ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়  নির্ধারণ করবে অর্থনীতি

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় 
নির্ধারণ করবে অর্থনীতি

২৩ আমেরিকান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। শুধু দুজন অর্থনীতিবিদ অনেক কিছুতেই একমত হতে পারেননি। তবে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, সার্বিকভাবে কমলা হ্যারিসের অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, স্থায়িত্ব, স্থিতিস্থাপকতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং ন্যায্যতাকে উন্নত করবে। তিনি প্রতি উৎপাদনশীল অর্থনীতির তুলনায় দেশকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে পারবেন। নোবেল অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য উত্তম হবেন।...

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুঁজিবাদের এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন, যা শিল্পপতি ও অর্থশালীদের প্রলুব্ধ করেছে। ট্রাম্প কর কমিয়ে এবং অনেকটা শিথিল করে তাদের পুঁজিবাদীদের ইচ্ছা পূরণ করতে চায়। এতে তিনি বেশির ভাগ আমেরিকানের জীবন আরও দরিদ্র, কঠিন এবং খাটো করে তুলবেন। 

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতটা কাছাকাছি আসছে, প্রচারণা ততটা তীব্রতর হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে দেশের কী আমূল পরিবর্তন আনবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেশের রাজস্বনীতি একদম ভেঙে পড়বে। করপোরেশন এবং বিলিয়নেয়ারদের গাণিতিকভাবে কর কমালে দেশের প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো মৌলিক কর্মসূচিগুলো টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

ট্রাম্পের প্রচারণার আরও কিছু অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি ইলন মাস্কের কাছ থেকে এসেছে, যিনি ফেডারেল বাজেট থেকে ২ ট্রিলিয়ন ডলার কমানোর কথা বলেছেন। ইলন মাস্ক যার কোম্পানিগুলো সরকারি চুক্তি ও বেলআউটের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে (ওবামা প্রশাসনের কাছ থেকে ৪৬৫ মিলিয়ন ডলার লোন না পেলে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা হয়তো ট্রাম্পের অধীনে চলে যেতে পারে)। 

ইলন মাস্কের দাবি, ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতি এবং রাজনীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো সব সরকারি ব্যয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমানোর চিন্তা করছে, যা সাধারণ হিসাব অফিসের চেয়ে আটগুণ বেশি। এতে সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা বিভাগ রাষ্ট্রীয় অপচয় বা জালিয়াতির বিষয় অনুধাবন করছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ট্রেজারি ও বাণিজ্য বিভাগসহ সব বিবেচনামূলক ব্যয় কমাতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ব্যয়বহুল কর্মসূচি হ্রাস করতে হবে। 

এ ধরনের কর্তন থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প বিভিন্ন কর্মসূচিতে বড় পরিবর্তন করতে কংগ্রেসকে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু আপনার নিশ্বাস আটকে রাখবেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ‘প্রশাসনিক রাষ্ট্র’ ভেঙে দেওয়ার জন্য মতো অবস্থায় ছিল। তিনি মার্কিন প্রশাসন চার বছর চালিয়েছেন। এখন তিনি জনগণের কাছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যাতে তার আগের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। 

এ ধরনের ক্ষতিকর কর্তনগুলো মার্কিন অর্থনীতি ও সমাজের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। পরিবর্তনশীল চাষাবাদ নীতি নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। হার্বার্ট হুভারের অধীনে ইউএস সেক্রেটারি অব ট্রেজারি অ্যান্ড্রু মেলনের রাজস্ব কমানোর কৌশল যেমন দেশকে বড় বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছিল, তেমনি মার্কিন কংগ্রেসে ১৪ বছরের কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে কঠোর নীতিগুলো প্রায় দেড় দশকের স্থবিরতায় নিয়ে গেছে। 

ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের অর্থনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকবে। কমলা হ্যারিসের কর্মসূচিতে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে দেবে। ওষুধ ও শক্তির খরচ কমাতে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ) সংশোধন করবে। হ্যারিস আবাসনকে আরও সাশ্রয়ী করে তুলবে, যেখানে ট্রাম্পের শুল্ক (আমদানি পণ্যের ওপর কর) আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। আমেরিকানদের বিশেষ করে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ বিষয়টি কঠিন হয়ে উঠবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি বিষয়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ট্রাম্পের নীতি সেই বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তুলবে। এমনকি করোনা মহামারির আগেও মার্কিন জনগণের আয়ুষ্কাল উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম ছিল। ট্রাম্পের সময়ে আরও হ্রাস পেয়েছিল। সাশ্রয়ী মূল্যের সেবা আইন এবং আইআরএ বিধান রয়েছে, যা ওষুধের দাম হ্রাস করে। সেই আইন বাতিল করার লক্ষ্যে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা দেশকে আরও শোচনীয় করে তুলবে। 

আমেরিকা বৈষম্যের দিক দিয়ে উন্নত অর্থনীতির তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ধনীদের জন্য ট্রাম্পের ট্যাক্স কমানো নীতি অর্থনীতির শীর্ষ অবস্থান থেকে দূরে ঠেলে দেবে। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিসের নীতি মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত করবে। 

স্বাস্থ্য ও বৈষম্যের সংকট ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন আমেরিকানদের জীবন এবং তাদের সম্পত্তির জন্য ব্যপক ক্ষতিকর। তবু ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারাভিযানে জীবাশ্ম-জ্বালানি বাড়ানোদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পরিবেশ দূষণের আইনগুলো শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পরিচ্ছন্ন শক্তির অর্থনীতিতে উত্তরণের জন্য তিনি শুধু আমেরিকাকে অন্য অনেক দেশের পেছনেই ফেলে দেবেন না; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় বিপদের মুখে ফেলে দেবেন।

২৩ আমেরিকান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। শুধু দুজন অর্থনীতিবিদ অনেক কিছুতেই একমত হতে পারেননি। তবে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, সার্বিকভাবে কমলা হ্যারিসের অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, স্থায়িত্ব, স্থিতিস্থাপকতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং ন্যায্যতাকে উন্নত করবে। তিনি প্রতি উৎপাদনশীল অর্থনীতির তুলনায় দেশকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে পারবেন। নোবেল অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য উত্তম হবেন। 

অনেক আমেরিকান ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের সময় সব ঘটনা ভুলে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা অবশ্যই তা ভুলিনি। ট্রাম্প যাকে তার শত্রু বলে মনে করেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে এখন ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই নেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই, ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম মেয়াদের চেয়ে আরও খারাপ হবে। 

যদিও আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। ট্রাম্প বারবার রাজস্ব থেকে গবেষণা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করেছেন, যা মৌলিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর হবে। ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন অনেক রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো বেপরোয়া তা বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে গত নির্বাচনে তিন ভোট কম পেয়েছিলেন। 
অন্য একটি খোলা চিঠিতে যেখানে প্রায় ৮০ জন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বিজ্ঞানীরা যোগ দিয়েছিলেন। আমরা উল্লেখ করি যে, ‘গত দুই শতাব্দীতে জীবনযাত্রার মান এবং আয়ুষ্কালের 
ব্যাপক বৃদ্ধি মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণেই।’ কমলা হ্যারিস এটি স্বীকার করেছেন ও বিষয়গুলো বোঝেন, এই ক্ষেত্রগুলোয় আমেরিকার নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য ফেডারেল সরকার, স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিশেষ প্রয়োজন। কমলা হ্যারিস বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অভিবাসীরা সবসময় যে ভূমিকা পালন করেছে তাও স্বীকার করেছেন। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শুধু ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলো মৌলিক বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে। তারপরও ডোনাল্ট ট্রাম্প তার কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা করে নিজের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছে। স্বার্থ, কর কমানো এবং আইন শিথিলকরণের জন্য শিল্পপতি ও ধনাঢ্যরা ট্রাম্পের দলে যোগ দিয়েছে। ট্রাম্প পুঁজিবাদীদের জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। পুঁজিবাদ মাস্ক ও অন্য বিলিয়নেয়ারদের জন্য ভালো হলেও বাকি আমেরিকানদের জন্য ভালো হবে না। কিন্তু কমলা হ্যারিস যুক্তি দিয়ে বা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন যাতে আমেরিকানরা আরও স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। তিনি এমন এক অর্থনীতি গড়তে চান, যা পুঁজিবাদকেও ছাড়িয়ে যাবে এবং আমেরিকানরা ন্যায়সংগতভাবে সবাই সুবিধা ভোগ করতে পারে। 

লেখক: অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী এবং অধ্যাপক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভাপতি। 
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদার

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ এএম
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদার
আনু মুহাম্মদ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের যে জটিলতা এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ভারতের এই আধিপত্যবাদী যে চেহারা, সেই চেহারার উন্মোচন ঘটানো দরকার। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তাদের আধিপত্যবাদী চরিত্র বিদ্যমান। এই সরকারের আগেও ছিল। মূলত এটা তৈরি হয়েছে ভারতে যে বৃহৎ পুঁজির বিকাশকেন্দ্রিক ভবন তার সম্প্রসারণের তাগিদ থেকে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমস্যা, এটিকে হিন্দু-মুসলমান সমস্যা হিসেবে দেখা খুবই ভুল। কারণ নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র, তার সঙ্গেও ভারতের অনেক সমস্যা আছে। এ ছাড়া মালদ্বীপ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা- এসব দেশের সঙ্গে ভারতের একপেশে মনোভাব বিদ্যমান।

 ফলে এসব দেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ ভারতের শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে, তার প্রকাশ ঘটেছে সেসব দেশের সরকারের মধ্যেও। বর্তমানে বাংলাদেশ হচ্ছে সর্বশেষ তালিকায়। সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। সরকার পতনের পর ক্ষোভের প্রকাশটা এখন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হয়েছে। হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে নানা শর্তে এমন অনেক চুক্তি করেছে, এমনভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ধারণ করেছে যে, এতে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের আপামর মানুষকে ভারতের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য করেছে।

আমাদের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট। এটা কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যার বিষয় নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের সীমান্ত হত্যা চলছে বহুদিন ধরে। হাসিনা সরকারের সময় ছিল, এখনো সেটা অব্যাহত আছে। পানিবণ্টন সমস্যা ভারত কখনো সমাধান করতে চায়নি। অসম বাণিজ্য, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশে একচেটিয়া বাণিজ্য করে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা দিয়ে থাকে।

 নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সৃষ্টির একটা খুব ভালো সুযোগ ছিল। সেখানেও ভারত নানা রকমভাবে বাধা দেয়। তা ছাড়া তারা একচেটিয়াভাবে ট্রানজিটসহ অন্যান্য নানা ধরনের সুবিধা চায়। হাসিনা সরকার তার ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে ট্রানজিটের এমন অনেক ধরনের সুবিধা ভারতকে দিয়েছে, সেগুলো খুবই অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর। সেগুলো নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়াও হয়নি। জনগণের সম্মতির বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়েছে। 

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা। আমরা নিশ্চয়ই এটা স্বীকার করি যে, ভারত রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রের কোনো মায়ামমতা বা সহানুভূতি থাকে না। রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত স্বার্থ বিবেচনা করে। সেই স্বার্থ বিবেচনা করে ভারত রাষ্ট্র তখন বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করেছে। আমাদের এটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে যে, ভারতের জনগণ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর বোঝা বহন করেছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছে।

ভারতের জনগণের সেই ভূমিকাকে আমরা কোনো দিন ভুলতে পারব না। সব সময় তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারতের জনগণের এই ভূমিকার কারণে ভারতের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বা বিজেপি সরকারের যেকোনো দাবি মেনে নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। ১৯৭১ সালে বিজেপি বলে কোনো দলও ছিল না। নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাও সে সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না। ভারতের জনগণের সহায়তা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার অর্থ এই নয় যে, আদানিকে ব্যবসা দিতে হবে। কিংবা নরেন্দ্র মোদির যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত স্বার্থ সেগুলো পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা হতে হবে বন্ধুত্ব ও সমমর্যাদার।

 যেখানে ভারতের শাসক শ্রেণি সব সময় চাইবে বাংলাদেশ অধস্তন রাষ্ট্র হিসেবে থাক। সে ক্ষেত্রে হাসিনা সরকার একটা চরম গ্রুপ তৈরি করেছিল এবং ভারত বাংলাদেশকে অধস্তন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যস্ত হয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ অধস্তন অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে বা যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ভারতে বাংলাদেশবিরোধী একটা ব্যাপক, খুবই অসম্মানজনক, বিতর্কিত, অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে এবং সেই অপপ্রচারের মূল বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগণ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। এর থেকে মনে হতে পারে যে, ভারতের সরকার হিন্দু জনগণের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল কিংবা তাদের স্বার্থ রক্ষায় খুবই আগ্রহী। এটা যদি সত্য হতো তাহলে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণ অনেক ভালো অবস্থায় থাকত।

ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হলো হিন্দু জনগোষ্ঠী, হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা যে ধরনের শাসন-নিপীড়নের মধ্যে বাস করে এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করে সেটার চিত্র আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি। বিজেপির সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গরিব মানুষ ভারতেই বাস করে। এদের ভারতের সামরিক, বেসামরিক নিপীড়ন-নির্যাতনের বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়া তৎপরতা ভারত রাষ্ট্রে আছে। সুতরাং বাংলাদেশের কথা যখন তারা বলে, হিন্দু জনগণের প্রতি মায়া-মহব্বতের ব্যাপার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে, তখন তারা আসলে এটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

 সেই কারণে বিজয়ের মাসে আমাদের কয়েকটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে- ভারত সেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, এই হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন, সেই ধরনের ঘটনা যেন কোনোভাবেই না ঘটে। সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশে কিছু উন্মাদ লোক থাকতে পারে। যারা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন এবং সাম্প্রদায়িক তৎপরতা কিংবা জমি দখলের লোভে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপরে আক্রমণ করতে পারে বা নিপীড়ন করতে পারে। সে রকম ঘটনা যেন না হয়। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি এটা পরিষ্কার করতে হবে যে, যারাই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি করবে তারা আসলে বিজেপির স্বার্থ রক্ষা করছে। 

দ্বিতীয়ত, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বর্তমান বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ ব্যাপক লড়াইয়ের মধ্যে আছে। শোষণ, নিপীড়ন এবং আধিপত্য, সাম্প্রদায়িকতার জন্য ভারতের জনগণও লড়াই করছে। সেখানে বামপন্থি, সংখ্যালগিষ্ঠ জনগণ একই সঙ্গে সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগণের চেতনাসম্পন্ন যারা, তারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, নিপীড়নমূলক ভূমিকা, শোষণ এবং আধিপত্য, বৃহৎ পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগণকে উচ্ছেদ করা- এর জন্য তারাও লড়াই করছে।

 সে জন্য বাংলাদেশের দিক থেকে আমাদের উচিত হবে, কীভাবে ভারতের সেই নিপীড়িত জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো যায় এবং তাদের সঙ্গে একাত্ম সংহতি করা যায়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গেও এই সংহতিটা তৈরি করতে হবে। যাতে দক্ষিণ এশিয়া একটা গণতান্ত্রিক অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভারত একটা বাধা। সুতরাং সেই আধিপত্যবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সংহতি তৈরি করতে পারলে সেটা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন যাত্রার পথ সুগম করবে।

 বাংলাদেশে এই বিজয়ের মাসে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ-সচেতন ও সক্রিয় আছে। এই লড়াইয়ের ফলাফল হিসেবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সঙ্গে সমঝোতার মধ্যে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ

নিয়ন্ত্রণহীন জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
নিয়ন্ত্রণহীন জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম
এস এম নাজের হোসাইন

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার প্রতিনিয়তই অস্থিতিশীল হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র মাস মাহে রমজান। এ উপলক্ষে আবার রমজানে ব্যবহার্য সব নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়া শুরু হয়েছে। এর বাইরে মানুষের জীনরক্ষাকারী ওষুধের দামও মাস গেলেই বাড়ে। যারা প্রতিনিয়ত শাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী তারা জানেন মাস পেরোলেই তাদের ওষুধের দাম বাড়ে। 

এর বাইরে আবারও বাড়ানো হয়েছে কয়েকটি ওষুধের দাম। ফামের্সিগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস, ভিটামিন, গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশনসহ কোনো কোনো কোম্পানির ওষুধ এক পাতার দাম ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই হিসাবটি যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে ওষুধের দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর নিত্যপণ্যের দামের মতো লাগামহীনভাবে দাম বাড়ার ফলে জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগীরা। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাদের অবস্থা শোচনীয়। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আছেন মহাযন্ত্রণায়।
 
সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের এমনিতেই যেখানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা, সেখানে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, গ্যাস্টিক, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রতি মাসের ওষুধের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে একদিক খাদ্যপণ্য, অন্যদিকে অনেক সময় কাঁটছাট করে ওষুধ কিনে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছেন। যেহেতু ওষুধ জীবনরক্ষাকারী পণ্য এবং অনেক সময় ইংরেজিতে দাম লেখা থাকে, সে কারণেই সাধারণ মানুষ ওষুধের দর-কষাকষি বা যাচাই-বাছাই করে ক্রয়ের সময় ও সুযোগ কোনোটিই পান না। সেখানে প্রতিনিয়তই নানা অজুহাতে দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

স্বাস্থ্য ও ওষুধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় ওষুধ কিনতে। এতে ওষুধভেদে বড় ব্যবধানে ঘন ঘন দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর সার্বিক প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়বে। আর ওষুধের মূল্য নিয়ে বাজারে অব্যাহতভাবে চরম নৈরাজ্য চলছে। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফা ও দাম নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা জরুরি। তা না হলে দেশের চিকিৎসা খাত নিম্নবিত্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে যাবে। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা পর্যায়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদারকিব্যবস্থা একবারেই দুর্বল।

 জেলা পর্যায়ে একজন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক লোক দেখানো কোনো কোনো সময় ফার্মেসিগুলো পরিদর্শনে যান। এর বাইরে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে ফার্মেসিগুলোয় অভিযান পরিচালনা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ওষুধের দাম নিয়ে তেমন একটা শাস্তির বিষয় দেখা যায় না। 

সরকার দেশে ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে থাকে। অথচ দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ওষুধ কোম্পানি ২৭ হাজারেরও বেশি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বিভিন্ন নামে উৎপাদন করে থাকে। কোভিড মহামারি-পরবর্তী সময় থেকে দেশের ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতি ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির যুক্তি- বিশ্ববাজারে ওষুধের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারসংকট, উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে ওষুধের দাম বাড়ছে।

 বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এমনকি হাইকোর্ট গত ২৯ এপ্রিল দেশে ওষুধের দাম খেয়ালখুশিমতো বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। অনেক সময় দেখা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখার চেয়েও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত। সে কারণেই ওষুধশিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা নিয়মিত দাম বাড়ালেও তারা সে বিষয়ে অধিকাংশ সময়ই নীরব থাকে। যেহেতু ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের তেমন ওজর-আপত্তি নেই, সে কারণে ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম বাড়তে প্রতিনিয়তই তৎপর থাকেন। 

সরেজমিনে নগরীর রাজধানীর মিটফোর্ড, বংশাল, নাজিরাবাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা এবং শাহবাগসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার একাধিক ফার্মেসিতে ওষুধের দাম বৃদ্ধির সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, গত ১৫ দিন অস্ত্রোপচার-পরবর্তী মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায় ব্যবহার করা ট্যাবলেট টেরাক্স-১০ প্রতি পিস আগে বিক্রি হতো ১২ টাকায় আর এখন দাম বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। অর্থাৎ বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। একইভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যামলোসার্ট ট্যাবলেট এক পাতা ১০টির দাম ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে একই কোম্পানির ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের কমেট-মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক পাতা ১০টির দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ ডিএস ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুলের দাম প্রতিটি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য ৩০টির এক বক্স রসুভা (৫ এমজি) ট্যাবলেট ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। দুটিরই মূল্য বেড়েছে ২০ শতাংশ।

রোগীদের ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যায় ফেবুক্সোস্ট্যাট ৪০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট প্রতি পিস ১২ টাকা বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। মূল্য বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হিউমুলিন এন ইনজেকশন ৩ মিলি কুইকপেন ৫টির এক প্যাকের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বাইজোরান ৫/২০ ট্যাবলেট কয়েক দিন আগেও এক পাতার ১৫টির দাম ছিল ১৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ২০ শতাংশ।

প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দেশের মানুষকে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। ওষুধ কেনার পেছনেই সিংহভাগ খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে চিকিৎসাব্যবস্থায় অনেক দিন থেকেই প্রচলিত আছে- চিকিৎসক যে কোম্পানির ওষুধ লিখবেন সেটাই নিতে হবে। তা না হলে অসুখ তো সারবে না বরং আরও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা প্রতিদিন চিকিৎসকদের নানা উপঢৌকন দেওয়াসহ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভিড় জমান। এ কারণে চিকিৎসকরা যাদের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পান তাদের ওষুধ বেশি লিখে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে দাম বেড়ে দরিদ্র ও অসচ্ছল মানুষের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর একসময় ২ শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু এখন ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করছে। এর বাইরের ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভর করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মর্জির ওপর। এতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাব থাকলেও ভোক্তাদের অধিকার ও যুক্তিকে বারবার উপেক্ষা করে অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রচলিত ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, সেটি যুক্তি ও ন্যায়সংগত কি না সন্দেহ আছে। জেনেরিক নামের যে ২ শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের ছিল, তা পুনর্বহাল করা দরকার। স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। এখন ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদন করা হয়। দেশে উৎপাদিত ১২৪টি ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

 একই সঙ্গে বর্তমানে ঔষধ প্রশাসনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। দেশে ওষুধশিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ৯৭ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলোর অধিকাংশই আসে ভারত ও চীন থেকে। উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকেও কিছু কাঁচামাল আসছে। নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে, যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। 

২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধা বহাল থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশের ওষুধশিল্প সম্প্রসারণ করলেও সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেমে নেই। শুরুতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এটি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন দেশীয় বড় করপোরেটগুলো তাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে ওষুধশিল্পে এ ধরনের অস্থিরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বড় কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধ করা ও এই ব্যবসায় অনৈতিক বিপণন পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। 

লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
[email protected]

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ এএম
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার

ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। বিগত আট বছরের তুলনায় নভেম্বরে দূষণের মাত্রা ১০ ভাগ বেড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা প্রকাশ করে। কোন কোন উৎস থেকে বায়ুদূষণ হয় এবং সেটিকে কোন কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে  নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটি দেওয়া আছে। এই নির্দেশনা অনুসরণ করলেই বায়ুদূষণ কমে আসবে। সবাই যদি আমরা কাজ না করি, তাহলে একা কোনো সংস্থা, অধিদপ্তরের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায় আমাদের এই দূষণের মধ্যে থাকতে হবে। বায়ুদূষণে নাগরিকদের অংশগ্রহণ কম থাকে। তারা হয়তো বর্জ্য পোড়ায়। তবে এটা উল্লেখযোগ্য না। যানবাহন, শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ, ইটভাটা- এসব থেকে দূষণের পরিমাণটা বেশি হয়। সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা নাগরিক হিসেবে সচেতন থাকতে পারি। দূষিত এলাকায় কম যেতে পারি। মাস্ক পরতে পারি। 

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা

বড় সিদ্ধান্ত ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
বড় সিদ্ধান্ত ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান

ঢাকা শহরে বায়ুদূষণে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। বর্তমানে এটা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে আসলে উন্নতি করার খুব একটা সম্ভাবনা আছে কি না সন্দেহ। এখান থেকে ফিরে আসার লক্ষণ কম দেখা যাচ্ছে। বরং ড্যাপকে (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) ধ্বংস করে এই শহরে আরও ভবন বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যত্রতত্র শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এই শহরকে ভোগের পণ্য বানাতে চায়। এখানে কোনো প্ল্যানিং অর্ডার নেই, কোনো কন্ট্রোল নেই। তাই যা হওয়ার কথা, দূষণ বেড়েই চলছে। কোনো একটা সূচকে আমরা আগের চেয়ে ভালো আছি, সে রকম দেখা যাচ্ছে না। শহরটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। চীনে বায়ুদূষণের মাত্রা খারাপ হলে অলিম্পিক বয়কটের ডাক আসে। তখন চীন প্রাইভেট কারের ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলে। আমাদেরও এ রকম বড় চিন্তা করতে হবে। বড় প্রভাব ফেলতে হবে। ছোট ছোট কোনো কিছু দিয়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। পরিকল্পনায় বড় চিন্তা করার মতো উদ্যোগ কোনো সরকারের মধ্যে দেখছি না। এই মুহূর্তে যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় শহরে কংক্রিট বাড়াব না, ঢাকার আশপাশের ইটভাটা সব বন্ধ করা হবে। এ রকম বড় সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। 

সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)

উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে
স্থপতি ইকবাল হাবিব

বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হলো উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ। ইটের ভাটা থেকে শুরু করে বালুসহ সব কাঁচামাল উন্মুক্তভাবে পরিবহন করা হয়। ভবন হোক, ড্রেন হোক বা অন্য কোনো কাঠামো হোক, সবকিছুই আমরা উন্মুক্তভাবে করছি। এটা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ময়লার ভাগাড় থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়াও এই দূষণের জন্য দায়ী।

ইটের ভাটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে পদক্ষেপ নিলে দূষণ কমে আসত। ইটের ভাটাকে আধুনিকায়নের নামে একটা কারসাজি চলছে। এগুলো আধুনিকায়ন হয়নি সরকারি উদ্যোগের অভাবে। কারণ বাংলাদেশে যত নির্মাণকাজ হয়, তার মধ্যে ৬০ ভাগের বেশি করে সরকার নিজেই। সেখানে তারা ইটের বিকল্প ব্যবহার করে না। সব নির্মাণে ইটের বিকল্প ব্যবহার করতে হবে। ইটের বিকল্প যারা বানাবে, তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। সরকারকে তার নিজের নির্মাণকাজে ইটের বিকল্প ব্যবহারে উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু বলা যায়, সরকারের কারণে হচ্ছে না। একই সঙ্গে বড় বড় প্রকল্প উন্মুক্তভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সঠিক নিয়ম মেনে করা হচ্ছে না। বায়ুদূষণ সরকারি মদদে বেশি হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ড্রেন থেকে ময়লা উঠিয়ে আবার উন্মুক্তভাবে রেখে দেয়। সেটা আবার বাতাসে মিশে যাচ্ছে। সব বিষয়ে কঠোর নজরদারি, দায়বদ্ধতা এবং সরকারিভাবে জরুরি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

সহসভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });