ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যতিক্রমী সময়ে গতানুগতিকতার বাজেট

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ১০:৪৩ এএম
ব্যতিক্রমী সময়ে গতানুগতিকতার বাজেট
ড. মোস্তাফিজুর রহমান

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে, বলা বাহুল্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের বাজেট। তবে এটি ব্যতিক্রমী সময়ের বাজেট হিসেবে গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ একটি শক্তিমত্তার জায়গায় ছিল। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি- এই তিনটি ক্ষেত্র বর্তমান সময়ে একই সঙ্গে বিগত দুই বছরে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের একটা অবনমন হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজেটে মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা, সাধারণ মানুষের সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়কে আরও শক্তিশালী করার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। আমরা দেখেছি যে, বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য। এবারের বাজেটে কর কাঠামোর কিছুটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যাতে মধ্যবিত্তদের ওপর করের চাপ কিছুটা কমে। উচ্চবিত্তের ওপর করের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। কিছু কিছু আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। তার পরও আমাদের মনে হয়েছে, যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। বিশেষত দুই বছর ধরে সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এ রকম একটা অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে আমরা মনে করেছিলাম বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ সামান্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতিকে যদি আমরা বিবেচনায় নিই, তবে প্রকৃত অর্থে সেই বৃদ্ধি খুব একটা বিবেচ্য নয়। আমরা আশা করেছিলাম, সামাজিক সুরক্ষার প্রাপ্তি ও স্থায়িত্ব আরও বাড়ানো হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে হিসাব সেখানে কৃষি খাতের ভর্তুকিও আছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের প্রিমিয়ামও আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন খাতের স্কিম ইত্যাদিও সেখানে ঢোকানো হয়েছে। এগুলো বাজেটের ১৭ শতাংশের মতো হয় অথবা জিডিপি ১.৩ শতাংশের মতো হয়। এটা খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। আমাদের প্রস্তাব ছিল, শহরাঞ্চলে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন ধরনের সার্ভে যেমন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, বিশ্বব্যাংক অথবা আমাদের বিবিএসের সার্ভে করা। দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই খাদ্যনিরাপত্তা, পুষ্টিনিরাপত্তায় ভুগছে মানুষ। এমনকি দারিদ্র্যসীমার ওপরে যারা আছে তারা এবং বিশেষত শিশুরা; যাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা তুলনামূলকভাবে বেশি। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করেছিলাম স্কুল ফিডিংয়ের মতো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে, কিন্তু তা দেখিনি। বাজেটে যে ধরনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৃদ্ধি তেমন একটা হয়নি। অন্যদিক থেকে অনেক পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। যদিও আইএমএফের কথা উল্লেখ নেই। তবে ২০১২ সালের ভ্যাট সাপ্লিমেন্টারি যেটা করা হয়েছিল, অর্থাৎ গড়ে ১৫ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি; সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বেশ কিছু পণ্য ও মোবাইল টক টাইম থেকে শুরু করে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাত আছে, যেখানে এই ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে অথবা ভ্যাট প্রত্যাহারের যে সুযোগ ছিল সেগুলো বাতিল হওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।

আমাদের বড় সমস্যা হলো, আমাদের রাজস্ব জিডিপির হার যেহেতু কম, আমরা ক্রমান্বয়ে ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছি। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যেটা ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো আছে, সেটা পুরোটাই হয় অভ্যন্তরীণ ঋণ, নয়তো বৈদেশিক ঋণ। এই ঋণনির্ভরতা বাজেটেও দেখেছি। সুদের ব্যয় দুই নম্বরে চলে আসছে। প্রথমত, জনপ্রশাসন ব্যয়, তারপর সুদের ব্যয়। এটা নিঃসন্দেহে একটি অশনিসংকেত। ক্রমান্বয়ে সুদ ও আসলের পেছনে একটি বড় অংশ চলে যায়। তাহলে অন্যান্য খাতে ব্যয়ের যে সুযোগ সেগুলো থাকবে না। চেষ্টা করতে হবে, যেভাবেই হোক রাজস্ব যেন বাড়াতে পারি। রাজস্ব টার্গেট ধরা হয়েছে ৯.৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটা ছিল ৮.৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। সেখানে ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে। এ রকম অবস্থায় যদি ৯.৭ শতাংশ রাজস্ব আদায় করতে হয়, তাহলে ২৫ শতাংশের মতো রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে ধরনের বিনিয়োগ দরকার সেটা বাজেটে দেখিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে শক্তিশালী করা দরকার। ডিজিটালাইজেশনকে শক্তিশালী করা দরকার। করখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সে ধরনের উদ্যোগ এবারের বাজেটে দেখা যায়নি বরং আমরা দেখেছি যারা কর দেননি এবং যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা রয়েছে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেটাকে বৈধ করার। এখানে আমরা দেখেছি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিলে আর কোনো ধরনের প্রশ্ন করা হবে না। অর্থাৎ যারা অবৈধভাবে টাকা আয় করেছে তাদেরও একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটি অন্যায় এবং একটি অযৌক্তিক পদক্ষেপ এবং এটা প্রত্যাহার করা উচিত। এটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কর না দিয়ে পরবর্তী সময়ে ১৫ শতাংশ দিয়ে এ অপ্রদর্শিত টাকাকে বৈধ করে নেওয়া হলো। আমরা মনে করি সেটাও ঠিক নয়। এটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজনৈতিকভাবেও মানুষ এটাকে ভালোভাবে নিতে পারে না। নৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক- কোনোভাবেই এটা গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নয়। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, রাজস্ব ব্যয়, যেটা সরকারের রাজস্ব আয় এবং ঘাটতি অর্থায়ন ৪.৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটা মিলে মোট সরকারি ব্যয় ১৪ শতাংশের মতো। রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সক্ষমতাকে বাড়াতে হবে এবং ঋণনির্ভরতা কমাতে হবে। একই সঙ্গে এটা মনে রাখতে হবে যে সরকারের ব্যয় যদি ১৪ শতাংশ হয় জাতীয় আয়ের, তাহলে বাকি অংশ বেসরকারি খাতে। বিনিয়োগবান্ধব ও ব্যবসার পরিবেশ যাতে ভালো হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। সেটা শুধু রাজস্বনীতি দিয়ে হবে না। সামষ্টিক অর্থনীতি পরিচালনায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটা সংকোচনমূলক নীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বাজেটও কিছুটা সংকোচিত করা হচ্ছে। এ রকম একটা অবস্থায় বিনিয়োগ পরিস্থিতির যদি মান এবং দক্ষতা না বাড়ানো যায়, তাহলে আমরা যে প্রাক্কলন করছি, প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশে নিয়ে আসব বা মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নিয়ে আসব সেটা সম্ভব হবে না।  

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু বাজেট দিয়ে হবে না। সেই ব্যবস্থাপনা ও এর গুণগত মান ভালোভাবে রাখতে হলে সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তার সেবা দেওয়ার দক্ষতাও সক্ষমতার দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে বিভিন্ন বিনিয়োগ এবং আয় বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারব। সুতরাং বলা যায়, একটা চ্যালেঞ্জিং টাইমের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। যেখানে একদিকে মূলস্ফীতি কমাতে হবে, অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও বিনিয়োগ উৎকর্ষ বাড়িয়ে কর্মস্থান সৃষ্টি করে আয় বাড়াতে হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং সময়। অর্থনীতি যদি আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হলে উচ্চ প্রযুক্তি, নিম্ন মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক স্থিতিশীলতার দিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। বিশেষত, বাজেটের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, এটা যাতে সাশ্রয়ীভাবে ও  সময়মতো করতে পারি, সুশাসনের সঙ্গে করতে পারি, সেদিকটায় বেশি নজর দিতে হবে। এবারের বাজেট বাস্তবায়নের উৎকর্ষ ও মানসম্মত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।  তার কারণ হলো যে, অর্থায়ন কিছুটা সংকুচিতভাবে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাজেটের আকারও খুব একটা বাড়েনি। গতবারের থেকে ৪-৫ শতাংশ মতো হয়তো বেড়েছে। এই কম টাকা দিয়েই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং সুশাসনের পাশাপাশি সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি প্রয়োগ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এই বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সংকট কাটবে না। এটার জন্য আরও সময়ও লাগবে। 

পরপর দুবার মূল্যস্ফীতির কারণে মূল্যস্তর অনেক ওপরে রয়েছে। সেটা কমাতে গেলে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের যে অবনমন হয়েছে, সেটার প্রতি লক্ষ্য রেখে ফ্যামিলি কার্ড অথবা দুস্থ ভাতা প্রকল্প বলি, সে ক্ষেত্রে যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে সেটা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। একই সঙ্গে যেসব খাতে বরাদ্দ আছে সে কাজগুলো যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় স্পষ্টতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির  মাধ্যমে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। টাকা সাদা করার মতো এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দায়মুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে বরঞ্চ যারা এগুলো করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে হয়। সামগ্রিকভাবে যদি বলি, একটা ব্যতিক্রম সময়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে, এই বাজেট গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারেনি। 

লেখক: সম্মানীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি 
ডায়ালগ (সিপিডি)

রাখাইনে মানবিক করিডর উদ্বেগের বিষয়: মুনীরুজ্জামান

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
রাখাইনে মানবিক করিডর উদ্বেগের বিষয়: মুনীরুজ্জামান
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান

মায়ানমারের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল রাখাইনে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান।

এ প্রসঙ্গে আ ন ম মুনীরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শর্তসাপেক্ষে মানবিক করিডর নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রথমত, এ ব্যাপারে আমাদের কারও কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কী সেই শর্তগুলো? সেটা প্রকাশ করতে হবে, জনগণকে জানাতে হবে। কী বিষয়ে এবং কোন রুটে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমাদের (বাংলাদেশের) জাতীয় স্বার্থ কী? এ বিষয়ে আমরা যারা এসব নিয়ে কাজ করি তারাও পরিষ্কার না। তা ছাড়া মায়ানমারের এই রাখাইন কোনো সাধারণ এলাকা নয়। এখানে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সম্পৃক্ততা আছে। পাশাপাশি রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে। তাহলে এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেখানে কেন যুক্ত হবে? এটা উদ্বেগের বিষয়।’

এ নিয়ে জাতীয় স্বার্থ পরিষ্কার করার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

মানবিক বিষয়ের নামে করিডর সুবিধা দিতে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় কি না, সেটির ব্যাপারেও সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

এদিকে রাজনীতিকরা বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উচিত ছিল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মানবিক সহায়তার কথা বলে যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেটিই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হয়ে আছে। তার মাঝে আবারও ‘মানবিক করিডরের’ সুযোগ দিয়ে যদি নতুন সংকট তৈরি হয়, সেটা দেশের জন্য আরও বড় ক্ষতি হবে। তাই শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডরের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিষ্কারের আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের শুরুর দিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই প্রেক্ষাপটে গত রবিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মায়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলছি না। সেই শর্তাবলি যদি পূরণ হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা, অস্ত্র নেওয়া হচ্ছে না।’

সড়ক অবরোধ ও জনভোগান্তি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২১ পিএম
সড়ক অবরোধ ও জনভোগান্তি

আধুনিক বিশ্বে, উন্নত রাষ্ট্রে ‘অবরোধ’ একটি অস্বাভাবিক শব্দ! তবে, বাংলাদেশে এটি এখন নিত্যনৈমিত্তিক একটি ব্যাপার হয়ে গেছে! ন্যায্য হোক কিংবা অন্যায্য, যেকোনো দাবি-দাওয়া আদায়ে ‘অবরোধ’ এখন মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে! 

মানছি, অবরোধ হলো প্রতিবাদের ভাষা এবং রাজনৈতিকভাবে হয়তো এর বৈধতাও রয়েছে। গতি-প্রকৃতি আর পরিণতি বিচার করে আন্দোলনের শেষ অস্ত্র হিসেবে এটি আরোপ করা হয়। কিন্তু এই শেষ অস্ত্রটি আজকাল আন্দোলনের একদম প্রারম্ভেই প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে! 
‘অবরোধ’ বর্তমানে চরম অস্থিরতা আর অরাজকতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে! যখন-তখন, যেখানে-সেখানে প্রয়োগের দরুন এটি এখন ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার হয়ে গেছে! আন্দোলনকারী কিংবা বিক্ষোভকারীদের ভাষায় দাবি আদায়ের মোক্ষম অস্ত্র হলেও, জনসাধারণের জন্য তা অস্বাভাবিক দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে! 

অবরোধ আইনগতভাবে অবৈধ হলেও, অকারণ নয়। বস্তুত, এর এত অপব্যবহার হয়েছে যে এটি প্রায়োগিক নৈতিকতা হারিয়েছে! অবরোধের এই অভিশাপ নাগরিক জীবনে প্রতিনিয়তই চূড়ান্ত অসন্তোষ আর দুর্দশার জন্ম দিচ্ছে! এবং একে কোনোভাবেই ‘বৈধতা’ দেওয়া যাবে না! অবরোধের অনিষ্ট সম্পর্কে সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। জনগণকে অবশ্যই বোঝাতে হবে যে অবরোধ জনদুর্দশার কারণ, মোটেও প্রতিকার নয়! 

সব কথার শেষ কথা হলো- দেশে সুশাসন কায়েম হলে এবং সৎ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে, রাষ্ট্রের সর্বত্র বিরাজমান সব ধরনের অন্যায্যতা ও অন্যায়ের অবসান একযোগে না ঘটলেও, ধীরে ধীরে ঘটবে। সর্বোপরি, এ সমস্যা থেকে আশু উত্তরণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। 

আসিফ আল মাহমুদ 
আকবরশাহ মাজার, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৪২০২ 
[email protected]

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে করিডর হলে ঠিক আছে: ড. নাজনীন

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২১ পিএম
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে করিডর হলে ঠিক আছে: ড. নাজনীন
ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে যদি করিডর হয় তবে ঠিক আছে, এর বাইরে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তা কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।

মায়ানমারের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল রাখাইনে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মায়ানমার আমাদের কখনোই ভালোভাবে নেয়নি। এখন করিডর কিসের জন্য হবে? যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে করিডর হয়, তবে ঠিক আছে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। মূলত আমাদের উদ্দেশ্য হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। মায়ানমারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হলে এই করিডরের দরকার নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন এত রোহিঙ্গা এল, তখন তো জাতিসংঘ সাপোর্ট দিতে পারেনি। পরে তারা তো এ বিষয়টি ঠেকাতেও পারেনি। তাহলে জাতিসংঘের সব কথা আমাদের কেন শুনতে হবে?’

ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা (পরররাষ্ট্র) বলছেন, ‘করিডর নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না বা বলতে পারব না’- এই বিষয়টা তো আমাদের জন্য ভালো না। যেহেতু আমরা বলছি এটা গণতান্ত্রিক সরকার এবং সব সময় জনগণকে জানিয়ে সবকিছু করতে হবে, গোপন করে কিছু করা যাবে না, তাহলে বিস্তারিত বলা যাবে না বা এই জাতীয় কথা কেন আসছে? আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত রোহিঙ্গারা যারা আমাদের দেশে ঢুকেছে, তাদের ফেরত পাঠানো।’

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, মায়ানমারে ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি হয়। এর পর থেকেই মায়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। জান্তাবিরোধী ‘থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ একটি হলো ‘আরাকান আর্মি’। ২০২৩ সালের অক্টোবরে আরাকান আর্মি জোট ব্যাপক হামলা শুরু করে। চীন সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে সশস্ত্র সংগঠনটি। গত আগস্টে এই জোট উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মায়ানমারের একটি উপকূলীয় রাজ্য হলো রাখাইন। রাখাইন মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবাসস্থল। জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে সেখানে লড়াই শুরু হয়েছিল। এর পর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একের পর এক জয় পেয়ে এখন পর্যন্ত রাখাইন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নানা রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

আগামী বাজেট হতে হবে নীতিকৌশলের লক্ষ্যবস্তু

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
আগামী বাজেট হতে হবে নীতিকৌশলের লক্ষ্যবস্তু
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

বর্তমান বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো অনেকটাই পুরোনো। আমাদের রাজস্বনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই অর্থের জোগানের জন্য নিজেদের রাজস্ব আদায় অবশ্যই বাড়াতে হবে। আবার ঋণ নিতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাত সংকুচিত হবে। ফলে আগামী বাজেটে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে স্বল্পমেয়াদি কৌশলে আটকে থাকা অবস্থান থেকে বের হয়ে আসা। আরও একটি চ্যালেঞ্জ হলো সাশ্রয়ী খরচের মতো চিহ্নিত সমাধানগুলো কাজে লাগানো যাবে কি না ভেবে দেখা। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

এবারের বাজেটেও মানুষকে বুঝ দেওয়া বা সন্তুষ্টির জন্য কিছু কর্মসূচি থাকবে। এর মধ্যে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা বাড়ানো এবং তাদের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কথা হলো- সামাজিক নিরাপত্তার এ সামান্য ভাতা দিয়ে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় মানুষের যে কষ্ট বেড়েছে, সেটি লাঘব করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রগুলো সরাসরি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হবে। বাস্তবে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামাল দিতে সরকারের কর্মসূচি দেখছি অন্যরকম। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরিবহন ভাড়া, বিশেষ করে বাড়ছে রেলের ভাড়া। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

শিক্ষায় ব্যয় হয় মূলত কর্মকর্তাদের বেতন অথবা অবকাঠামো সম্প্রসারণে। খাত নয়, উপখাতে কী ব্যয় হচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এবার গরমে বিদ্যুতের অবস্থা কী হবে? এ ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত অনেক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের সক্ষমতা আছে কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই। এখানেও অর্থায়ন আমাদের বড় সমস্যা। বাজেটে কী ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা দেখার বিষয়। দাম বাড়ালে জনজীবনে কষ্ট আসবে। এর চেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমাদের যে ব্যয় হচ্ছে, তা অর্থনীতির গতি বাড়াবে কি না, তা দেখার বিষয়। বলা যেতে পারে, খরচের দিক থেকে আমাদের পরিবহন খাত খুবই অদক্ষ। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। আমাদের উচ্চমূল্যস্ফীতির পেছনে দুর্নীতি এবং বাজারে কারসাজির পাশাপাশি উচ্চ পরিবহন ব্যয় অন্যতম কারণ।

 পরিবহন খাত মালিক সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে আছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারাও জিম্মি করে রেখেছেন। ১৫ বছরে রেল খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এ খাতে কী পরিমাণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা পাচ্ছে, সেটি বড় বিষয়। বাজেটে পদক্ষেপে পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি বিষয় রয়েছে। একদিকে দক্ষ ও সহমর্মিতা, অপরদিকে অদক্ষ গোষ্ঠী। এবারের প্রত্যাশা হবে- অদক্ষ জনগোষ্ঠী নয়, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। আমাদের আয় বাড়াতে হলে অবশ্যই সংস্কারে যেতে হবে। এ ছাড়া আয় বাড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমান কর ব্যবস্থাপনার মূল চালিকাশক্তি হলো হয়রানিমূলক। অর্থাৎ হয়রানিভিত্তিক কর ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। এটি সংস্কার করতে না পারলে আয় বাড়বে না। কর দিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। অন্যদিকে অনেক মানুষ কর দেয় না, এটি ঠিক আছে। 

আইএমএফের সংস্কারের কথাগুলো যৌক্তিক। দেশের অর্থনীতিবিদরাও এগুলো অনেক আগে থেকে বলে আসছেন। সরকার বাস্তবায়ন করছে না। অন্যদিকে আইএমএফ বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক সহায়ক আচরণ করেছে। কারণ, ঋণ দেওয়ার জন্য শিথিল করেছে অনেক শর্ত। আমাদের ভর্তুকির ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত। যে ভর্তুকি সঠিক জায়গায় যাচ্ছে না, সেটি বন্ধ করা উচিত। অন্যদিকে ভর্তুকিসংশ্লিষ্ট আলোচনায়ও গুণগত পরিবর্তন দরকার। এর ন্যায্যতা, কার্যকারিতা, দক্ষতা ও ফলাফল বিবেচনায় নিতে হবে। এ বিবেচনায় পরিবর্তন প্রয়োজন হলে অবশ্যই সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়েছে। তাদের কোম্পানিগুলো যেসব দেশ থেকে পণ্য কিনছে, সেখানে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হলে কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। সরকারের কর ছাড়াও অর্থ জোগানের আরও অনেক মাধ্যম রয়েছে। এগুলো পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং সিস্টেম। কিন্তু এ দুই খাতেই বাস্তবতা ভিন্ন। খাত দুটি দুঃশাসনের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। কিন্তু এখানে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা আরও গভীর হবে। ১০ বছর আগে ভালো ব্যাংক ছিল; কিন্তু এখন কেন দেউলিয়া হলো! সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক কেন সমস্যায় পড়ল। এখানেও সংস্কার জরুরি।

সামষ্টিক অর্থনীতির ভঙ্গুরতা মোকাবিলায় বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রায় সবাই সংকটে আছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়েছে। এ দেশের বিনিয়োগকারীরা পরিশ্রম করতে রাজি আছেন। কিন্তু আস্থার পরিবেশের অভাব আছে। বাজেটে সৎ করদাতাদের জন্য ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আর কালো টাকার জন্য ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো কৌশল নেই, যা করতে হবে। কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটে তেমন বিশ্বাসযোগ্য কর্মকৌশল নেই, তা অর্জন করতে হবে। সার্বিকভাবে আমাদের তরুণ সমাজ এই সময়েই দেশের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসার প্রমাণ রেখেছে। আমাদের মর্মান্তিকভাবে দেখতে হচ্ছে যে, নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে তারা দেশের সার্বিক নৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে চাইছে। তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিচালনায় যে নৈতিক ধস চলছিল, সেটা থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য আত্মাহুতি পর্যন্ত দিচ্ছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। তারাই তো ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মূল শক্তি। দেশ পরিচালনায় যে নতুন প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল, তাদেরই বরং ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। 

আগামী বাজেটে সরকারের নীতিকৌশলের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হওয়া দরকার জনদক্ষতা বাড়ানো। দেশে অনেক প্রকল্প আছে, যার সম্ভাব্যতা যাচাই করে নেওয়া দরকার। আর অদক্ষ ব্যয়ের অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। ক্ষমতা অপপ্রয়োগের একটি বিষয় আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজনীতিক এবং বেসরকারি খাতের কিছু লোকজনের যোগসূত্র আছে। তারা সবাই সুবিধাভোগী।

 মনে হচ্ছে- খরচ সরকারের; আর মুনাফা এক গোষ্ঠীর। আবার আমাদের যে রপ্তানি আয় হচ্ছে, এর পুরোটা দেশে আসছে না। এর একটি অংশ দেশের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশের বাইরে রাখা এ অর্থের পরিমাণ কম না। ইতোমধ্যে এসব নিয়ে কিছু আলোচনাও হয়েছে। বাজেটে মানবসম্পদ বিষয়ে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ আসবে কি না সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বাজেটের আকার নয়, ব্যয়ের হার ও গুণগতমান বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

লেখক: অর্থনীতিবিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

অপরাধবিজ্ঞানের পঠনপাঠন

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৯ পিএম
অপরাধবিজ্ঞানের পঠনপাঠন
মো. সাখাওয়াত হোসেন

অপরাধের ধরন, অপরাধীর মনস্তত্ত্ব, অপরাধের কার্যকারণ, অপরাধী শনাক্তকরণ, অপরাধের ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব, অপরাধ প্রতিকারে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহার, অপরাধ প্রতিরোধে পরিবেশগত কৌশল, অপরাধীদের সংশোধন, বিচার ব্যবস্থাপনা প্রভূত বিষয়ে অপরাধবিজ্ঞানে পাঠদান করানো হয়। এ ছাড়া পুলিশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পুলিশের নিয়োগপ্রক্রিয়া, পুলিশের বিভিন্ন উইং ও ব্র্যাঞ্চের কার্যক্রম, দেশে-বিদেশে প্রচলিত পুলিশের নানাবিধ স্টাইল তথা পদ্ধতি, পুলিশের বিচক্ষণতা, পুলিশ তদন্ত, তদন্তে ফরেনসিকের ব্যবহার, পুলিশের এথিকস, পুলিশের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশিংয়ে প্রচলিত মডেল প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। 

এ ছাড়া বিচারিক কার্যক্রমে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রোবেশন, প্যারোল, বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি, ভিলেজ কোর্ট, জুভেনাল কোর্ট, শিশু আইন, কিশোর সংশোধন কেন্দ্র, কারাগার ও শাস্তি পরিচালনা বিদ্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পাঠদান করা হয় শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া বিশেষায়িত ডিসিপ্লিন হিসেবে সন্ত্রাসবাদ, অর্গানাইজড ক্রাইম, ট্রাফিকিং, এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইম, গ্রিন ক্রিমিনোলজি, গ্লোবাল ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিস, মানবাধিকার প্রভূত বিষয়ে সার্বিক ধারণা প্রদানের উদ্দেশ্যে বিভাগটি বাংলাদেশে চালু হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মূল কাজই হচ্ছে তত্ত্বীয় জ্ঞানের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি গবেষণাভিত্তিক জ্ঞান সৃজন ও বিতরণ। তুলনামূলক নতুন ও সমসাময়িক ডিসিপ্লিন হিসেবে এ বিভাগের পঠিত বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। মৌলিক কনসেপ্ট ও মেথডোলজি থাকায় ডিসিপ্লিনটির বিষয়ভিত্তিক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। রিসার্চ মেথডলজি নিয়ে বিস্তর পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে বিভাগটিতে এবং এর পাশাপাশি রিসার্চে ব্যবহার করার জন্য পরিসংখ্যানিক টুলস নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।

 গবেষণা তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে তথ্যদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের কৌশল, ডেটা কোডিং ও ডেটা এনালাইসিসে প্রয়োজনীয় কৌশল শিক্ষার্থীদের রপ্ত করানোর কার্যাক্রম সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রচলিত বিধি, নিয়ম-কানুন ও জুরিসপ্রুডেন্স, পেনাল কোড-১৮৬০, ক্রিমিনাল ল অ্যান্ড প্রসিডিউর-১৮৯৮, ইভিডেন্স অ্যাক্ট-১৮৭২, পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১, পুলিশ রেজুলেশন অব বেঙ্গল-১৯৪৩, চিলড্রেন অ্যাক্ট-২০১৩, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন, ট্রিটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। 
ডিসিপ্লিনটিতে মৌলিক গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে অপরাধের কার্যকারণ নির্ণয়ে ব্যাপকতর ও সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষে সত্যিকারের অপরাধীদের খুঁজে বের করার উপায় ও কৌশল নির্ধারণ করা সহজতর হয়েছে। অপরাধীদের মটিভ ও অ্যাকশন বুঝে অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধের নানাবিধ কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। 

অধিকন্তু রিপোর্টেড ক্রাইম ও আন-রিপোর্টেড ক্রাইমের বহুমাত্রিক পার্থক্যের বাস্তবতার নিরিখে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞানের ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদারের জন্য অপরাধ প্রতিরোধের ডিজাইনগুলো নিয়ে কাজ করার উপায় উদ্ভাবন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড ট্যুরের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষাদানের উদ্যোগও গৃহীত হয়েছে। 
সমসাময়িক সৃষ্ট সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। সাইবার অপরাধ ও সাইবার অপরাধীদের শনাক্তকরণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান কার্যকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এ-সংক্রান্তে শিক্ষার্থীদের গবেষণাকর্ম সম্পাদিত হয়েছে। 

কম্পিউটার ব্যবহারের মধ্যদিয়ে কিশোর-কিশেীরারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গদোষে কিশোররা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাবিমুখ হয়ে উঠছে, স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, মাদকাসক্ত হয়ে উঠছে- প্রভূত বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক নতুন তত্ত্ব তৈরির প্রয়াস সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তত্ত্ব প্রায়োগিকভাবে কতটুকু কার্যকর সে ব্যাপারে যাচাই-বাছাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তথা গবেষণার ফলাফলকে বাস্তবে প্রয়োগের মাধ্যমে। 

অপরাধবিজ্ঞান পাঠে পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় পুলিশের বিভিন্ন স্টাইল ও পদক্ষেপ ব্যবহার করার কৌশল সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল ও পরস্পরের পরস্পরের প্রতি আস্থা সৃষ্টির অভিনব বিষয়াদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। পুলিশের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে কর্মকৌশল প্রণয়নেও শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশের পুলিশিং মডেল বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল করার পথ উত্থাপিত হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে ক্রিয়াশীল করতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। জনগণের কাছ থেকে সমস্যা জানার কৌশল ও জনগণের ইচ্ছানুযায়ী পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনার উপায়ও উন্মুক্ত করা হয়েছে পাঠ্যক্রমে। 

অপরাধকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মূল্যায়নের জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। বাস্তবতার মিশেলে তত্ত্ব কতটুকু প্রয়োগ করা যায় কিংবা তত্ত্ব কি আদৌ প্রয়োগযোগ্য সে ব্যাপারটিও যাচাই-বাছাই তথা মূল্যায়নের জন্য তত্ত্বীয় জ্ঞান একজন গবেষককে সঠিক জ্ঞান বোঝার সুযোগের পাশাপাশি ভবিষ্যতের একটি রূপরেখা প্রণয়নে সহযোগিতা করতে পারে। তত্ত্বকে প্রায়োগিকভাবে ব্যবহারের কৌশল পদ্ধতির পাশাপাশি তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন জ্ঞান আহরণে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে থাকে। কল্যাণকর রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নিরাপদ ও উত্তম পরিবেশ তৈরিতে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগটি রাষ্ট্রকেই গ্রহণ করতে হবে। 
 
এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ রয়েছে পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। ইতোমধ্যে এ বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। অনেকেই ডিগ্রি শেষ করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান করানো হয়। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডিসিপ্লিনের গুরুত্ব অনুধাবন করে অনেক ডিসিপ্লিনে ১০০ নম্বরের অপরাধববিজ্ঞান কোর্স সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 বিশেষ করে অপরাধের হার, ঋতুভিত্তিক অপরাধের ধরন, সমতল অঞ্চলের অপরাধ, পাহাড়ি অঞ্চলের অপরাধ, হোয়াইট কালার ক্রাইম, ব্লু কলার ক্রাইম, অর্গানাইজড ক্রাইম প্রভৃতি বিষয় সম্বন্ধে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের জন্য অপরাধবিজ্ঞান পাঠ অত্যাবশ্যকীয়। সংশ্লিষ্ট অপরাধগুলো নিয়ে সরকারের পলিসি লেভেলে নীতি প্রণয়নে অপরাধবিজ্ঞানীদের গবেষণা জ্ঞানের যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের ব্যাপক নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। 

এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাস করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি সেক্টরেও এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ করে গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, ব্র্যাক, আইন ও সালিশকেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করছেন পাস করা শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইউএনডিপি, কেয়ার, ইউএসএইড, অ্যাকশন এইডসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকরি করছে। গণমাধ্যমেও এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানে তদন্ত বিভাগের দায়িত্বে দীর্ঘদিন ধরে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুনাম ও গৌরব চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণাকর্ম পৃথিবীর নামকরা জার্নাল ও প্রকাশনা হাউস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে, এ ব্যাপারটি পঠন-পাঠনের অন্যতম স্বীকৃতি।

 বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত গবেষণায় এ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। কাজেই বিভাগটির পঠন-পাঠনের গ্রহণযোগ্যতা ও কর্মস্বীকৃতি বিশদ আকারে পরিচিতি পেয়েছে। বিভাগটির স্বতন্ত্র কার্যক্রম আরও বেগবান ও মৌলিকত্ব পাবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে। বিশেষ করে সরকারের যেসব ইউনিট ও প্রতিষ্ঠান সরাসরি আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত, মানবাধিকার সংগঠন তথাপি ইন্টেলিজেন্সি উইংয়ে অপরাধবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে দেশ ও জাতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে এবং মেধাবীরা পছন্দের ডিসিপ্লিন হিসেবে অপরাধবিজ্ঞান পাঠে আগ্রহী ও উৎসুকপ্রবণ হয়ে উঠবে।  

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 
[email protected]