ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

যক্ষ্মা থেকে রক্ষার উপায় কী!

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:১৬ পিএম
যক্ষ্মা থেকে রক্ষার উপায় কী!
ডা. মুশতাক হোসেন

আগামী ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। বাংলাদেশে যক্ষ্মা এখনো একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগী রয়েছে এমন ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যক্ষ্মা একটি প্রতিরোধযোগ্য এবং সহজে সারিয়ে তোলা যায় এমন একটি রোগ। তবুও ২০২২ সালে করোনাভাইরাসের পরে দ্বিতীয় রোগ যার দ্বারা সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, সেটা হচ্ছে যক্ষ্মা। যক্ষ্মায় বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা এইচআইভি/এইডস-এ মৃত্যুর সংখ্যার দ্বিগুণ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১ কোটির বেশি মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়। জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব সদস্য রাষ্ট্র ২০৩০ সাল নাগাদ যক্ষ্মার মহামারি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, যার জন্য জরুরিভাবে কাজে নেমে পড়া দরকার।

যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। জীবাণুর নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্যুলোসিস। যক্ষ্মায় আক্রান্ত মানুষের কাশি থেকে বায়ুতে যক্ষ্মা ছড়ায়। যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরে দুই বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় ভোগার সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে (মোটামুটি ৫ ভাগ)। এর পরে ঝুঁকি অনেক কমে যায়। যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরও কেউ কেউ সংক্রমণকে পরাজিত করতে পারেন। যত মানুষ যক্ষ্মায় ভোগেন, তাদের ৯০ ভাগ পূর্ণ বয়স্ক। নারীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী বেশি পাওয়া যায়। পৃথিবীর আনুমানিক এক-চতুর্থাংশ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। 

যক্ষ্মার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অবিরাম কাশি, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, জ্বর, রাতের বেলা ঘেমে যাওয়া। যদি চিকিৎসা না হয়, তবে এতে মৃত্যুও হতে পারে। যক্ষ্মা সাধারণতঃ ফুসফুসকে আক্রান্ত করে, তবে শরীরের অন্যান্য অংশও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যক্ষ্মা শনাক্তে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ভালো উন্নতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যক্ষ্মা শনাক্তের জন্য কতকগুলো রেপিড মলিকিউলার পরীক্ষা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করেছে। এসব পরীক্ষা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাকেও একই সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে করা যেতে পারে। রোগী যখন চিকিৎসাকেন্দ্রে আসেন তখনই তার প্রশ্রাব নিয়ে লেটারাল ফ্লো পরীক্ষা করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যেতে পারে। এ পরীক্ষাটিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করে। এ পরীক্ষার প্রধান ব্যবহার হচ্ছে গুরুতর এইচআইভি রোগীর যক্ষ্মা শনাক্তে। রেপিড মলিকিউলার পরীক্ষার সঙ্গে এটিও পরীক্ষা করা হয়। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে এখনো মাইক্রোস্কোপে থুতু পরীক্ষা করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা হয়। এ পরীক্ষাটি ১০০ বছরেরও আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে দ্রুত হারে এ পরীক্ষার বদলে এখন রেপিড পরীক্ষা চালু হচ্ছে। যক্ষ্মা শনাক্তের জন্য কালচার পরীক্ষা হচ্ছে আদর্শ পদ্ধতি। তবে যক্ষ্মা শনাক্তের পর তার চিকিৎসায় অগ্রগতি হচ্ছে কি না তা জানার জন্য কালচার বা থুতু পরীক্ষা করা যেতে পারে। 

বাংলাদেশে যক্ষ্মার প্রকোপ কতটুকু সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে বৈজ্ঞানিক অনুমান করে বের করত। এ দেশে যক্ষ্মার প্রথম জাতীয়ভিত্তিক জরিপ হয় ২০১৫-১৬ সালে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ জরিপ পরিচালনা করে। আমি এ জরিপ কর্মের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলাম। প্রধান অনুসন্ধানকারী ছিলেন আইইডিসিআর-এর তৎকালীন পরিচালক প্রফেসর ডা. মাহমুদুর রহমান।

এ জরিপের লক্ষ্য ছিল মাইকোব্যাকটেরিয়ম টিউবারকুলোসিস (যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা সংক্রমিত রোগের বিস্তার ভালোভাবে বোঝা এবং বাংলাদেশে যক্ষ্মানিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও উন্নত করার উপায় বের করা। উদ্দেশ্য ছিল: (ক) ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের মাঝে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় (কালচার জিনএক্সপার্ট অথবা রিফামপিসিন সংবেনশীল) নিশ্চিত হওয়া ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগীর ব্যাপকতা (প্রিভ্যালেন্স) পরিমাপ করা; (খ) ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের মাঝে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া রোগীদের মাঝে থুতু পরীক্ষায় শনাক্ত যক্ষ্মা রোগীদের ব্যাপকতা পরিমাপ করা; (গ) লক্ষণ দেখে অনুমান করা যক্ষ্মা রোগীদের ব্যাপকতা পরিমাপ করা।

জরিপটি প্রস্থচ্ছেদ নকশা (ক্রসসেকশনাল ডিজাইন) অনুসরণ করেছে। নমুনার আকার হিসাব করা হয়েছিল ১ লাখ মানুষ। আকারের সমানুপাতিক সম্ভাবনা (প্রোব্যাবিলিটি প্রোপোরশনালিটি টু সাইজ) সূত্র ব্যবহার করে ১২৫টি গুচ্ছকে শহর অঞ্চলে ৪৬টি এবং গ্রামাঞ্চলে ৭৯টি গুচ্ছ (ক্লাস্টার) বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গুচ্ছে ৮০০ জন মানুষকে জরিপের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। গ্রামাঞ্চলে একটা ইউনিয়নকে প্রাথমিক নমুনা একক (প্রাইমারি স্যাম্পল ইউনিট) হিসেবে ধরা হয়, অনুরূপভাবে শহরাঞ্চলে একটা ওয়ার্ডকে প্রাথমিক নমুনা একক ধরা হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতিজনকে যক্ষ্মার লক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় ও তার বুকের এক্স-রে করা হয়। যাদের লক্ষণ অথবা অস্বাভাবিক এক্স-রে দ্বারা যক্ষ্মা সন্দেহ করা হয়েছে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে থুতু দিতে বলা হয়েছে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য। তাদের পরদিন সকালেও থুতু দিতে বলা হয়েছে। এ থুতু জাতীয় যক্ষ্মা রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা, কালচার ও জিনএক্সপার্ট/ রিপামপিসিন সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা হয়েছে। বুকের এক্স-রে কেন্দ্রীয় রেডিওলজিস্টরাও পর্যালোচনা করেছেন। 

একটি কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল যক্ষ্মার লক্ষণ বাছাই ও রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফলাফল, কালচার ও জিনএক্সপার্ট/ রিফামপিসিন পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের জরিপের সংজ্ঞা অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।

অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ১৯,০৫৮ (১৯.৩ ভাগ) ছিলেন ধূমপায়ী। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। যত বয়স বেশি তত বেশি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা গেছে। যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি তাদের মধ্যে যক্ষ্মার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। গ্রামাঞ্চলের চাইতে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি পাওয়া গেছে। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ২৬০ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত। সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে অনুমিত হয় যে, প্রতি বছর প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ২২১ জন নতুন করে (ইনসিডেন্স) যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। আরও হিসাব করে দেখা গেছে যে, যতজন মানুষ যক্ষ্মা রোগী বলে স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে প্রজ্ঞাপিত (নোটিফিকেশন) হয়েছেন, যক্ষ্মা রোগীর ব্যাপকতা (প্রিভ্যালেন্স) তার চেয়ে ২.৮ গুণ। অর্থাৎ সব বয়সী যক্ষ্মা রোগীর অর্ধেকেরও বেশি শনাক্তের বাইরে থাকেন। পঁয়ষট্টি বছর বা তার বেশি বয়সী রোগীদের মাঝে এ হার অনেক বেশি, ৪.৩ গুণ। এ জরিপ হয়েছে প্রায় ১০ বছর হয়ে গেছে। নতুন আর একটি জাতীয়ভিত্তিক জরিপের সময় হয়েছে। গত জরিপের ফলাফল এবং অভিজ্ঞতা নতুন জরিপের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশে যক্ষ্মার উচ্চ হারের জন্য কতকগুলো কারণকে দায়ী করা যেতে পারে। (১) দেরি করে চিকিৎসা নেওয়া; (২) হাতুড়ে চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া: (৩) সচেতনতার ঘাটতি। সরকার বিনামূল্যে ডটস কর্মসূচির মাধ্যমে যক্ষ্মার ওষুধ দিয়ে থাকে, এটা অনেক মানুষ জানেন না; (৪) দারিদ্র্য।

যক্ষ্মার জন্য যে বিসিজি টিকা আছে, সেটা আবিষ্কার হয়েছিল ১৯২১ সালে। এটা নবজাতক শিশুকে দেওয়া হয়। এরপ আর কোনো নতুন উন্নত টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, যদিও যক্ষ্মা পৃথিবীর অন্যতম একটি মরণব্যাধি। এ টিকা শিশুদের মাঝে টিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোগায়, কিন্তু বয়স যত বাড়ে তত এর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই নতুন আরও উন্নত টিকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। 

একটি নতুন যক্ষ্মার টিকা এম৭২/এএস০১ই-এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। জিএসকে বায়োফার্মা কোম্পানি প্রথম এ টিকা প্রস্তুত করেছিল। বয়োসন্ধি ও পূর্ণ বয়স্ক মানুষ যারা সুপ্ত যক্ষ্মায় (ল্যাটেন্ট টিবি) আক্রান্ত তারা এ টিকা থেকে যক্ষ্মা প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করবেন। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে যক্ষ্মা সংক্রমণের উচ্চহার, সেখানে প্রচুর মানুষের মধ্যে সুপ্ত যক্ষ্মা রয়েছে। যাদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, দেহে সুপ্ত যক্ষ্মা থাকলেও তারা সাধারণতঃ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন না। 

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজের দেশকে প্রত্যাহার করে সব চাঁদা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ইউএসএআইডির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন, এবং এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যক্ষ্মা, এইচআইভ/এইডসসহ বিভিন্ন জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের কার্যকলাপে। এর ফলে যক্ষ্মাজনিত মৃতুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশ এত দরিদ্র নয়। আমরা কয়েক বছরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা দেশের সম্পদ দিয়েই সম্ভব। দরকার শুধু অগ্রাধিকার নির্ণয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর কার্যকরী পরিষদ সদস্য
[email protected]

উৎসব হোক যুগে যুগে

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ পিএম
উৎসব হোক যুগে যুগে
আবুল কাসেম ফজলুল হক

লোক-ঐতিহ্যর ভেতর থেকেই আমরা পয়লা বৈশাখ পেয়েছি। লোক বলতে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দিক্ষা অর্জন করেননি। এদের মধ্যেও অনেক বুদ্ধিমান লোক আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলেই মানুষ শিক্ষিত হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও দেশে অনেক লোক আছেন যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝেন। তাদের মধ্য থেকেও আমরা পয়লা বৈশাখের ধারাবাহিকতা খুঁজে পাই। একটা সময় যারা গ্রাম থেকে শহরে আসত, তারা পয়লা বৈশাখকে গ্রাম্যতা বলত। গ্রাম্যতা ছেড়ে শহুরে হওয়ার প্রবণতা পঞ্চাশের দশকেও ছিল। সেসব বিবেচনা করে জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো আলোচনা করে আমরা উন্নত ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে আমাদের ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই।...


পয়লা বৈশাখ জাতীয় চেতনার উৎসব। তার পরও পয়লা বৈশাখ নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়। কিছু রাজনৈতিক সংগঠন আছে যারা পয়লা বৈশাখ উদযাপনকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা স্বীকার করতে চায় না। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পর থেকে পয়লা বৈশাখ উদযাপনকে বাতিল করার জন্য অনেক বুদ্ধিজীবী চেষ্টা করেছেন। সুফিয়া কামাল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক বুদ্ধিজীবী মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা কিছু সামনে এনেছেন, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত না। পয়লা বৈশাখ নিয়ে আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনা ছিল অন্যরকম। তাই পয়লা বৈশাখ উদযাপনের জন্য ভাতা দিয়েছেন। পয়লা বৈশাখ নিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এত খারাপ কাজ করেছে, যার ভেতর থেকে আমরা বের হতে পারিনি। যারা বিতর্ক সৃষ্টি করছে তাদের জিজ্ঞেস করা দরকার, তারা কী করছে। এসব লোকের আত্মশুদ্ধি দরকার। বৈশাখ নিয়ে মারদাঙ্গা বক্তব্য দেওয়া চরম অন্যায়। 

বাংলাদেশ জন্মের ৫৪ বছর পার হতে 
চলেছে। এই সময়ের মধ্যেও পয়লা বৈশাখকে আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারিনি। পয়লা বৈশাখ আনন্দের সঙ্গে উদযাপিত হোক, এটাই আমরা চাই। বাংলাদেশের মানুষ একই সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করুক এটাই চাই। 

বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার আগে পয়লা বৈশাখ ছিল একটা আন্দোলন। পাকিস্তান ছিল খুব অস্বাভাবিক রাষ্ট্র। ব্রিটিশরা যখন দেশ শাসন করেছে তখন তারা হিন্দু ও মুসলমানদের ভেতরে সবসময় বিভেদ লাগিয়ে রাখত। শেরেবাংলা ফজলুল হকের বক্তব্যে শুনেছি যে, হিন্দু-মুসলমানদের বিরোধে গত ২৫ বছরে ভারতবর্ষে প্রায় ১ কোটি লোক নিহত হয়েছে। ভালো কথাগুলো আমরা কখনো মনে রাখি না। অনেক কর্তৃত্ব দেখানোর জন্য যারা কাজ করে তারা অনেক সময় জাতিকে দুর্বল অবস্থায় রাখে। একদলীয় জাতীয় ঐক্য থাকা দরকার। যত দল তত মত, তত ধর্ম। সবার জন্য কাজ করতে জাতীয় ঐক্য থাকা দরকার। পয়লা বৈশাখের ব্যাপারেও এমন হওয়া উচিত। গোটা পৃথিবীর সব কাজকর্মই খ্রিষ্টানদের দিয়ে চলে। তবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। 

পয়লা বৈশাখ নিয়ে আমাদের একটা সন ও তারিখ ছিল যেটা আমাদের অনেক গর্বের বিষয়। আগামী বছরগুলো কীভাবে কাটাব তা নিয়ে সুদূরপ্রসারীভাবে ভাবতে হবে। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

পয়লা বৈশাখ নিয়ে অনেক সময় সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক বিষয়গুলও সামনে উঠে আসে। এসব শব্দ ব্যবহারে আমি মোটেই আগ্রহী নই। ইংরেজরা এই ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করে অনেক দেশ ভাগ করে গেছেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখায় সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি নেই। কাজী নজরুলের লেখায় হিন্দু-মুসলিম বিরোধ এই কথাটি তেমন নেই। ভারতবর্ষে তেমনভাবে  সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি ছিল না। ইংরেজরা কমিউনালিজমের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি নিয়ে আসে। কবি জসিম উদ্দিন, আবুল ফজল, কাজী নজরুল এবং কাজী মোতাহার হোসেন চোধুরীর মতো জ্ঞানী মানুষের কথা শোনা উচিত। ইংরেজরা একসময় শক্তিশালী ছিল, কিন্তু এখন দুর্বল হয়ে গেছে। ইংরেজরা নানা কায়দায় আমাদের দখল করেছিল। সেই ইংরেজদের কথা আমাদের সাদরে গ্রহণ করা ঠিক না। বাংলাদেশে যে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ও মন্দির ভাঙা  হচ্ছে তা কি বিরোধের কারণে হচ্ছে? আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। 

পয়লা বৈশাখ উদযাপনের ধারণা তো অনেকটা বদলে যাচ্ছে। তবে এটা খারাপ না। পশ্চাৎপদ ধারণা থেকে যদি আমরা অগ্রসর হতে পারি তাহলে খারাপ না। অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। যারা দেশে মন্দির ভাঙা ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করেছে তারা অবশ্যই ক্রিমিনাল। সেই মুজিব সরকার থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনাকে ক্রিমিনাল কেস হিসেবে  নিতে হবে। এসব কাজ যারা করছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বাঙালি আদি সময় থেকে সেন আমল, মুঘল, পাঠান ও মুসলিম শাসন এবং ইংরেজ আমলে বাঙালির যে ঐতিহ্য তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আগামী বছর এবং ভবিষ্যতে কী করব তার একটা দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে। এমন কোনো কিছু করা যাবে না যাতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। এমন কাজ করা যাবে না, যারা এই কাজ করে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যারা করে না তাদেরও ক্ষতিসাধন হয়। এদের থেকে জাতীয় স্বার্থেই সাবধান থাকতে হবে। 

লোক-ঐতিহ্যর ভেতর থেকেই আমরা পয়লা বৈশাখ পেয়েছি। লোক বলতে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দিক্ষা অর্জন করেননি। এদের মধ্যেও অনেক বুদ্ধিমান লোক আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলেই মানুষ শিক্ষিত হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও দেশে অনেক লোক আছেন যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝেন। তাদের মধ্য থেকেও আমরা পয়লা বৈশাখের ধারাবাহিকতা খুঁজে পাই। একটা সময় যারা গ্রাম থেকে শহরে আসত, তারা পয়লা বৈশাখকে গ্রাম্যতা বলত। গ্রাম্যতা ছেড়ে শহুরে হওয়ার প্রবণতা পঞ্চাশের দশকেও ছিল। সেসব বিবেচনা করে জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো আলোচনা করে আমরা উন্নত ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে আমাদের ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই। 

মানুষের জীবন এখন শুধু আনন্দ চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আনন্দ অবশ্য আছে, সেই সঙ্গে অনেক দুঃখ-কষ্টও রয়েছে। ফসলের উৎপাদন ও কারখানার উৎপাদন বাড়াতে হবে। শিল্প, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের মতো সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে হবে। 

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নামেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সবকিছুতেই জাতীয় চিন্তাচেতনা, বিচার-বিবেচনা করতে হবে। তবে পয়লা বৈশাখের মতো জাতীয় উৎসব শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের হাতে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। বেগম সুফিয়া কামাল থেকে শুরু করে অনেক বুদ্ধিজীবী পয়লা বৈশাখের সঙ্গে জড়িত। আগের দিনের পত্রিকা দেখলেও বোঝা যাবে যে, কারা পয়লা বৈশাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সাধারণ মানুষ যারা কম শিক্ষিত ও দরিদ্র তারা পয়লা বৈশাখের বর্তমান বিষয়গুলো মেনে নিতে পারেননি। চারুকলা ইনস্টিটিউট পয়লা বৈশাখের ব্যাপারটা জনগণকে বুঝিয়ে বলতে পারেনি। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ডিনসহ শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ আছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখের ব্যাপারটি নিয়ে তারা যেভাবে অগ্রসর হয়েছে সেটা ততটা শোভন ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য দেশবাসীকে বোঝাতে পারেনি। ভুল তো মানুষেরই হয়। অনেক সময় একটা জাতিরও  অনেক ভুল হয়। পয়লা বৈশাখের ব্যাপারটায় শুধু চারুকলা নয়, সরকারেরও ভূমিকা থাকা দরকার। সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।

পয়লা বৈশাখ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তা হয়ে ওঠেনি। যখন পাকিস্তান ছিল তখন পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বাঙালি সংস্কৃতি চেয়েছি। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদ চেয়েছি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে পয়লা বৈশাখ পালন একটা বড় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। তখন পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। তখন পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও ছায়ানট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগের দিনে গ্রামে পয়লা বৈশাখ পালিত হতো। তার পর শহরেও বৈশাখ পালিত হতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পয়লা বৈশাখ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৭২ সাল থেকেই উচ্চশ্রেণির লোকেরা পয়লা বৈশাখ তাদের করে নেওয়ার চেষ্টা করে। পান্তাভাত খাওয়া কি পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্য? পান্তাভাত গরিব মানুষ অভাবের জন্য খেত। অতীতে এগুলো খেলেও আজকের দিনে তা খাওয়া উচিত না। আজকের দিনে আমরা কেমন আছি এবং ভবিষ্যতে কেমন হতে চাই তা ভাবতে হবে। আমাদের অতীতে ভালোমন্দ কী ছিল তা জানতে। অতীত বর্তমানকে শিখিয়ে দেবে কী করতে হবে। মানুষের মন পরিবর্তন করার জন্য সবাইকে সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে।    

লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও রাষ্ট্রচিন্তক  

বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির প্রেরণার উৎস

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির প্রেরণার উৎস
নেছার আহমদ

যে জাতি তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কায়দাকানুন ও চালচলন প্রভৃতিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির আড়ালে হারিয়ে যেতে দেয়, সে জাতি তার অস্তিত্ব নিয়ে কোনো দিনই ঠিকে থাকতে পারে না। সব ধরনের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষের ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য কামনা করে নতুন বাংলা বর্ষকে 
স্বাগতম জানাই।...

আবহমান বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাংলার সাংস্কৃতিক সভ্যতার ধারাবাহিকতা। এ ধারাবাহিকতায় তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সর্বদা তারা ছিল অগ্রগণ্য, মহান সংগ্রামী তিতুমীর, সুবেদার রজব আলী, মাস্টারদা সূর্য্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরাম থেকে শুরু করে সবাই ছিলেন বাঙালির গর্বে গৌরবান্বিত মহান সৈনিক। মীর মদন, মোহন লালের আদর্শেই উজ্জীবিত বাঙালিরা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালিত্ব ও বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষা করে এসেছেন। একপর্যায়ে ১৯৪৭ সালে ধূর্ত ব্রিটিশ রাজত্বের কপাট ভেঙে বাঙালিরা স্বাধীনতা পেয়েছিল, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে হাজার বছরের ঘুম ভেঙে বাঙালি জেগে উঠেছিল হিন্দু কিংবা মুসলমান পরিচয়ে নয়, বাঙালি জাতি হিসেবে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬২, ১৯৬৯, পরিশেষে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালিত্বের জয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সেটিও হতে দিল না। ফলে ১৯৭১-এ জেগে ওঠা বাঙালি জাতি ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করে বিশ্বের কাছে চমক দেখিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে।

বর্ষ বা সন গণনার ইতিহাস: সন, তারিখ দুটি আরবি শব্দ, সন অর্থ বর্ষ, ফার্সিতে সাল আর তারিখ অর্থ ইতিহাস, আমরা বাংলায় বলি দিন। দিনের সমষ্টির নাম কাল, সপ্তাহ, মাস বা বর্ষ। তেমনি কোনো একটি বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত হয় এক-একটি অব্দ। সর্বপ্রথম কখন এই অব্দের সূত্রপাত হয়েছিল তা সঠিকভাবে কোনো গবেষক নির্ধারণ করতে পারেনি। এনিয়ে নানা মুনির নানা মত প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মিসরীয়রা তারকার সাহায্যে বর্ষ গণনা শুরু করেছিল। তাদের মধ্যে কৃষিকাজের সুবিধার্থে বর্ষপঞ্জিকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘদিনের গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছিলেন ৩৬৫ দিন পর পর লুব্ধক নামক নক্ষত্রটি সূর্যোদয়ের ঠিক পূর্বক্ষণে আকাশে দৃশ্যমান থাকে। এটি একমাত্র তারকা যা দৃষ্টিগোচর হয়। এ লুব্ধককে কেন্দ্র করেই মিসরে শুরু হয় বর্ষ গণনা। খ্রিষ্টপূর্ব ২৩০ অব্দে মিসরে নববর্ষের প্রচলন হয় শরৎ ঋতুতে। এ ধরনের আরও অনেক বর্ষ ও সনের উল্লেখ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায়। 
বাংলা সনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: ৫০০ বছর আগে আমাদের এই বাংলা সনের জন্ম। জন্মস্থান বর্তমান ভারতের দিল্লি নগরীতে। এ সনের জন্মদাতা ছিলেন একজন অবাঙালি গবেষক। জন্মলগ্ন  থেকে এ সনের পরিচিতি ছিল ফসলি সন হিসেবে। মোগলদের রাজকার্যে সুবিধা অনুযায়ী ৪৪৬ হিজরি কমরি বা চান্দ্র বছরের হিসাব অনুযায়ী পরিচালিত হতো। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের দিনক্ষণ পূর্ব থেকেই সঠিকভাবে চান্দ্র মাসের হিসাবে নির্ধারণ করা সম্ভবপর ছিল না।

 এই অসংগতি ও অসুবিধা দূর করার মানসে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে পণ্ডিত ফতেউল্লাহ সিরাজির দীর্ঘ গবেষণার ফসল এই বাংলা বর্ষ। প্রথমে সম্রাট আকবরের ইচ্ছে ছিল তার সদ্যপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম ‘দীন-ই-ইলাহি’ ধর্মের স্মরণে ইলাহি সন চালু করবে। কিন্তু তা সর্বসাধারণের কাছে সমাদরে গৃহীত না হওয়ার কারণে নতুন সৌর ফসলি সনই সবার কাছে গৃহীত হয়েছিল। পণ্ডিত ফতেউল্লাহ সিরাজি দীর্ঘ গবেষণা করে ১১ এপ্রিল ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ২৭ বা ২৮ রবিউসসানি ৯৬৩ হিজরি কমরি সন থেকে নতুন এ সৌর ফসলি সনের প্রচলন করেন। ১ মহরম ছিল ১৬ জুলাই, তাই হিজরি সন গণনা শুরু হলো এই ১৬ জুলাই  থেকে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) হিজরি কমরি সনের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। ৯৬৩ হিজরি কমরি সনের রবিউসসানি পর্যন্ত যে চান্দ্র হিসাবটি চালু ছিল তাতে সৌর হিসাব যুক্ত হয়ে ফসলি সনের যাত্রা শুরু হয়। এই ফসলি সন হিজরি সনেরই চান্দ্র ও সৌর হিসেবের মিলিত রূপ।
 ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পরবর্তীকালে এই সনটি উপেক্ষিত হওয়ায় শুধু বাংলার মাটিতে এটি গৃহীত হয়েছে বলে আজ এর নাম বাংলা সন। ভারত সরকার ১৩৬৪ সালে অর্থাৎ ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ বাংলা সন পরিত্যাগ করে কনিষ্ক প্রবর্তিত শকাব্দ সনের প্রবর্তন করেন। ওই সময় ছিল ১৮৮০ শকাব্দ। ভারত সরকার ১৩৬৩ সালের ৮ চৈত্র তারিখে ১৮৭৯ শকাব্দের ১ চৈত্রকে নববর্ষের প্রথমদিন ধার্য করে। যখন থেকে এ ফসলি সন বা বাংলা সন বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহার হতে থাকে তখন  থেকে এর বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় এবং এ বাংলা সনে মাসের ও দিনের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে না বলে পরবর্তীতে সবাইকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। যার কারণে এ বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য তৎকালীন সরকার বিশিষ্ট ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে।

 এ কমিটি ১৯৬৬ সালে একটি সুপারিশ প্রণয়ন করে। সে সুপারিশ মোতাবেক একাডেমি ১৩৭৩ সালে অর্থাৎ ১৯৬৮ ইংরেজি সন  থেকে একটি সংশোধিত দিনপঞ্জি চালু করে। এতে বছরের প্রথম পাঁচ মাস (বৈশাখ  থেকে ভাদ্র) ৩১ দিনে আর বাকি সাত মাস ৩০ দিনে গণনার হিসাব ধরা হয়েছিল। ৪ দ্বারা যে বছর বিভাজ্য হবে তাকে অতিবর্ষ গণ্য করে ইংরেজি সনের অনুরূপ চৈত্র মাসকে ৩১ দিন ধরে গণনা করার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু ড. শহীদুল্লাহর সুপারিশ অনুযায়ী আজও আমাদের দেশে কোনো সন চালু হয়েছে কি না আমার জানা নেই।

 বর্তমানে পুরানো দিনের হিসাব অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের চুলচেরা দিন মাস তিথি নির্ধারণের প্রয়োজনেই পূর্ববর্তী হিসাবে আজও পঞ্জিকাসমূহে প্রচলিত হয়ে আসছে। এ বাংলা সনের ১২ মাসের নামসমূহের একটি ইতিবৃত্ত রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র বিশারদরা নক্ষত্রের হিসাব অনুযায়ী ৩৬০ দিন বছর গণনা করে থাকেন। ২৭টি তারকার অবস্থানকে কেন্দ্র করে নক্ষত্র বছর আবর্তিত হয়। এ ২৭টি তারকা ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র মতে অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিনী, মৃগশ্চিরা, আদ্রা, পুনর্বসু, পূজা, অন্বেষা, মঘা, পূর্বাফাণ্ডুনী, উত্তর ফাণ্ডুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যৈষ্ঠা, মুনা, পূর্বষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভীষা, পূর্বাভাদ্রপদ, উত্তর ভাদ্রপদ এবং রেবতী। উপর্যুক্ত তারকাগুলোর সোয়া দুই পাদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক একটি মাস। যেমন: অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা  থেকে কার্তিক, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাণ্ডুনী থেকে ফাগুন, চৈতা থেকে চৈত্র, বিশাখা থেকে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাড়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র মাসের নামকরণ করা হয়েছে। অনুরূপ মৃগশ্চিরা থেকে হয়েছে মার্গশীর্ষ মাস, পরবর্তীকালে এ মাসের নাম রাখা হয় অগ্রহায়ণ মাস।

যে জাতি তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কায়দাকানুন ও চালচলন প্রভৃতিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির আড়ালে হারিয়ে যেতে দেয়, সে জাতি তার অস্তিত্ব নিয়ে কোনো দিনই ঠিকে থাকতে পারে না। সব ধরনের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষের ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য কামনা করে নতুন বাংলা বর্ষকে স্বাগতম জানাই।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
[email protected]

বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ চিরায়ত উৎসবের সূতিকাগার

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
পয়লা বৈশাখ চিরায়ত উৎসবের সূতিকাগার
বদিউর রহমান

পয়লা বৈশাখ বাঙালির চিরন্তন ও সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান; কোনো সন্দেহ নাই। পয়লা বৈশাখ আমাদের চিরায়ত উৎসবের সূতিকাগার; যেখানে সব ধর্মের মানুষ অংশ নেন। 

এ দেশের সংস্কৃতিকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা হয়েছে। সংস্কৃতিকে ধর্মের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন অনেকে। কিন্তু একটি দেশে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা বসবাস করেন। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সংস্কৃতির অঙ্গ। সংস্কৃতি নয়, ধর্মই সংস্কৃতির অঙ্গ। সংস্কৃতি হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ।

যাই হোক, পয়লা বৈশাখকে কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছেন তা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। উদীচী পয়লা বৈশাখের সর্বজনীনতাকে ধারণ করে। আমরা মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা উচিত। আমরা সবাই ভোরবেলা ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনে যাব, উৎসবে শামিল হব। 

পয়লা বৈশাখ উদযাপনে অনেকে অন্য একটি দেশের রাজনীতি খোঁজেন। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখের বিস্তর তফাত রয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলা একাডেমিতে বর্ষপঞ্জি সংশোধন করা হয়। এরপর আমাদের পয়লা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল, পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল। আর পয়লা বৈশাখে এই যে সরকারি ছুটি কিংবা উৎসব ভাতা দেওয়া হয়, তাতেই তো আমাদের সংস্কৃতির স্বীকৃতি মেলে। বৈশাখী মেলার আয়োজন করা, হালখাতা করা- সবেতে তো আমাদের নিজস্ব বাঙালি অর্থনীতিই সম্পৃক্ত। এ বৈশাখের সঙ্গে আমাদের নাড়ির সম্পর্ক। 

আমরা বাঙালিরা যে সংস্কৃতি ধারণ করি তা অসাম্প্রদায়িক। আমরা পয়লা বৈশাখে সুখী-সুন্দর সমাজব্যবস্থার প্রত্যাশা করি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই পয়লা বৈশাখ হয়ে উঠুক সবার অনুষ্ঠান। সবাই মিলে সমস্বরে গাইব দেশের গান। এ উদযাপনে কোনো রাজনীতি আর বাইরের কোনো দেশের প্রভাব খোঁজার প্রচেষ্টা বৃথা। 

অধ্যাপক বদিউর রহমান, সভাপতি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী 

বাংলা নববর্ষ আমরা অগ্রসর হয়ে বিশ্বমানব হব

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
আমরা অগ্রসর হয়ে বিশ্বমানব হব
ডা. সারওয়ার আলী

ছায়ানট মনে করে, নববর্ষে রমনা বটমূলের আয়োজনে বাঙালি জাতিসত্তারই বিজয় ঘটে। এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব; একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এ উৎসব নিছক বাঙালি সাজার প্রতিযোগিতার নয়। এ উৎসবের মন্ত্রকে ধারণ করে আমরা অগ্রসর হয়ে বিশ্বমানব হব। যদি তা হতে পারি তাহলে সামাজিক নানা অবক্ষয় থেকে মুক্ত হব। আমাদের অবিরাম প্রার্থনা সবার জীবন হোক স্বস্তিময়। 

দেশে ক্রান্তিকাল চলছে এ কথা আমি বলব না। এই শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। আমাদের প্রয়াত সভাপতি সন্জীদা খাতুনও এই শব্দটা পছন্দ করতেন না। আমরা বলব, সমাজে একটা পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনে আজকে রাষ্ট্রকে নিয়ে যত চিন্তা হয়, তার চেয়েও ঢের চিন্তা আমাদের এই সমাজকে নিয়ে। রাষ্ট্রের কী পরিবর্তন হলো, সেটির চেয়ে ভাবনার বিষয় হচ্ছে যে সমাজের গভীরে কতটা পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ ধর্মের নামে যে বিদ্বেষ, বিভক্তি চলছে সমাজে তাতে আমাদের মনে শঙ্কা জাগে। আমরা দেখি প্রতিটা দিন নারীর মর্যাদাহানিকর বক্তব্য চলছে। ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির চরম বিরোধ, এমন এক ধারণা অনেক মানুষের মনে যেন গেঁথে গেছে। অথচ ধর্ম চর্চার সঙ্গে সংস্কৃতির তো কোনো বিরোধ নেই। 

যারা এসব করছে, তাদের সঙ্গে আগের সরকারের আমলে একটা সমঝোতার ব্যাপার ছিল। আমাদের আশঙ্কা যে এটি এখন পরিপুষ্ট হচ্ছে। আমাদের কথা, এটি থেকে এখন আমাদের মুক্তি পেতে হবে। এটুকু মুক্তির মধ্যে দিয়ে কিন্তু মানবতার মুক্তির বিষয়টি আছে। রাজনীতি মানুষকে বিভক্ত করে, সংস্কৃতি মানুষকে মিত্র করে। 

বাংলা নববর্ষে প্রত্যাশা সমাজে সংস্কৃতির এই শক্তির বিকাশ হোক। শুধু বাঙালি নয়, আদিবাসীদের সংস্কৃতিরও বিকাশ হোক। সে প্রয়াস আমরা করতে চাই কারণ আমাদের ক্ষেত্র তো বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা। আজ সরকারের আয়োজনে বহু জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হচ্ছে। বাংলা নববর্ষে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। 

নির্বাহী সভাপতি, ছায়ানট 

বাংলা নববর্ষ বিকশিত করার দৃষ্টিভঙ্গি দরকার

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৪ এএম
বিকশিত করার দৃষ্টিভঙ্গি দরকার
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক

পয়লা বৈশাখ তো উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। এই উৎসব অনুষ্ঠানে নিজেদের জাগিয়ে তোলার, নিজেদের বিকশিত করার দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা আর গানের অনুষ্ঠান হতে পারে। সেগুলোতে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস উঠে আসতে পারে। সেই অতীত কখনো কখনো খুব ভালো ছিল, কখনো কখনো খুব খারাপ ছিল। ভালোটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়বস্তু সাজিয়ে নিয়ে উৎসব অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। 

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হলে এ দেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে সরকার সম্পৃক্ত হয়। তারপর স্বাধীনতা অর্জনের পরে পয়লা বৈশাখ আরও ব্যাপকতর আকারে সামনে এসেছে আমাদের। পয়লা বৈশাখ উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের আত্মসমালোচনার সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসা। যে কাজগুলো আমাদের করা অনুচিত তা নিয়ে যেন সতর্ক হই, আমরা যেন সেসব কাজ থেকে বিরত থাকি তা মনে করিয়ে দেওয়া। আর পয়লা বৈশাখে সে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কোনো সংগীতের উৎসবে যাব। এতে নানা ধর্ম-মতের মানুষ যেমন যুক্ত হবেন তেমনিভাবে নানা রাজনৈতিক দলের লোকেরাও থাকতে পারেন। আমার কথা হলো, পয়লা বৈশাখ যেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের হয়। 

সময়টা নানা দিক থেকে সংঘাতময়। তাই উপজেলা প্রশাসন বা জেলা প্রশাসন যার অধীনেই নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হোক না কেন, পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোথাও মারামারি বা সংঘাত না বাধে।

খুব একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশ এখন নানা সমস্যায় আচ্ছন্ন। রাজনৈতিকভাবে দেশ এখন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে। এখন দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে তারা বাংলাদেশকে কীভাবে গড়তে চান। গণজাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থানের পরে এখন যত ভালো কর্মসূচি দেওয়া হবে তার প্রভাব যেন দীর্ঘমেয়াদে এ দেশের জন্য কল্যাণকর হয়, সে কথা ভাবতে হবে।

সভাপতি, বাংলা একাডেমি