ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হবে

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
বাংলাদেশের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হবে
মুন্সি ফয়েজ আহমদ

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি নতুন নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আগেও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পুনরায় তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি অন্যদের থেকে অপেক্ষাকৃত একটু আলাদা। সে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ব্যতিক্রম কিছু করে ফেলতে পারেন বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক।

 অনেকেই এ বিষয়ে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সম্পৃক্ততা কিছুটা কমিয়ে আনতে পারেন। গতবার যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন ন্যাটোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়ে এনেছিলেন। ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ বহুভাবে কমানো হয়েছিল। ন্যাটো সদস্যদেশগুলো আবারও সেই অবস্থায় চলে যেতে পারে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ হয়নি। যেসব যুদ্ধ চলমান ছিল সেখান থেকে সরে আসার জন্য, অর্থাৎ যুদ্ধ থামানোর 
জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। এবারও সে রকম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য যেকোনো দেশ, সবাই জাতীয় স্বার্থেই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থ বলতে প্রত্যেকেই নিজ দেশের স্বার্থকে গুরুত্বসহকারে দেখে। তবে ব্যক্তিবিশেষে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকতে পারে। সেই পার্থক্যগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সূক্ষ্ম বা মোটা দাগের হয়ে থাকে। পররাষ্ট্র বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু নীতিমালা আছে। তারা সেই নীতিমালাগুলোই মোটামুটিভাবে অনুসরণ করে থাকে। ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান- উভয় দলই দেশের ভেতরে, অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট হোক বা রিপাবলিকান হোক, সম্পর্কগুলো বেশি পরিবর্তন হয় না। 

আমরা পেছন থেকে দেখে সামনের দিকে কী হবে সেই চিন্তা করি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথার মধ্যেও এটি ছিল যে, যুদ্ধ তিনি পছন্দ করেন না। সে জন্য মনে করা হচ্ছে, যেখানে যেখানে যুদ্ধ আছে বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, সেটার ওপরে বড় ধরনের প্রভাব আসতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভালো সম্পর্ক আছে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য সুবিধাজনক হয়, সেভাবে চেষ্টা করতে পারেন এবং সেটা হওয়া সম্ভব। আরেকটা বিষয় অনেকে মনে করার চেষ্টা করেন, যেমন- এবারের নির্বাচনে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তারা আশা করেছেন যে, তিনি হয়তোবা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি রক্ষার জন্য চেষ্টা করবেন। 

যেখানে তার বেশি কিছু করার আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ ইসরায়েলের স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে- এই বিষয়ে অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন। সেখানেও বড় রকমের কোনো পার্থক্য হবে না। তবে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিস্তারণে উনি গুটিয়ে থাকা প্রকৃতির মানুষ। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ দেখানো অথবা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারগুলো কমে যাবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের যেভাবে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে, সেই চেষ্টাটা একটু কমে আসতে পারে। তবে পররাষ্ট্রনীতির ধরন পাল্টাবে না।

 বিশেষ করে আমাদের অনেক বেশি সচেষ্ট হতে হবে। অনেক বেশি প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কটুকু বজায় রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক সুবিধাসহ অন্য যেসব সুবিধা আমরা পেয়ে আসছিলাম, সেদিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। অর্থনৈতিক যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো কী করে কাটিয়ে ওঠা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে ডেমোক্র্যাটের মতো রিপাবলিকানরা এত বেশি ব্যস্ত থাকে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে  সম্পর্ক কেমন হবে। আগামী দিনেও এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলবৎ থাকবে বলে মনে হয়। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। সামরিক শক্তির দিক থেকেও দেশটি সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কাজেই চীন সবদিক থেকেই বৈশ্বিকভাবে তার প্রভাব বাড়িয়ে চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগের শাসনামলে চীনের বিরুদ্ধে প্রথম শুল্কারোপ করেন। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেই শুল্ক বজায় রাখেন। এসব কিছুর উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনকে এক রকম কোণঠাসা করে রাখা।  

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। এর ওপর নির্ভর করবে চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমবে নাকি বাড়বে। বলা বাহুল্য, এর প্রতিক্রিয়া পৃথিবীজুড়েই ছড়িয়ে পড়বে। এটি মনে করার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন বিদ্যমান পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবেন না। বরং বিদ্যমান নীতি গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে তিনি দেখাতে চেষ্টা করবেন যে, পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি কিছু করছেন। চীনের বিরুদ্ধে নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্ভবত তিনি তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করবেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে চীনের বিরুদ্ধে সহজে প্রভাবিত করা যায়। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতি চাপ বৃদ্ধি হতে পারে। তবে ট্রাম্প বরাবরই বলছেন যে, তিনি যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে এটা কাজে লাগবে। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায়, তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে পারে। সেটা বাংলাদেশিদের জন্য ইতিবাচক হবে কি না, সেটাই বিবেচ্য। যেমন- অভিবাসীদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সংকুচিত হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে যে রকম চিন্তাভাবনা লক্ষ করা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে সম্পূর্ণ নীতি অনুসরণ করতে নাও পারে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে অতি উৎসাহের মাত্রাটা ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে মনে হয়।

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক  ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক 
ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফলে যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কতগুলো ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থিমিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বেশ কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিগত সময়ে দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, তা একটা মৌলিক পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন কারণে জনমনে টেনশনও বাড়ছিল। ফলে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি ভারতের মিডিয়াসহ বাংলাদেশের মানুষের ভেতরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটেছে। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা বড় আকারেই বাড়তে শুরু করেছিল বলা যায়। একই সঙ্গে দুই দেশের কট্টরপন্থি যারা আছেন, তারাও এই সুযোগ নিয়েই বেশ কতগুলো কথাবার্তা বলা শুরু করেছিলেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার রীতিনীতিগুলো অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছিল। 

স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের সরকার একটা সময় এসে বুঝতে পারছে যে, তাদের কূটনীতির মধ্যে ফেরত যেতে হবে। দুই দিন আগে যখন সবাই আমরা দেখলাম, আমাদের সরকার তাদের কমিশনারকে তলব করেছে এবং তার ধারাবাহিকতায় দেখা গেল, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশে এলেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করলেন। সেই আলোচনায় যে কথাবার্তাগুলো উঠে এসেছে এবং যে লিখিত স্টেটম্যান্ট পাওয়া গেছে, সেখানে তারা কয়েকটা বিষয় তুলে ধরেছেন। 

একটা বিষয় বড় আকারে তারা প্রথমেই তুলে ধরেছেন যে, তারা ভারত-বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সব সময় আগ্রহী। একই সঙ্গে তারা উন্নয়ন এবং বিশেষ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের কথা যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা খুব সম্ভবত নির্বাচিত সরকার দেখতে চাচ্ছেন। একই সঙ্গে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়েই যেন রাষ্ট্র চলে, এর ওপরই সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেহেতু অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দটি তারা ব্যবহার করেছেন। কাজেই তারা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার কথাটিই বোঝাতে চেয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই কথা বলেছে যে, তারা একটা গণতান্ত্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার দেখতে চায়। অন্য কথায়, এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটা নির্বাচিত সরকার যেন আসে, তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

 একই সঙ্গে আরেকটা বিষয় তারা তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে নেতিবাচক যে কথাবার্তাগুলো হচ্ছে, সেটাকে তারা আলোচনায় তুলে এনেছেন। তারা মনে করেন যে, এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে যে কারণে তাদের দেশের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রচার শুরু হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের দিক থেকে সেই কথাবার্তাগুলোকে কখনো প্রশ্রয় দিইনি। বরং আমরা সব সময় বলে এসেছি যে, বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে এবং তা এগিয়ে নিতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নিরাপদে ও শান্তিতে আছে। কাজেই কারোরই এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক হবে না, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে আরও সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষ করে আমাদের সরকার খুব ভালো বলতে পারবে যে, এ ব্যাপারে তারা কতখানি এগোতে পেরেছেন বা ভারতকে বোঝাতে পেরেছেন। 

গত সরকারের সময়ে যেহেতু সম্পর্কটা অনেকটাই শুধু একটা দলের সঙ্গে হয়ে গিয়েছিল এবং ওই দলের মানুষদের সঙ্গেই হয়ে গিয়েছিল। অন্য দল বা মতের সবাই বলা যায় বিচ্ছিন্ন ছিল অর্থাৎ সেখানে জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেখানেও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলতে চেষ্টা করেছেন যে, দুই দেশের মধ্যে একটা জনকেন্দ্রিক সম্পর্ক হবে। তার মানে তারাও বুঝতে পেরেছেন যে, দলের সঙ্গে সম্পর্ক করে খুব একটা এগোনো যায় না। সেটা একটা জায়গায় এসে থেমেই যায়। কাজেই নতুন পরিপ্রেক্ষিতে খুব সম্ভব বাংলাদেশের জনগণের কথা যে, সম্পর্ক হওয়া উচিত জনগণের সঙ্গে এবং কোনোভাবেই যেন কোনো দলের সঙ্গে না হয়। সেটা তারা পরিষ্কার করেছেন। এখন দেখা দরকার যে, কার্যত কীভাবে তারা এটাকে ব্যবহার করবেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আমরাও সেটা দেখতে চাইব।
 
এ কথা সত্য যে, যেকোনো সফরে বা একটা সফরেই বড় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এটা বলা মুশকিল এবং এখন যেটা জানা দরকার, সেটা হলো- তারা কীভাবে এই জনগণের, অর্থাৎ জনগণকেন্দ্রিক যে সম্পর্কের কথা বলছেন সেটা কীভাবে তারা তৈরি করবেন। বাংলাদেশের দিক থেকে যে সমালোচনা তারা তুলে এনেছেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যেসব অপপ্রচার হয়েছে, সেটা বাংলাদেশ সরকার কীভাবে চিহ্নিত করবে। সেখানে কোনোভাবেই যেন সংখ্যালঘুরা হারিয়ে না যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা দেখতে হবে। কতগুলো বিষয় হয়তো আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, আরও বহু সমস্যা রয়ে গেছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের। এগুলো কতখানি আলোচনা হয়েছে সেগুলো আমরা এখনই হয়তো জানতে পারব না। 

পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বা পররাষ্ট্রসচিব যদি বিভিন্ন ফোরামে বা প্রেসের সামনে যদি কখনো এ নিয়ে আলোচনা করেন, তখন আমরা জানব বা লিখিত আকারে প্রকাশ পায়, তাহলে হয়তো আরও কিছু প্রকাশ পাবে। এমনিতে সচিবের এই সফরের মাধ্যমে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়। এখন দেখা দরকার যে, আগামীতে এটার প্রভাব কী রকম হয়? 

ভারতের মিডিয়া যা করেছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার নিশ্চয়ই ভালো করেই বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে, এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নেতিবাচক অথবা অসত্য খবর প্রচার কেন হচ্ছে! সেগুলো থামবে কি না যতক্ষণ না দেখব, ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই সফরের মাধ্যমে আশা করা যায় যে, আমাদের দিক থেকে হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের পররাষ্ট্রসচিব বা পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া বাড়তে পারে। এটা নির্ভর করবে, এই সফরে কিছু আলোচনা হয়েছে অথবা যেসব কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো কতদূর এগিয়ে গেল তার ওপর ভিত্তি করে। এটা যতক্ষণ না সঠিকভাবে বোঝা যাবে ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। 

লেখক: শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ এএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ এএম
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে পদক্ষেপ জরুরি
ড. সুলতান মাহমুদ রানা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অসংখ্য নিরপেক্ষ ছাত্র, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ সব স্তরের জনগণ অংশ নিয়েছিল। আমাদের প্রত্যাশা ছিল তাদের সেই নিরপেক্ষ অবস্থান স্থায়ী হবে। তারা কোনোভাবেই নিরপেক্ষতা হারাবে না। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এমনকি তারাই যেন গণতান্ত্রিক শাসনকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের প্রত্যাশার স্তর কিছুটা হলেও কমে গেছে। আমরা শঙ্কিত হচ্ছি এই ভেবে যে, সত্যিই কি আমাদের দেশ যথাযথ গণতান্ত্রিক ধারায় উঠতে পারবে! নানা ধরনের টানাপোড়েন, নিজেদের মধ্যে বিভক্তি- এসব বিষয় ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

 দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে এক ধরনের ক্ষোভ এবং অনিশ্চয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম অল্প সময়ের মধ্যে হয়তো সবকিছু স্বাভাবিক হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনো নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের হতাশা এবং ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। তা ছাড়া সারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে। এবং তা জনমনে অসন্তোষ এবং শঙ্কা তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মালিকদের নামে মামলা হওয়ায় তারা অনেকেই পলাতক রয়েছেন। ফলে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বেকারত্ব বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমের কাছে অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের নামে অযথা হয়রানিমূলক মামলা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতের অমিল থাকলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীর পরিবারসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে। ব্যবসার প্রয়োজনে বিদেশে যেতে 
পারছেন না।  

বর্তমান এমন সংকটময় পরিস্থিতিতেও দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে দেশ ও সমাজ গঠনের কোনো আদর্শভিত্তিক পরিকল্পনা কিংবা বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে না। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সময়ে আমরা লক্ষ করেছি, যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই রাজনীতিকে ব্যবহার করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপচর্চা করেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাই রাজনীতিকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে যাবতীয় সন্ত্রাস, রাহাজানি, টেন্ডারবাজিতে লিপ্ত ছিল। এখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই কিন্তু তবু বেশ কিছু অন্যায়-অপকর্ম আমাদের চোখে পড়ছে। আর আমরাও এর উপায়ান্তর খুঁজে না পেয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকে যাচ্ছি। 

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে এবং জাতি হিসেবে নিজেদের এগিয়ে নিতে যা যা করা দরকার তা যদি আমরা করতে না পারি, তাহলে কোনোভাবেই এই দেশ যথাযথ রাস্তায় উঠতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন হবে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উপযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করা। পদ্ধতিই রাজনৈতিক নেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাবে। আর মানসিকতার পরিবর্তন হলেই আচরণ বদলাবে এবং আচরণ বদলালেই রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতাভিত্তিক সংস্কৃতি সৃষ্টির পথ প্রশস্ত হবে, ঘৃণাবোধের অবসান ঘটবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও ঘৃণাবোধের পরিণতি ভয়ংকর হতে বাধ্য। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, চোখের বদলে চোখ নিলে সারা পৃথিবী অন্ধ হয়ে যায়।

 বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে একটি বিষয় খুব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষমতায় থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতা এবং ক্ষমতায় না থাকলে তাদের মানসিকতা স্ববিরোধী আচরণের শামিল। রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ গুণগত পরিবর্তন মোটামুটিভাবে আমাদের একটি জাতীয় অঙ্গীকার ও সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ জনগণও মনেপ্রাণে তা চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিগত সময়ে রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে ঘৃণা বা প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করার কোনো প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। 

নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যারা যান, তারা রাতারাতি রাষ্ট্রের সবকিছুর ‘মালিক’ বনে যান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সবকিছুই দখলে নিয়ে নেন। আর এগুলো অনেক ক্ষেত্রে তারা কর্মী-সমর্থক ও আপনজনদের মধ্যে ফায়দা হিসেবে বিতরণ করেন। এভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের ধারক-বাহক না হয়ে বহুলাংশে সিন্ডিকেটের রূপ ধারণ করে। রাজনীতিকে যারা জনকল্যাণের পরিবর্তে ব্যবসায়িক হাতিয়ারে পরিণত করেছেন, তাদের করাল গ্রাস থেকে রাজনীতিকে মুক্ত না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন হবে রাজনীতিবিদদের সর্বক্ষেত্রে নৈতিক আচরণ।

 নৈতিকতাবিবর্জিত রাজনীতি ভণ্ডামির শামিল। রাজনীতিতে অনৈতিকতার অবসান ঘটলেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের পথ সুগম হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে প্রয়োজন হবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত ডিজাইন গ্রহণ করা। একটি সুন্দর পদ্ধতিই দুর্নীতিবাজ-দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করবে। এখন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করার জন্য দেশের রাজনীতিবিদরা অতীতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলো তারা রক্ষা করতে পারেননি। যেমন, ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখা। ওই রূপরেখার মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নানাবিধ সংস্কারের অঙ্গীকার করেছিল। তারা জাতীয় সংসদকে সব সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা, নির্বাচিত সরকারকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছিল। কিন্তু দেশে বিদ্যমান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোই তিন জোটের রূপরেখার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। বিরোধী দলগুলো সংসদের অধিবেশনগুলো বর্জন করেছে প্রতিনিয়ত।

 আবার কোনো কোনো সংসদে সংসদ বর্জনের পরিমাণ নেই বললেই চলে। অধিকভাবে সংসদ বর্জন এবং মোটেই সংসদ বর্জন নয়- এমন প্রবণতা সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য মঙ্গলজনক নয়। বরং সংসদকে কার্যকর রাখতে এবং জবাবদিহির পর্যায়ে নিতে সামঞ্জস্য এবং যৌক্তিক প্রেক্ষিতে সংসদ বর্জনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, রাজনৈতিক দলগুলো সংসদকে সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই শুধু সংবিধান সংশোধন কিংবা সমঝোতাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক মনোবৃত্তি ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার আবশ্যক। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা ক্ষমতায় এসে পুনরায় ক্ষমতা ধরে রাখার নতুন ফন্দি করতে সচেষ্ট না হয়ে গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিন। আমরা চাই সত্যিকার গণতন্ত্র। এ জন্য শুধু নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার নয় বরং নির্বাচন-পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে তা মেনে চলার ইতিবাচক অঙ্গীকার রক্ষা জরুরি।  

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

কূটনীতির নতুন যাত্রা শুরু হলো

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ এএম
কূটনীতির নতুন যাত্রা শুরু হলো
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক যাত্রা নতুনভাবে শুরু হলো, যা ৫ আগস্টের পর থেকে বন্ধ ছিল। গত কয়েক মাস ধরে কূটনৈতিক উদ্যোগ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন মিডিয়ায় অপপ্রচারসহ নানা ঘটনা ঘটে গেছে। এখন আবার দুই দেশ আলোচনার টেবিলে ফিরে এল, যা উত্তেজনা কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। কতগুলো বিষয়ে দুই পক্ষই পরিষ্কার করেছে। এতে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরেছে। বাংলাদেশ চেয়েছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক। বিষয়টি ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হলে বোঝা যাবে। তবে ভারত সরকার যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে তারা সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চায়। মনে হচ্ছে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তারা স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, কিন্তু বড় কোনো উদ্যোগের জন্য নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

আশা করি উত্তেজনা কমে আসবে

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ এএম
আশা করি উত্তেজনা কমে আসবে
মুন্সি ফয়েজ আহমেদ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের অগ্রগতি নিয়ে আমি আশাবাদী। কারণ, উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এ ধরনের বৈঠক না হওয়ায় খারাপ দেখাচ্ছিল। বৈঠকে দুই দেশই উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সৃষ্ট নতুন সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। পারস্পরিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেননা, দুই দেশের মধ্যে আগেও ভালো সম্পর্ক ছিল।

৫ আগস্টের পর সম্পর্কের ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল। এখন সেটিকে আবার সঠিক পথে তোলা হয়েছে বৈঠকের মাধ্যমে। তবে এক দিনেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সবেমাত্র বৈঠকটি হলো। এখন সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দেশে ফিরে তাদের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করবেন। তারা উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন সে পদক্ষেপই নেবেন বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে আগামীতে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকও হতে পারে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত

বাশারের পতনে আরব অঞ্চলে কী বার্তা দেয়?

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
বাশারের পতনে আরব অঞ্চলে কী বার্তা দেয়?
রামি জি খৌরি

গত ৮ ডিসেম্বর দুই সপ্তাহেরও কম সময় ধরে চলমান অভ্যুত্থানের পর সিরিয়ায় বিরোধী বাহিনী দামেস্কে প্রবেশ করে এবং বাশার আল-আসাদ শাসনের অবসান ঘোষণা করে। বিদ্রোহীরা রাজধানীতে প্রবেশের ঠিক আগমুহূর্তেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার বিমানে দেশ ছেড়ে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির পর বাশার আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অর্ধশতাব্দীর অবসান ঘটিয়ে সিরিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে আধুনিক আরব অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মোড় হিসেবে দেখা উচিত। ১৯৫০-এর দশক থেকে সামরিক শাসনের মাধ্যমে আরবের স্বৈরশাসকদের মতো দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছিল বাশার আল-আসাদের পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে আরব সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছেন তারা। 

অনেকেই বাশার আল-আসাদের উৎখাতকে উদযাপন করছেন। আবার অনেকেই ভাবছেন সিরিয়ায় বিভিন্ন স্থানীয় এবং বহিরাগত শক্তির প্রভাব থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে দেশে কী হতে পারে। সিরিয়ার জনগণ শালীন জীবনযাপন করতে চায়, যেখানে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে এবং তাদের কথা শোনা হবে। আমরা আশা করব, অচিরেই সিরিয়ায় নতুন ও স্থিতিশীলতা এবং শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। লম্বা দাড়ির মানে কী, পশ্চিমাদের তা বিশ্লেষণ করার মূর্খতা বন্ধ করা উচিত।
 
সিরিয়ার শাসন ও গৃহযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক গল্পের অর্থ কী হতে পারে, তা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাশার আল-আসাদের অধীনে সিরিয়া কখনোই অনন্য ছিল না। বরং এটি ছিল দাম্ভিকতায় ভরা এবং ধ্বংসাত্মক। আরব রাষ্ট্রীয় শক্তির বড় উদাহরণ যা আঞ্চলিক শক্তি ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহায়তায় অর্ধশতাব্দী ধরে এই অঞ্চলকে ধ্বংস করেছে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সিরিয়াবাসীকে। 

বাশার আল-আসাদের সরকার আরব অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক শাসন ও বিদেশিদের দ্বারা সমর্থিত ছিল। তারা ছিল পারিবারিকভাবে স্বৈরাচারী; যা সিরিয়ার জনগণ, অর্থনীতি এবং জাতীয় অখণ্ডতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। 

সিরিয়ার বর্তমান যে পরিস্থিতি তা আরব দেশে স্বৈরাচারের সব দুর্বলতা প্রকাশ করে। এ ধরনের স্বৈরাশাসন যেভাবে যেখানেই টিকে থাকুক, সেটা অবশ্যই আমাদের সমাজ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মূলোৎপাটন করতে হবে। এর পেছনে রয়েছে প্রকৃত বহুত্ববাদের অভাব, বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জবাবদিহির অভাব, সামরিক ও পুলিশি বর্বরতা, ব্যাপক কারাদণ্ড, নির্যাতন ও মৃত্যু। এতে দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় উচ্চবিত্তদের মধ্যে দুর্নীতির জন্ম দেয়। দেশে জীবনমানের মধ্যে গভীর বৈষম্য দেখা দেয়। নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো কাঠামোগত সংযোগ নেই, ফলে এমন নীতি তৈরি হতে পারে, যেখানে শাসিতদের নিজের অভিপ্রায় ও ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। 

গামাল আবদেল নাসেরের ১৯৫২ সালের মিসরীয় বিপ্লব সামরিক শাসনের মাধ্যমে আরবে ধ্বংসাত্মক উত্তরাধিকারের সূচনা করেছিল। ফলে ১৯৬৭ সালে আরব সেনাবাহিনীর কাছে ইসরায়েলের পরাজয়ের পর তা আরও দ্রুত প্রসারিত হয়েছিল। বাশার আল-আসাদের বাবা হাফেজ আরব অফিসারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন; যিনি পরবর্তী দুই দশকে বিভিন্ন আরব দেশে ক্ষমতা দখল করেন এবং তাদের মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করেন। 

এই স্ব-আরোপিত অফিসাররা তাদের কয়েক দশকের শাসনামলে যুদ্ধ চালাতে বা কার্যকরভাবে শাসন করতে পারেননি। ফলে ১৯৯০-এর দশক থেকে কিছু ধনী তেল উৎপাদনকারী দেশের বাইরে বেশির ভাগ আরব তাদের উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি, পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

আঞ্চলিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আরবদের ছোট অংশ (বেশির ভাগই তেল উৎপাদনকারী রাজ্যে) আরামদায়ক জীবনযাপন করে। অন্যদিকে আরবের সংখ্যাগরিষ্ঠরা রাজনৈতিক অধিকার বা সম্মানজনক জীবনযাপন উপভোগ করেন না। আরব সমাজে বৈষম্য ও দারিদ্র্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দমন-পীড়নের মাধ্যমে আরব সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের নিষ্ক্রিয়, বাকস্বাধীনতাহীন ও নপুংশক ভোক্তায় রূপান্তরিত করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই দেশত্যাগ করতে চান। এসব দমন-পীড়ন আরব নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ, ভয় এবং হতাশার জন্ম দিয়েছে। তারা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছেন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তারা ইসরায়েল বা বিদেশি শক্তির হুমকির মুখে নিজেদের রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বেঁচে থাকার জন্য তারা ছোট উপজাতীয়, ধর্মীয় বা মতাদর্শিক গোষ্ঠী থেকে পিছু হটছেন। 

সামরিকীকরণ ক্ষমতার মডেলকে চ্যালেঞ্জকারী সবচেয়ে শক্তিশালী আরব আন্দোলনগুলো ছিল ইসলামপন্থি- উভয়ই সশস্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ। সিরিয়ায় যখন একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন নৃশংস সামরিক শক্তির সঙ্গে মুখোমুখি হলো, তখন বিদ্রোহ দ্রুতই একটি গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। এতে জাতীয় সংহতিকে ক্ষুণ্ন করে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আরও বেশি বিস্তার ঘটে এবং বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের সূচনা করে।

সিরিয়ায় যা ঘটেছে তা সব আরব স্বৈরশাসকদের জেগে ওঠার আহ্বান হওয়া উচিত। যে আরব রাষ্ট্র সাংবিধানিক বা নির্বাচনি উপায়ে তার জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা ও বৈধতা পায়নি, সেই অঞ্চল দীর্ঘকাল এমন স্বৈরশাসনের বাস্তবতা সহ্য করতে পারে না।

আমি অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আরব সমাজ এবং নাগরিকদের অবস্থা পর্যালোচনা করেছি। অবশেষে এই উপসংহারে পৌঁছেছি, একটি আরব দেশও স্থিতিশীল রাষ্ট্র, প্রকৃত সার্বভৌমত্ব, নাগরিকত্ব এবং টেকসই ও ন্যায়সংগত মানব উন্নয়নের চারটি মূল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। 
সিরিয়ায় প্রত্যেক সাধারণ নাগরিকের স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার যে অদম্য ইচ্ছা তা বিশ্বকে এক ধরনের সংকেত দিয়ে যায়। আরবদের বিদ্যমান রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে তা বেশির ভাগই আরব জনগণের জন্য ব্যর্থতা বয়ে আনবে। 

লেখক: বিশিষ্ট ফেলো, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত। 
আল-জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });