ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে
মনজিল মোরসেদ

‘আয়নাঘর’ বা গোপন বন্দিশালায় বেআইনিভাবে মানুষকে আটকে রাখার মতো জঘন্য অপরাধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থা একক সিদ্ধান্তে ঘটায়নি। এর পেছনে রাজনৈতিক মদদ বা ক্ষমতাসীনদের নির্দেশনা ছিল। তাই ভবিষ্যতে যাতে নতুন করে আয়নাঘরের মতো আর কিছু সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন।

গুমসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ‘আয়নাঘরে’ আটকে রেখে বহু মানুষকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি আটক হয়েছেন, অথচ তার পরিবার-স্বজন বা কেউই কোনো সন্ধান পাবে না- এটা ভাবাও যায় না। আইনগত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার একশ্রেণির অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এসব কাজ করেছেন। 

আমি মনে করি, ক্ষমতাসীনদের কথার বাইরে এসব ঘটনা ঘটেনি। অনেক আগেও এগুলো ছিল। কিন্তু এখন যেভাবে বিষয়গুলো প্রকাশিত হচ্ছে, প্রতিবাদ হচ্ছে, সেটা আগে হয়নি। যেগুলো ঘটেছে, সেগুলোর অবশ্যই যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এগুলো যেহেতু সামনে এসেছে, তাই বিচারও হবে। 

কেবল মতের বিরোধ বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই কাউকে তুলে নিয়ে গুম করা কিংবা গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার সংস্কৃতি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনাও করা যায় না। তাই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যারা ক্ষমতায় থাকবেন, তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী

বিভাজনের রাজনীতি এবং জাতীয় ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১২ পিএম
বিভাজনের রাজনীতি এবং জাতীয় ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা
মাসুদ আহমেদ

রাজনীতির গতিপ্রবাহ বাঁক পরিবর্তনের সময় সমাজে নতুন নতুন কিছু ধারণা ও বিশ্বাসের উদ্ভব ঘটে। আমাদের সমাজ অনুন্নত বলে বস্তুত মৌলিকভাবে নতুন দেশজ কোনো ধারণা এখানে স্থান পায় না। যা স্থান পেয়ে আলোচিত হয়, তার সবই পাশ্চাত্য থেকে আগত। ১৯৭২ সালে স্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই এমনিভাবে সমাজতন্ত্র, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, সর্বহারাবাদ, বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্র ইত্যাদি রাজনৈতিক তত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। সমাজের মূলধারার ভিন্নধর্মী চাপের কারণে নয়, ওই নতুন তত্ত্বগুলোর নিজস্ব দুর্বলতা এবং জনবিচ্ছিন্নতার কারণে ওগুলো জনমানুষের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতেই সক্ষম হয়নি। স্বাধীন দেশের প্রথম নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৭৩-এর নির্বাচনে এসব নবীন মতাবলম্বীর কোনো জনস্বীকৃতি ঘটেনি। 

সাধারণ গণতন্ত্রীরাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মতোই বিপুলভাবে জয়লাভ করে। আবার ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে আইনসংগত পথেই অর্থাৎ ভোটাভুটির মাধ্যমেই সংসদে বাংলাদেশের কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের নামকরণে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক লীগ বা বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইন দেশের অন্য সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এই ব্যবস্থা অর্থাৎ একদলীয় ব্যবস্থা তার অস্তিত্ব ও শিকড় দুই-ই হারায়। ১৯৭৭-এর পর সেই পুরোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসে। তার পর কালের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় দুটি নতুন রাজনৈতিক তত্ত্ব এই দেশে শোনা যেতে থাকে। তত্ত্বের একটি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা। এই তত্ত্বের আলোচনা প্রবল জনবিক্ষোভে বিতাড়িত গত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। 

অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে তারা বোঝাতেন সমাজের সব শ্রেণির মত ও পেশার মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আইনসংগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের পর অধিষ্ঠিত সরকার এবং এর পেছনের মাস্টারমাইন্ড তথা সমন্বয়করা অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বের পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য নামের আরেক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার কথা জোর দিয়ে বলছেন। যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বের বিশ্লেষণে যাই তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী একদিকে উঁচু শ্রেণির শিক্ষিত আমলা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও অন্যান্য বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক ইত্যাদি শ্রেণি বিভাজনে অস্তিত্বমান। অন্যদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিপুলসংখ্যক কৃষক, গার্মেন্ট ও বিভিন্ন শিল্পশ্রমিক, সড়ক ও নৌযানশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, স্বল্পবেতনভুক স্কুলশিক্ষক, গৃহকর্মী রয়েছেন। এই নিম্নোক্ত শ্রেণির জনগোষ্ঠীর হার সামগ্রিক শ্রেণিগুলোর শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ। 

অন্তর্ভুক্তির আইনি ভিত্তি হচ্ছে সংসদে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনের শ্রেণিচরিত্র যদি দেখা যায়, তাতে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত বাঙালি সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবাই ছিলেন শিক্ষিত রাজনীতিবিদ, উঁচু শ্রেণির ব্যবসায়ী, সাবেক শীর্ষ আমলা এবং অল্প কিছু বুদ্ধিজীবী। তাদের মধ্যে উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কৃষক বা শিল্প ও পরিবহনশ্রমিকের একজনও ছিলেন না। এই শ্রেণির কোনো মানুষ কোনো দল থেকে নির্বাচনের মনোনয়নও লাভ করেননি। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে সেই একই চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের ধারায় বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প এবং যানবাহন ও নির্মাণশিল্পে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এই পেশাগুলোতে কর্মরত মানুষের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অন্তর্ভুক্তির স্লোগান সত্ত্বেও এই পেশাগত শ্রেণি থেকে কোনো প্রতিনিধি সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি। 

আবার বর্তমানে জাতীয় ঐকমত্য শিরোনামে যে আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনীয়তার কথা সমন্বয়ক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিপ্লবী সরকার-সংশ্লিষ্টরা জোর দিয়ে বলছেন, সেখানেও একটি প্রধান বিষয় বিবেচ্য বলে মনে করি। সেটি পরিবর্তন না হলে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা অধরা বলে প্রতীয়মান। তা হলো এই যে, দেশে বিতাড়িত আওয়ামী লীগসহ ৫৯টি রাজনৈতিক দল আছে। যদি কেবল বামপন্থিদের কথা ধরি, সেখানে দেখা যায় কোনোটি বামপন্থি আর কোনোটি প্রকৃত বামপন্থি। সর্বহারাদের মধ্যেও দেখা যায় তিনটি উপদল নাম নিয়ে অস্তিত্বমান, সকর্মক না হলেও। সিরাজ সিকদারের গবেষণা পরিষদ নামেও একটি সংস্থা আছে। লে. কর্নেল আবু তাহেরের ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন অপর একটি বাম দলের শীর্ষে আছেন। ওয়ার্কার্স মানে যারা কাজ করেন। সেখানে দেখা যাবে এর একটি হচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আরেকটি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

 এই দুটির পার্থক্য তিন দশকেও বোঝা যায়নি। তেমনি কমরেড ফরহাদ, বাসদ, জিকু গ্রুপ, ইনু গ্রুপ, মার্কসের অনুসারী, লেনিনের অনুসারী, কমরেড মাওসেতুং-এর অনুসারী ইত্যাদি শ্রেণিতে সমাজতান্ত্রিক এবং সাম্যবাদীরা বিভাজিত। আর এর বাইরে একেবারে নবীন আমার বাংলাদেশ পার্টি, আমজনতার পার্টি এবং নিত্য উদীয়মান অন্যান্য দলের অস্তিত্ব সমাজকে স্বীকার করতে হচ্ছে। যেখানে পুরোনো জাতীয়তাবাদীদের দল বিএনপি প্রবলভাবে উপস্থিত। তার পাশে আবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও তার কর্মচাঞ্চল্য প্রকাশ করে থাকে।

 আরেকদিকে আরেক গুচ্ছে দেশের জনগণের ৯০ ভাগ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে কেবল জামায়াতে ইসলামী যথেষ্ট নয়। তরীকত, হেফাজত, জাকের পার্টি এবং ইসলামের নামে আরও অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব দাবি করছে। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়, এসব দলের অনেক নেতা বক্তব্য রাখছেন দলের একাংশ/প্রকৃত অংশ/ রিট আবেদন করে অফিসের দখল পাওয়া অংশ হিসেবে।  সেই সঙ্গে আছে বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কার (আলাল ও দুলাল গ্রুপ, ফোরকান ও শাহেরজাদী গ্রুপ ইত্যাদি)। গণতান্ত্রিক যুক্তির স্বার্থে কেউ বলতেই পারেন যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিতকল্পে মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্মে সমবেত হতেই পারেন। 

কিন্তু কথা হলো, তাহলে জাতীয় ঐকমত্য কীভাবে, কার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হবে? আর যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের শিক্ষা এবং সম্পদের মালিকানার বিপুল বিভাজনের দ্বারাই মৌলিকভাবে বিভক্ত, সেখানে রাজনীতির ক্ষেত্রে ঐকমত্য এক অবাস্তব কল্পনা ছাড়া আর কী হতে পারে? যে দল নির্বাচনে জয় লাভ করবে তারা জাতীয় ঐকমত্যের জন্য আর কোনো কাজ করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাবেন কি? অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থায় নারী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিপুলসংখ্যক কৃষক ও শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? বাস্তব ক্ষেত্রে এর কোনো সামাজিক ও আইনি সমর্থনের ভিত্তি তৈরি না করে এই দুটি ধারণা নিয়ে কেবল কথামালার রাজনীতি করার উদ্দেশ্য জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল যে শ্রেণিবিভক্ত মানুষকে দীর্ঘদিন শাসন করে এসেছে, সামরিক শাসকরাও সেই একই কাজ একই পদ্ধতিতে করেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু অংশ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে সমর্থন করে বলে প্রমাণ রয়েছে। 

তবে তা জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করার মতো শক্তি এই ৫৩ বছরে অর্জন করতে পারেনি। সমাজ একজন কাস্তে হাতে কৃষক, গাড়িচালক, গার্মেন্টশ্রমিক কিংবা একজন গৃহকর্মীকে সংসদের আসনে বসতে দেওয়ার ঔদার্য এবং যুক্তি গ্রহণ করার মতো অবস্থায় এসেছে কি না? এমনকি তারা সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে একই আসনে বসার ও একই আনুষ্ঠানিক পোশাক পরার স্তরেও আসেননি। 

তাহলে বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? আমরা কি কখনোই রাজনীতিতে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারব না!

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রজাতন্ত্রের সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল

প্রতিটি প্রজাতির গাছকেই রক্ষা করা দরকার

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম
প্রতিটি প্রজাতির গাছকেই রক্ষা করা দরকার
মৃত্যুঞ্জয় রায়

গাছ আছে বলেই আমরা এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি। আমাদের আগে এ পৃথিবীতে উদ্ভিদ এসেছে। উদ্ভিদ আসার পর এ পৃথিবী সবুজ গ্রহ হয়ে উঠেছে। জীবন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতিই গুরুত্বপূর্ণ। এ পৃথিবীতে প্রতিটি জীবই একে অপরের সঙ্গে এক অদৃশ্য মধুর বন্ধনে আবদ্ধ। একজন অন্যজনকে ছাড়া চলতে, এমনকি বাঁচতেও পারে না। কোনো একটি গাছের বিলুপ্তি মানে সে গাছের ওপর আত্মনির্ভরশীল আরও অন্তত ৩০ প্রজাতি জীবের বিলুপ্ত হওয়া। অথচ প্রকৃতির এই অদৃশ্য সুতার বাঁধনকে আমরা প্রায় কেউই হয় বুঝি না অথবা বুঝেও অবহেলা করি। যার পরিণাম দিনশেষে আমাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে। 

পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই মহাজালের কেন্দ্রস্থলে আছে উদ্ভিদ। কেননা উদ্ভিদ প্রতিটি জীবকে অক্সিজেন দান করে বাঁচিয়ে রেখেছে, ফল ও বীজ খাইয়ে পুষ্ট করছে। প্রতিটি জীবের খাদ্য গ্রহণ অনেকটাই উদ্ভিদের প্রজাতি সুনির্দিষ্ট। অর্থাৎ এক এক প্রজাতির জীব এক এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে আহার ও আশ্রয় পায়। আবার একাধিক প্রজাতির ক্ষেত্রে একটি উদ্ভিদ প্রজাতিরও নির্ভরশীলতা রয়েছে। যেমন- ধানগাছের বীজ আমরা খাই আবার পাখিরাও খায়, ইঁদুর খায়। আবার কোনো কোনো পাখিকে মানুষ খায়, ইঁদুরকে খায় পেঁচা। এভাবে প্রকৃতির খাদ্যচক্র এক সুশৃঙ্খল নিয়মে চলছে সুপ্রাচীনকাল থেকে। হঠাৎ সে শিকলের কোথাও ছিঁড়ে গেলে প্রকৃতিরই তাতে বিপর্যয় ঘটে।  

পৃথিবীতে আনুমানিক ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন প্রজাতির জীব রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা মাত্র ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মানে ১২ লাখ প্রজাতির জীবকে শনাক্ত করতে পেরেছি, যার মধ্যে সাড়ে ৯ লাখ প্রজাতিই প্রাণী। পৃথিবীর এখনো ৮৬ শতাংশ জীব শনাক্ত করা হয়নি। তেমনি সাগরেও আছে অনেক প্রজাতির জীব; যার ৯১ শতাংশ এখনো অশনাক্তিত। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা গণনা যেন অনেকটা সাগরের বেলাভূমিতে বসে বালুকণা গোনার মতোই ব্যাপার। বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, যার মধ্যে ২ লাখ ৮৩ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ হলো সেসব প্রজাতির উদ্ভিদ যেগুলোতে ফুল ফোটে ও বীজ হয়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২ হাজার প্রজাতির নতুন উদ্ভিদ আবিষ্কৃত ও শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক উদ্ভিদ বিদেশ থেকে এসেছে এবং এ দেশে থাকা বেশ কিছু উদ্ভিদকে নতুন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে থাকা গাছপালার প্রথম প্রণালিবদ্ধ রেকর্ড পাওয়া যায় এ অঞ্চলে ইবনে বতুতার (৯৮০-১০৩৭) ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে। পরবর্তী সময়ে সম্রাট আকবরের মুখ্য সচিব ও সভাসদ আবুল ফজল (১৫৫১-১৬০২) ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে ভারতবর্ষের অনেক উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করে গেছেন। এরপর সতেরো ও আঠারো শতকে অনেক ইউরোপীয় উদ্ভিদবিদ এ দেশের গাছপালা অনুসন্ধান কাজে লিপ্ত হয়ে ব্যাপক কাজ করেন। ফলে আমরা এ দেশের উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর একটি সমৃদ্ধ বিবরণ পাই। বর্তমানে বাংলাদেশে উদ্ভিদসম্পর্কিত সবচেয়ে সমৃদ্ধ বইটি হলো এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’। সে বইয়ে মোট ৩ হাজার ৮১৩টি উদ্ভিদ প্রজাতির বর্ণনা রয়েছে। বাস্তবে এ দেশে প্রায় ৬ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। প্রতিবছর যে হারে বিদেশি গাছপালা এ দেশে আসছে তাতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। এ দেশের উদ্ভিদবিদরা ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমীরা এ দেশের উদ্ভিদ প্রজাতির অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এ দেশের উদ্ভিদ প্রজাতিগুলো সাধারণের কাছে পরিচিত করানো ও রেকর্ডভুক্ত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদপত্রও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 
সম্প্রতি বাংলাদেশের ১ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ প্রজাতির বর্তমান অবস্থা জানার জন্য আইইউসিএন এক গবেষণা চালিয়েছে। মূল্যায়নের পর ২০২৪ সালে প্রকাশ করেছে বিশাল দুই খণ্ড ‘বাংলাদেশের উদ্ভিদ লাল তালিকা’ বই। দীর্ঘদিনের শ্রমসাধ্য কাজটি করার ফলে আমরা এখন জানতে পেরেছি আমাদের উদ্ভিদ জগতের বর্তমান অবস্থা। এ গবেষণায় দেখা গেছে যে, এ দেশের ৩৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ সম্মিলিতভাবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা মূল্যায়িত উদ্ভিদের প্রায় ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। 

এ ছাড়া আরও ৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে প্রায় বিপদগ্রস্ত অবস্থায়। যে ৩৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ হুমকিতে রয়েছে তার মধ্যে ২৬৩ প্রজাতি রয়েছে সংকটাপন্ন, ১২৭টি প্রজাতি বিপন্ন ও ৫টি প্রজাতি রয়েছে মহাবিপন্ন অবস্থায়। অন্যদিকে এ দেশের উদ্ভিদজগৎ থেকে ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। বনাঞ্চলে বিলুপ্ত হলো তালিপাম গাছ। সারা পৃথিবীর মধ্যে এ গাছ শুধু বাংলাদেশের বনেই ছিল, ছিল ঢাকা শহরেও। সুখের কথা হলো, এ দেশের উদ্ভিদপ্রেমীরা ঢাকা শহরের সে গাছটি মরে যাওয়ার আগে তার ফল থেকে চারা তৈরি করে সেসব চারা ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছেন। 

এতে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে তালিপাম। এভাবে আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হলেও সেসব উদ্ভিদ অন্য দেশে নিশ্চয়ই আছে। সেখান থেকে তা সংগ্রহ করে এ দেশে আবার সেসব প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যায়। যে পাঁচটি প্রজাতির উদ্ভিদ মহাবিপন্ন অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোও যেন বিলুপ্ত হয়ে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন- এ দেশে মহাবিপন্ন বাঁশপাতা গাছের মাত্র ১১১টি গাছ টিকে আছে। এর মধ্যে বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে আছে মাত্র ১২টি গাছ, বাকি ৯৯টি বিভিন্ন উদ্যানে লাগানো। বলধা গার্ডেন ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও এ গাছ আছে। এভাবে মহাবিপন্ন গাছগুলোকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ও লালিত অবস্থায় রক্ষা করতে হবে। 

বাংলাদেশে উদ্ভিদ সম্পদের সবচেয়ে বড় স্থান হলো মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। সেখানে জানা মতে, ১০৪১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। সেখানে কেন বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত প্রায় সব উদ্ভিদই থাকতে পারে না? একই প্রজাতির শত উদ্ভিদ থাকার চেয়ে হাজার প্রজাতির হাজার উদ্ভিদ থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। স্থান সংকুলান না হলে এ দেশের যে ৫৩টি রক্ষিত বন ও ১৮টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে, সেখানে সংকটাপন্ন ও বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছোট ছোট উদ্ভিদ উদ্যান করে সেখানে এসব বিপন্ন উদ্ভিদ লাগানোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

 বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্ভিদ উদ্যান এ ক্ষেত্রে অন্যতম উদাহরণ। পৃথিবীর অনেক দেশেই একাধিক বড় বড় উদ্ভিদ উদ্যান আছে, আমাদের দেশে কেন থাকতে পারে না? বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উদ্ভিদপ্রজাতির বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকা হলো চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট। উদ্ভিদ প্রজাতির অনুসন্ধান ও তথ্য লিপিবদ্ধকরণ হালনাগাদ করতে এসব অঞ্চলে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে হবে।

উদ্ভিদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস থেমে নেই। দিন দিন এ দেশে মানুষ বাড়ছে, বনভূমি চলে যাচ্ছে কৃষিজমিতে, ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে। প্রাকৃতিক সব সম্পদের ওপরই এতে চাপ বাড়ছে। এর ওপর আছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত। এসব নানা কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের ৮ থেকে ১০ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ঝুঁকি নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি উদ্ভিদ প্রজাতিও যেন আর এ দেশ থেকে হারিয়ে না যায়।

লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক

ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব জনগণের ওপরেই বর্তাবে: সামস মাহমুদ

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৩ এএম
ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব জনগণের ওপরেই বর্তাবে: সামস মাহমুদ
সামস মাহমুদ

বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর ওপর সরকার যে ভ্যাট বাড়িয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ওপরই এর প্রভাব বেশি পড়বে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নির্ধারিত আয়ের মানুষ, অবসরোত্তর জনগণ যারা অবসর ভাতার ওপর নির্ভর করেই চলেন, তাদের ওপর বেশি চাপ পড়বে। কেননা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের প্রভাবে তাদের খরচ বাড়লেও বাড়তি আয়ের সংস্থান নেই। ফলে তাদের ভোগ কমাতে হবে। অর্থাৎ চাহিদা কমবে। চাহিদা কমলে অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে সরবরাহ কমে যাবে। যার দায় পড়বে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওপর। কোম্পানিটি যে ক্যাশ ফ্লো নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, সেখানে সংকোচন করতে হবে। আর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হবে, টার্নওভার করের সীমা ৫০ লাখ থেকে কমিয়ে ৩০ লাখ করায় এসএমই উদ্যোক্তারাও এখন ভ্যাটের আওতায় আসবে। এর ফলে এসএমই খাতে বড় ধাক্কা আসবে। এখন সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ফলে এই চাপ ভোক্তার ওপরই বর্তাবে।  

আমরা ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারছি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে হলে অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থের সংস্থানের জন্যই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সরকার আওতা না বাড়িয়ে কেন কর বৃদ্ধি করেছে, সেটা বোধগম্য নয়। সরকার মূল সমস্যা সমাধানে হাত দিচ্ছে না। সেখানে তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়ন এবং বাড়তি অর্থের সংস্থানের জন্যই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা না করে সরকার বিকল্প উপায়েও অর্থের সংস্থান করতে পারত। যেমন রাজস্বসংক্রান্ত কয়েক হাজার মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে সরকারের রাজস্ব আদায় অনেক বেশি বাড়ত। অন্যদিকে ভ্যাট বাড়িয়ে যদি ২৫ শতাংশও করা হয়, তাতেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ভ্যাটের সিস্টেম যদি ঠিক না থাকে, তাহলে সেটা সরকারের কোষাগারে জমা হবে না। এসব সিস্টেম ঠিক না করে সরকার যে পথে হাঁটছে, তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করি। গত বছর যে বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো হয়েছিল, সেটার ধাক্কাই আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার মধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায়ী এই মূহূর্তে নগদ টাকার সংকটে রয়েছে। সেই সঙ্গে ঋণের সুদের হারও অনেক বেশি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছি। এর মধ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে এই চাপ আরও বাড়বে।

সাবেক সভাপতি, ডিসিসিআই

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সবার মধ্যে ঐক্যের আবহ তৈরি করতে হবে

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
সবার মধ্যে ঐক্যের আবহ তৈরি করতে হবে
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান একজন শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তাবিদ। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র‍্যাকের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৭-০৮ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উপদেষ্টা হিসেবে বাণিজ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন। খবরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি দারিদ্র্যবিমোচন, ভূমি সংস্কার, সুশিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, অর্থনীতির পুনর্জাগরণ, সুশাসন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন অর্থাৎ গণতান্ত্রিক উৎকর্ষের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের মাত্রা অনেক- এর একটি হচ্ছে রুটিন ওয়ার্ক। আর একটি হচ্ছে, রোডম্যাপগুলো তৈরি করা অর্থাৎ রাজনৈতিক রোডম্যাপ, সংস্কারের রোডম্যাপ, নির্বাচনের রোডম্যাপ- এগুলো তৈরি করা জরুরি। তৃতীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সবার মধ্যে ঐক্যের আবহ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে এই ঐক্যের বিষয়টিকে সংহত করতে হবে। সেখানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যা বলছি- এগুলো সবই চ্যালেঞ্জের বিষয়। নির্মোহভাবে এগুলোর সমাধান করতে হবে। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বড় ধরনের দায়িত্ব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে। এগুলো নির্মোহভাবে করে যেতে হবে। যাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে, তারাও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন। তারা যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, সেখানে কতটুকু সক্ষমতা দেখাচ্ছেন- এ বিষয়টি দেখা দরকার। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সক্ষমতার পরীক্ষা এখন চলছে। ২০২৫-এ সেই সক্ষমতার পরীক্ষার ফল আমাদের দেখতে হবে।…

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাস ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: সরকারের সফলতা- ব্যর্থতার চেয়েও এই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার মাত্রাটা খুব বেশি। ২০২৩-কে কেন্দ্র করে সবারই একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল; যা ছিল রাজনৈতিক প্রত্যাশা। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে একটা সরকার ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় বসেছিল। প্রতিযোগিতামূলক এবং সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটা সরকার যেন হয়, সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল ২০২৩-এ। ২০২৪-এ জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে সেই আকাঙ্ক্ষা যেমন ছিল, তার সঙ্গে বাড়তি আশা ছিল দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হবে। এই যে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা, মানবাধিকারের যে দুর্বল অবস্থা, রাষ্ট্রক্ষমতার সামনে নাগরিকের অসহায়ত্ব, যে নাগরিকরা সার্বিকভাবে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলোর সামনে অসহায় এবং অপমানিত, এগুলোর পরিবর্তন দরকার। সুতরাং আমাদের আকাঙ্ক্ষার মাত্রাটা অনেক বড়। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা বিশাল ভঙ্গুর অবস্থা আমরা দেখেছি। সাধারণ মানুষের অনেক বড় কষ্ট ছিল অর্থনৈতিক বিষয়। সেখানে ২০২৪-এর শেষ ৪-৫ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে রাতারাতি অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের চাওয়া- অন্তত সঠিক চেষ্টাটুকু যেন হয়। যে ত্রুটিগুলো সামনে আনা সম্ভব, সেগুলো যেন আসে- সে ধরনের একটা সদিচ্ছা থাকতে হবে। মানুষ যে ধরনের স্বৈরশাসন থেকে বেরিয়ে এসেছে, অর্থাৎ তখন যে নেতৃত্ব ছিল, তাদের যে চেহারা ছিল, তারা যে অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছিল, মানুষ সে জায়গায় আর ফিরে যেতে চায় না, সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকেই এই নতুন অন্তর্বর্তী সরকার করা হলো, কাজেই প্রত্যাশা অবশ্যই বেশি। তারা ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে তারা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

তারা সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছে। তার পরও সঠিক চেষ্টাটা হচ্ছে কি না, এটা নিয়ে কিছু অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে। মানুষের ভেতরে এক ধরনের উপলব্ধি জন্মেছে যে, সঠিক চেষ্টার ঘাটতিগুলো আসলে কোথায়? সেখানে আমি বলব যে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটা চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কষ্টের যে পর্যায়, সেখানে তেমন কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। অন্তত আমরা তা দেখছি না। টিসিবির লাইনগুলো দেখলেই বোঝা যায়, মানুষ কেমন কষ্টের মধ্যে আছে। এটাও সত্য যে, এখানে যেটা প্রয়োজন ছিল, অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি যারা চালান, অর্থনীতির যারা অংশীদার বা অর্থনীতির চাকা যারা ঘোরান, সে কৃষক হোক, শ্রমিক হোক, ছোট উদ্যোক্তা বা বড় উদ্যোক্তা কিংবা মাঝারি উদ্যোক্তা হোক; যে পর্যায়েরই হোক না কেন, সবার সঙ্গে আরও একটা জোরালো সংযোগের দরকার ছিল। 

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের পাঁচ মাসে একটা বিষয় দেখা গেছে, অর্থনীতি যারা চালান তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সংযোগটা কম দৃশ্যমান হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কষ্টের জায়গাগুলো আরও কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, সেই পরামর্শগুলো আসতে হবে। যারা সরকারি আমলা, তারা ঠিক করবেন। এটা করবেন যারা অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তারা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের একটা স্পষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আমি বলব, এটা চিন্তার বিষয়। সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে, তারা সংস্কার কমিশন করেছে। সংস্কার একটা ভালো উদ্যোগ ছিল। সংস্কার কমিশনের কাজের পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এখানেও খোলামেলা আলোচনার চেয়ে একটা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। নির্বাচন, জনপ্রশাসন, বিচারব্যবস্থা- এগুলোর জন্য রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আরও বেশি খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন ছিল। 
এরই মধ্যে আমরা দেখতে পেলাম যে, সংস্কার কমিশন সময় বাড়িয়েছে। তাদের পদ্ধতিগত কৌশল সেই খোলামেলা আলোচনার দিকে যায় কি না দেখা যাক। 

আরেকটি বিষয় হলো, একটা বা দুটো পরিসংখ্যান যদি দেখেন; প্রশাসনে যারা জড়িত তারা অনেকে বলছেন, তারা ১৫ বছর বঞ্চিত ছিলেন। বঞ্চিত কর্মকর্তার তালিকাটা দ্রুত হয়ে গেল। কিন্তু এই পরিবর্তনটা যারা নিয়ে এসেছেন, অর্থাৎ ছাত্র-জনতা, তাদের আহতদের তালিকাটা এখনো সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। এই পরিবর্তনটা একটা বেদনার সংকট তৈরি করেছে। তাহলে অগ্রাধিকার আসলে কোথায়? অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কারা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে? এই যে পদবঞ্চিত বলে কর্মকর্তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতা যারা আহত হয়েছেন, তাদের এখনো আমলাতান্ত্রিকভাবে সত্যটা যাচাই করতে হচ্ছে। কাগজে যাচাই-বাছাই শব্দগুলো শুনতে পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত আমলাতান্ত্রিক শব্দ। এখানে আমার মনে হচ্ছে, একটা ঘাটতির সমস্যা আছে। অন্তর্বর্তী সরকার আকাঙ্ক্ষাগুলো ঠিকই উচ্চারণ করছে। কিন্তু কার্যপ্রণালি যেভাবে করছে, সেটা একটা স্ববিরোধিতার সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষ করে, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরশীলতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আগস্টে এক ধরনের ঐক্যের একটা শক্তিশালী আবহ তৈরি হয়েছিল। সবাই একত্রিতভাবে কিছু করতে চায়। সবাই চায় বাংলাদেশে পরিবর্তন যেন হয়। তারা অংশগ্রহণও করতে চায়। সেখানেও ঐক্যের ক্ষেত্রে অনেকটা ফাটল দেখা যাচ্ছে। ভিন্ন মত থাকতে পারে, সেটা কোনো সমস্যা নয়। 

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের মাত্রা অনেক- এর একটি হচ্ছে রুটিন ওয়ার্ক। মন্ত্রণালয়গুলো চলতে হবে প্রতিদিন- সেই রুটিন ওয়ার্কের মাধ্যমে। আর একটা হচ্ছে, রোডম্যাপগুলো তৈরি করা, রাজনৈতিক রোডম্যাপ, সংস্কারের রোডম্যাপ, নির্বাচনের রোডম্যাপ- এগুলো তৈরি করা জরুরি। তৃতীয় আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সবার মধ্যে ঐক্যের আবহ তৈরি করতে হবে এবং এই ঐক্যের বিষয়টাকে সংহত করতে হবে। কিন্তু সেখানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যা বলছি- এগুলো সবই চ্যালেঞ্জের বিষয়। নির্মোহভাবে এগুলোর সমাধান করতে হবে। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বড় ধরনের দায়িত্ব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে। এগুলো নির্মোহভাবে করে যেতে হবে। যাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে, তারাও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন। তারা যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, সেখানে কতটুকু সক্ষমতা দেখাচ্ছেন- এ বিষয়টা দেখা দরকার। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সক্ষমতার একটা পরীক্ষাও এখন চলছে। ২০২৫-এ সেই সক্ষমতার পরীক্ষার ফল আমাদের দেখতে হবে।

খবরের কাগজ: দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, সেটাও প্রথমে জানা দরকার। কোথায় ঘাটতিগুলো হচ্ছে সেটা দেখা দরকার। আমরা দেখতে পাচ্ছি গ্রামাঞ্চলে এবং শহরেও বেশ কিছু অঞ্চলে ছিনতাই, রাহাজানির সংখ্যা বেড়েছে। অনেক জায়গায় দেখছি- ব্যবসায়ী মহল সেই অর্থে আস্থার জায়গাটা সেভাবে পাচ্ছে না। আস্থা না পেলে তারা অনেক বেশি বিনিয়োগ করবেন কীভাবে? আইনশৃঙ্খলার অবস্থা যে পর্যায়ে থাকা উচিত, সে পর্যায়ে নেই- এটা উপলব্ধির বিষয়। সেখানে কী করা উচিত, অবশ্যই তা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একই সঙ্গে প্রশাসনিকভাবে ভাবতে হবে। যেমন- পুলিশকে এখনো সার্বিকভাবে চালু করা যায়নি। পুলিশ অন্যতম একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন কীভাবে তাদের চালু করা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে খুব জোরালো বা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সেখানে অনেক কিছু করার আছে। এটা একটা অন্যতম কাজ। পুলিশ প্রশাসনের যারা দোষী তাদের এক ধরনের শাস্তির প্রক্রিয়ায় নিয়ে এসে সার্বিকভাবে বাহিনীকে সচল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে তা হয়নি। সে জন্য স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নগুলো উঠছে। দ্বিতীয়ত; একটি জোরালো রাজনৈতিক ম্যাসেজ দরকার। 

এখানে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা আছে। ক্ষমতা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাদের যে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মী বাহিনী আছে, তারা যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্যই রাজনৈতিক দলগুলোর একটা জোরালো ম্যাসেজ দেওয়ার বিষয় আছে। আমি একটি বিষয়ে জোর দিয়ে আবারও বলছি, মানুষকে আস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কমিউনিটি পর্যায়ে স্থানীয় সরকার একেবারেই সচল নেই। পুলিশকে যেমন সচল করা দরকার, স্থানীয় সরকারকেও তেমনি সচল করা দরকার। এই দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ- যদি আইনশৃঙ্খলাকে ঠিক করতে হয়। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি অন্য সামাজিক শক্তিগুলোকেও বড় ম্যাসেজ দেওয়া দরকার। কমিউনিটি পর্যায়ে সামাজিক দায়িত্ব নিশ্চিত করা দরকার। সেখানে করণীয়গুলোও সুস্পষ্ট। পুলিশ, স্থানীয় সরকার- দুটিকেই সচল করতে হবে। যেটি বর্তমানে একেবারেই সচল নেই।

খবরের কাগজ: সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, কাজে হাত দিয়েছে। আপনি কি মনে করেন কমিশনগুলোর কাজ শেষ হওয়ার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে বলতে সরকার কিছু সংস্কার কমিশন করেছে। এটা একটা কাজ। কিন্তু সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া- এটা আলাদা কাজ। শিক্ষায় অনেক সংস্কার দরকার। আমরা যখন বলি সংস্কারের কাজ, তখন বলতে হবে আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠানগুলো জোরালোভাবে সচল হলো কি না। সার্বিকভাবে যে আমলাতান্ত্রিক একটা বোঝা শিক্ষা অঙ্গনের ওপর আছে, সেটা কতটুকু মুক্ত হলো, সেটি দেখা দরকার। শিক্ষার বিষয়গুলো, যেমন- কারিকুলাম কেমন হবে ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ তৈরি হয়, শিক্ষার অঙ্গনগুলোয় পরিস্থিতি ফেরত আসবে কি না, সেখানে এখনো দেখা যাচ্ছে- কে দোষ করেছিল, কে দোষ করেনি সেই আবহাওয়া এখনো চলছে। আপনি যখন প্রশ্ন করছেন যে, সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে- এখন ওই প্রশ্নটি তুলতে হচ্ছে যে, সংস্কারের কোন কাজে হাত দিয়েছে? সেগুলো এখন দৃশ্যমান হওয়া দরকার।

সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার একটা কাজ করেছে যে, তারা সংস্কার কমিশন বানিয়েছে। সংস্কার শব্দটা এমনভাবে বলা হচ্ছে যে, এটা দিয়েই অবধারিতভাবে বোঝা যাচ্ছে, সংস্কার বলতে আমরা কী বুঝছি। সংস্কারের মধ্যে তিনটি স্তর দেখা যাচ্ছে। একটি স্তর হচ্ছে- কাঠামোগত, কিছু আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ২০১৪-এ দলীয় প্রতীকে করার ফলে সাংঘাতিক ক্ষতি হয়েছে। এই সংস্কারটা করা হয়েছে কি না। এটা এখনো করা হয়নি। এ জন্য কোনো সংস্কার কমিশনের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। এখনই করে ফেলা যায়। সংস্কার হচ্ছে কাঠামোগত ও আইনগত পরিবর্তনের বিষয়। কিছু সংস্কার দরকার মানুষের মাইনসেট বা মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য। আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সেখানে কিছু অনৈতিক চাপের জায়গা তৈরি হয়। সেই জায়গায় পরিবর্তনগুলো কিছুটা কাঠামোগত ও আইনগত সংস্কারের মাধ্যমে করতে হবে। কিছু সংস্কার আছে যেটা চলমান। প্রশাসনিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এখনই সে সংস্কারগুলো করা যায়। ব্যাংকিং সেক্টরে কিছু পরিবর্তন এসেছে। 

মূলত পরিবর্তনটা হলো কিছু লোককে সরানো হয়েছে। কিছু নতুন লোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কার নিয়ে আপনি যখন বললেন, তখন ২০২৫-এ এসে কোন সংস্কার নিয়ে আমরা কথা বলব, সেটাও জানা দরকার। সংস্কার শব্দটার মধ্যে অটোমেটিক কেউ বুঝছে না যে, কী হচ্ছে এর পেছনে অথবা কোন কথাটা আমরা বলছি। একই সঙ্গে খোলাসা করার বিষয়টা- আমরা সবসময় বলছি। এটার জন্য কি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, নাকি যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে, সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করে এখনই পরিবর্তন করা দরকার সেটা বুঝতে হবে। আর একটা হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক অর্থে সমাজের যে মতগুলো একটা ঐকমত্য তৈরি করে, সে জায়গায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বেশ কিছু পরিবর্তন হতে পারে। আইনগত সংস্কারের বিষয় আছে, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট হবে কি না ইত্যাদি ব্যাপার আলোচনার বিষয়। এসবের জন্য সময় লাগবে। সে জন্য আমি বলব, সরকার কোন ধরনের সংস্কারে হাত দিয়েছে, সেটা খোলাসা করা অত্যন্ত জরুরি। 

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনে কাজ করছে। কারিকুলামে বেশ কিছু সংযোজন-বিয়োজনের কথা শোনা যায়। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: শিক্ষা কারিকুলাম বিষয়ে একটা কমিটি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এই কমিটি বাতিল হয়ে গেল। আবার যতদূর শুনেছি, আপনি যেটা বললেন, যোজন-বিয়োজনের ব্যাপারটি ঘটেছে। টেক্সবই কিছু বদলাচ্ছে। এটা দেখার বিষয় আছে। এটা নিয়ে অনেক বিতর্কও হচ্ছে। এই বিষয়গুলো সার্বিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমি একটা বাস্তবতায় দেখেছি যে, শিক্ষাঙ্গনে আমাদের স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে কি না, সেটা দেখা দরকার। শিক্ষার বিষয়টাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে পারছেন কি না, এই বিষয়গুলো দেখাটা বেশ জরুরি। কারিকুলাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। এটাও দৃশ্যমান করা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে এটা করা যায়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে কি না, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। সর্বোপরি জাতিগতভাবে শিক্ষার ভীত সুগঠিত করতে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা দরকার। 

খবরের কাগজ: আপনি কি মনে করেন শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানো উচিত? শিক্ষা খাতের কর্মপরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: আসলে ঢেলে সাজানো শব্দগুলো এক ধরনের পপুলার শব্দ। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার বলি বা নতুন সময়কাল বলি- ঢালাওভাবে কথাবার্তাগুলো সমস্যা তৈরি করছে। কী সংস্কার, এটার ব্যাখ্যা না দিয়ে আমরা সংস্কারের কথা বলছি। আমি মাধ্যমিক শিক্ষাকে ঠিক করছি, প্রাথমিককে, নাকি উচ্চশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা- কোনগুলোকে কীভাবে ঠিক করব এবং আমি শিক্ষককে চালকের আসনে বসাতে পারব কি না, তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারব কি না ইত্যাদি। শিক্ষা পরিচালনায় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি- ওগুলো ছিল একেবারে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং অকার্যকর। কাজেই শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো বলতে আমাদের এখন সুনির্দিষ্টভাবে কর্মপরিকল্পনাগুলো সাজানো খুবই প্রয়োজন।

খবরের কাগজ: উত্তরাধিকার সূত্রে অন্তর্বর্তী সরকার একটি খারাপ অর্থনীতি পেয়েছে। এর থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: এটা সত্য, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু সেখানেও আমাদের প্রবাসীরা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে। স্বৈরশাসনের শেষ দিকে তারা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছিল। বর্তমানে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। রপ্তানিও মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এখানে আমি আবারও যেটা বলব, আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার সার্বিকভাবে অর্থনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছে। ব্যক্তি খাতের সঙ্গে যদি বড় ধরনের সংযুক্তি না হয়, মাঠ বাস্তবতা না জানি, নিবিড় তথ্য না জানি, কোথায় কোন সমস্যা হচ্ছে সেই পরামর্শগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে পদক্ষেপ নিতে না পারি, তাহলে সমস্যা প্রকট হবে।

এখানে অনেক বিষয় আছে- তার মধ্যে সমন্বয় একটা বড় ব্যাপার। এটা শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এখানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ আছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাজ আছে, সার্বিকভাবে পুরো উপদেষ্টা পরিষদের কাজ আছে। কারণ আইনশৃঙ্খলা উন্নত না হলে লোকজন বিনিয়োগ করতে সাহস পাবে না। কর্মসংস্থান তৈরি করা যাবে না। এভাবে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বাড়বে। মূলত অর্থনীতিতে যারা ক্রিয়াশীল আছেন, সেটা বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের সঙ্গে সংযোগ ও সমন্বয় অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক বেশি বাড়ানো দরকার। এখানে মানসিকতার এক ধরনের অনীহা অথবা অনুপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আরও বেশি কথা বলা দরকার। শুধু এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে ডেকে একটা কিছু করলাম অথবা আমি হঠাৎ করে কাউকে ধরলাম, যা এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এই জায়গায় অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। 

দ্বিতীয় কিস্তি আগামী দিন। চোখ রাখুন…

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সমীকরণ বদলে যাচ্ছে

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২ এএম
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সমীকরণ বদলে যাচ্ছে
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, অভিষেককে ডেকে একরকম ওয়ার্নিংই দিয়েছেন মমতা। সাংগঠনিক ব্যাপারে তার নাক গলানো যে পিসি পছন্দ করছেন না সেটা সুব্রত বক্সীকে সাক্ষী রেখে স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই অন্য রকম গন্ধ পাচ্ছেন। তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা লোকজন মনে করছেন, অভিষেককে তাড়ানো হবে, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেই রাস্তাই তৈরি করছেন দলনেত্রী। অভিষেকের অভিজ্ঞতা কম। তাই তিনি আগেভাগে দল থেকে না বেরিয়ে নিজের বহিষ্কারের রাস্তা স্পষ্ট করছেন।...

ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে পিসির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হাত ছেড়ে ভাইপো (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) দূরে চলে যাচ্ছে। ‌‘সাবালক’ ভাইপোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বদ্ধপরিকর নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর ভারতীয় জনতা পার্টি। ভাইপো যদি সত্যিই দলের একাংশকে ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশ যদি শেষ পর্যন্ত নয়া নেতার দিকেই ঝোঁকেন, তাহলে তো মুখ্যমন্ত্রীর শিরে সংক্রান্তি। গোটা বিষয়টা ম্যানেজ হবে কী করে? সেই কারণে দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ আরও মসৃণ করে তুলছেন তিনি। ভাইপো বেরিয়ে গেলেই ২০২৬-এর লক্ষ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাত নিশ্চিত করবেন তৃণমূল নেত্রী। সে ক্ষেত্রে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় জোটের উল্লেখযোগ্য লাভ হতে পারে।

কংগ্রেস যে এই জোটের জন্য মুখিয়ে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বৃহত্তর জোটের কথা চিন্তা করেই কংগ্রেস হাইকমান্ড প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বদল ঘটিয়ে শুভঙ্কর সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, শুভঙ্করবাবুকে দলে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তিনি রাজি হননি। সে যা-ই হোক না কেন, তার সঙ্গে দিদির সম্পর্ক খুবই মসৃণ। মমতা সম্পর্কে কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি যে পাল্টে যাচ্ছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে সম্প্রতি দলের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্যে। প্রয়াত নেতা সোমেন মিত্র স্মরণে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে কংগ্রেসের অশেষ ক্ষতি হয়েছে।’ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে কুণাল ঘোষ প্রদীপবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন ও স্বাগত জানিয়েছেন। যথারীতি বিরোধিতা করেছেন সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু তিনি এখন ব্যাক বেঞ্চে। কংগ্রেস হাইকমান্ড বা রাজ্যের নেতৃত্ব- কেউই তার কথা শুনছে না। এই পরিস্থিতিতে অধীর কী করবেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

সম্প্রতি, সুন্দরবনসংলগ্ন সন্দেশখালীতে একটি সভা করতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সন্দেশখালী স্টিং অপারেশনের জন্য তিনি ‘আই প্যাক’ সংস্থাকে দোষী করেন। কিন্তু আই প্যাককে যে তিনিই কাজে লাগিয়েছিলেন তা একবারের জন্যও মুখে আনেননি। উল্টো যারপরনাই সমালোচনা করেছেন পিসির। কিন্তু ভাইপো তার কাছে একেবারে ক্লিন চিট পেয়ে  গেছে। কিন্তু কেন? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, শুভেন্দু খুব ভালো করেই জানেন নতুন দল তৈরির জন্য ভেতরে ভেতরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকটাই এগিয়েছেন। তার সঙ্গে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কথাও হয়েছে। অমিত শাহ নিজে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন। কাজেই অভিষেক যে বিজেপি জোটে আসছেন, তা এক প্রকার নিশ্চিত। এই সময় খুঁচিয়ে সম্পর্ক অহি নকুল করে লাভ হবে না।

দল ও সরকারের ‘মেদ’ করাবে তৃণমূল কংগ্রেস। নতুন বছরে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় এই লক্ষ্যে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, অভিষেককে ডেকে একরকম ওয়ার্নিংই দিয়েছেন তিনি। সাংগঠনিক ব্যাপারে তার নাক গলানো যে পিসি পছন্দ করছেন না, সেটা সুব্রত বক্সীকে সাক্ষী রেখে স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই অন্য রকম গন্ধ পাচ্ছেন। তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা লোকজন মনে করছেন, অভিষেককে তাড়ানো হবে, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেই রাস্তাই তৈরি করছেন দলনেত্রী। অভিষেকের অভিজ্ঞতা কম। তাই তিনি আগেভাগে দল থেকে না বেরিয়ে নিজের বহিষ্কারের রাস্তা স্পষ্ট করছেন।

অভিষেকের যাবতীয় পরিকল্পনা মমতা ভেস্তে দিয়েছিলেন। সেই কারণে ভাইপো নভেম্বর মাসে নিজের লোকজনকে দলের সংগঠনে বসাতে পারেননি। কিন্তু তিনি যে শেষ দেখে ছাড়বেন, তা আবারও স্পষ্ট হলো। বৃহস্পতিবার তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রদবদল হবেই। এ কথা স্পষ্ট, যে অভিষেকের রদবদলের পরিকল্পনায় বাধা দেবেন মমতা। আর তখনই নতুন দল তৈরির বড় ধাপ পেরোবেন ‘ভাইপো’।

ঠিক সময়েই দলে সাংগঠনিক রদবদল হবে বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি ‘সেবাশ্রয়’-এর উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক ফের দলে সাংগঠনিক রদবদলের বিষয়ে মুখ খোলেন। তা ছাড়া আরজি কর, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

অভিষেক বলেন, ‘সাংগঠনিক রদবদল হবেই। যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের চিন্তা করতে হবে না। গাছের পরিচয় তার ফলে। আমি কত দক্ষ, কত অভিজ্ঞ, তা তো ফলাফল দেখলেই বোঝা যাবে।’ ডায়মন্ড হারবারের সংসদ সদস্য জানান, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই রদবদলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত, মমতার উপস্থিতিতেই ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছিলেন, লোকসভায় যেখানে যেখানে দলের খারাপ ফল হয়েছে, সেই সব পুর এলাকায় প্রশাসনিক স্তরে ‘রদবদল’ হবে।

 সেই সূত্রে কমবেশি ৭০টি পুরসভা ও পুরনিগমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রদবদলের প্রস্তাব মমতার কাছে অভিষেক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অক্টোবরে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার আগেই। তবে নিজের জন্মদিনে গত ৭ নভেম্বর অভিষেক একান্ত আলোচনায় এও জানিয়েছিলেন, সেই রদবদল থেকে আপাতত বাদ থাকছে কলকাতা। অভিষেক এও বলেছিলেন, রদবদলের নিরিখ হবে লোকসভা ভোটের ফল। ফের তিনি সেটাই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, অভিষেককে ডেকে একরকম ওয়ার্নিংই দিয়েছেন মমতা। সাংগঠনিক ব্যাপারে তার নাক গলানো যে পিসি পছন্দ করছেন না, সেটা সুব্রত বক্সীকে সাক্ষী রেখে স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই অন্য রকম গন্ধ পাচ্ছেন। তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা লোকজন মনে করছেন, অভিষেককে তাড়ানো হবে, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেই রাস্তাই তৈরি করছেন দলনেত্রী। অভিষেকের অভিজ্ঞতা কম। তাই তিনি আগেভাগে দল থেকে না বেরিয়ে নিজের বহিষ্কারের রাস্তা স্পষ্ট করছেন।

বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক পথও মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন মমতা। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতেই সংগঠন ও প্রশাসন নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক সেরে ফেলেছেন তৃণমূল নেত্রী। তার সঙ্গে এই বৈঠকে ছিলেন অভিষেক। পরে সেখানে উপস্থিত হন রাজ্য সভাপতিও। সেখানেই সংগঠন ও প্রশাসন নিয়ে দলের অন্দরে উদ্ভূত জটিলতা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। এই জটিলতা কাটাতেই মমতার পরামর্শে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও নিয়েছেন অভিষেক। 

দলীয় সূত্রে খবর, গত লোকসভা ভোটের ফলের ভিত্তিতে যেসব পদক্ষেপ নিয়ে অভিষেক এগোতে চেয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই এই পরিবর্তনের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে সময় নষ্ট না করার কথাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, তার ভাবনায় সায় দিয়ে গোটা বিষয়টিতে সমন্বয় তৈরির ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য সভাপতিকে।

একদা ক্যামাক স্ট্রিটগামী নেতারা ক্রমশ কালীঘাটমুখী হচ্ছেন। ‘কালীঘাটপন্থি’ যে নেতারা মাঝে অভিষেকের খুল্লমখুল্লা প্রশংসা করতেন, তারা ফিরছেন পুরোনো অবস্থানে। নতুন বছরের সবে কয়েক দিন কেটেছে। সমাপতন, কিন্তু বছর বদলের সঙ্গেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাসক তৃণমূলের অন্দরে ভরকেন্দ্র বদল। সৌজন্যে শিল্পীদের একাংশকে বয়কট করাসংক্রান্ত বিতর্ক। আরজি কর পর্বে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করা শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। 

বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কুণালের বক্তব্য ‘দলের অবস্থান’ নয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, কুশালের পাশে দাঁড়ালেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কৌশলী’ মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যার মর্মার্থ; মমতার মতোই তার পথ। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পীচয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন স্তরে দলীয় বার্তার ‘প্রমাণ’ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একাধিক ‘স্ক্রিনশট’ প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। প্রসঙ্গক্রমে চলে এসেছে আরজি কর-কাণ্ডও। সেই পর্বে সরকার এবং শাসকদল যখন ‘কোণঠাসা’, তখন তৃণমূলের হয়ে যারা সরব ছিলেন, তাদের মধ্যে কুণাল অন্যতম।

 কল্যাণও বিভিন্ন মন্তব্য করে কুণালের তালে তাল ঠুকেছিলেন। তা মনে করিয়ে দিয়ে শুক্রবার কল্যাণ বলেছেন, ‘আরজি কর পর্বে তো অনেককে কথাই বলতে দেখা যায়নি। যা বলার কুণাল বলত। আর আমি বলতাম।’ তৃণমূলপন্থি জুনিয়র ডাক্তারদের প্রসঙ্গও টেনেছেন কল্যাণ। শ্রীরামপুরের সাংসদের কথায়, ‘আমাদের ছেলেদের ধরে ধরে সাসপেন্ড করেছিল। কুণাল ওদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আর আমি মামলা লড়েছি। 

তখন কেউ ছিল না।’ শিল্পীদের একাংশকে বয়কটের আহ্বান প্রসঙ্গে অভিষেক আরজি করের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ভাবে শুক্রবার আরজি কর পর্বের উল্লেখ করে কুণাল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সম্পর্কে বলেছেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সময়টায় বাইরে ছিলেন।’ কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা ঠিক যে, আরজি কর আন্দোলন পর্বে অভিষেক সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন শুধু ১৪ আগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানের পরে রাতে আরজি করে ও চড়লের পাটনায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে অভিষেক প্রকাশ্যেই ‘রাত দখল’ অভিযানকে শ্রদ্ধা আউডিদেন। 

অভিষেক ‘বাইরে ছিলেন’ বলে কুণাল শুক্রবার সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। কুণালের বয়কটের ডাককে সমর্থন করে কল্যাণ জানিয়েছেন, তার সংসদীয় এলাকায় দলের লোকেরা যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত, সেখানে এমন কোনো শিয়াকে তিনি ঢুকতে দেবেন না, যারা আরজি কর পর্বে তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার সমালোচনা করেছেন। কল্যাণের কথায়, ‘আমাদের সব আবেগ মমতাদিকে ঘিরে। তাকে যারা অসম্মান করেছেন, সেই শিল্পীদের কেন ডাকতে যাব? আমার এলাকায় তো আমি ঢুকতে দেব না।’ আবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেছেন, ‘দেখাই যাচ্ছে দলে দুই রকমের মত রয়েছে। আমাদের দল রেজিমেন্টেড নয়। অনেক খোলামেলা। তাই কেউ কারও কথা বলতেই পারেন।’ সেই সঙ্গেই ব্রাতোর সংযোজন, ‘দলে অভিষেকের স্থান আমার থেকে অনেক উঁচুতে। তাই অভিষেক ঠিক না কুণাল ঠিক, তা আমি বলতে পারব না। তবে দলের সদস্য হিসেবে বলতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতই আমার মত।’ ব্রাত্য শুধু মন্ত্রী নন। তিনি নাট্যকার, অভিনেতা এবং পরিচালক। সেই ‘শিল্পীসত্তা’ থেকেও তিনি তার অবস্থান জানিয়েছেন।

 তার বক্তব্য, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার পর থেকে তার পরিচালিত দল কোনো অনুদান নেয়নি। যে শিল্পীরা সমালোচনা করেছিলেন, তারা ঠিক করুন (রাজ্য সরকারের) অনুগ্রহ নেবেন কি না। ব্রাত্যের কথায়, ‘বিরোধিতাও করব আবার অনুদানের জন্য নাকে কাঁদব, দুটো একসঙ্গে হতে পারে না।’ কিন্তু শিল্পী বয়কটের প্রশ্নে মমতার অভিমত কী? এ বিষয়ে তৃণমূল নেত্রীর কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। তবে কল্যাণের মতো টানা চারবারের সংসদ সদস্য দলের সর্বময় নেত্রীর অনুমোদন ব্যাতিরেকে এমন বলছেন, এ কথা তৃণমূলের কেউই প্রায় বিশ্বাস করছেন না। বৃহস্পতিবার অভিষেকের বক্তব্যের পাল্টা কুণাল বলেছিলেন, ‘মমতাদি বলে দিন, আমি ভুল বলছি। মেনে নেব।’ শুক্রবার পর্যন্ত মমতা বলেননি, কুণাল ‘ভুল’ বলেছেন। যে দিন ব্রাত্য বললেন, মমতার মতামতই তার মত।

ঘটনাচক্রে ঠিক এক বছর আগে অভিষেকের ‘নবীন’ তত্ত্বের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রবীণদের বিঁধেছিলেন কুণাল। কথায় কথায় তিনি বলতেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী। অভিষেক আমার সেনাপতি। সেই তিনি শেষ কবে অভিষেককে ‘সেনাপতি’ বলে উল্লেখ করেছেন, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। ব্রাত্যও অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষ দিকে অভিষেক যখন সংগঠন থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন, নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে ‘সীমাবদ্ধ’ রেখেছিলেন, তখন যে কয়েকজন নেতা তাকে বোঝাতে দৌত্য চালিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ব্রাত্য এবং কুণাল ছিলেন অন্যতম। একটা সময়ে অভিষেকের বিমানে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন ব্রাত্য। আবার কল্যাণ একটা সময়ে অভিষেককে ‘অপছন্দ’ করলেও পরে তার ঢালাও প্রশংসাও করেছেন। সেই তিনিও শিল্পী বয়কট বিতর্কে অভিষেকের বক্তব্যকে খণ্ডন করে কুণালের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

অভিষেকের যাবতীয় পরিকল্পনা মমতা ভেস্তে দিয়েছিলেন। সেই কারণে ভাইপো নভেম্বর মাসে নিজের লোকজনকে দলের সংগঠনে বসাতে পারেননি। কিন্তু তিনি যে শেষ দেখে ছাড়বেন তা আবারও স্পষ্ট হলো। বৃহস্পতিবার তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রদবদল হবেই। এ কথা স্পষ্ট, যে অভিষেকের রদবদলের পরিকল্পনায় বাধা দেবেন মমতা। আর তখনই নতুন দল তৈরির বড় ধাপ পেরোবেন ‘ভাইপো’।

ঠিক সময়েই দলে সাংগঠনিক রদবদল হবে বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি ‘সেবাশ্রয়’-এর উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক ফের দলে সাংগঠনিক রদবদলের বিষয়ে মুখ খোলেন। তা ছাড়া আরজি কর, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

সাংগঠনিক রদবদল
অভিষেক বলেন, ‘সাংগঠনিক রদবদল হবেই। যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের চিন্তা করতে হবে না। গাছের পরিচয় তার ফলে। আমি কত দক্ষ, কত অভিজ্ঞ, তা তো ফলাফল দেখলেই বোঝা যাবে।’ ডায়মন্ড হারবারের সংসদ সদস্য জানান, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই রদবদলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে দলনেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। অভিষেক বলেন, ‘পরপর ভোট এবং উৎসব ছিল। ঠিক সময়েই হবে (সাংগঠনিক রদবদল)।’ প্রসঙ্গত, মমতার উপস্থিতিতেই ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছিলেন, লোকসভায় যেখানে যেখানে দলের খারাপ ফল হয়েছে, সেই সব পুর এলাকায় প্রশাসনিক স্তরে ‘রদবদল’ হবে। সেই সূত্রে কমবেশি ৭০টি পুরসভা ও পুরনিগমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রদবদলের প্রস্তাব মমতার কাছে অভিষেক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অক্টোবরে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার আগেই। তবে নিজের জন্মদিনে গত ৭ নভেম্বর অভিষেক একান্ত আলোচনায় এও জানিয়েছিলেন, সেই রদবদল থেকে আপাতত বাদ থাকছে কলকাতা। অভিষেক এও বলেছিলেন, রদবদলের নিরিখ হবে লোকসভা ভোটের ফল। ফের তিনি সেটাই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে রদবদল হবে। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। নভেম্বরে অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য ছিল, ছয়টি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে রদবদলসংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু তাও হয়নি। এর মধ্যে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সমীকরণ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে তৃণমূলে। তার মধ্যেই অভিষেক জানিয়ে দিলেন, রদবদল হবেই। তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, রদবদলসংক্রান্ত বিষয়ে কাজ চলছে, যা নিজে তত্ত্বাবধান করছেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও কথা বলছেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কবে রদবদলসংক্রান্ত ঘোষণা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
দলে বিভাজন নয়, ঐক্য
লোকসভা ভোট-পরবর্তী পর্যায়ে নানা ঘটনায় তৃণমূলের মধ্যে নেতৃত্বের সমীকরণের প্রশ্নে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি মুখপাত্র তালিকা প্রকাশের পর যা আরও প্রকট হয়েছিল। দলের মধ্যে যারা ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত, তাদের বাদ পড়া নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল শাসকদলের অন্দরে। যদিও অভিষেক, সেই সব জল্পনায় জল ঢালতে চেয়েছেন বৃহস্পতিবার। তার কথায়, ‘আমার কাজ দলে দলে ঢুকে জোড়া ফুল ফোটানো। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী আমার কাছে এলে খবর হয়।’ ডায়মন্ড হারবারের সংসদ সদস্যের সংযোজন, ‘আমি পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আমার সঙ্গে রাজ্য সভাপতি বৈঠক করতে পারেন কি পারেন না? আমরা তো সহকর্মী, সহযোদ্ধা।’
আরজি কর
অভিষেকের প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে আসে আরজি কর প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা বলেছিলেন আরজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রান্ত করেছেন। আর আজ দেখুন। এই প্রসঙ্গ তারা তুলছেন না।’ আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের দিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, ‘অভিযুক্তকে ধরেছিল কলকাতা পুলিশই।’ অভিষেকের বক্তব্যে আরও একবার আসে আরজি কর হাসপাতালের কথা। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের ৩০০টি স্বাস্থ্যশিবিরে যাওয়া রোগীদের রাউকে কাউকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হবে। অভিষেক জানান, ‘রেফারেল সিস্টেম’-এর মাধ্যমে মোট ১২টি হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হবে। এই ১২ হাসপাতালের তালিকায় এসএসকেএম, ডায়মন্ড হারবার মেডিকেলের মতো হাসপাতালের সঙ্গে রয়েছে আরজি কর হাসপাতালও।

লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক