ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে
মুখতার বাবায়েভ

জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিশ্বের আরও জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন। আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ২৯ শুরু হয়েছে। এই সম্মেলনে জলবায়ুর নতুনভাবে অর্থায়নের লক্ষ্যে আজারবাইজানের কপ প্রেসিডেন্সির অগ্রাধিকার অনেক বেশি। 

উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের কার্বন নির্গমন মোকাবিলা করতে এবং জলবায়ু হুমকির বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে সহায়তা প্রয়োজন। ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে পূরণ করা। এটি ছিল অনেক আগের লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু সংকটের প্রান্তে থাকা দেশগুলোর জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম। 

এবারের জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনার আহ্বায়ক হিসেবে আমরা একটি সুষ্ঠু ও মানসম্মত অর্থায়নের ওপর জোর দিয়েছি। এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। প্রতিটি দেশকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ভেটো প্রদানকারীদের সঙ্গে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই নিষ্পত্তি হবে না। কিছু দেশ একক অঙ্কের ট্রিলিয়নের জন্য তর্ক করে, কেউ বলে ডাবল ডিজিটের ট্রিলিয়ন এবং অন্যরা শত শত বিলিয়নের জন্য তর্ক করে। জনগণের অর্থ দিয়ে জলবায়ু কতটা মোকাবিলা করা যাবে, তা একটি বড় প্রশ্ন। জলবায়ু মোকাবিলায় বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেক দেশই আর্থিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। এমন একপর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, আজ দেরি করা মানেই আগামীকাল বড় বিলের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

 চরম মানবিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধ করতে বেশি দেরি না করে আগে নির্গমন হ্রাস অত্যন্ত জরুরি। হারিকেন ও খরার মতো জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো মোকাবিলায় দেশগুলোকে শক্তিশালী করে এমন কার্যকর ব্যবস্থাগুলোতে বিনিয়োগ না করলে পবর্তীতে ব্যাপক ক্ষতি হবে। জলবায়ু প্রভাবের কারণে প্রান্তিক দেশগুলোতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে, সেই দেশগুলোর পুনর্গঠনে তার চেয়ে বহুগুণ খরচ হবে। প্রতিকারের জন্য প্রতিরোধই শ্রেয়, কিন্তু 
আমাদের এই গ্রহ দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। 
এই গ্রহের পতন বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

শুধু এ ধরনের তহবিল প্রয়োজনীয় নয়, আরও বেশি দরকার। এ ধরনের তহবিল আগেও করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কোভিড-১৯-এর সময় বিশ্ব যখন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো মাত্র ৪৮ মাসের মধ্যে ৮ ট্রিলিয়ন তহবিলের ব্যবস্থা করেছিল। সেই সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। আমাদের অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও একইভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা 
করতে হবে। 

তবে এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারি তহবিলের ওপর পড়তে পারে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি অর্থায়ন চালু করা দীর্ঘদিনের দাবি। বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, জনগণ প্রতি ১ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ ডলার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ ডলার করে অর্থ জোগাড় করা যেতে পারে। কিন্তু জলবায়ু মোকাবিলায় তার বিপরীতটি ঘটে চলছে। ২০২২ সালে উন্নত দেশগুলো জলবায়ু সহায়তার জন্য ৯৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অথচ বেসরকারি খাত থেকে মাত্র ২১.৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। 

জলবায়ু মোকাবিলায় কত খরচ হতে পারে তার সঠিক ধারণা বা প্রমাণ এখনো নেই। শুধু অনুদান বা রেয়াতি অর্থায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিচ্ছন্ন শক্তির রূপান্তরে অর্থায়নের জন্য বিশ্বে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতি ও মোকাবিলার কথা বলা হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, বেসরকারি খাত ছাড়া জলবায়ু সুষ্ঠু কোনো সমাধান নেই। 

আন্তর্জাতিক শক্তি সংগঠনের মতে, বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশ বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ পায়। পার্থক্য শুধু বেসরকারি খাতে। উন্নত দেশগুলোতে সবুজানয়ন প্রকল্পের ৮০ শতাংশের বেশি অর্থায়ন করে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে তার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১৪ শতাংশ। বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন উন্নত দেশগুলো প্রায় ৬০ শতাংশ কার্বন নির্গমন করে। যদিও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো এখনো বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ৮০ শতাংশের বেশি দূষিত করে। জলবায়ু মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ব্যতীত দেশগুলোর শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে কার্বন নির্গমনের অনুপাত পরিবর্তিত হবে এবং আয়তনে আরও বৃদ্ধি পাবে।

পুনর্বীকরণযোগ্য মুনাফা উৎপন্ন করে এমন দেশগুলোতে ব্যক্তিগত অর্থায়ন প্রলুব্ধ করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো প্রায়ই মূলধনের খরচকে অসহনীয় করে তোলে। যদিও আফ্রিকা বিশ্বের স্বল্প-উন্নত মহাদেশ, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মহাদেশ ইউরোপের চেয়ে বেশি খরচ হয়। তাহলে কেন একজন বিনিয়োগকারী আফিকা মহাদেশের মতো অনুন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগ করবেন? বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে যথার্থ করে তোলার জন্য আমাদের তীক্ষ্ণ হাতিয়ার দরকার, যেমন- অর্থ প্রদান না করা, চুক্তি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গ্যারান্টি বা মুদ্রার অস্থিরতার মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি। 

এই উপায়ে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহী করতে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি জনসাধারণের অর্থকে লক্ষ্য করতে হবে। এটি শুধু উন্নয়নশীল বিশ্বের পরিবর্তনে অর্থায়নের জন্য নয়, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি ও ক্ষয়পূরণের জন্য জনগণের তহবিল খালি করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষতি পূরণে অর্থায়ন করি, সেই সঙ্গে জলবায়ু সংকটকে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থাপত্যের সংস্কার সম্পর্কে কপ২৯-এ মানসম্মত আলোচনা হতে বাধ্য। তবে নিশ্চিত যে, জলবায়ু মোকাবিলায় বিশ্বের আরও তহবিল প্রয়োজন এবং দ্রুতই তা প্রয়োজন। ইতিহাস বলে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা দরকারি তহবিল সংগ্রহ করি, এটা এখন অনেকটাই রাজনৈতিক ইচ্ছার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
লেখক: সভাপতি, জাতিসংঘের কপ২৯ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

২০২৫ সালে ইউক্রেনে কি শান্তি ফিরে আসবে?

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
২০২৫ সালে ইউক্রেনে কি শান্তি ফিরে আসবে?
ড. ডায়ানা গালিভা

২০২৪ সালজুড়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান ছিল। রাশিয়া ভেলিকা নোভোসিল্কা এবং ভুহলেদার অঞ্চলকে তার সুবিধাজনক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে রেখে দিয়েছে। দোনেৎস্ক ওব্লাস্টের সামনের লাইনটি আরও উত্তাল হয়ে উঠছে। কারণ, এখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি এমনভাবে করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বড় পরিসরে। ২০২৪-এর আরেকটি স্বতন্ত্র দিক ছিল গত আগস্টে কুরস্ক আক্রমণ। 

যেখানে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ায় আক্রমণ করেছিল। অন্যদিকে অক্টোবরের মধ্যে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের দখলকৃত প্রায় অর্ধেক অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। এই অঞ্চলটিই ছিল ২০২৪ সালের রণাঙ্গনের বড় ক্ষেত্র। আশা করা হচ্ছে, নতুন কূটনৈতিক কৌশল এবং গতিশীলতা দেখা দেবে আগামী বছর। ২০২৫ সালে কি ইউক্রেনে শান্তির দেখা মিলবে? 

ইউক্রেনে যত দ্রুত সম্ভব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে ভাবছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। নভেম্বরে জি-২০ নেতারা রিওডি জেনেরিও শীর্ষ সম্মেলনে তাদের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। সেখানে তারা ‘হুমকি বা শক্তি প্রয়োগের নিন্দা করে ব্যাপক, ন্যায়সংগত এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন করে সব প্রাসঙ্গিক এবং গঠনমূলক উদ্যোগ’ নিতে চেষ্টা করেন। ২০২৪ সালে নিজ নিজ মিত্র এবং অংশীদারদের মাধ্যমে উভয় পক্ষে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে। 

ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করছে। জার্মানিভিত্তিক কিয়েল ইনস্টিটিউটের মতে, ইউরোপ ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়া থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ১২৫ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র ৯০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যুক্তরাজ্য এই দুই বছরে ইউক্রেনের জন্য অন্যতম প্রধান সাহায্যদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। যুক্তরাজ্য আশ্বাস দিয়ে বলেছে, ‘যতদিন লাগে’ তারা ইউক্রেনকে প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেবে।
 
রাশিয়াও তার নিজ মিত্রদের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো উত্তর কোরিয়ার ভূমিকা। গত সপ্তাহে জি-৭ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় গ্রুপটি রাশিয়াকে ‘দায়িত্বহীন ও হুমকিমূলক পারমাণবিক বক্তব্য’ দেওয়ার জন্য নিন্দা করেছে। মস্কোর প্রতি উত্তর কোরিয়ার সমর্থনকে বিপজ্জনক বলে মনে করছে বিশ্ববাসী। এর আগেও উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া তাদের সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারি চুক্তিতে অনুমোদন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া কুরস্ক অঞ্চলে ১০ হাজার সৈন্য পাঠানো এবং মহাকাশে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার জন্য উত্তর কোরিয়াকে অভিযুক্ত করেছে। 
অন্যান্য দেশ, যেমন- ইউনাইটেড আরব আমিরাত তাদের নিরপেক্ষ রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রেখেছে। ইউনাইটেড আরব আমিরাত মধ্যস্থতা করে যাচ্ছে। এর ইতিবাচক দিক হলো সেপ্টেম্বরে দুই পক্ষ থেকে ১০৩ জন যুদ্ধবন্দির বিনিময়। 

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হলো- দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া ডিনিপ্রোর ওপর আক্রমণে ওরেশনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। মস্কো ব্যাখ্যা করেছে, রাশিয়ার ভূখণ্ডকে লক্ষ্যবস্তু করে কিয়েভ মার্কিন এবং যুক্তরাজ্যের তৈরি বা সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া ছিল এই আক্রমণ। মস্কো কখনোই তার পারমাণবিক সক্ষমতা দেখায়নি। তবে তারা ‘ভয়ংকর’ অস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে। যেহেতু উভয় পক্ষই  তাদের গতি, দূরত্ব এবং প্রভাব বিস্তারের জন্য সুবিধা খোঁজে, তাই আগামী দিনে ভারী এবং উন্নত অস্ত্রের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো শান্তিচুক্তির আশা কি দেখা দেবে? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি ‘শান্তি সূত্র’ প্রস্তাব করার চেষ্টা করেছিলেন। ইউক্রেনের সমগ্র অঞ্চল থেকে রাশিয়ার প্রত্যাহারের দাবিগুলো নিয়ে গত জুনে সুইজারল্যান্ড শীর্ষ সম্মেলনের সময় একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। যদিও প্রচেষ্টাগুলো সফল হয়নি। কারণ গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো আলোচনায় রাশিয়া বা ইসরায়েলের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। 

পূর্ববর্তী পরামর্শগুলোও সেই সম্মেলনে আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল। যেমন, গত মে মাসে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শান্তি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যখন চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ই ‘শান্তিই শক্তি’র মাধ্যমে দুই বছরের ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চেয়েছিলেন। 

এই ব্যর্থতার পর জেলেনস্কি অক্টোবরে আবার যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার ‘বিজয় পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবহারের অনুরোধ এবং অবিলম্বে ন্যাটোতে যোগদানের ‘নিঃশর্ত’ আমন্ত্রণ। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং ন্যাটোর নতুন মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে তার দেশের জন্য সশস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা জোরদার করতে ইউরোপ সফর শুরু করেন। নভেম্বরে জি-৭ বৈঠকে নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের ‘যতদিন সময় লাগে’ বলে সমর্থন পুনঃপ্রকাশ করেন। কারণ, জেলেনস্কি ‘কূটনৈতিক উপায়ে’ ২০২৫ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার আশা করেছিলেন। ক্রেমলিন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যে, জেলেনস্কির পরিকল্পনা ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। 

অনেক পর্যবেক্ষক জানুয়ারিতে ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তনের জন্য উদ্বিগ্নভাবে অপেক্ষা করছেন। কারণ তিনি ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বিশদ বা স্পষ্ট পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। গত মাসে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য উন্মুখ ছিলেন। কিন্তু তিনি আঞ্চলিক মূল বিষয়গুলো ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকার করেছিলেন। 

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ২০২৪ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের কোনো সমাধান হয়নি। এমনকি অস্ত্রশস্ত্র এবং নতুন দেশ এই যুদ্ধে সম্পৃক্ততার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। উভয় পক্ষের বক্তৃতার মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে, যেখানে ‘বিজয়’ ও  ‘শান্তি’র পরিবর্তে অন্য কোনো অর্থ বহন করছে। এমনকি ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কিছুটা দুর্বল করলেও ইউরোপীয় নেতাদের দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখার সম্ভাবনা বেশি। রাশিয়া সম্ভবত তার বর্তমান মিত্রদের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলবে, বিশেষ করে যতদূর সামরিক প্রতিরোধ বজায় রাখা যায়।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দ্রুত সমাধান হওয়াটা কঠিন। অন্তত যতক্ষণ না প্রধান অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। ২০২৫ হতে পারে শান্তি নির্মাণের বছর। এটি অর্জনের জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হবে। মনে হচ্ছে, কোনো ধরনের ব্রেকিং পয়েন্ট বা সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট কাটবে না। 

লেখক: একাডেমিক ভিজিটর, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় 
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল  

রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধ করা জরুরি

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধ করা জরুরি
সৈয়দ ফারুক হোসেন

আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ বেশি বাংলাদেশে। এ তালিকায় ১ নম্বরে বাংলাদেশ। এর পর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। এর পর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ। শীত এলে বায়ুদূষণ আরও বাড়ে। বাংলাদেশ ও রাজধানী শহর ঢাকায় বায়ুদূষণের সমস্যাটি নতুন নয়। শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে থাকে।

 সম্প্রতি গত শুক্রবার ছুটির দিনে রাত পৌনে ৯টায় বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, দ্বিতীয় ভারতের নয়াদিল্লি। সাধারণত একিউআই স্কোর ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলা হয়। স্কোর ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে থাকলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, স্কোর ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকলে ‘খারাপ’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ স্কোর হলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়। বছর বছর বায়ুর মানের অবনতি হচ্ছে। 

ঢাকার রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ি অথবা নির্মাণকাজ চলছে; সেখানে ধুলোবালি যথেচ্ছভাবে ছড়াচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, বহু পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস, লেগুনার মতো যানবাহন কালো ধোঁয়া ছেড়ে চলাচল করছে, বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে। মূলত ঢাকায় বায়ুদূষণের বড় উৎস নির্মাণকাজ। এর পর রয়েছে ইটভাটা ও কারখানা, আন্তর্দেশীয় দূষিত বায়ু এবং রান্নার চুলা। ঢাকার বাতাসে অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের সঙ্গে চারটি উপাদানের আশঙ্কাজনক উপস্থিতি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড ও ব্ল্যাক কার্বন।

 শীতের শুরু থেকেই ঢাকার বায়ুমান কখনো চরম অস্বাস্থ্যকর এবং কখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের বাইরে যাওয়া নিষেধ করা হয়। এ ছাড়া বায়ুদূষণ দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর নগরের জন্য আয়তন অনুযায়ী জনসংখ্যা সীমিত রাখা, গাছপালা ও জলাভূমি রক্ষা করা আর বায়ু-মাটিদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে ঢাকার অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এক যুগ ধরে ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হিসেবে ইটভাটাকে মনে করা হতো। কিন্তু এই জরিপ বলছে, ঢাকার বাতাসে দূষিত বস্তুর উৎস হিসেবে ইটভাটার স্থান দখল করেছে যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া। দূষিত বাতাসে কঠিন ও তরল পদার্থ উড়ে বেড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কাচ, ধোঁয়া বা ধুলা, যেগুলোকে ‘বস্তুকণা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এসব বস্তুকণার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলা হয় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ‘বস্তুকণা ২.৫’। যেটি মানুষের চুলের ব্যাসের মাত্র ৩ শতাংশ, যেটি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায়। 

এই দূষণ সবচেয়ে বেশি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে; যা মূলত গাড়ির ইঞ্জিন বা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপন্ন হয়। ঢাকার বাতাসে ভেসে বেড়ানো অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পাওয়া গেছে প্রতি ঘনমিটারে ৮৬ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০০৩ সালে ছিল ৭২ মাইক্রোগ্রাম। ডব্লিউএইচও বলছে, বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার সহনীয় মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম। ঢাকার বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৮ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০০৩ সালে ছিল ৫ মাইক্রোগ্রাম। ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী, বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের সহনীয় মাত্রা ৪০। অর্থাৎ সালফার ডাই-অক্সাইড সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম রয়েছে ঢাকার বাতাসে। কিন্তু এটা বাড়ছে। গত বছর যা ছিল মাত্র ৬ মাইক্রোগ্রাম। ঢাকায় বর্ষায় ডেঙ্গুর ভয়, শীতে বায়ুদূষণের ভয়, সারা বছর থাকে শব্দদূষণ- মানুষ এসব সমস্যায় এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। 

বায়ু দূষিত হলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। ঘরে ঘরে যেমন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষ বাড়ে, তেমনি হাসপাতালে বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড়। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মধ্যে হাঁপানি, ফুসফুসের কাশি ছাড়াও লাং ক্যানসার, স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যা হয়। এদিকে বায়ুমানের সূচক ২০০ অতিক্রম করলে একে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে ধরা হয়। বায়ুদূষণের কারণে সারা দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় ৫ বছর ৪ মাস।

 ঢাকায় কমেছে প্রায় ৭ বছর ৭ মাস। অর্থাৎ ঢাকায় বায়ুদূষণ না থাকলে আমরা আরও প্রায় ৭ বছর ৭ মাস বেশি বাঁচতে পারতাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ৬ মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় ২ বছর ৮ মাস, ২০১৯ সালে সেটি ৫ বছর ৪ মাসে দাঁড়িয়েছিল। গবেষণা বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ৩ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের সঙ্গে মানুষের গড় আয়ুর বিষয়টি জড়িত। 

গত কয়েক যুগে এই শহরের সবুজ এলাকা ও জলাভূমি হারিয়েছে, আর বাতাস-মাটি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। গত এক বছরে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বসবাসযোগ্যতা নিয়ে যে কয়টি জরিপ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল তলানিতে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার ভারতের রাজধানী দিল্লিবাসী। বায়ুদূষণ লাইফ ইনডেক্সের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে ২ দশমিক ২ বছর। স্থায়ীভাবে দূষণ বন্ধ করা গেলে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৭২ থেকে ৭৪ বছর হতো, যা সার্বিক হিসাবে ১৭ বিলিয়ন জীবন-বর্ষ। রাজধানী ঢাকায় গত ১০ বছরে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু ২ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত কমছে। এর ফলে নানা ধরনের কঠিন অসুখের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করাই বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় শিকার।

 পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীর বায়ু ২০১৪ সালে ১৬৫ দিন বিপজ্জনক ছিল। ২০১৫ সালে দূষণের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৮ দিন। পর্যায়ক্রমে ২০১৬ সালে ১৯২ দিন, ২০১৭ সালে ২১২ দিন, ২০১৮ সালে ২৩৬ দিন, ২০১৯ সালে ২৮৩ দিন ঢাকার বায়ু দূষিত ছিল, যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বায়ুদূষণের তালিকায় প্রথম হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। মৃত জীবদেহের পচনের ফলে অনেক ধরনের দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস যেমন মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে বায়ুর দূষণ ঘটায়। মহাকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে আগত উল্কাপিণ্ড, মহাজাগতিক ধূলিকণা প্রভৃতি বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে বায়ুর দূষণ ঘটায়।

মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ফলে প্রতিনিয়ত অবাঞ্ছিত বস্তু বাতাসে মিশ্রিত হচ্ছে, এগুলোকেই মনুষ্যসৃষ্ট কারণ বলে। শিল্পাঞ্চলের কারখানা থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, ধাতব কণা, ধোঁয়া প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বাতাসকে দূষিত করে। বিভিন্ন যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির (পেট্রোল ও ডিজেল) দহনের ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বায়ুদূষক কার্বন মনো-অক্সাইডের প্রায় ৭০ শতাংশ এই যানবাহন থেকে নির্গত হয়। এ ছাড়া যানবাহনের ধোঁয়ায় প্রচুর নাইট্রোজেনের অক্সাইড থাকে, যা বায়ুকে দূষিত করে তোলে।

 যানবাহনের আধিক্যের জন্য শহরাঞ্চলের বাতাস বেশি দূষিত হয়। বায়ুমণ্ডলকে দূষণমুক্ত রাখতে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা প্রয়োজন। গাছ অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, তাই প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করলে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি দহনে বাতাস বেশি দূষিত হয়। তাই এগুলোর পরিবর্তে দূষণমুক্ত সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি প্রভৃতি ব্যবহার করা প্রয়োজন। সালফারবিহীন কয়লা ও সিসাবিহীন পেট্রোল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের সাহায্যে যানবাহন চালানোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ করে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বায়ুদূষণের উৎস বা কারণ এবং কুফল সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বোধ জাগিয়ে তুললে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। দুই কারণে ঢাকার বায়ু বেশি দূষিত হচ্ছে। প্রথমটি বাতাসের দূষিত উপাদান বাতাসেই রয়ে যাচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে শহরে বড় প্রকল্পের কাজ, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ, যানবাহনের ধোঁয়ায় ঢাকার বায়ুর চাপ বেশি। এই দূষিত অংশ বায়ুর নিম্নস্তরে ২০০৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করছে। বর্তমানে বায়ুদূষণে ধুলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাড়ি ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া। বর্তমানে বাতাসে ধুলা আগের চেয়ে পরিমাণে বেড়েছে। আগে এত মেগা প্রজেক্ট (বৃহৎ প্রকল্প) ও গাড়ি ছিল না। 

পাশাপাশি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাশয় ভরাট হওয়ায় ধুলার নতুন উৎস জন্মেছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ধুলা এমনিতে বেশি। এরপর কয়েক বছর ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে নতুন নতুন নির্মাণযজ্ঞ বাড়িয়েছে ধুলাদূষণ। মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প, পূর্বাচল সিটি ও বছিলার মতো কিছু অঞ্চল এবং অজস্র ছোট আবাসন প্রকল্প এর মধ্যে রয়েছে। যোগ হয়েছে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধের মতো খানাখন্দে ভরা কিছু রাস্তা। এসব স্থান ছাড়াও রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ আরও কিছু এলাকায় ধুলার আধিক্য দেখা যায়। ঢাকা শহর ক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ স্থাপনা ধারণ করে আছে। এরপরও শিল্পায়ন, কংক্রিটের ভবন, আবাসন প্রকল্প হচ্ছে। 

বাফার এলাকাগুলো মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করে নির্মাণযজ্ঞ চলছে। ফলে দূষণ রোধের এলাকাগুলো উল্টো দূষণ বাড়াচ্ছে। শুধু পানি ছিটিয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় ধুলা বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এই অবস্থার মধ্যেও গত বছর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বায়ুদূষণ রোধে নির্দেশিকার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। নির্দেশিকায় রাস্তা নির্মাণের সময় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, বিটুমিনের ওপর বালু না ছিটিয়ে মিনি অ্যাসফল্ট প্যান্টের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, রাস্তার পাশের মাটি কংক্রিট বা ঘাসে ঢেকে দেওয়া, রাস্তা পরিষ্কারের ঝাড়ুর পরিবর্তে ভ্যাকুয়াম সুইপিং ট্রাক ব্যবহার, বড় সড়কে কমপক্ষে দুবার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া কোনোটি কার্যকর করার উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

লেখক: সাবেক রেজিস্ট্রার, বিএসএফএমএসটিইউ
[email protected]

জাতীয় ঐক্য সব সময় ভালো উদ্যোগ: ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
জাতীয় ঐক্য সব সময় ভালো উদ্যোগ: ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

জাতীয় ঐক্য সব সময় ভালো, দেখা যাক এটার ফলাফল কী দাঁড়ায়। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। মূলত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে, প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে খুব একটা বড় রকমের মতবিরোধ হয় নাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই গভীর। আমরা অনেক কিছুই আমদানি করি। রপ্তানির দিক থেকে যদিও কম। দুটিই প্রতিবেশী দেশ। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে সম্পর্কটা ঠিক রাখার; সম্পর্ক যাতে অবনতি না হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

সংকটে সবাইকে একত্রিত করা ভালো অগ্রগতি: ড. দিলারা চৌধুরী

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
সংকটে সবাইকে একত্রিত করা ভালো অগ্রগতি: ড. দিলারা চৌধুরী
ড. দিলারা চৌধুরী

আমি মনে করি, এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। একটা ভূমিকা প্রধান উপদেষ্টা নিয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে বসেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছেন। এই সংকটে সবাইকে একত্রিত করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভালো অগ্রগতি।

ভারতের বিষয়ে আমাদের এখন কথা বলতে হবে। আমরা আমাদের নাগরিককে গ্রেপ্তার করতে পারব না? চিন্ময় তো বাংলাদেশের নাগরিক। তার জন্য এ রকম করবে? তাহলে আমাদের স্বাধীনতা আছে নাকি। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ঐকমত্যে সবাইকে নিয়ে আসছেন, আমি খুবই খুশি। জনগণও খুশি হবে। আমাদের দেশের ওপর হুমকি এসেছে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ড. ইউনূসকে সমর্থন দেব। এর বাইরে যে কথা বলবে সে দেশদ্রোহী।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাবেক অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

লেবাননের যুদ্ধবিরতি এবং বিশ্ব পরিস্থিতি

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
লেবাননের যুদ্ধবিরতি এবং বিশ্ব পরিস্থিতি
হর্ষ কাকর

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দীর্ঘ আলোচনার পর ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর এই যুদ্ধবিরতি হয়। এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যাদের বেশির ভাগই নির্দোষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‌এই চুক্তিটি লেবাননে যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং লেবানন থেকে পরিচালিত হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকি থেকে ইসরায়েলকে নিরাপদ করবে।’ তারা আরও বলেন, ‘‌এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তি পুনরুদ্ধারের পরিস্থিতি তৈরি করবে। উভয় দেশের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দিন।’ 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা চুক্তি কার্যকর করব এবং যেকোনো লঙ্ঘনের জন্য আমরা জবাব দেব।’ চুক্তি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ৬০ দিনের জন্য হবে। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাতের একটি অংশের অবসান হওয়ায় বিশ্ব এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। লেবাননে সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন লেবানিজ এবং ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। লেবাননের মতে, তাদের প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যেখানে ইসরায়েলের ৭৫ জন সৈন্য ও ৪৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। ইউনাইটেড নেশন সিকিউরিটি কাউন্সিল রেজল্যুশন-১৭০১ চুক্তি অনুসারে ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ বিরোধের অবসান ঘটেছিল। ২০০৬-এর মতো, শুধু লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা লেবাননের লিতানি নদীর দক্ষিণে কাজ করবে। তার মানে হচ্ছে, হিজবুল্লাহ বাহিনী সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পিছু হটবে যখন ইসরায়েলি বাহিনী লেবানন ছেড়ে দেবে।

২০০৬ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি উভয় পক্ষই লঙ্ঘন করেছে। হিজবুল্লাহ ভূগর্ভস্থ কাঠামো নির্মাণ করছে এবং ইসরায়েলি বিমান নিয়মিতভাবে লেবাননের ওপর দিয়ে উড়ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বহাল ছিল। এটি উল্লেখ করা উচিত যে, উভয় যুদ্ধবিরতি (২০০৬ এবং বর্তমান) ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে, লেবাননের মধ্যে নয়। বিশ্ব হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনোনীত করা সত্ত্বেও তাদের বৈশ্বিক অস্তিত্ব রয়েছে বলে স্বীকার করেছে। বর্তমান যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের জন্য জয়জয়কার বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। 

জো বাইডেনের এটা বিশেষ অর্জন, যদিও তার প্রেসিডেন্সির শেষ পর্যায়ে এসে এটি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে যদি এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হতো, তাহলে কমলা হ্যারিসের উপকার হতে পারত। যুক্তরাষ্ট্রকে তার সীমা প্রসারিত করতে হচ্ছে। ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের যেকোনো অপারেশনের জন্য নিজস্ব মজুতও বজায় রাখা হচ্ছে। নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার তিনটি কারণ ঘোষণা করেছেন।

প্রথমত, ইসরায়েলকে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইরানের দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিরতি একটি ‘নিশ্বাস’ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে, কারণ ইসরায়েলি বাহিনী তাদের মজুত পুনরায় পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছে। অবশেষে হামাস ও হিজবুল্লাহর অপারেশন আলাদা হয়ে যায়। আরও একাধিক কারণ রয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী কিছুটা ক্লান্ত। সিএনএন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অতি ধার্মিকদের বিরুদ্ধে ১১২৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। 

ইসরায়েল সুপ্রিম কোর্ট স্থির করেছিলেন যে, গোঁড়া ধার্মিক ইহুদিদের সামরিক চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র অতি-অর্থোডক্স ইহুদিদের আদেশের খসড়া তৈরির বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এমনভাবেই উল্লেখ করেছেন। ‘আইডিএফে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) অনেক সৈন্যের প্রয়োজন। আমাদের ১০ হাজারের মতো সৈন্য রয়েছে কিন্তু এটি স্থিতিশীল পরিসংখ্যান নয়। কারণ দুর্ভাগ্যবশত আমাদের হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি।’ হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হলে সৈন্য নিয়োগের চাহিদা কমে যাবে। অন্যদিকে ইসরায়েল সরকারের মধ্যে সংঘাতের আচরণ ও নেতানিয়াহুর কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। 

ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে কখনোই পরাজিত করতে পারেনি। ২০০৬ সালে যুদ্ধবিরতির আগে উভয় পক্ষই হতাহত হয়েছিল। তখন তারা সেই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছিল। কারণ তারা পরে সংগ্রাম করার সুযোগ খুঁজেছিল। ইসরায়েল শিক্ষা নিয়েছিল এবং এই অভিযানে তারা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল। হিজবুল্লাহও পরিবর্তন এনেছিল এবং ধারাবাহিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও আরেকটি যুদ্ধবিরতি জোরদার করতে সক্ষম হয়েছিল। এবারের যুদ্ধে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলার মাধ্যমে হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতাদের নির্মূল করেছে। পেজার বোমার আঘাতে মাধ্যম স্তরের নেতাদের মেরে ফেলেছে। তা ছাড়া বিমানবাহিনী হিজবুল্লাহর রকেট স্টোরেজ ডিপো এবং উৎপাদন কেন্দ্রে বোমা হামলা করে। 

যা-ই হোক, এগুলো রকেট উৎক্ষেপণ বন্ধ করতে তেমন কিছু করেনি। হিজবুল্লাহও ২০০৬ সাল থেকে অনেক কিছুই শিখেছিল। যুদ্ধবিরতির কয়েক দিন আগে হিজবুল্লাহ ২৫০টিরও বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছিল। লেবাননে অনুপ্রবেশ করা ইসরায়েলি বাহিনী ২০০৬ সালে বা এখন পর্যন্ত খুব বেশি সফল হতে পারেনি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ সব সময় ফিরে এসেছে। ইসরায়েলের জন্য বিশেষ কঠিন হবে। কারণ তারা গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলায় লেবাননের বেসামরিক লোকের হতাহতের ঘটনায় শুধু হিজবুল্লাহ লাভবান হয়েছে। কারণ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নির্দোষ মানুষের মৃত্যুর মাধ্যমে সমর্থন লাভ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এটি ইসরায়েলের বৈশ্বিক অবস্থানকে শক্ত করে যাচ্ছে। ইসরায়েল এখন সিরিয়ার পাশাপাশি ইয়েমেনেও হামাস, ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীর দিকে মনোনিবেশ করতে পারে।

ইসরায়েল সচেতন রয়েছে যে, এই যুদ্ধবিরতি হিজবুল্লাহকে তার কাঠামো ও সামরিক শক্তি পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম করবে। ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার যুদ্ধ শুরু হবে। অবিলম্বে সেই যুদ্ধ না-ও হতে পারে, তবে ঘটবে। এটা সময়ের ব্যাপার কিন্তু উভয় দেশের নাগরিকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক ইরানের ভবিষ্যতের জন্য তাদের অন্তত প্রক্সি সুরক্ষিত থাকা অপরিহার্য। হিজবুল্লাহকে বাঁচাতে গিয়ে হামাসকে আত্মত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ইরানের জন্য হামাস, হুতি এবং হিজবুল্লাহ শপথকারী এক মিত্র এবং তাদের একমাত্র শত্রু ইসরায়েল। তাদের সবাই একসঙ্গে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। 

এই যুদ্ধবিরতি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ কারণেই হিজবুল্লাহ প্রধান নাইম কাসিমকে যুদ্ধবিরতির অনুমোদন দিয়েছে। হিজবুল্লাহকেও পুনরুদ্ধার করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের শত্রুতা অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতির অন্যতম কারণ এটি দুই পক্ষের সক্ষমতা, জনশক্তি, কাঠামো এবং অস্ত্রশস্ত্রের মজুত পুনর্নির্মাণ করে। যদিও এতে অনেক হতাহত হয়েছে। তবে তারা সচেতন যে, তারা যুদ্ধে হারেনি। তারা যুদ্ধ এবং পরবর্তী পর্যায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ উভয়ই জানে এটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি নয়। এটা কতদিন চলবে তা কেউ জানে না। বর্তমানে উভয় পক্ষের বাহিনী এবং জনগণও যুদ্ধে ক্লান্ত। এই ক্লান্তিই উভয় পক্ষকে অন্তত অল্প সময়ের জন্য শান্তিতে থাকতে বাধ্য করতে পারে। 

লেখক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর 
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল
দ্য স্টেটসম্যান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল