ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাৎকার: সিরাজুল ইসলাম চোধুরী শিক্ষক যদি লাঞ্ছিত হন, তাহলে শিক্ষাই লাঞ্ছিত হয়

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম
শিক্ষক যদি লাঞ্ছিত হন, তাহলে শিক্ষাই লাঞ্ছিত হয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ। শিক্ষকদের যখন লাঞ্ছিত, অপমানিত ও জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, ঠিক তখনই এর লাগাম টেনে ধরতে চান সমাজ রূপান্তরকারী এই শিক্ষক। এ ব্যাপারে তিনি কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র সহ-সম্পাদক সানজিদ সকাল

খবরের কাগজ: সরকার পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষকরা লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, এই বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা আঘাত আনে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। এটা শুধু শিক্ষককে ব্যক্তিগতভাবে লাঞ্ছনা করা হয় না, পুরো জাতি লাঞ্ছিত হয়। শিক্ষক যদি লাঞ্ছিত হন, তাহলে শিক্ষাই লাঞ্ছিত হয়। শিক্ষক যদি অপমানিত হন ও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্ক। যদি কোনো শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরানো হয়, তাহলে সেই শিক্ষক আর শিক্ষক থাকেন না। সেই আঘাতটা শুধু একজন শিক্ষকের ওপর আসে না, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আসে। শিক্ষকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। 

ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্কটাই বদলে ফেলতে হবে এবং মধুর হতে হবে। ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ। এটা মানতেই হবে যে, ছাত্ররা সব সময়ই শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে মানবে। শিক্ষককে বীর হিসেবে অনুকরণ করতে হবে। সেই অনুকরণীয় মানুষটাকে যদি খাটো করে ফেলা হয়, তাদের যদি কোনো সম্মান না থাকে, তাহলে শিক্ষায় তার অধিকারই থাকে না। তখন তিনি আর শিক্ষক থাকেন না। 

শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ করাটা সংক্রামক ব্যাধির মতো। একবার এক শিক্ষকের ওপর আক্রমণ করলে সব জায়গাতেই এর প্রভাব পড়ে। সবাই পাওয়ার বা শক্তি প্রয়োগ করতে চায়। আমরা দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন ছিলাম। আমাদের ক্ষমতার অভাব আছে। ক্ষমতা যখন যে যতটুকু পায়, সেই ক্ষমতাটার অপব্যবহার করে। ক্ষমতা পেলেই মানুষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে। যারা ক্ষমতা থেকে একসময় বঞ্চিত হয়, তারাই ক্ষমতা পেলে সেটাকে অপব্যবহার করে। 

এমনিতেই ক্ষমতা সব সময়ই অপব্যবহারমুখী। শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োগ করা হয়নি। এখন শিক্ষার যে পদ্ধতি তাতে শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষ করে কোচিং সেন্টারে চলে যায়। তারা গাইড বই ব্যবহার করছে। তারা ক্লাসরুমে বেশি সময় দিচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্য সৃজনশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে না। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষা এখন কেনাবেচার পণ্যতে পরিণত হয়েছে।  

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন আনা দরকার কি না। অন্যদিকে ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্কে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা আগের দিনে এমন সম্পর্ক ছিল না। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: জাতি গঠনে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে সুনিবিড় সম্পর্ক থাকা উচিত। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হলে অবশ্যই শিক্ষকের মর্যাদা দিতে হবে। এমনিতেই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত। আমাদের দেশের সন্তানরা প্রাথমিক পর্যায়ে এসেই ঝরে পড়ে। আমাদের দেশের শিক্ষার বড় দুর্বলতা হলো তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। বর্তমান বিশ্বে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা কোনো দেশে আছে বলে মনে হয় না। একটা শ্রেণির ওপর নির্ভর করে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তিন ধারায় ভাগ করে রেখেছে। এই তিন শিক্ষা ধারা একদিন অবলুপ্ত হবে। 

বর্তমানে এই তিন ধারা ছাড়াও আরও শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো শ্রেণি বিভাজন। মাতৃভাষার মাধ্যমে যে শিক্ষা তা আমরা জাতিকে দিতে পারছি না। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াকেই প্রধান ধারা করার কথা ছিল। বাঙালি জাতি বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষাকে কেন শিক্ষার মাধ্যম করা গেল না, সেটা আমাদের জাতির একটা বড় দুর্বলতা। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই জায়গাটায় আমাদের ভাবতে হবে। লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জবরদখল চলছে। রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে এমন অনৈতিক কাজগুলো করা হচ্ছে। দেশে সরকার পতন হলে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনভাবে দখল করতে হবে? এমনকি বিদ্যালয়ও এর থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে, লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। 

এমনকি নারী শিক্ষিকাদের লাঞ্ছিত করে তার কক্ষ থেকে বের করে দিচ্ছে তারই শিক্ষার্থীরা। এমন তো কখনো হওয়ার কথা নয়। 
শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। শিক্ষদের বিরুদ্ধে তালিকা করা হচ্ছে। এসব কাণ্ড করা হচ্ছে একবারেই নিজস্ব স্বার্থের কারণে। এটা কোনো আদর্শ হতে পারে না। শিক্ষক লাঞ্ছনা, শিক্ষকদের ওপর নির্যাতন এবং জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা খুবই খারাপ কাজ। এ ধরনের ঘটনা কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ঘটছে না। এমনকি কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও ঘটছে না। এই ঘটনাগুলো ঘটছে মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মূলধারার শিক্ষাতেই তারা আঘাত করছে। মূলধারার শিক্ষাটা নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম কি আগের কারিকুলামে ফিরিয়ে আনা হবে? বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে নতুন প্রজন্ম প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে কি? বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে কোনো পরিবর্তন দরকার আছে বলে কি আপনি মনে করেন? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সবকিছুই পরিবর্তন হয়। তারও একটা নিয়মনীতি আছে। শিক্ষা কারিকুলাম আগের কারিকুলামে গেলে ভালো হবে, নাকি মন্দ হবে সেটা কোনো বিষয় নয়। হঠাৎ করে শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করা হলো একধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব। শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিশদ আলোচনা করা ও প্রস্তুতির দরকার ছিল। শিক্ষা কারিকুলাম বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। 

একবার সৃজনশীল, আবার নতুন কারিকুলাম। পরীক্ষার বিষয় কখনো বাড়ানো হয়, আবার কমানো হয়। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। যারা দলনিরপেক্ষ, সেসব শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ নিতে হবে। শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই শিক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা প্রস্তুত নন, অভিভাবকরাও প্রস্তুত নন। অভিযোগ উঠেছে যে, ছাত্ররা এখন পড়তে চায় না। কী এমন করা হলো যে ছাত্ররা পড়তে মনোযোগী হচ্ছে না। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। 

খবরের কাগজ: শিক্ষার্থীরা কেন পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়া হচ্ছে, এতে কি শিক্ষার্থীরা মেধাহীন হয়ে পড়বে না? এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাস দেওয়াটা মোটেও ভালো হয়নি। এর আগেও একবার অটোপাস দেওয়া হয়েছিল। আইয়ুব খানের আমলে তিন বছরের বিএ কোর্স চালু করা হয়েছিল। ওই সময়েও ছাত্ররা বিএ কোর্সের মেয়াদ দুই বছর করার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন যারা বিএ কোর্সে দুই বছর অতিক্রম করেছিল তাদের অটোপাস দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই দুর্বলতাটা এখনো আমাদের দেশে রয়ে গেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে। 

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যেভাবে অটোপাস দেওয়া হলো, তাতেও একধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। ছাত্ররা নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে না। এসব ছাত্র দিন দিন হীনম্মন্যতায় ভুগবে। তাদের মনের ভেতরে সব সময় একধরনের ব্যাধি কাজ করবে যে, আমরা পরীক্ষা না দিয়েই পাস করেছি। অন্যরাও এদের দেখে বলবে যে, পরীক্ষা না দিয়েই এরা এসেছে। এটা ব্যক্তি মানুষের যেমন সারা জীবনের দুঃখ, তেমনি জাতির জীবনেও এক ধরনের দুঃখ।

খবরের কাগজ: খবরের কাগজের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: খবরের কাগজকেও ধন্যবাদ।

ভ্যান্স ও ওয়ালজ বিতর্ক: মার্কিন  পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বার্তা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
ভ্যান্স ও ওয়ালজ বিতর্ক: মার্কিন 
পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বার্তা
ড. আমাল মুদাল্লালি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাঁচ সপ্তাহ আগে আমেরিকান ভোটাররা দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পারছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিপাবলিকান জেডি ভ্যান্স এবং ডেমোক্র্যাট টিম ওয়ালজের কাছ থেকে নতুন নাগরিকদের জন্য ‘মধ্য-পশ্চিমা’ ধারণার কথা শুনেছেন। কিন্তু তাদের ৯০ মিনিটের বিতর্কে যা অনুপস্থিত ছিল সেটাই ছিল পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তাদের মূল দৃষ্টিভঙ্গি। 

বিতর্কটি ইসরায়েলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে একটি প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল, যা নিউইয়র্ক সিটিতে দুই ব্যক্তি মুখোমুখি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটেছিল। দুই প্রার্থী যে বিষয়গুলো নিয়ে কোনো উত্তর দেননি, তা-ই ছিল পররাষ্ট্রনীতির মূল এজেন্ডা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। আফগানিস্তান এবং মিত্র বা ন্যাটো সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন নেই। ‘আঞ্চলিক রাজনীতি’- এই কথাটি তাদের বিতর্কের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। কারণ প্রার্থীরা অভিবাসন থেকে শুরু করে অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন অধিকার, জলবায়ু, অস্ত্র সহিংসতা এবং আমেরিকার গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন।

সিবিএস নিউজের মডারেটর বিতর্কের সূত্র ধরে এই প্রশ্নটি করেন যে, তারা কি ইরানের ওপর ইসরায়েলের ‘অগ্রিম হামলা’ সমর্থন করেন? যদিও তারা কেউই এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দেননি। অথচ তাদের আন্তর্জাতিক নীতিতে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। ডেমোক্র্যাটদের ‘স্থির পরিস্থিতি’ বনাম রিপাবলিকাদের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’র বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। 
ওয়ালজ ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা তাদের জন্য মৌলিক ছিল। তাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা মৌলিক দায়িত্ব এবং গাজায় মানবিক সংকটের অবসান ঘটানো দরকার।
 
ইসরায়েল ও ইরানের প্রক্সির সম্প্রসারণ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্থির নেতৃত্ব’কে মৌলিক হিসেবে দেখেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অংশীদার হিসেবে যেভাবে কাজ করেছে তা একটা বড় উদাহরণ। তিনি বলেছিলেন, কমলা হ্যারিস স্থির নেতৃত্বের প্রস্তাব দেবেন। যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটগুলোকে ‘মানসম্পন্ন কূটনীতি’ হিসেবে ব্যবহার করেন, তখন কমলা হ্যারিস ট্রাম্পকে জোটবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ‘পরিবর্তনশীল’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের বাহিনী এবং আমাদের মিত্রবাহিনীকে রক্ষা করব।’

ভ্যান্স সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করে, তারা তাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে কী করা দরকার। মিত্রদেরকে আমাদের সমর্থন করা উচিত তাদের শত্রুদের মোকাবিলার জন্য। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছেন যে, ট্রাম্প বিশ্বকে আরও সুরক্ষিত করেছেন এবং বিশ্বে স্থিতিশীলতা এনেছেন। তিনি কার্যকর প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি করেছেন। সব কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মানুষ খুব ভয় পাচ্ছে। ইরান, যারা এই হামলা চালিয়েছে নিশ্চয়ই তারা পুরস্কত হয়েছেন। ভ্যান্স আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকে ভয় পায়। শক্তির মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করা প্রয়োজন। 

রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পের নীতির প্রতিরক্ষা করেছিলেন, যেমনটি তিনি গত মাসে করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে। তিনি দ্য নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘সত্যিই জানেন না কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়’ এবং ভ্যান্স তাকে খুব ‘গোড়া’ বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন খুব দরকার। নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে ইউক্রেনে অব্যাহত মার্কিন সহায়তা প্রদানের জন্য ট্রাম্পের প্রয়োজন হবে।

এটি ছদ্মবেশে একটি আশীর্বাদ হতে পারে যে, বিতর্কের সময় ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কারণ জেলেনস্কি ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর জোশ শাপিরোর সঙ্গে পেনসিলভানিয়ায় একটি গোলাবারুদ কারখানা পরিদর্শন করেন। ভ্যান্স বলেন, আরেকটি গুরুতর রাজনৈতিক ভুল হয়েছে যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হাজির হয়েছিলেন আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা এবং পক্ষ বেছে নিতে।

ভ্যান্সের প্রতিক্রিয়া পেনসিলভানিয়ায় একটি বক্তৃতায় উঠে এসেছিল। পেনসিলভানিয়া এমন একটি সমালোচনামূলক সুইং স্টেট, যেখানে প্রতিটি দল জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে একটু উচ্চ স্বরে বলেছেন, ‘তিনি এই দেশের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রচার করতে এসেছেন। আমরা ইউক্রেনে ২০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। আপনি কি জানেন- জেলেনস্কি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তখন তিনি কী করেছেন? তিনি শুধু পেনসিলভানিয়ার মানুষ এবং অন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে যান।’ 
বিতর্কটি এমন এক সময়ে এসেছিল যখন মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ দিন দিন বাড়ছে।

 ইউক্রেনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক নজর বা মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ওয়ালজ দাবি করেছেন যে, জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রত্যাহারের কারণে ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্প এই অবস্থা টেনে নিয়ে এসেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোঁড়ামি নেতৃত্বের কারণে ইরান আগের তুলনায় পারমাণবিক অস্ত্র হামলার দিকে যাচ্ছে। 

তবে বিতর্কের সবচেয়ে মর্মান্তিক পয়েন্টটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার সময়ে এসেছিল। রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভেবেছিলেন, ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরেছেন কিনা। ভ্যান্স আগে জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন তাতে অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাবলিক স্কোয়ারে শান্তিপূর্ণভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক করা উচিত। আমি যা বলেছি, ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাই বলেছেন। তিনি মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যখন জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে দিয়েছিলেন। 

ওয়ালজ তার প্রতিপক্ষের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তিনি (ট্রাম্প) কি ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরেছেন?’ প্রশ্নটির উত্তর সুন্দরভাবে এড়িয়ে গিয়ে ভ্যান্স বলেছিলেন, ‘টিম ওয়ালজ, আমি ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করছি’। ওয়ালজ জবাব দিলেন- ‘এটি একটি জঘন্য উত্তর।’ তিনি সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আমেরিকান ভোটারদের উদ্দেশে বলেছিলেন- ‘আমি মনে করি আপনি সত্যিই পছন্দের জায়গায় সেরা… কে সেই গণতন্ত্রকে সম্মান করবে এবং কে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্মান করবে।’

ভাইস প্রেসিডেন্টরা সাধারণত মার্কিন নির্বাচনি দৌড়ের গতিপথ পরিবর্তন করেন না। তারা দেশীয় বা আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে সব সময় এক থাকেন। এই বিতর্কটিতে বিতর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে এক সুচ পরিমাণও নড়েনি। দর্শকদের কাছ থেকে সিএনএন জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১ শতাংশ বলেছেন যে, বিতর্কের ফলে তারা তাদের মন পরিবর্তন করেছেন। তবে বিতর্কটি এখনো ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ভোটারের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। ভ্যান্স খুব কম সুবিধা নিয়ে বিতর্কে আসেন। বিতর্কের সময় তিনি নিজের একটি নতুন এবং সরল সংস্করণের প্রস্তাব করেছিলেন। বিতর্কটি ছিল সুশীল সমাজ ও মূল বিষয়বস্তুর ওপর। উভয়েই একে অপরকে আক্রমণ করার চেয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বেশি আক্রমণ করেছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য বিনইয়ামিন অ্যাপেলবামের মতে, ওয়ালজ ভ্যান্সকে ‘অদ্ভুত’ বলে অভিহিত করেননি, যেমনটি তিনি প্রচারণার সময় করেছিলেন। অন্যদিকে ভ্যান্স ‘ট্রাম্পবাদকে নম্র, শান্ত এবং সুসঙ্গত করে তুলেছিলেন’। এটি সিএনএন প্রতিফলিত হয়েছিল যে, ভ্যান্সের অনুকূলতা বেড়েছে। বিতর্কের আগে ৩০ শতাংশ ছিল এবং পরে ৪১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তার প্রতিকূলতা এখনো ৪৪ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে, ওয়ালজ তার অনুকূলতা ৪৬ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে উন্নীত করেছেন। কিন্তু যারা জরিপ করেছেন তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, বিতর্কের সময় ভ্যান্স ভালো করেছেন।
 
যদিও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা প্রচারের সময় পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন করেন না। তবে তারা তাদের প্রার্থীদের একে অপরের বদনাম করতে পারেন। এই বিতর্কে উভয় প্রার্থীই একটি বড় দুর্ঘটনা এড়িয়ে গেছেন, বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতিতে। তারা বিশ্বকে একটি নিরপেক্ষ বার্তাও দিয়েছেন।

লেখক: জাতিসংঘে লেবাননের সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

রেজানুর রহমান

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
রেজানুর রহমান

একটি ছোট প্রশ্ন। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা- দেশের এই জেলাগুলো কি অনেক দূরের জনপদ? কারও তুলনা করছি না। তবুও কথার পিঠে কথা চলে আসে। কিছুদিন আগে ফেনীসহ দেশের চারটি জেলা যখন বন্যাকবলিত হলো তখন আমরা বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে যেভাবে ছুটে গেছি, ঢাকায় ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম চালু করেছি, তেমনটা কি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার বানভাসি মানুষের ক্ষেত্রে করেছি বা করছি। অতিবৃষ্টি এবং উজানের দেশ ভারত থেকে আসা অস্বাভাবিক পানির স্রোত ফেনীসহ পার্শ্বর্বতী চার জেলার জনপদকে স্মরণকালের দুর্যোগময় পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়। আনন্দের খবর, দলমত নির্বিশেষে সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা ফেনীসহ চার জেলার বন্যাদুর্গত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পেরেছি। ফেনীসহ চার জেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়ংকর ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারও উজানের দেশ ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানির স্রোত ডুবিয়ে দিল তিস্তা নদীর পাড়ঘেঁষে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তৃত জনপদ। বাড়িঘর ডুবেছে, ফসলের মাঠে বুকসমান পানি, রেললাইন ডুবেছে। শুধু শুকনা জায়গায় ঠাঁই নেওয়ার আশায় দিকভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি শুরু করেছে অসহায় মানুষ।

 দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, উত্তরাঞ্চলের এই বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা ততটা মানবিক ভূমিকা পালন করতে পারিনি। তার মানে এই নয় যে, উত্তরাঞ্চলের এই জেলাগুলোর বানভাসি মানুষের পাশে কেউই দাঁড়াননি। বিএনপিসহ অনেকেই বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিস্তাপারের মানুষের একটাই দাবি- সাহায্য চাই না, মানুষের জীবনমানের নিরাপত্তা চাই। চলতি বছরেই পর পর ভয়ংকর বন্যার মুখোমুখি পড়েছে তিস্তাপারের বিস্তৃত জনপদের লাখ লাখ মানুষ। এই বন্যা তো এই খরা। বন্যায় পানির তোড়ে ভেসে যায় সংসার। আবার খরার সময়ে এক ফোঁটা পানির জন্য শুরু হয় হাহাকার। উজানের দেশ ভারতের এক ধরনের অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে তিস্তাপারের অসহায় মানুষ ভাগ্যের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও দোষারোপ করছে। তাদের প্রশ্ন- তিস্তাপারের মানুষ তো এই দেশেরই নাগরিক। তাদের কি নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের অধিকার নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে তিস্তাপারের মানুষের জীবনযাপন ও সীমাহীন দুর্গতি নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। অনেক স্বপ্নের কথা শোনানো হয়েছে। রাজা আসে রাজা যায়।

 অথচ তিস্তাপারের মানুষের দুর্গতি মোটেও কমে না। এবারের বন্যায় দুর্গতির চিহ্ন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। অতি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল নিমিষেই ভাসিয়ে দেয় তিস্তাপারের বিস্তৃত অঞ্চলকে। পানি নেমে যাওয়ার সময় নদীভাঙনের ভয়ংকর ক্ষত রেখে যায়। তিস্তাপারের মানুষ নিজেরা নিশ্চিত বলতে পারেন না আজ যেখানে আছেন কাল সেখানে থাকবেন কিনা। নদীভাঙন তাদের জীবনকে যাযাবর করে তুলেছে। অতীতকালে তিস্তাপারের অসহায় মানুষকে মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটের রাজনীতি করা হয়েছে। ভোট শেষে কেউই তিস্তাপারের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। যেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই কবিতার মতো... বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি। 

চীন তিস্তাকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী সমীক্ষাসহ প্রাথমিক কিছু কাজ এগিয়ে নিয়েছিল তারা। ডিজিটাল ভার্সনে তিস্তা মহাপরিকল্পনার একটি আভাসও দিয়েছে চীন। তিস্তাপারের অসহায় মানুষকে ডিজিটাল ভার্সন দেখিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে। তিস্তাপারের মানুষের দুর্গতি আর থাকবে না। তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে- এমন কথা বলে বছরের পর বছর তিস্তাপারের মানুষের সঙ্গে এক ধরনের রসিকতা করা হয়েছে। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় তিস্তাপারের মানুষের কষ্টের দিন আর যায় না। তিস্তাপারের একজন অসহায় গৃহবধূ তার বিধ্বস্ত বসতভিটায় দাঁড়িয়ে করুণ কণ্ঠে বললেন, ‘হামার কথা কাঁইয়ো ভাবে না বাহে। বানের পানি আইসে আবার চলিও যায়। ভাসি নিয়া যায় হামার ঘর-সংসার। এইটা কী মাইনষের জীবন বাহে? হামরা কী দ্যাশের মানুষ না?’

এবার স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিস্তাপারের মানুষ বারবার বানের পানির সঙ্গে লড়াই করেছে। বন্যা মৌসুমে তিস্তাপারের মানুষের এটাই নিয়তি। বৃষ্টির মৌসুমে পানির সঙ্গে লড়াই করে কোনোমতে টিকে থাকা। আবার শুষ্ক মৌসুমে এক ফোঁটো পানির জন্য হাহাকার। তথ্যপ্রযুক্তির এই বিস্ময়কর যুগে তিস্তাপারের মানুষের জীবনমান বদলে দেওয়া খুবই সহজ। এজন্য প্রয়োজন উজানের দেশের আন্তরিক সহযোগিতার পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন। বলতে গেলে ভারতের অসহযোগিতার কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। 

তিস্তাপারের অসহায় মানুষের দুর্গতি দূর করতে এবার আন্দোলন-সংগ্রামের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ তিস্তাপারে গড়ে ওঠা দেশের বিস্তৃত জনপদের মানুষ। তারা বৈষম্যের অবসান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন স্থানীয় সমন্বয়ক বললেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম রংপুরে এসেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়িতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পিছিয়ে পড়া রংপুরই হবে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে দেশের প্রথম জেলা। কিন্তু তিস্তাপারের মানুষের জীবনমানের উন্নতি না ঘটলে প্রধান উপদেষ্টার এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আমরা আশায় আছি তিস্তাপারের মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হবে। আশা আছে বলেই মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।         

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার
সম্পাদক আনন্দ আলো

সংস্কারে স্বচ্ছতা ও জনমতের প্রাধান্য থাকতে হবে

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০১ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
সংস্কারে স্বচ্ছতা ও জনমতের প্রাধান্য থাকতে হবে
মুনিরা খান

বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জনসাধারণের আস্থার সংকট প্রকট। কাজেই এই ব্যবস্থার সংস্কারে গঠিত কমিশনের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। নতুন নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার যে ঘাটতি রয়েছে সবার আগে সেটা পূরণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায় জনমতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। 

সর্বজনগ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সহযোগিতা থাকতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সবচেয়ে বড় যে অসঙ্গতি তা হলো- সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেওয়ার পদ্ধতিগত ত্রুটি। বিগত দিনে যেভাবে তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে, সার্চ কমিটি যেভাবে গঠিত হয়েছে সেসবই ভুল ছিল। আমরা দেখেছি কোনো ধরনের জনমতের তোয়াক্কা না করে সার্চ কমিটিতে আগে থেকে নির্ধারণ করা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সার্চ কমিটির মধ্য থেকেও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে আমরা দেখেছি, যা একেবারে অনুচিত। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে- এমন নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরি।

এ ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠন করে অথবা সরাসরি দুভাবেই নতুন নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করা যেতে পারে। গুরুত্ব দিতে হবে তাদের বাছাই করার প্রক্রিয়ার দিকে। ভালো ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে অতীতে যে ভুলত্রুটি বা গ্যাপগুলো ছিল সেগুলো পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনি সংস্কারের রোডম্যাপ যেটা হবে, সেটা একবারে না করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা উচিত হবে। সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে জনমতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা সরাসরি অথবা অনলাইনে- দুই মাধ্যমেই হতে পারে। আমি অনলাইন মাধ্যমকে সবচেয়ে ভালো মনে করছি। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করে সেখানে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে হবে। সার্চ কমিটি অথবা নির্বাচন কমিশনে যাদের ভাবা হচ্ছে- তাদের সবার নাম অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে সংস্কারের ব্যাপারে আগ্রহী সাধারণ মানুষ এবং সব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রস্তাবিত ওই সব ব্যক্তিদের ব্যাপারে তাদের মতামত অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এরপর তাদের মতের ভিত্তিতে প্রথমে শর্টলিস্ট পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। আমি মনে করি, এমন প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিশন নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগও থাকবে না। এ ছাড়া এই সংস্কার কমিশন যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করবে, তার সবই হতে হবে স্বচ্ছতা ও জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে।

এ ছাড়া ভোটের মাঠে কালোটাকা, পেশিশক্তির ব্যবহার আর কারচুপি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কালোটাকার প্রভাব বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় প্রার্থীদের যৌথ প্ল্যাটফর্মে প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেটা আমি অন্য দেশে ব্যবহার করতে দেখেছি। এর ফলে প্রচার খাতে প্রার্থীর বাড়তি খরচ করার প্রবণতা রোধ এবং কোন প্রার্থী কত খরচ করছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। ভোটের সময় প্রার্থীরা যে হলফনামা জমা দেন সেসব ভোটের আগেই বাছাই করার জন্য সময় রাখা জরুরি। 

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত কমিশনের প্রধান করা হয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। যিনি দেশের নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘদিন তার সংগঠন সুজনের পক্ষ থেকে কথা বলছেন, নানা ধরনের সংস্কার প্রস্তাবও দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার কমিশনে সদস্য হিসেবে যারা যুক্ত হয়েছেন ড. তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলি ও ড. আব্দুল আলীমসহ প্রত্যেকেরই নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই তারা জনপ্রত্যাশা পূরণে সফল হবেন বলে মনে করি। 

প্রেসিডেন্ট, বেসরকারি সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) 
অনুলিখন: শাহনাজ পারভীন এলিস

দেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য  সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০০ পিএম
দেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য 
সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন
জেড আই খান পান্না

একটা দেশের সংবিধান হচ্ছে সেই দেশের ভিত্তিমূল। সংবিধান সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ভিন্নমত, ভিন্নধর্মের সবার অংশগ্রহণ। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন।...

বাংলাদেশ বহুজাতিক গণতান্ত্রিক একটি দেশ। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখা, একই সঙ্গে গণতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান ১৯৭১-এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। তারপর এটি বারে বারেই পরিবর্তিত হয়েছে। যে আইন করা হয়েছিল শাসকশ্রেণির শোষণের জন্য, সেই আইন এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তা হলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা না গেলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। সংবিধান বাতিলের মধ্যে গেলে ১০-২০ বছর পরে তা আবারও বাতিল হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার আবশ্যক মনে হয়। 
আমাদের ছাত্ররা কোটা সংস্কার নিয়ে একটি আন্দোলন করেছে। 

এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের ছিল না। তবুও এদের পেছনে লাখ লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এটি রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি শিক্ষা। মানুষের মনের কথা, তাদের মনের ভাষা অর্থাৎ জনগণের পালসটা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাড়ি-গাড়ি, অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য নয়। তখন আমাদের ভাবনায় একটি কথাই ছিল- বাঁচতে হবে এবং বাঁচতে হলে মারতে হবে। সম্মুখসমরে যারা যুদ্ধ করেছেন, তারা সার্টিফিকেটের জন্য যুদ্ধ করেননি। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে ছিলেন, দেশে ফিরে আসার পর তারাই আগে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব নিয়েছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা খেতাবের পেছনে, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিক কোনো উপাধি নেননি। পুরো প্রক্রিয়াটিতেই ঘাপলা আছে, যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। 

আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। '৭১-এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন হয়েছে। সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ ব্যক্তির হাতে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? প্রকৃতপক্ষে সংবিধান সংস্কার নয়, পুনর্লিখন প্রয়োজন। 

নতুনভাবে কোনো দল ক্ষমতায় এসে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন করতে না পারে। সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সংবিধান পরিশীলনে জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কি না, এটাও দেখা প্রয়োজন আছে। বেশকিছু অনুচ্ছেদ বিবেচনা করে সংবিধানে সংশোধন করতে হবে। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলো থেকে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৭১-এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে বিগত সরকার এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে ব্যক্তিপর্যায়েও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু হয়েছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

একটা দেশের সংবিধান হচ্ছে সেই দেশের ভিত্তিমূল। দেশের সার্বভৌমত্ব জনগণের, যার প্রতিফলন আমরা দেখিনি। মৌলিক অধিকার, সমতার কথা বলা থাকলেও তা বাস্তবায়নের কথা সংবিধানে বলা নেই। নানারকম রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তুলে আনতে হবে। সংবিধান সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ভিন্নমত, ভিন্নধর্মের সবার অংশগ্রহণ। দেশ ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান সংস্কার জরুরি। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোনো ব্যক্তিকেই ভরসা করতে পারেন না। তারা মনে করেন যে এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষমতা পেলেই লুটপাট করবে। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার যে ভঙ্গুর অবস্থা, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ যদি সংবিধান সংশোধনে এগিয়ে আসে- তাদের উচিত হবে দ্রুত সময়ে কাজ করা।

 যে আন্দোলন হয়েছে তা ছিল প্রথমত কোটাবিরোধী আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। তবে পরিবর্তন সবাই চায়, পরিবর্তন হওয়া উচিত। দারিদ্র্যের জন্য গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না বিশাল জনগোষ্ঠী। শ্রেণি বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, গণতন্ত্রের ফল আস্বাদন করতে হলে সংশোধন জরুরি। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনে সদিচ্ছার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে, তা যেন জনগণের মতের প্রতিফলন সংবিধানে নিয়ে আসে। সংবিধানের সংশোধন না করে একনায়কত্বকে প্রতিরোধ করা যাবে না। সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব সবারই। অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে সংবিধান সংশোধনের। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই সংবিধান সংশোধনযোগ্য করা সম্ভব। 

তরুণ প্রজন্ম, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক দলের সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের কাজ করা প্রয়োজন। নতুন সংবিধানে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠী সবারই অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে শিক্ষা নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব। বর্তমান সংবিধানে জাতিগত নিরপেক্ষতা নেই, যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বদাই প্রশ্নের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের বিচার বিভাগ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান, আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান।

ইতিহাস বিকৃত করে সংবিধানকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ যেহেতু সংশোধনের কোনো উপায় নেই, তাই সংবিধান পুনর্লিখন প্রশ্নের বিষয়। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না, ব্যাখ্যা দিতে পারে। আইনজীবীরা কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান বারংবার সংশোধিত হয়ে এসেছে। এমনভাবে সংবিধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, এখন আর এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না। ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছে সংবিধান কুক্ষিগত ছিল। সাবেক সরকার যে ক্ষমতাগুলো ভোগ করেছে তা সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কোনো কিছু করতে গেলেই সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এই ভয় নাগরিকদের কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। কাজেই শুধু সংস্কার নয়, গণতন্ত্র পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ গঠনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
 
লেখক: সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকা কতটা যৌক্তিক?

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকা কতটা যৌক্তিক?
এ টি এম মোস্তফা কামাল

ছাত্রছাত্রীদের কোমলমতি মন থাকে অত্যন্ত নিষ্কলুষ, নিষ্কণ্টক, নিরপরাধ এবং ন্যায়ভিত্তিক। তাদের যদি রাজনীতি করতে হয় তাহলে তারা সেটা করবে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় স্ট্রাকচার নির্মাণ বন্ধ করার জন্য এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য।...

ছাত্রদের অধিক্ষেত্র হচ্ছে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে লেখাপড়া করে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জন করা। সেই প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিটা যদি কোনো বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্জন করা যায় তাহলে সেটা হবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুষ্ঠু/অনুকূল  পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তাব্যক্তি এবং শিক্ষকমণ্ডলীর। সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে তার নিশ্চয়তা বিধান করা। ছাত্রদেরও উচিত এমন সব কাজ করা থেকে বিরত থাকা, যে কাজ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত/ক্ষতিগ্রস্ত  করতে পারে।

 বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভালোভাবে লেখাপড়া করে যদি ভালো রেজাল্ট করা যায় তাহলে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নেওয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর সব উন্নত দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর, শান্ত এবং শিক্ষাবান্ধব। শুধু ক্লাস রুম নয়, পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। ক্যাম্পাসের যেকোনো জায়গায় বসে একা কিংবা গ্রুপভিত্তিক লেখাপড়া করা যায়। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কোনো অবস্থান নেই। কোনো রাজনীতি নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক কোনো ছাত্র সংগঠন নেই। আমার দেখা এবং জানা মতে, ঢাকা শহরে এক মাত্র Military Institute of Science & Technology (MIST) and Bangladesh University of Professionals (BUP)-তে সেই রূপ পরিবেশ অনেকাংশে বিদ্যমান। 

ছাত্রছাত্রীদের কোমলমতি মন থাকে অত্যন্ত নিষ্কলুষ, নিষ্কণ্টক, নিরপরাধ এবং ন্যায়ভিত্তিক। তাদের যদি রাজনীতি করতে হয় তাহলে তারা সেটা করবে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় স্ট্রাকচার নির্মাণ বন্ধ করার জন্য এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, নীতি-নির্ধারকদের চিন্তাভাবনা কী হওয়া উচিত? সেটা হওয়া উচিত ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ডের শিক্ষার পরিবেশ এবং মান অর্জন করা। ইউরোপে কি আমাদের মতো ছাত্ররাজনীতি আছে? যদি না থেকে থাকে তাহলে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কেন ছাত্ররাজনীতি থাকার পক্ষে সাফাই গাইবেন?
আমাদের দেশে তো স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর ছাত্ররাজনীতি ছিল। বিগত ৫৩ বছরে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে নাকি শিক্ষার মানের উন্নয়ন হয়েছে? উত্তর যদি না সূচক হয়ে থাকে তাহলে কেন রাজনীতিবিদরা ছাত্ররাজনীতির পক্ষে সাফাই গাইবেন? 

আমাদের রাজনীতিবিদরা কি চান যে, আমাদের বেসরকারি খাতের শিল্পকারখানার মালিকরা দক্ষ শ্রমিক, সুপারভাইজার, ম্যানেজারের পদগুলো পূরণের জন্য ভারত, শ্রীলংকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকুক? আর আমাদের দেশের শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকার যুবকরা সৌদি আরবে গমন করবে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে, ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাক, থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার অবৈধ অভিবাসী হিসেবে রাস্তায়, জঙ্গলে পালিয়ে বেরাক, আর দেশে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং করে বেঁচে থাকুক। আর অধিকাংশ বেকার যুবক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাস্তান হিসেবে গড়ে উঠুক? এতে রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিস্বার্থ আর দলীয় স্বার্থ হাসিল হবে কিন্তু দেশ ও জাতির বারোটা বেজে যাবে। 

ছাত্রদের যদি রাজনীতি করতে হয় তাহলে তারা সেটা করতে পারে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, কুশাসন থেকে দেশকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য। আমার জানামতে এবং বিশ্বাস মতে, এ দেশে একটি দলও নেই যে দল সুশাসন কায়েমের জন্য রাজনীতি করছে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলে রয়েছে হিপোক্র্যাটিক মতবাদ। মুখে যা বলে অন্তরে সেটা বিশ্বাস করে না, মুখে যা বলে কার্যত সেটা করে না। কোনো রাজনৈতিক দল যদি ব্যবসায়ী এবং ধনিক শ্রেণির ব্যক্তিদের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে থাকে, নির্বাচনের সময় যদি নমিনেশন বাণিজ্য করে ব্যবসায়ীদের নমিনেশন দিয়ে থাকে, জাতীয় সংসদে যদি ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য সংখ্যা ৫০ শতাংশ অতিক্রম করে যায়, এই রূপ দল যদি সরকার গঠন করার সুযোগ পায়, তাহলে সেই সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে দেশ পরিচালনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। 

সাধারণ জনগণের কল্যাণার্থে কোনো কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। দেশটি পরিচালিত হওয়ার কথা সাধারণ জনগণের কল্যাণে। সুতরাং যেসব দল সরকার গঠন করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে দেশ পরিচালনা করবে সেসব দলের লেজুড়বৃত্তি করা কোনো ছাত্রছাত্রীরই উচিত নয়, কোনো ছাত্র সংগঠনেরই উচিত নয়। যেসব দল সরকার গঠন করে দেশে সুশাসন কায়েম না করে কুশাসন কায়েম করে/ করবে তাদের লেজুড়বৃত্তি করা কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষে শোভা পায় না। 

আমাদের দেশে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হল দখল, হলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের গভীর রাতে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে নানা ধরনের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলের সাধারণ ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, সাধারণ ছাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে দলীয় নেতাদের কাছে নিয়ে যাওয়া, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দলীয় কর্মীদের ভর্তি হতে সহায়তা করাসহ নানামুখী অপরাধমূলক কর্মকণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। ইডেন কলেজের হলের সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের অনৈতিক আচরণ নিয়ে পত্রপত্রিকায় নানাবিধ সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল; যা সমগ্র জাতির জন্য লজ্জার।

 সমগ্র দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের খবর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এরূপ অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল। এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নেতিয়ে পড়ছে। দেশের সাধারণ জনগণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। রাজনীতিবিদরা কি চাচ্ছেন ছাত্ররাজনীতি যেভাবে চলে আসছে সেভাবেই চলতে থাকুক? যদি সেটাই চাইবেন তাহলে তো দেশ গোল্লায় যাবে। 

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কোনো দলীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তাদের দলের অনুসারী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে আসছে। প্রতিপক্ষ দলের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রমকে প্রতিহত করা, স্বীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার এবং বজায় রাখা, মূল দলের সভা সমাবেশ সফল করা, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ পণ্ড করা মূল দলের ক্যাডার বা মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। এসব উদ্দেশ্যের একটি উদ্দেশ্য ও মহতী উদ্দেশ্য নয় এবং এর সঙ্গে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কোনো বিষয় জড়িত নেই। তাহলে কেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের মূল কর্ম লেখাপড়ার ক্ষতি করে ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াবে? 

কেউ কেউ দাবি করে থাকবেন ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে ডাকসু/ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। এগুলোর প্রত্যেকটি ছিল ন্যায্য সংগ্রাম। তখনকার ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো কার্যক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে কোনোভাবে বিঘ্নিত করেনি এবং ছাত্র সংগঠনের নেতারা কোনো অনৈতিক কাজে নিজেদের জড়াননি। তদুপরি, তখনকার আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। 

সমগ্র দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এর খুব একটা প্রভাব ছিল না। এখনো এই দেশের সচেতন ছাত্রসমাজ ন্যায্য ইস্যুতে এক ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিবাদ জানাতে পারে। যেমন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, যে আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে থাকার তাগিদে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে দিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করা তো দূরে থাকুক সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনকে মোকাবিলা করে তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। 

তবে ছাত্রদের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে তাদের উন্নীত করা। শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত রেখে লেখাপড়ার উপযুক্ত শান্তিপূণ পরিবেশ বজায় রাখা। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কি আমাদের দেশের মতো ছাত্ররাজনীতি আছে? যদি না থেকে থাকে তাহলে আমরা কেন আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে সাফাই গাইব? ভারতের শিক্ষার মান কি আমাদের চাইতে উন্নত না অবনত? যদি আমাদের চেয়ে ভারতের শিক্ষার মান উন্নত হয়ে থাকে তাহলে আমরা কেন তাদের চাইতে পিছিয়ে থাকব? আমরা কেন ভারতীয়দের সুযোগ করে দেব আমাদের দেশের শিল্পকারখানায় কাজ করার? 

ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মহান উদ্দেশ্যকে অবশ্যই সফল করতে হবে। দেশকে ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করার জন্য আমাদের আর কত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে? আর কত রক্ত ঝরাতে হবে? আর কত প্রাণ দিতে হবে? আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? এবারের গণ-অভ্যুথানের সুফল যদি আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হই তাহলে এই দেশটা ভারতের মুখাপেক্ষী একটা ব্যর্থ -অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিগণিত হবে। 

উপযুক্ত অবস্থার প্রেক্ষাপটে অনতিবিলম্বে সমগ্র দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। পরিশেষে, আরও একটা কথা বলে শেষ করতে চাই, তা হচ্ছে- বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সেটা বুয়েট কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারাধীন বিষয়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই যুক্তি প্রযোজ্য। 

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব