
শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারকে (সি আর আবরার) কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের জন্য এক কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। একথা তিনি সাংবাদিকদের নিজেই জানিয়েছেন। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নিজের ঢোল পেটাচ্ছি না। আমি প্রত্যাশা করি, আমার যারা সহকর্মী আছেন, তারা যেন এই নৈতিক অবস্থানটা নেন।’
বুধবার (৪ জুন) বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সি আর আবরার আরও জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে নিয়োগের প্রয়োজনে আমরা একটি উপাচার্য নির্বাচনী প্যানেল তৈরি করেছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান এবং ইচ্ছুকদের আবেদনপত্র গ্রহণের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং বিজ্ঞ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেছি। আমি আশাবাদী, আপনাদের সবার সহযোগিতায় যদি যোগ্যতা এবং কম্পিটিশনের ভিত্তিতে ভিসি নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে আমার যে স্বপ্ন, দেশে বসেই আগামী জেনারেশনকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে এগিয়ে দিতে পারব।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকদের সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড এবং ২০০ কোটি টাকার নগদ বরাদ্দ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনে এটি একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ।’
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে তিনি বলেন, ‘সামান্য ভুলসহও পাঠ্যবই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। সময় স্বল্পতার কারণে ২০২৬ সালের বই চলতি বছরের কারিকুলাম অনুযায়ী ছাপানো হবে এবং এতে যেসব সাধারণ ভুলভ্রান্তি আছে সেগুলো ঠিক করে আগামী বছরের শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই যত কষ্টই হোক, বইগুলো যত্ন এবং দায়িত্বের সঙ্গে নির্ভুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশাবাদী, এনসিটিবি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে। ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জন করে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা চালু করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।’
কারিগরি শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, কারিগরি শিক্ষাকার্যক্রম প্রণয়ন এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, গ্লাস ও সিরামিক, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন এবং বিশিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় করণীয় চিহ্নিত করতে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, গবেষক, প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে । এখানে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম এবং দেশ ও বিদেশের শ্রমবাজারে কীভাবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষায় দীক্ষিত মানবসম্পদ অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘২০২৭ সালে যাতে ষষ্ঠ শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।’