
অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই কিস্তিতে এবার বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ডলার পাচ্ছে।
সোমবার (২৩ জুন) আইএমএফের নির্বাহী পরিষদের (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টায়) বৈঠকে বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। সেই হিসাবে বলা যায়, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই অর্থ ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা দেবে আইএমএফ। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আরও শক্তিশালী হবে।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আাগে আইএমএফের শর্ত না মানায় ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঝুলে ছিল। দুপক্ষই দরকষাকষি করছিল। কিন্তু কোনো পক্ষই চুক্তি থেকে একেবারে সরে আসেনি। অবশেষে গত মে মাসে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। এর আলোকে আইএমএফ ঋণের দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবটি তাদের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে উপস্থাপনের কথা জানায়। সেই আলোকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে পাচ্ছে ১৩০ কোটি ডলার।
এবারের অর্থ ছাড় করার শর্ত হিসাবে ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর শর্ত রয়েছে। এটি সরকার কিছুটা কমাচ্ছে। ব্যাংক খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো আইএমএফকে জানানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শর্ত ছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে এই বিবেচনায় বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ানো হবে না বলে বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে না আসা পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে। এর মানে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ কমাতে হবে। কিন্তু বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঘোষণা করেছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। তখন সুদের হারও কমানো হবে।
বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলার জন্য সহায়ক হিসাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২২ সালে আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৩ বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া- মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।