ঢাকা ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৬ এএম
বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

সম্প্রতি আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণের চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। পূর্ববর্তী সরকারও অনুরূপ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো সফলতা পায়নি। কেন এই ধরনের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে?

যদি কেউ এই নিয়ন্ত্রিত মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ভোক্তাদের চাহিদার প্রতি সাড়া দেয়, বিশেষ করে ভোক্তাদের কল্যাণ্যের কথা চিন্তা করে, তাহলে এটি তেমন কোনো কাজে আসবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের, অর্থাৎ সরকারকে সরবরাহ ধাপগুলোর বাস্তবতা সম্পর্কে বাস্তব বোঝাপড়া থাকতে হবে, তাত্ত্বিকভাবে বুঝলে হবে না। তাদের বুঝতে হবে কোথাও ব্লক আছে কিনা এবং সেই ব্লকগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে কিনা। যেমন- এমন কোনো গোষ্ঠী আছে কিনা, যারা বাজারের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। 

বহু বছর ধরে সিন্ডিকেট একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। সিন্ডিকেট আছে, এটিই বাস্তবতা। আর বাজার নিয়ন্ত্রণের সমন্বিত একটি গ্রুপ, যারা সরবরাহের চেইন নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সেই জায়গা থেকে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে পারে। ক্ষমতাচ্যুতের শাসনামলে আমরা সেটাই দেখেছি। 

হাসিনা সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেছিলেন, তিনি বেশি কিছু করতে পারবেন না, তখন তার মানে বুঝে নিতে হবে যে, তিনি সিন্ডিকেটের একটা অংশ। তাই তিনি বেশি কিছু করতে পারেননি।

এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমাদের বুঝতে হবে, সিন্ডিকেট এখনো সরবরাহে কতটা প্রভাব ফেলছে। তারা এত সহজেই অদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও বর্তমান নীতিনির্ধারকদের তাদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই। তবে তাদের অবশ্যই সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনাকে বোঝা ও প্রভাবিত করার ক্ষেত্রগুলো বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যদি তারা সরবরাহ চেইনকে প্রভাবিত করতে পারে বা এমন কোনো পরিবর্তনশীল দ্রব্যের ওপর কাজ করতে চায়, তাহলে সেদিকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। 

অরাজনৈতিক হলেও সরকার এই বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাদের বুঝতে হবে, এই প্রভাবটা কি নীতি প্রক্রিয়ায় আছে নাকি তা শুধু আমলাতান্ত্রিক ব্যাপার। নীতিনির্ধারকরা কি আমলাদের ওপরে? তাদের কি বোঝার কোনো বিষয় আছে? সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে বাস্তবতা বোঝার জন্য বর্তমান সরকারের খুব বেশি প্রচেষ্টা আমি দেখিনি। তাদের নিজেদেরই উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। আমি এই মুহূর্তে সরবরাহের ধাপগুলোর বাস্তবতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। 

অন্যান্য ব্যবস্থা থাকতে পারে। যখন ব্যবসায়ীরা স্টোরেজে সরবরাহ রাখে, তখন তারা এই ধরনের ব্যবসার জন্য ব্যাংক ক্রেডিটের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংক ক্রেডিট ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকে। ধরুন, আমি একজন সরবরাহকারী এবং আমি ১ কোটি টাকা ব্যাংক লোন নিয়েছি, আমি সরবরাহগুলো স্টোরেজে রাখছি এবং বাজারে ছাড়ছি না।

 এভাবে রাখলে আমার ঋণ ৯০ দিনের মধ্যে ম্যাচিউরড বা পরিপক্ব হবে। এখানে নীতিনির্ধারকরা ঋণের মেয়াদ ৩০ দিনে পরিবর্তন করে পরিপক্ব করতে পারেন। তখন মাল বিক্রি করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকে না। এই ধরনের হস্তক্ষেপের জন্য মাল সরবরাহ চেইন প্রক্রিয়া এবং বর্তমান বাস্তবতা বোঝা দরকার। সরবরাহের প্রকৃত অভাবের কারণে কি দাম বেশি হচ্ছে? সরবরাহ কোথাও কি আটকে রাখা হয়েছে এবং তা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না বলেই কি দাম এত বেশি?
উৎপাদনকারীরা যদি বলে যে, তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তাদের বেশি দাম নেওয়া দরকার, তাহলে প্রশ্ন হওয়া উচিত কীভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যায়।

এ ছাড়া সরকার সর্বদা খোলা বাজার বিক্রয় (ওএমএস) এবং অন্যান্য সরঞ্জামের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা ওএমএস নীতিকে আরও বড় আকারে প্রসারিত করতে পারে, যা সরবরাহকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা সরবরাহ আটকে রাখছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। অবশ্যই, এটি সরকারের আর্থিক সক্ষমতা আছে কিনা তার ওপর নির্ভর করে।

আরেকটি উপায় হলো- উৎপাদক, বীজ উৎপাদক, ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক বা পশুখাদ্য বা বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণের আমদানিকারকদের প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। সরকার পুরো প্রণোদনা ব্যবস্থার দিকে নজর রাখতে পারে এবং সৃজনশীলভাবে তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করতে পারে, যারা সরবরাহ চেইন উন্নত করতে পারে। তাহলে দাম আরও যুক্তিসঙ্গত হবে বলে আশা করি। 

তিনটি ক্ষেত্রে সরকারের নজর দেওয়া উচিত: ১) উৎপাদক ও আমদানিকারকদের জন্য প্রণোদনা এবং কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় তা দেখা, ২) সরবরাহ নীতির শাসন, যেখানে ঋণের পরিপক্বতার মতো আর্থিক উপকরণগুলো নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ৩) শাসন-সংক্রান্ত সমস্যা, যেমন চাঁদাবাজিতে বাধা। পরিচিত চাঁদাবাজ এখন আশপাশে নাও থাকতে পারে, তবে কি নতুন চাঁদাবাজ আছে? আমরা কি তাদের কোনো উপায়ে ধরতে পারি?

এর মধ্যে কিছু সিন্ডিকেট বা যারা উচ্চমূল্যের জন্য দায়ী তারা প্রায়ই পাল্টা যুক্তি দিয়ে থাকে। তারা বলে, এটা হলো বাজারের একটি প্রক্রিয়া। তারা দাম বেশি রাখে এবং তাদের নিজের স্বার্থে বাজারের এই প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের স্বার্থে বাজার প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। এটি করার জন্য সরকারের সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। এটি কেবল আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করতে পারে না, মাঠেও যেতে পারে। 

আমরা আমলাতান্ত্রিক সমাধান খুব পছন্দ করি। বাজার মনিটরিং প্রক্রিয়া মানে যদি আরেকটি কমিটি নিয়োগ করা হয়, তা হলে আমি সে বিষয়ে সন্দিহান। মনিটরিং একটি গতিশীল কার্যকলাপ এবং কয়েকটি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই বিদ্যমান আছে। যেমন- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নিয়মিতভাবে ভোক্তা মূল্য সূচক তৈরি করার কথা। বিবিএসকে এই বিশেষ কাজের জন্য তাদের ক্ষমতা প্রদান করা এবং সময়োপযোগী তথ্য সংগ্রহ করার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
 এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, যার কিছু বাজার পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক, এসব প্রতিষ্ঠান সবই পাঠ্যপুস্তকে আবদ্ধ এবং আমলাতান্ত্রিক একঘেঁয়েমি রয়েছে। তারা শুধু শাস্তির দিকে নজর দেয় কিন্তু কার্যকর করে না। আমলারা শাস্তি খুব পছন্দ করে। তারা বাজারে যায় এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেয়। যদিও শাস্তি কখনো কখনো কাজ করে। 

বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য হালনাগাদ ও ব্যবহারযোগ্য ডেটা প্রয়োজন, যা নীতি প্রক্রিয়ায় একাধিক ব্যবহারকারীর কাজে লাগে। এ ছাড়া কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মতো সুশীল সমাজের সংস্থাগুলোকেও বড় ভূমিকা পালনে সক্রিয় করা যেতে পারে। এই সরকারের নতুন কিছু করার সুযোগ রয়েছে। তারা মাঠে যেতে পারে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। 
এটি হচ্ছে সরবরাহের মূল বাস্তবতা। যেমন- কী ধরনের মূল্য সংযোজন ঘটছে? ধানের দামে লক্ষ করা যায়, সাধারণত ফসল কাটার পরে তা কমে যায়। কয়েক বছর ধরে, এটি হচ্ছে না। এই পুরো প্রক্রিয়ায় রাইস মিল মালিকরা জড়িত। ২০০৮ সালে তৎকালীন বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে আমি নওগাঁ গিয়েছিলাম এই বিষয়ে একটি প্রথম ধারণা পেতে। কারণ, নওগাঁ বাংলাদেশের মিলের রাজধানী।

মিল মালিকরা বাজার তাদের দখলে রাখার জন্য বড় বিনিয়োগ করেন এবং তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু তারা কি সিন্ডিকেট? বাজার থেকে একটি পণ্য আটকে রাখা বা না রাখার ক্ষমতা তাদের কতটুকু? চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়া খুবই রাজনৈতিক। তবে প্রকৃত কৃষকরা এতে কোনো উপকার পান না।

তাহলে কি দাম ধীরে ধীরে নিচের দিকে যাবে না? অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না। আমাদের এটাকে পরীক্ষামূলকভাবে দেখতে হবে। আমরা অনুমান করতে পারি না যে, এটি হয় না। ঢাকার ভোক্তারা সব ক্ষেত্রেই মধ্যস্বত্বভোগীদের ভিলেন বলে মনে করে। আমরা বিপণন প্রক্রিয়ার ওপর PPRC থেকে ২০০৬ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলাম।

আমরা দেখেছি, ফড়িয়া- যারা বাইরে গিয়ে কৃষক বা সরাসরি বাজার থেকে পরবর্তী বাজার পর্যায়ে স্থানান্তরিত করার জন্য পণ্য সংগ্রহ করেন, তারাও চরম দরিদ্র গোষ্ঠীর অংশ। তাদের প্রায়ই আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে না। কৃষি ব্যবসা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা, বিশেষ করে যারা সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে। যদিও কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ভিলেন হয়ে যায়, তবে আমরা সবাইকে এক কাতারে গণ্য করতে পারি না। মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া ফসল মাঠ থেকে আপনার টেবিলে যাবে না। এখানে পণ্য সরবরাহের একাধিক স্তর রয়েছে। মানুষ এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর থেকে লাভবান হয়ে থাকে। 

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি

অনেকেই চলে গেলেন আলবদর বাহিনীর নৃশংসতায়

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পিএম
অনেকেই চলে গেলেন আলবদর বাহিনীর নৃশংসতায়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসানের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান ছিল। বয়সে, অভ্যাসে, রুচিতে যতটা না মিল ছিল গরমিল ছিল তার তার চেয়েও বেশি। অন্তত বাহ্যত তো তাই মনে হতো। যদিও তারা দুজনেই ছাত্র ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের, সহকর্মী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগে। কিন্তু তারা কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি ছিলেন বিনয়ে; আরও কাছে ছিলেন একে অপরের দেশের প্রতি ভালোবাসায়। সামান্যতার সাধারণ পরিবেশে তারা অসামান্য হয়ে উঠেছিলেন ওই দুই আপাত-সাধারণ, কিন্তু বস্তুত দুর্লভ গুণে।

জ্যোতির্ময় বাবুর নাম লেখা ছিল মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সেই খাতায়, যেখানে নাম থাকবার কথা অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্যক্তিদের। এটা তিনি প্রথম টের পেলেন যখন দরখাস্ত করলেন কলকাতা যাওয়ার পাসপোর্টের জন্য। তার বৃদ্ধা মাতা দিন দিন দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছিলেন; সেই মায়ের ইচ্ছা ছিল বড় ছেলেকে দেখবেন। এ জন্য ভেতরে ভেতরে ভারী চঞ্চল ছিলেন জ্যোতির্ময় স্যার, যদিও বাইরে প্রকাশ করতেন না। খুবই প্রকাশবিমুখ ছিলেন তিনি এসব বিষয়ে সব সময়েই। অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি নিজে, তার হয়ে অন্যরাও চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ; কিন্তু কারোরই সাধ্য ছিল না মিলিটারির খাতায় যার নাম লেখা রয়েছে ‘কমিউনিস্ট’ বলে তাকে পাসপোর্ট দেয়। প্রভোস্ট ছিলেন তিনি জগন্নাথ হলের। সেই হলের ছেলেরা রাষ্ট্রবিরোধী সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন একটা বানানো সংবাদে মিলিটারি নাকি খুব তপ্ত হয়েছিল এবং শোনা গেছে প্রভোস্টকে তারা হয়তো গ্রেপ্তার করত ২৫ মার্চের আগেই, যদি না তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভদ্রগোছের একজন লোক থাকতেন প্রাদেশিক গভর্নরের পদে। ২৫ মার্চের রাতেই তাকে গুলি করেছিল হানাদাররা, সময়মতো চিকিৎসা হলে হয়তো তিনি বাঁচতেও পারতেন। কিন্তু মার্চে বাঁচলেও ডিসেম্বরে বাঁচতেন কি না খুবই সন্দেহ, যেমন বাঁচেননি সন্তোষ ভট্টাচার্য, বাঁচেননি জ্যোতির্ময় বাবুরই ছাত্র রাশীদুল হাসান।

রাশীদুল হাসানেরও নাম ছিল মিলিটারির গুপ্ত খাতায়। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তার খোঁজে সশস্ত্র লোকেরা হানা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, হানা দিয়ে ধরে নিয়ে গেল তাকে কলা ভবনের তার কামরা থেকে। তার খোঁজে সশস্ত্র সেনারা আসবে- এমন গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে তিনি ভাবেননি কখনো, তাই প্রস্তুত ছিলেন না, মিলিটারির লোকেরা এসে অনায়াসে তার খোঁজ পেয়েছিল। পরে ডিসেম্বরে আবার যখন আলবদররা এল, তখনো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই ছিলেন তিনি। যাওয়ার তেমন জায়গাও ছিল না তার, এই শহরে। উদ্বাস্তু হয়ে এসেছিলেন তিনি কলকাতা থেকে।

জাত শিক্ষক ছিলেন তারা উভয়েই। জ্যোতির্ময় বাবু শিক্ষক ছিলেন আমার, যেমন তারও কিছু আগে শিক্ষক ছিলেন তিনি রাশীদুল হাসানের। জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে আমার অনেক ধারণাই তার কাছ থেকে পাওয়া। আমি যতটা জানি তারও চেয়ে বেশি আমার ঋণ। জ্যোতির্ময় বাবু অসংশোধনীয়রূপে যুক্তিবাদী ছিলেন, বিষয়কে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখতে চাইতেন তার মূল্য নির্ধারণের আগে। সেই জন্য তার সঙ্গে তর্ক ছিল আমার। আসলে তিনি তর্ক ভালোবাসতেন, মনেপ্রাণে ছিলেন গণতান্ত্রিক। সাম্যবাদী নন, বুর্জোয়া গণতন্ত্রী। সেই জন্য তিনি আহ্বান করতেন বিতর্কে, উৎসাহ দিতেন তর্কে, সর্বোপরি মর্যাদা দিতেন ভিন্নমতের- এমনভাবে দিতেন, অতটা কম লোককেই দেখছি আমি দিতে, আমাদের অগণতান্ত্রিক সমাজে। এ সমাজ আজও অগণতান্ত্রিক, সেকালে আরও বেশি ছিল এর জিজ্ঞাসাহীনতা। তিনি নিজে জানতেন কিনা জানি না, তবে আমরা বিলক্ষণ জানতাম যে, ভেতরে ভেতরে তিনি কোমল ছিলেন, ছিলেন স্পর্শকাতর ও অনুভূতিপ্রবণ। একবার ছুটির সময়ে সেই গেন্ডারিয়া থেকে নীলক্ষেতে এসেছিলেন তিনি আমাদের বাসায় একটা বইয়ের খোঁজে। আমি বাসায় ছিলাম না, ফিরে এসে শুনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে গেছেন। না পেয়ে চলে গেছেন শেষ পর্যন্ত। আমার স্ত্রী গিয়েছিলেন রান্নাঘরে, তার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করে ফিরে দেখেন স্যার বারান্দাজুড়ে পায়চারি করছেন আর গুনগুনিয়ে গাইছেন গান। ধরা পড়ে স্যার পাছে অপ্রস্তুত হন, সেই জন্য আমার স্ত্রী আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এ ঘটনা নিয়ে আমরা হেসেছি ঠিকই কিন্তু অনেক দিন, অনেক সময় আমার স্মৃতির ভেতর তার সেই না শোনা গুনগুনিয়ে গাওয়া গান শুনেছি আমি, আমার চেতনার অজানা স্তরে সেই গান বেজে উঠেছে, আজও ওঠে, যখনই তার কথা মনে করি। তার স্নেহ ওই তার গানের মতোই গুনগুন করে ওঠে। শুধু স্নেহ নয়, জীবন্ত তার উপস্থিতিও।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে আমি জানি তার সরাসরি ছাত্র হওয়ার অনেক আগে থেকেই। সেই যখন আমি স্কুল ছেড়েছি কী ছাড়িনি সেই বয়সেই তার লেখা পড়েছিলাম আমি, একটি গ্রন্থ-সমালোচনা; ‘মুকতি’ নামে তখনকার দিনের একটি মাসিক পত্রিকায়। সেই লেখায় তার বক্তব্য কী কী ছিল আজ আর মনে নেই, কিন্তু এটা ঠিকই মনে আছে বক্তব্যের মধ্যে যুক্তি ছিল স্পষ্ট, পারম্পর্য ছিল দৃঢ়। সেই যে কৈশোরে ছায়া ফেলেছিলেন তিনি মনের ওপর, সেই ছায়া কালে কালে লোপ পায়নি, বরঞ্চ আরও গভীর হয়েছে; বিশেষ করে সেই আঠারো-উনিশ বছরে যখন সুযোগ হয়েছিল থাকবার তার আশপাশে। এই ছায়া স্তব্ধ নয়, এবং  সত্তাজুড়ে আছে অনুচ্চ সেই গান, অনুচ্চই। কেননা যে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা নাটক পড়াতেন, নাটক পরিচালনা করতেন, তার পছন্দ ছিল নাটকীয় দ্বন্দ্ব, যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাটুকেপনা তো নয়ই, নাটকীয়তাও পছন্দ করতেন না।

এম এন রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খুব ছোট একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন জ্যোতির্ময় স্যার অনেক আগে, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম সেই সময়ে। আমাকে বলেছিলেন, তুমি এসো, আর কেউ যদি আসতে চায় এনো। যখন গিয়ে পৌঁছেছি ফ্রেন্ডস সেন্টারের বাড়ির কাছে, আমি ও আমার বন্ধু, দেখি দোরগোড়ায় একা দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। হেসে বললেন, এসো, তোমাদের জন্যই দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যেমন সেদিন তেমনি পরেও যেন আমরা আসি, এসে মতামত দিই একটা কিছু এবং তর্ক করি তার সঙ্গে। সব ছাত্রের প্রতিই এ ছিল তার আমন্ত্রণ- উদার এবং উষ্ণ। সেই দরজা আছে, তিনি নেই। কিন্তু আছে কি সেই দরজাও? মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।

রাশীদুল হাসানকেও আমি শিক্ষকতা ভিন্ন অন্য কোনো পেশায় চিন্তা করতে পারি না। আমি যে তাকে অনেক দিন ধরে চিনতাম তা অবশ্য নয়। ছাত্রাবস্থায় আমরা আসার আগেই তিনি বের হয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং শিক্ষক হয়ে ফিরে এসেছেন বেশ কিছুদিন পরে। মধ্যবর্তী সময়েও শিক্ষকতাই করেছেন তিনি, কিছু সময় পাবনায়, তার পর জন্মভূমি বীরভূমে। তিনি লিখতেন। প্রবন্ধ লিখতেন, কবিতা লিখতেন সময় সময়। তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনেই, সেই ঊনসত্তর সালে, যখন প্রবল গণ-আন্দোলনের আদিগন্ত ঝড় বইছে দেশব্যাপী। তার আগে পরিচয় হয়নি। কেননা তিনি যখন যোগ দেন ইংরেজি বিভাগে তখন আমি শিক্ষাছুটিতে বাইরে ছিলাম, কিছুদিনের জন্য।

 পরিচয় হলো কখন সেটা মনে আছে, কিন্তু ঠিক কখন অন্তরঙ্গতা ঘটল তার দিন-তারিখ মনে নেই। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তিনি তার লেখা কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন আমাকে। তার কবিতা শুনে মনে মনে আমি ড্রাইডেনের মন্তব্য স্মরণ করেছি সুইফট সম্বন্ধে; স্মরণ করে বলেছি, রাশীদুল হাসান সাহেব, আপনি কোনো দিন কবি হবেন না। কবি হবেন না এই কারণে নয় যে, আপনার মধ্যে আবেগের অভাব; না হওয়ার কারণটা অন্য, সেটা এই যে, আপনি কবিতা লিখছেন মনের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নেমে গিয়ে বলতে পারছেন না বলে। আপনার ছিল প্রতিবাদ, কিন্তু সুযোগ ছিল না প্রকাশের। কবিতাকে তাই মাধ্যম করলেন। কিন্তু কবিতা তো জীবনের বিকল্প হতে পারে কেবল তার জন্যই কবিতাকে যিনি জীবনের ঊর্ধ্বে স্থান দেন। আপনি দেননি। আপনি জীবনকে অনেক বেশি ভালোবাসেন, যে জন্য কবিতার কোনো স্বায়ত্তশাসিত সত্তা ছিল না, আজ্ঞাবহ ছিল তারা আপনার মনের কথার। নিজের গরজ বলে কোনো বালাই ছিল না তাদের। ছিল তারা আপনার ইচ্ছাবন্দি। আপনাকে নিরাসক্ত বলবে কে? আপনি জীবনকে সুন্দর করতে চাইতেন, জানতেন একার জীবন মহৎ হবে না অন্যের জীবনকে স্পর্শ না করলে এবং অন্যের সাহায্য না পেলে, তাই তো আপনি চলে গেলেন অত দ্রুত। মৃত্যুর সঙ্গে আপস করলে আধমরা হয়ে হয়তো আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারতেন, যেমন অন্যরা আছে, যেমন আমরা আছি।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও রাশীদুল হাসান কখনো, কোনো অবস্থাতেই গোপন কোনো সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বোমাবারুদ তৈরি করেননি। কিন্তু তাদের ছিল হৃদয়। জীবন্ত হৃদয়। বোমাবারুদের চেয়েও যা বিপজ্জনক- শাসকশ্রেণির পক্ষে। বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন তারা। এই ভালোবাসা দেশের সব বুদ্ধিজীবীর মধ্যে ছিল কি? ছিল না। অবশ্যই ছিল না। মুতসুদ্দি চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তারা অনেকেই। যারা দেশপ্রেমিক ছিলেন তাদেরও অনেকেই ততটা অগ্রসর ছিলেন না, যতটা ছিলেন জ্যোতির্ময় স্যার ও রাশীদুল হাসান। অথচ অদৃষ্টের সেই পুরোনো ও প্রসিদ্ধ পরিহাস, তারা উভয়েই ছিলেন বলতে গেলে নিরাশ্রয়। জ্যোতির্ময় বাবু আমাদের বলতেন, পাকিস্তানে তোমরা হলে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, আমরা, হিন্দুরা, হিন্দু বলেই তৃতীয় শ্রেণির। পরিহাস করে বলতেন বটে, কিন্তু ব্যাপারটা তো পরিহাসের ছিল না, ছিল মর্মান্তিকরূপে বাস্তবিক। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের আত্মীয়স্বজন বলতে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাদের প্রায় কেউ ছিলেন না। 

চমৎকার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি কলকাতা চলে যাওয়ার; ১৯৬৫-এর যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান যে তাদের পক্ষে পূর্বের তুলনায় অধিক অনাত্মীয় হয়ে উঠেছিল, সে খবর তো বিলেতে বসে না জানার কোনো কারণ ছিল না। ঘটনাটি অস্বাভাবিক। কিন্তু না, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকছিল; বাসন্তী গুহঠাকুরতাকে ডাকছিল গেন্ডারিয়ার মেয়েদের স্কুল (তার একটা লেখা পড়েই আমি ধোলাই খালকে চিনেছিলাম, খালটাকে দেখার আগেই)। তারা চলে এলেন, উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জ্যোতির্ময় স্যারের পক্ষে যতটা সময় থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল সেটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কাটলেন, প্লেনের।

রাশীদুল হাসান পশ্চিমবঙ্গের লোক, ঢাকায় এসেছিলেন উদ্বাস্তু হয়ে; পরে এখান থেকে ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে একবার চলে গিয়েছিলেন স্বদেশে, কিন্তু আবার চলে আসতে হয়েছে তাকে, ১৯৬৫-এর যুদ্ধের পর। আত্মীয়স্বজন বলতে প্রায় কেউ ছিলেন না তার ঢাকায়, অথবা পূর্ব পাকিস্তানে। সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন মনে হয় আনোয়ার পাশা, যাকে তার সঙ্গেই নিয়ে গিয়েছিল ঘাতকরা হত্যা করবে বলে। একই সময়ে, একই বাসা থেকে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল প্রতিরোধের সব সম্ভাব্য ঘাঁটিগুলোকে দেবে নিশ্চিহ্ন করে। সেই জন্যই জ্যোতির্ময় বাবু ও রাশীদুল হাসান চলে গেলেন, আরও অনেকের সঙ্গে আলবদর বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এয়ারপোর্টে ক্লান্ত হলে

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পিএম
এয়ারপোর্টে ক্লান্ত হলে
ড. পবিত্র সরকার

আমার চেয়ে ঢের ঢের বেশিবার বিমান ভ্রমণ করেন এমন লোক তো অজস্র আছেন, কাজেই এটা আমি বিমান ভ্রমণ করি কখনো সখনো, অন্যমনস্কতার ছলে তার বিজ্ঞাপন নয়। সে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ বয়সে আর কী প্রমাণ করতে চাইব? বিমান ভ্রমণের মধ্যে কোনো আভিজাত্য টিকে আছে বলে আমি আর মনে করি না। আগে বিমানে চড়লে লোকে গলায় একটা বিরাট মালা পরে বিমানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলত, এখন সেসব উঠে গেছে। প্রচুর লোক সঙ্গে আসত বিমানে চড়ছে এমন লোককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তবে এখন মোবাইলে ছবি তোলা সহজ হয়ে গেছে বলে এখনো লোকে বিমানের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচুর ছবি তোলে, সেলফি তোলে। 

কিন্তু সেসব আর ঘরে বাঁধিয়ে রাখার চল নেই। আগে দেখতাম, যারা বিমানে করে এসেছেন, তারা কাঁধের ঝোলানো ব্যাগে অজস্র ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে রাখতেন, যাতে লোকে এক লহমায় বুঝতে পারে যে তিনি বিমান থেকে নেমেছেন। আমার এক প্রতিষ্ঠিত বন্ধু বৈঠকখানা ঘরে আগেকার বিমানের রঙিন পাতাওয়ালা টিকিটের স্তূপ সাজিয়ে রাখতেন লোকেদের দেখার জন্য যে, তিনি কতবার বিমান ভ্রমণ করেছেন। এখন সে টিকিটও নেই, সাইডব্যাগে সে ‘ট্যাগ’ও লাগানো হয় না। আজকেই দিল্লি থেকে আসার সময় দেখলাম যে, আমার পাশের মধ্যবর্তী সিটের যাত্রী একটা প্লাস্টিকের পুঁটলি কোলে নিয়ে সেখান থেকে পাসপোর্ট েবর করলেন। অর্থাৎ তিনি বিদেশে যাচ্ছেন। বিমানযাত্রার এখন গণতন্ত্রীকরণ হয়েছে, কাজেই বিমানে চড়েছি এই নিয়ে কোনো মক্কেল আর বাহাদুরি করতে যায় না।

এই কথা বলার জন্য এবারকার ‘ছলছুতো’ শুরু করিনি। এর আগে এয়ারপোর্টে সময় কাটানোর নানা উপায় নিয়ে আমি লিখেছি, এখানেই। একটা হলো কোনো বাচ্চা, এজনাস থেকে বছর বারোর মধ্যে যেকোনো বয়সের, চোখে পড়লে তাকে নজরবন্দি করে রাখা। অর্থাৎ সর্বক্ষণ সে কী করছে, কে দেখছে, কীভাবে মা-বাবার সঙ্গে চলতে চলতে নেচে এক চক্কর ঘুরে যাচ্ছে বা বাবার হাত ধরে চলেছে, প্রায় কাত হয়ে, কিন্তু মুখটা সামনের দিকে নয় পেছনের দিকে- এ রকম অজস্র ছবি আপনাকে বিপুল বিনোদন দেবে। এবারে, অর্থাৎ গতকাল (২০ সেপ্টেম্বর) যখন দিল্লি যাই তখন কলকাতা বিমানবন্দরে জুতসই শিশু বা বালক-বালিকা দেখা গেল না। ‘দেশের কী অবনতি হচ্ছে’ অর্থাৎ এয়ারপোর্টে বাচ্চা ‘কম পড়িতেছে’ ভাবলাম একটু। অথচ কালই আমার ফ্লাইট দফায় দফায় পিছিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে ছাড়ল। বই পড়তে ক্লান্ত লাগে বলে এখন আর বই সঙ্গে নিই না, শুনে আমার বন্ধুরা আমার সম্বন্ধে যত খারাপ ধারণাই করুন। অন্য সময় হাতে প্রুফও থাকে, এবারে তাও নেই। এবার কাগজ-কলমও সঙ্গে নিইনি, নিজের ওপর রাগ করে- কিছুদিন থেকে ছড়া, কবিতা এসব কিছু আসছে না কলমে। 

তাই খুব বিপদে পড়ে গেলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। প্রথমে আমাকে যা উজ্জীবিত করল তা হলো একজন ভয়ংকর মোটা যাত্রী, প্রায় চলন্ত চর্বির পিণ্ড বললেই চলে। তার ভুঁড়িটি প্যান্টের কোমরের বাঁধন ডিঙিয়ে অনেকখানি সামনে উপচে পড়েছে, কিন্তু তিনি দিব্যি সপ্রতিভভাবে তা সামলে নিয়ে গটগট করে আমার সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে লাগলেন। তাকে দেখলাম, একটু পরে আর-একজনকে ওই রকম দেখলাম। তখন আমার মাথায় একটা দুশ্চিন্তা এল। আমি জানি আমার ভারত অভাবীদের দেশ, প্রচুর লোক দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না। সেখানে কি এই ধরনের নমুনা বেড়ে যাচ্ছে? গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শুনেছিলাম যে, সেখানে ‘মোটাত্ব’ অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ওবিজিটি, তার শতকরা হিসাব নাকি ৬৫। মানে আমেরিকার ৬৫ শতাংশ লোক মোটা হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আমাদের দেশে এরা কি কোনো বিপৎসংকেত? হ্যাঁ, আমি কলকাতার পথেঘাটেও দেখি এবং দেখে ভয় পাই যে, বেশ কিছু ছেলেমেয়ে, বিশেষ করে ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা ওজনের মেশিনকে কলা দেখিয়ে আয়তনে বেড়ে চলেছেন। সেটা দেখে ভয় পাব, না ভাবব যে, এরাই মোদিজির ‘অচ্ছে দিন’ যে এসে গেছে তার প্রমাণ। আমাদের মতো অবিশ্বাসীদের চোখে আঙুল দিয়ে মুখ ভেঙচিয়ে বলছে, ‘‘ওরে অলপ্পেয়েরা, তবে যে বলছিস ‘অচ্ছে দিন’ আসেনি? এই দ্যাখ, কত মোটাসোটা 
সুখী লোক আমরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পথেঘাটে ছেড়ে দিয়েছি।’’

এই রকম ভাবতে ভাবতে বেশ সময় কেটে গেল। হ্যাঁ, ভারতে মধ্যবিত্তের মাইনে বেড়েছে, পথে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, কলকাতায় খাবারের দোকানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বৈচিত্র্যও তেমনি বেড়েছে, পুজোর ছুটিতে ট্রেনের দামি টিকিট সব নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। কাজেই লোকে গাড়িতে চড়বে, ছুটিতে বেড়াবে, হোটেলে-রেস্তোরাঁয় ভালো খাবেদাবে আর মোটা হবে না- একি মামাবাড়ির আবদার নাকি?
 
যাই হোক, মোটামুটি বেশ কিছু পৃথুলাকার নর-নারী এবং দুজন অতিকায় মোটা লোক, যাদের ভুঁড়ি শরীর থেকে খসে মাটিতে না পড়ে যায়, আমার মনে এই আশঙ্কা জাগাচ্ছিল, আমার ওই সাড়ে তিন ঘণ্টার বিনোদনের রসদ এবং কোটা হিসেবে খারাপ ছিল না। কিন্তু তা ছাড়াও অনেক কিছু ছিল। যেমন একটি অত্যন্ত আধুনিক ছেলের ডান হাতে লাল সুতলি বাঁধা দেখেও আমি খানিকক্ষণ ভাবলাম। আমাদের গ্রামে মায়েরা মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত করলে ছেলেমেয়েদের হাতে এই রকম লাল সুতলি বেঁধে দিতেন। কিন্তু এর পোশাক দেখে মনে হলো না যে, ওই মা মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত করতে পারেন? তা হলে ওই লাল সুতলি কিসের জন্য? এ নিয়ে খানিকক্ষণ গবেষণা করলাম কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত বা তত্ত্বে পৌঁছতে পারলাম না। 

লাল সুতা থেকে মনটা ফিরিয়ে দেখি, আর একটি ছেলে মানে যুবক, ভারী স্মার্ট পোশাক-আশাক পরা, কিন্তু তার মাথাটি সম্পূর্ণ কামানো। তা মাথা কামানো হতেই পারে। হয়তো পারিবারিক শোকের ব্যাপার ঘটেছে কিছু, না হয় সে আমাদের সময়কার অভিনেতা ইয়ুল ব্রাইনারের মতো মাথা কামানোকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, কাজেই চারপাশের চুল আর টাকওয়ালা লোকেদের তুলনায় ব্যতিক্রম হলেও সে অস্বাভাবিক নয়- এই রকম ভাবতে গিয়ে, সে একটু ঘুরে দাঁড়াতে দেখি যে, তার মাথার পেছনে, মেরুদণ্ড ও ‘ভার্টিব্রা’গুলোরে ওপরেই একটা ঘন চুলের ফিতেমতো উঠে গিয়ে একটি চমৎকার টিকিতে শেষ হয়েছে। এতেই আমি একটু চমকে গেলাম, কারণ ওই স্মার্ট পোশাকে এটি আমি আশা করিনি।

আরও ছোটখাটো অনেক বিনোদন তো ছিলই, সেগুলোর তালিকা দিয়ে আর পাঠককে ভারাক্রান্ত করব না। দু-একটি শিশুও এসে গেল এর মধ্যে, দৌড়াদৌড়ি করে, তারা আসায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।
তাই বলছিলাম, জীবন খুব নিষ্করুণ নয়। ভোগান্তি দেয়, আবার তা থেকে উদ্ধারও সরবরাহ করে। 

লেখক: ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

বাশারের পতন: তুরস্ক, ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের বিজয়!

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ পিএম
বাশারের পতন: তুরস্ক, ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের বিজয়!
শ্লোমো বেন-অমি

সিরিয়ার আল-আসাদ রাজবংশের ৫৪ বছর পর পতন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বদলে দিয়েছে। ইসলামপন্থি হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) মিলিশিয়ার অতর্কিত আক্রমণ সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ ও অন্য সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার খবর আরেকটি যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। সেই যুদ্ধ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

৭ অক্টোবর ২০২৩, গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, তা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভূমিকম্পের মতো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। গাজায় হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েল নির্মমভাবে আক্রমণ করে। ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণ করে মূলত ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’কে ধ্বংস করেছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক শিপিংয়ে হুতি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতিদের ওপর আক্রমণ করে। 

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন আসাদ সরকার শান্তিপূর্ণ ‘আরব বসন্ত’ বিক্ষোভকে চূর্ণ করেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পর যুদ্ধটি অনেকাংশে কমে যায়, যখন রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে। ইরান এবং হিজবুল্লাহর সহায়তায় সেই যুদ্ধটি আসাদের পক্ষে চলে যায়। ইরানের প্রক্সি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার যুদ্ধের ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় বিদ্রোহীরা সুযোগ নিয়েছে। তুরস্কের সহায়তায় বিদ্রোহীরা সহজেই বাশার সরকারের দুর্বল প্রতিরক্ষাকে পরাস্ত্র করে ফেলে। বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে। ইরান ও রাশিয়ার পৃষ্ঠপোষকরা দ্রুত তাদের বাহিনী সরিয়ে নেয় এবং তাকে তার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। 

সিরিয়ার সঙ্গে ইরানের জোট আরব বিশ্বে প্রধান শক্ত ঘাঁটি ছিল এবং এর অবসান আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যকে নতুন রূপ দেবে। মোহাম্মদ আলী আবতাহি, যিনি ছিলেন ইরানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বাশার পালানোর দুই দিন আগে বলেছিলেন, সিরিয়া সরকারের পতন মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হবে। 

ইসরায়েল প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠবে। হায়াত তাহরির আল-শাম নামটি আরবের দেশগুলোর দ্বীপ অঞ্চলসহ ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অংশের মুক্তির জন্য দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নতুন ধরনের ইসলামপন্থি ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর ব্যর্থতা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়। এখন তিনি নিজেকে একজন বাস্তববাদী হিসেবে দেখেন, যিনি শুধু সিরিয়ার নিপীড়নমূলক শাসন থেকে মুক্তি আনতে চান।
 
তার এই নতুন বাস্তববাদের লক্ষণ হলো সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালিকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার জন্য জোলানিকে তার লোকদের নির্দেশ করতে হবে। আইএস সৈন্য ও কর্মকর্তাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাত। তার পরও আল-জোলানি একটি কট্টর ইসলামপন্থি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তুরস্ক এইচটিএস-এর চরমপন্থাকে প্ররোচিত করতে পারে। অনেকে ধারণা করছেন, জোলানি তুরস্কের একজন অনুগত সৈনিক হতে পারেন। যাই হোক না কেন, আল-জোলানি শক্তিশালী রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছেন। 

তাকে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সঙ্গে তুলনা করতে হবে, যারা বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। উত্তরে তুর্কি বাহিনীর আক্রমণের সময় পূর্ব সিরিয়ার আরও কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে ছুটে আসা কুর্দি বাহিনীকেও প্রতিরোধ করেছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের কাছে সিরিয়ার কুর্দিরা তুরস্কের কুর্দিদের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহকে উৎসাহিত করার হুমকি দেয়।
২০১৯ সালে এরদোয়ান উত্তর সিরিয়ায় ৩০ কিলোমিটারজুড়ে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কুর্দি যোদ্ধাদের তুর্কি সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য তিনি সেনাবাহিনী নিযুক্ত করেছিলেন। এমন এলাকা যেখানে কুর্দিরা একটি স্বায়ত্তশাসিত ছিটমহলকে নিজের দখলে নিয়ে গৃহযুদ্ধের জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন। 

কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন টিকে রাখার আকাঙ্ক্ষা এবং সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের দূরে রাখার জন্য তুরস্কের মধ্যে সমঝোতা খুঁজে পেতে জোলানিকে এখন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এরদোয়ান কি কুর্দি আঞ্চলিক ক্ষমতা সহ্য করবেন, যা তিনি তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন? জোলানি কি তুরস্ককে কুর্দিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেবেন? যখন তিনি তাদের সঙ্গে শাসক জোট গঠন করার চেষ্টা করছেন এবং সিরিয়ার আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে যাচ্ছেন। সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তার দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সত্ত্বেও এরদোয়ান বাশারের পতনকে দুর্দান্ত অর্জন হিসেবে দেখেন। বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রযাত্রা অনুসরণ করে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। সিরিয়ার এই অগ্রযাত্রা কোনো ঘটনা ছাড়াই চলতে থাকে। 

বছরের পর বছর এরদোয়ান এবং তার কাতার মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসলামপন্থি দলগুলোকে সমর্থন করে আসছে। তিনি নিজেকে ইরানিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেখেছিলেন যে, মুসলিম ভূমিতে ইসলামি গণতন্ত্রের কোন মডেলটি প্রাধান্য পাবে: শিয়া মৌলবাদী বা তুরস্কের মধ্যপন্থি কোনো রূপ। এখন তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি দেশের সন্নিকটেই এমন একটি মডেলকে রূপ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। 

যদিও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এমন সাফল্যের পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে। সে জন্য ইসরায়েলকে ধন্যবাদ দেওয়ার অনেক কিছু রয়েছে। ইসরায়েল তার নতুন প্রতিবেশীদের সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা পোষণ করে না। আল-জোলানি সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন (তাই নাম জোলানি), ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ওই অঞ্চল দখল করেছিল। যার সংযুক্তি ও সার্বভৌমত্ব ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। 

দামেস্কে বিদ্রোহী অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল সিরিয়ার সীমান্তে যুদ্ধ ইউনিট মোতায়েন করে। গোলান মালভূমিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ছড়িয়ে পড়া এবং সীমান্তে সিরিয়ার পাশের দ্রুজ এলাকায় আক্রমণ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ইসরায়েল। ৭ অক্টোবরের রোমহর্ষক ঘটনা এখনো ইসরায়েলের মনে গেঁথে আছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষোভকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের অত্যাচারের পতন যদি ঘটতে পারে, কেন ইরানকেও পতনের চেষ্টা করা হবে না? নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের বাইরে চলে যাওয়ার প্রলোভন রয়েছে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে যে বাহিনী বিচ্ছিন্নকরণ নিয়ন্ত্রিত ছিল তা ভেঙে গেছে। তিনি ইসরায়েলি সৈন্যদের হারমন পর্বতের সিরিয়ার অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে নির্দেশ দেন। সিরিয়ার সার্বভৌম ভূখণ্ডের বাফার জোন এবং এর আশপাশে প্রভাবশালী অবস্থান নেয়। 

এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্ররাও একইভাবে উদ্বিগ্ন। তারাও বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় থাকাটা পছন্দ করত, এই ভয়ে যে ইসলামপন্থি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়া সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে। তাদের দৃষ্টিতে বাশার আল-আসাদ ইসলামপন্থি বিদ্রোহী নেতৃত্বাধীন সরকারের চেয়ে ভালো, যদিও এটি মধ্যপন্থি বলে দাবি করে।

বাশার আল-আসাদের পতন ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্য আবার নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যর পুনরুদ্ধারে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

লেখক: ইসরায়েলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
সৈয়দ ফারুক হোসেন

দেশের ২ কোটি ৩৬ লাখ বা ২৬ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্যসংকটে ভুগছেন। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কাজনক এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যসংকটে থাকা মানুষগুলো তীব্র খাদ্য নিরাপত্তহীনতায় ভুগতে পারেন। তাদের মধ্যে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩ লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছে। এ অবস্থায় তীব্র খাদ্যসংকটে থাকা ১৬ লাখ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন।

 জাতিসংঘসহ বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর যৌথভাবে পরিচালিত ‘সমন্বিত খাদ্যনিরাপত্তার পর্যায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৭ নভেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০ বছর ধরে এই জরিপ করা হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশে দুই বছর ধরে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেশের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের ভৌগোলিক অবস্থানও চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মানুষের বেশির ভাগ বাস করেন চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সিলেট বিভাগে। দেশের ৪০টি এলাকায় খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ৩৩টি এলাকার মানুষ সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, ১৬ লাখ ৪৭ হাজার মানুষের জরুরি খাদ্যসহায়তা দরকার। খাদ্য নিয়ে সংকটময় অবস্থায় আছেন ২ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। আর ৩ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার মানুষ চাপে আছেন। শুধু ৩ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন।

দেশে খাদ্যপণ্যের দাম ও কৃষি-উপকরণের বিষয়টিকে বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সরকার পণ্য সরবরাহ ও খাদ্য বণ্টনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে না পারলে সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের জন্য খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি আসন্ন বোরো-রবি মৌসুমে বিনামূল্যে কৃষি-উপকরণ সহায়তা দেওয়া দরকার। শুধু রিজার্ভের উন্নতি হলেই অর্থনীতির গতি ফিরে আসবে না। দেশের খাদ্যপণ্য সরবরাহব্যবস্থায় দ্রুত পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

 বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সব ধরনের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশেষ করে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে। ওই অভ্যুত্থানের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়েছে। অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নানা কারণে খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। ফলে সরকারকে সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এদিকে ২০২৪ সালের শুরুতে দেশের মানুষের আয় কমে গেছে এবং ব্যয় বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও সংঘাতের কারণে ওই সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি ও বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে। ফলে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরের বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের বড় অংশই কৃষিজীবী। এদের আবার এক-চতুর্থাংশ কৃষি-মজুর। বন্যা, দুর্যোগ ও তাপপ্রবাহের কারণে তারা ঠিকমতো কাজ পাননি। কাজ পেলেও মজুরি পেয়েছেন কম। এই জনগোষ্ঠীর বড় অংশ শুধু কৃষি মজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের দৈনিক আয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় হয়। ফলে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য গ্রহণ কমাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে ফসল, গবাদিপশু, মৎস্যসম্পদ এবং মজুত খাদ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

 এতে খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে এবং গৃহস্থের আয় কমে আসতে পারে। মহামারির প্রায় তিনটি বছর অতিবাহিত হলো! এরপর যুক্ত হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত। এ সংঘাতের কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে ৩ বিলিয়ন মানুষ এখনো স্বাস্থ্যকর খাবারের সামর্থ্য রাখে না। তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। এমতাবস্থায় একটি টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংহতি এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যেখানে প্রত্যেকেরই পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের নিয়মিত নিশ্চয়তা থাকবে। বাংলাদেশে ক্ষুধার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও অন্যতম বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। কৃষি ও খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরকারের কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমেই এই খাদ্যসংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষ ক্ষুধার ঝুঁকিতে থাকবে। 

বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা গ্রহণে উৎসাহ দান, গ্রামীণ জনগণ বিশেষ করে নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের অবদানে উৎসাহ এবং প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। কৃষিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দরিদ্র ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিতে হবে সবাইকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকটে বেশি নিপতিত হয় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী। একটি ভালো ভবিষ্যতের আশায় সবার জন্য খাদ্যনিরাপত্তা, শান্তি ও সমতাকে অগ্রাধিকার দিতে সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া এবং সুশীল সমাজকে একত্রে কাজ করা দরকার।

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় কাউকে পিছিয়ে না রাখার হাতিয়ার হিসেবে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে এগোতে হবে। তাদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষ মনোনিবেশ দরকার। কৃষিপ্রযুক্তি গ্রহণে কোন শ্রেণির কৃষক পেছনে আছে তা চিহ্নিত করে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার। এ ছাড়া সুবিধাভোগী শ্রেণি ব্যবধান কমাতে নীতিগুলো ডিজাইন করা, আসন্ন বৈশ্বিকসংকট ও খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বিষয়ে প্রান্তিক কৃষকসহ সব সম্প্রদায়কে সতর্ক করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করা খুবই প্রয়োজন।

 অপরদিকে বিনিয়োগনীতিগুলোকে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে উপযোগী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা, কৃষি-খাদ্যব্যবস্থায় সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; প্রান্তিক কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যকীয়। টেকসইভাবে উৎপাদিত খাবার সরবরাহ করতে খাদ্যশৃঙ্খল ঠিক রাখা; খাদ্যের ক্ষয়ক্ষতি ও অপচয় রোধ করতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও টেকসই প্যাকেজিং-ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। দরিদ্র এবং দুর্বল কৃষি পরিবারকে ফসল উৎপাদন করতে উন্নত বীজ, রোপণের উপকরণ, সার, বাগান করার সরঞ্জামসহ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ চলমান রাখা; টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার আলোকে কৃষক এবং পরিবেশের জন্য সবচেয়ে স্মার্ট সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

 পিছিয়ে পড়া কৃষক পরিবার যাতে ফসল ফলিয়ে আয় বাড়িয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে এবং কৃষক ব্যয়বহুল রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্থ সাশ্রয় করতে পারে, সে জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার। পিছিয়ে পড়া কৃষকদের বসতবাড়ির আঙিনায় বা তাদের ক্ষুদ্র জমিতে প্রদর্শনী প্লট স্থাপনে সহযোগিতা করা দরকার। বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো; চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল হিসেবে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে দেশে একটি সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই কৃষি-খাদ্যব্যবস্থার রূপান্তর ঘটাতে পারলে আগামীতে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে।

লেখক: সাবেক রেজিস্ট্রার, বিএসএফএমএসটিইউ
[email protected]

জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে
এ বি এম নাজমুস সাকিব

আয়নাঘর বা গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব থাকার বিষয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বাহিনীপ্রধানের (র‌্যাব মহাপরিচালক) স্বীকার করার বিষয়টি প্রশংসা (‘অ্যাপ্রিশিয়েট’) করার মতো। আগে তো বাহিনীগুলোর দায়মুক্তি ও ভিন্ন যুক্তিগুলো ছিল খুবই অগ্রহণযোগ্য। যেমন- ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা বা ক্রসফায়ার নিয়ে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য ছিল একই ধরনের। সেদিক থেকে গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব স্বীকার করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে মনে হচ্ছে।

কথিত আয়নাঘর বা গোপন বন্দিশালায় কাউকে আটকে রাখা বা গুম করার মতো বিষয়গুলো কোনো বাহিনীর কাঠামোতে থাকতে পারে না। এটা ছিলও না। রাজনৈতিক কারণে বা বাহিনীর কারও ব্যক্তিস্বার্থে এজাতীয় কাজ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একটি কঠোর বার্তা থাকা প্রয়োজন, সেটা হলো কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে সে যেই হোক, তার শাস্তি হবেই। এই বার্তা যদি সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পায়, তাহলে এজাতীয় বেআইনি কাজ অনেকটাই কমে যাবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের রক্ষক, তারা আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক বিষয়টি।

সহকারী অধ্যাপক, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });