যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি প্রচারণার শেষ দিনগুলোতে আমি যেখানেই গিয়েছি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা আমাকে একই কথা বলেছেন, তিনি বিজয় হবেন। উইসকনসিন থেকে পেনসিলভানিয়া পর্যন্ত সব জায়গাতেই ট্রাম্পের জয়গান ছিল। তবে তাদের কিছু আপত্তি ছিল; অভিবাসী, মুদ্রাস্ফীতি এবং যুদ্ধ। এবার বিশ্বে শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক।
ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাটা অনেকটা বিস্ময়কর। আমেরিকানদের বেশির ভাগ মানুষই অনেক খুশি। কমলা হ্যারিসকে অনেকে কেবল ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখেছিলেন। জো বাইডেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন। গত মাসে যখন হ্যারিসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি জো বাইডেন থেকে আলাদাভাবে কী করবেন? হ্যারিস উত্তর দিয়েছিলেন: এমন কিছু নেই যা মাথায় আসে না, আমার বেশির ভাগ সিদ্ধান্তের মধ্যে তার অংশগ্রহণ রয়েছে।
দেশটির রাজ্যেগুলোতে আমেরিকানদের তেমন কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। কোনো ক্রোধ ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিসের কিছু নির্বাচনি প্রচারণায় কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, যার কারণে ট্রাম্পের বিজয় কিছুটা নিশ্চিতের পথে চলে যায়। ট্রাম্পবাদী আন্দোলনের অস্তিত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই।
অবশ্যই অভিবাসীদের প্রতি কঠোরতা অর্থনৈতিকে দুর্বল করতে পারে। ট্রাম্পবাদী আন্দোলনের একটি অংশ ভয় পায়, যা তারা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকার জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখে এবং বিশ্বাস করে যে ডেমোক্র্যাটদের বহিষ্কার না করা হলে যুক্তরাষ্ট্র বিপদের সম্মুখীন হবে। অন্যদের জন্য এটি কেবল অন্ধ বর্ণবাদ নয়, বরং সামাজিক অসন্তোষের কারণ হতে পারে। অন্যরা অভিবাসীদের নিজেদের দুর্বল মজুরি বা কাজের অভাবের জন্য দায়ী করেছে। বাধ্যতামূলক বিকল্প ব্যাখ্যা দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করেছে ট্রাম্প।
ডেমোক্র্যাটরা মুদ্রাস্ফীতির দিকে ইঙ্গিত করতে পারে, যা ২০২২ সালের জুনে ৯.১%-এ পৌঁছেছিল। এটি ইতিবাচক হিসাবে ২.৪%-এ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মূল্য ফিরে এসেছে। এর মানে হলো যে তারা আরও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান বিশ্বাস করে যে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বা তেমন ভালো নয়। হ্যাঁ, প্রকৃত মজুরি সামগ্রিকভাবে বেড়েছে, কিন্তু কয়েক দশকের স্থবিরতার পরে এ রকম অপেক্ষাকৃত কম বৃদ্ধি অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে।
ট্রাম্প অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি যা কোনো বিষয় নয়। তবে তিনি তার কর্মীদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছেন। কারণ ট্রাম্প ভেবেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ভালো অবস্থানে নেই। দেশটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা দরকার।
চারদিকে যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প সমর্থকরা চারপাশের যুদ্ধ দেখে ভাবছে বিশ্ব ভেঙে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে এবং তাদের কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। বাদামি বর্ণের একজন নারী ঈশ্বর, বন্দুক এবং ট্রাম্প খোদাই করে তার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ইউক্রেনের যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেবে। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন রাশিয়া তার আগ্রাসন এড়াতে পারত
যদি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন। বিভিন্ন কারণে ট্রাম্পের
জয় এসেছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ দিন দিন অনেক বাড়ছে। ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রশাসন নিরলসভাবে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র পাঠিয়েছে, কারণ যা গণহত্যার রূপ নিয়েছে, যা আমেরিকানরা ভালোভাবে নেয়নি। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তার ইচ্ছামতো কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পিছিয়ে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন তা ভালোভাবে নেয়নি। বরং তিনি বিশ্বকে হিংসাত্মক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকানরা যুদ্ধ চায় না। যার কারণেই ট্রাম্প বিজয়ের চূড়ায় পৌঁছেতে পারে।
অন্যদিকে মিশিগানের ডিয়ারবোর্নে আমি মুসলিম আমেরিকানদের কাছ থেকে শুনেছি, যারা সব সময় ভোট দিতে চেয়েছে, যারা মুসলমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। সে ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা বেশি রক্তাক্ত যুদ্ধ করে গণহত্যায় রূপ দিল। এ জন্য তারা কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ ডেমোক্র্যাটরা রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সাহায্য করেছে। আবার কেউ কেউ ট্রাম্পের বক্তৃতার মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়েছিল। এ কারণেই ডেমোক্র্যাটদের ব্যর্থতার এসেছে।
হ্যারিস দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিতে চলছে সেভাবেই চলবে। কিন্তু মার্কিন জনগণ ভিন্ন কিছু চেয়েছিল। হ্যারিসের অর্থনৈতিক এজেন্ডাগুলো আমেরিকানদের বড় অংশজুড়ে মেনে নিতে পারেনি। তার অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্র আরও ভেঙে পড়ত। আমেরিকানরা চেয়েছিল তাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও প্রগাঢ় হোক। আর যুদ্ধ নয়, নতুনভাবে দেশ এগিয়ে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্প অনেক আশার বাণী শোনাতে পেরেছেন, যার ফলে ট্রাম্পের বিজয় এসেছে।
কমলা হ্যারিস গণতন্ত্রের সংরক্ষণ না করে বিভাজনে পরিণত করেছিলেন। কিছু ভোটারের জন্য আশার বাণী শোনালেও তার চিন্তার মধ্যে বিমূর্তভাব ছিল। আমেরিকানরা চেয়েছিল যে রাজনীতিবিদরা তাদের সব সমস্যার সমাধান করুক। এই অভিযোগগুলো সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর বাইরেও ব্যয়বহুল পরিণতি হবে, যা আমেরিকানরা বুঝতে দেরি করেনি। ডেমোক্র্যাটিক দলকে এ কারণেই অনেকে ভোট দেয়নি। ট্রাম্পের
বিজয়ের পেছনে অনেক কারণ নিহিত ছিল। ট্রাম্পের বিজয় ছিল এক অবিস্মরণীয়, যা আমেরিকানরা মনেপ্রাণে চেয়েছিল।
লেখক: গার্ডিয়ানের কলামিস্ট
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল