
নিজস্ব মেধা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন নরসিংদীর মাধবদীর তরুণ উদ্যোক্তা রাফি হোসাইন। এবার ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় মিসাইল সিস্টেমযুক্ত একটি আধুনিক মিলিটারি ড্রোন প্রদর্শন করে তিনি ও তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। এর আগে ২০২৩ সালে ‘এআই অ্যাকসিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম’ এবং ২০২৪ সালে ‘জায়ান্ট মাল্টিপারপাস ড্রোন’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে রাফি জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন।
জানা যায়, এবারের ড্রোনটি দুই ডানায় দুটি মিসাইল বহনে সক্ষম এবং প্রায় ৪০ কিলোমিটার রেঞ্জে নজরদারি ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। সম্পূর্ণ কাঠামো, ফেব্রিকেশন ও প্রোগ্রামিং নিজস্বভাবে তৈরি হওয়ায় খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
গত ১৯ থেকে ২১ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলায় ড্রোনটি প্রদর্শনের পর থেকেই এটি দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ড্রোনটি দেখতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এবারের মেলার উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। রাফির ড্রোনটি পরিদর্শন করেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীরা সুলতানাসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ড্রোনটি দেখেন। তারা রাফির উদ্ভাবনকে দেশের প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে মূল্যায়ন করে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন।
রাফি বলেন, ‘সরকারি সহায়তা পেলে এই ড্রোন আরও আধুনিক করা সম্ভব। যেখানে বিদেশি ড্রোন কিনতে কোটি কোটি টাকা লাগে, সেখানে আমাদের তৈরি ড্রোন মাত্র ১০ লাখ টাকায় বানানো সম্ভব।’ তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সহায়তা কামনা করে বলেন, ‘আমরা চাই দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামরিক খাতে অবদান রাখতে।’
বর্তমানে রাফি গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি তিনি ‘নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব’-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণামূলক আগ্রহ তাকে একের পর এক উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে নিয়েছে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাবের রাফির সহকর্মী দুর্জয় জানান, তাদের উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনের তালিকায় রয়েছে, ভূমিকম্পে আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র, সার্ভেইল্যান্স ড্রোন, ফায়ার ফাইটিং ড্রোন, রোবোটিক আর্ম, রোবোটিক স্পাইডার, জেট ইঞ্জিন, এআই অ্যাকসিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম এবং সবশেষ তৈরি করা হয়েছে মিসাইল সিস্টেম মিলিটারি ড্রোন।
জানা গেছে, রাফির প্রতিষ্ঠিত নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব ইতোমধ্যে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বহু পুরস্কার অর্জন করেছে। তার সহকর্মী সানজিম আন্তর্জাতিকভাবে নাসার কনরাড চ্যালেঞ্জ ও মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।