রুট ব্যাগ, টায়ার, সার, লরি, অ্যাম্বুলেন্স, ই-বাইক, নিউজপ্রিন্ট, ইন্টারনেট সেবা, বীজ, পেঁয়াজ, চাল, চিনি, আইসক্রিম, ভূমি নিবন্ধন ফি, ক্যানসারের ওষুধ, ইনসুলিনের দাম কমবে।