ঢাকা ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫
English

টিউলিপের ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০১:১০ পিএম
টিউলিপের ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ
টিউলিপ সিদ্দিক

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশে ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া শ্যামলীর রিং রোডে জনতা হাউজিং সোসাইটিতে টিউলিপের নামে থাকা একটি ফ্ল্যাটের রাজউকের কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুসন্ধানের প্রয়োজনে কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো আয়কর নথি জব্দ করে যাচাই করতে পারেন।’

সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়ের করা মামলায় জব্দ করা এসব নথিতে ‘ঘুষ’ হিসেবে নেওয়া ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানের ফ্ল্যাটের তথ্য রয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুদকের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন কর অঞ্চল-৬-এর অধীন কর সার্কেল-১২২-এর উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এসব নথি জব্দ করেন।

জব্দ করা আয়কর নথিতে ২০০৬-০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত দাখিল করা রিটার্ন এবং সংশ্লিষ্ট নথি সংযুক্তি রয়েছে। মোট ৮৭টি পৃষ্ঠার এসব নথির মধ্যে ২০০৬-১৫ করবর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি আয়কর রিটার্নে ‘অ্যাডভান্স টুওয়ার্ডস ডেভেলপার্স’ শিরোনামে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ের তথ্য রয়েছে।

২০১৫-১৬ করবর্ষে গুলশানের ফ্ল্যাটটি তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিককে হেবা (দান) হিসেবে দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়, যার একটি নোটারি করা দলিল (রেজি. নং-০১, তারিখ ২১-০৬-২০১৫) সংশ্লিষ্ট নথিতে সংযুক্ত আছে। তবে ২০১৮-১৯ করবর্ষের পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিক আর কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে নথিতে বলা হয়েছে।

ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে ৭১ নম্বর রোডের ১১এ, ১১বি ফ্ল্যাটটি (পুরোনো ঠিকানা- ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি) কোনো টাকা পরিশোধ না করেই তিনি নিয়েছেন।

এ মামলায় রাজউকের দুই কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে, যারা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা গ্রহণে টিউলিপকে সহযোগিতা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে ফ্ল্যাট ও প্লটে ‘অনিয়ম’ এবং প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ তালিকায় নাম আসা টিউলিপের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান ২ নম্বরের এ ফ্ল্যাটের অভিযোগের অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওই প্লটের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে।

গত ১৩ এপ্রিল ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে ৩০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

টিউলিপ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন।

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড: বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩ এএম
ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড: বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ
ছবি: খবরের কাগজ

রাজধানীতে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১২ জুলাই) সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বিক্ষোভ সমাবেশে দেশব্যাপী বিএনপির অব্যাহত চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বক্তারা বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করার যেই মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ডে নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তারা বলেন, সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ন হয়েছে। এদিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও সহিংস ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়েছে। দলগুলো এসব ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছে। কোনো কোনো দল আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যদিকে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গতকাল সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সমাবেশে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিএনপি ১০ মাসে ১০০-এর অধিক খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগে এত খুন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ক্ষমতায় আসার পর তাদের অবস্থা কী হবে!’ এ সময় গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি স্কোরবোর্ডে প্রদর্শন করা হবে বলে ঘোষণা দেন বিন ইয়ামিন মোল্লা। 

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ইনকিলাব মঞ্চ। সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ, ফ্যাসিবাদী বাকশালি সংবিধানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নে জুলাইয়ের রাজনীতি করুন। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে নতুন কাঠামো তৈরি না করলে আপনাদের (বিএনপি) দশা হবে আওয়ামী লীগ ও মুসলিম লীগের মতো।’

বিকেল ৫টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মশাল মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে জবি ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে সাহস পাচ্ছে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে।’

গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’- এর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। ইডেন কলেজ, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এদিন। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ এনে বলেন, ‘মিটফোর্ডের সামনে একজন মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছেন যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। অথচ দল দায় না নিয়ে তাদের শুধুই বহিষ্কার করেছে। আমরা বলতে চাই, এখানে অবশ্যই দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করার যেই মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা বেড়ে গেছে।’ 

রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষোভ-নিন্দা 
ঢাকা, খুলনা ও চাঁদপুরে ঘটে যাওয়া একাধিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও সহিংস ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের অনেকে গতকাল নানা সভা-সেমিনারে এসব ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। 

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদ, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের কড়া হুঁশিয়ারিতেও কমছে না ভয়ার্ত ও ঘৃণ্য মব ভায়োলেন্স। সারা দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখন মানুষে-মানুষে ঘৃণা বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ও হিংস্রতা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিতে সারা দেশ ‘আজ আতঙ্কের কবলে’ পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। বাম জোটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পুরান ঢাকা, খুলনা এবং চাঁদপুর শুধু নয়, সারা দেশের মানুষ আজ আতঙ্কে রয়েছেন। সরকার কঠোর হাতে সন্ত্রাস দমন করার কথা বলছে। তবে উপদেষ্টাদের অনেকে, প্রেস সচিবরা এসব ঘটনাকে হালকা করে দেখছেন। তারা কখনো এসব আড়াল করতে চান, কখনো দায় চাপানোর কৌশল নিচ্ছেন। এতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এতে সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বাড়ছে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনটি ঘটনাই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। এতে বোঝা যায় সহিংসতা, বিচারহীনতা ও উগ্রতা আমাদের সমাজকে কতটা গ্রাস করেছে।’

দেশে বিদ্বেষ-সহিংসতার বিস্তার, মব সন্ত্রাস, ধর্ষণ-খুনের ধারাবাহিকতায় সহিংসতার একটি নতুন অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যরা। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক সামিনা লুৎফার স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে আসে গতকাল দুপুরে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংঘবদ্ধ বিদ্বেষ একসময় ধর্ম অবমাননার গুজবের ওপর ভর করে মানুষের জীবন কেড়ে নিত। এখন সেই একই কৌশলে সংঘটিত মব ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা ভিন্নমতের মানুষকে দমন করতে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার এগুলো দমনে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না। বরং সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রভাবশালীর ব্যক্তির কথায় এগুলো প্রশ্রয় পাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কথায় ও কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।’ 

আইনশৃঙ্খলার অবনতির সব দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার দাবিও জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এ ছাড়া নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি। এক বিবৃতিতে দলটির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনিম দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ছাত্রদল থেকে অনেক নেতা-কর্মীর পদত্যাগ 
প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনার পরপরই ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তারা ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ আবু সায়ীদ। একই দিনে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক লিসানুল আলম লিসান, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী নুর ইসলামসহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিটের নেতা-কর্মীদের পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।

আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
বরগুনা: ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বরগুনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক সমাজ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বক্তারা বলেন, সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ন করেছে। তারা বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তারা সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম চালায়। ভাইরাল হওয়ার পর দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা এলেও কিছুদিন পরই তারা নতুন পৃষ্ঠপোষকের সহায়তায় আবার ফিরে আসে। দেশে সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 

চট্টগ্রাম: সোহাগকে হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও জামায়াত-শিবির আলাদা আলাদা মিছিল করেছে। বিকেলে জামায়াত-শিবিরের মিছিলটি চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে শুরু হয়ে জিইসি মোড় এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। অপরদিকে বিপ্লব উদ্যানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আর কেউ দখলদার হতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশে আর কেউ চাঁদাবাজ হতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশে আর কেউ সন্ত্রাস হতে পারবে না। যদি কেউ সন্ত্রাসবাদ কায়েম করার চেষ্টা করে, ফ্যাসিবাদ কায়েম করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের সামনে বাধা হয়ে আমরা দাঁড়াব।’ 

রাজশাহী: রাজশাহীতে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দিনভর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরের বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন একদল শিক্ষার্থী। 

দুপুর ১টায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। 

এর আগে, গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোড থেকে মিছিল বের করেন। পরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব ও ফাহিম রেজা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে রাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। বক্তারা সোহাগ হত্যার বিচার চান এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।

কুষ্টিয়া: পাথর মেরে বর্বরোচিত হত্যাসহ দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া শহর শাখা। 

গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের বড় জামে মসজিদ থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানেই শুরু হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। এ সময় দেশব্যাপী বিএনপির অব্যাহত চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

যশোর: যশোরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। 

মানববন্ধনে বক্তারা পাথর দিয়ে মানুষ হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র (মব)-এর দৌরাত্ম্য, ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এ ধরনের নৃশংসতার মূল কারণ। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি দ্রুত এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হয়, তবে সাধারণ ছাত্র-জনতা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: বিক্ষোভ মিছিল করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় দেশব্যাপী বিএনপির চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান তারা। গত শুক্রবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু হয়ে কটকা-হাদি চত্বর ঘুরে শহিদ মুগ্ধ তোরণ হয়ে ক্যাম্পাসের মেইন গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এই মিছিল শেষ হয়।

এ ছাড়া পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে বর্বরোচিত হত্যাসহ দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, নড়াইল, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছে: আইএসপিআর

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৫ এএম
সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছে: আইএসপিআর
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)

পুলিশের হাতে সেনাসদস্য হেনস্তাসংক্রান্ত সেনা সদরের চিঠির অপব্যাখ্যার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

শনিবার (১২ জুলাই) এ বিষয়ে সংস্থাটি বলেছে, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই বিষয়টিকে অপব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি এবং অনাস্থা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।’

আইএসপিআর জানিয়েছে, সম্প্রতি সেনা সদরের একটি প্রশাসনিক চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘটিত ঘটনাসমূহে সেনাসদস্যদের হেনস্তার শিকার হওয়ার কিছু অভিযোগসংবলিত একটি তালিকা আহ্বানের কথা উল্লেখ ছিল। এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানানো যাচ্ছে যে, ওই চিঠিটি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে গঠিত ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’-এর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে কেবল পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীকালে যেকোনো রকম ভুল ব্যাখ্যা বা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া পরিহারের স্বার্থে ওই চিঠির কার্যক্রম সেনা সদর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়। তার পরও স্বার্থান্বেষী মহল ওই চিঠির অপব্যাখ্যা করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। 

আইএসপিআর আরও জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ উভয়ই দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমন্বয় ও পেশাগত সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে একযোগে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা গণমাধ্যমে এ-বিষয়ক বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, গুলিতে আহত ১

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম
পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, গুলিতে আহত ১
ছবি: সংগৃহীত

চাঁদা না দেওয়ায় ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা ঘটনায় পুরো দেশ বিক্ষোভে উত্তাল। এ অবস্থার মধ্যেও একই কারণে রাজধানীর পল্লবীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকতা আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে পল্লবীর আলবদিরটেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে এই হামলা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ ও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে একদল অস্ত্রধারী লোক প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা এ সময় চারটি গুলি করে। গুলিতে শরিফুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়াও হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ চলছে।

শনিবার (১২ জুলাই) এ কে বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান মো. কাইউম আলী খানের ছেলে আমিমুল এহসান জানান, তিন সপ্তাহ আগে জামিল নামের এক ব্যক্তি তার বাবার কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় দুই দফায় তাদের প্রতিষ্ঠানে হামলা করে সিসি ক্যামেরাসহ অনেক কিছু নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গত শুক্রবারও ৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী এসে তাদের প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। এ সময় তারা গুলিবর্ষণও করে। গুলিতে একজন আহত হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। জড়িতদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে। আশা করছি খুব দ্রুতই তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’

সূত্র জানায়, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এ কে বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান কাইউম আলী খান। ওই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৭ জুন তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রথমবার হামলা করা হয়। এরপর ৪ জুলাই আবার হামলা করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তারা ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রাখে। এসব ঘটনার পর শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটিতে আবার হামলা করা হয়। 

 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৮.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:০৫ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:০৫ পিএম
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৮.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি
ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি খাতে ৮.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত দেশের তৈরি পোশাকের দেশ ভিত্তিক রপ্তানি হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে অবস্থান করছে। ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি হয়েছে ১৯.৭১ বিলিয়ন ডলার। যা দেশে মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০.১০ শতাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার (১৯.১৮ শতাংশ)। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১.৩০ বিলিয়ন ডলার (৩.৩১ শতাংশ) এবং ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার (১১.০৫ শতাংশ)।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৯.১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

যুক্তরাজ্যে রপ্তানিতে ৩.৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোপের মধ্যে জার্মানি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে রপ্তানি হয়েছে ৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে স্পেন (৩.৪০ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (২.১৬ বিলিয়ন ডলার), নেদারল্যান্ডস (২.০৯ বিলিয়ন ডলার), পোল্যান্ড (১.৭০ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (১.৫৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ডেনমার্ক (১.০৪ বিলিয়ন ডলার)।

কিছু ইউরোপীয় দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেমন নেদারল্যান্ডসে ২১.২১ শতাংশ, সুইডেনে ১৬.৪১ শতাংশ, পোল্যান্ডে ৯.৭৭ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৯.৪৭ শতাংশ।

নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি ৫.৬১ শতাংশ বেড়ে ৬.৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট রপ্তানির ১৬.৩৬ শতাংশ। এই বাজারে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। তুরস্কে রপ্তানি ২৫.৬২ শতাংশ, ভারতে ১৭.৩৯ শতাংশ এবং জাপানে ৯.১৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।

আরএমজি শিল্পে নিটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.৭৩ শতাংশ এবং ওভেন খাতে ৭.৮২ শতাংশ। 

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাজারের চাহিদা ও বাস্তবতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এই বাজার থেকে আসে। তবে, নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের অংশীদারিত্ব এখনো তুলনামূলক কম, যা মাত্র ১৬ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যেখানে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে জাপানের মোট পোশাক আমদানির ৫.৫০ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোট আমদানির ১১.৫৩ শতাংশ এসেছে বাংলাদেশ থেকে। যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন বাজার ও নতুন পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, ‘নতুন বাজারে প্রবেশ এবং উদ্ভাবন শুধু কৌশলগত বিষয় নয়, এটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্যতা। আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাজার বৈচিত্র্য এবং সম্প্রসারণের দিকে এগোতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বাজারে প্রতিযোগিতা শুধু দামের ওপর নির্ভর করে না। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে শুধু দাম যথেষ্ট নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় নিজস্ব সুবিধা তৈরি করতে হবে, যাতে ক্রেতারা বারবার বাংলাদেশেই ফিরে আসে। সূত্র: বাসস

 

চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে জয়নাল আবেদীন সিদ্দিক নামে (৫০) এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি।

শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে
এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

জয়নাল আবেদীন সিদ্দিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার বাড়ি চন্দনাইশে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিন দিন আগে তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম জানান, জয়নাল আবেদীন সিদ্দিকসহ চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন আটজন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৩ জন।

মেহেদী/