
ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, ইরানে যে গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে তার মূলে পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার দায় দেখছেন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার ভাষ্যে, ইসরায়েল ‘জায়নবাদি’ তৎপরতা অব্যাহত রেখে এখন জাতীয়তাবাদের ‘সবচেয়ে আগ্রাসী রূপ দেখাচ্ছে’। বিশ্বযুদ্ধের যে দামামা বাজছে তা থামাতে তিনি পৃথিবীজুড়ে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছেন।
সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে নিজের ৯০তম জন্মদিনের আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘নতুন দিগন্ত পরিবার’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকা’ শিরোনামে একক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অধ্যাপক পারভীন হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে অংশ নেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রবীণ বাম নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান ও সাজ্জাদ শরীফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক আজফার হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা গণসংগীত পরিবেশন করেন। পরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১ ঘণ্টা ১৪ মিনিটব্যাপী একক বক্তৃতায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শুরুতেই বলেন, ‘জাতীয়তাবাদের হেরফের আছে। জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী হতে পারে। জাতীয়তাবাদ আত্মরক্ষামূলক হতে পারে। আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের যে ছবি, যে অভিজ্ঞতা সেটা আমরা একাত্তর সালে দেখেছি। আজকের পৃথিবীতেও ওই আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের ভূমিকা দেখছি। ইসরায়েল যে জায়নবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে, যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তার সবই বিশ্বযুদ্ধ লাগানোর তৎপরতা। এগুলো সবই আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধি।’
প্রকৃতিকে ধ্বংস করে; মাদক এবং মারণাস্ত্রের ব্যবসা বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীজুড়ে নানাভাবে গণহত্যা চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই ‘জাতীয়তাবাদী ও পুঁজিবাদী’ তৎপরতা ঠেকাতে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়তে হবে। সেই প্রতিরোধটা গড়তে হবে ব্যক্তি মালিকানার অবসান ঘটিয়ে। সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানার যুগ শেষ হয়ে গেছে। সামাজিক মালিকানা ছাড়া এই পৃথিবীর বাঁচার কোনো উপায় নাই। এখন একটা সামাজিক বিপ্লবের দরকার হবে; যে বিপ্লব ব্যক্তিগত মালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে। সেখানে মানুষের মুক্তি আসবে, প্রকৃত গণতন্ত্র আসবে।’
জয়ন্ত সাহা/