ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

কর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০১:১২ পিএম
কর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ

ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম কর আহরণ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। এটা সম্ভব হয়েছে সেসব দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে। যেমন- ভারত ১৯৬১ সালে, মালয়েশিয়া ১৯৬৭ সালে ঔপনিবেশিক আমলের আয়কর আইনকে যুগোপযোগী করে নেয়। ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া কয়েক বছর পরপর তাদের আয়কর আইনকে রীতিমতো ঢেলে সাজায়। একই সমতলে অবস্থানরত কমনওয়েলথ সদস্য দেশ বাংলাদেশে আয়কর আইনের আধুনিকতম সংসকরণ ১৯৮৪ সালে, তাও অর্ডিন্যান্স আকারে। তা যুগোপযোগী করতে আইন আকারে পাস ও প্রবর্তনের কসরত চলছে গত দেড় যুগ ধরে। বাংলাদেশ ও ভারতের কর ব্যবস্থা, সুবিধা, ফরম্যাট মূলত একই।

 একটা বড় প্রশাসনিক পার্থক্য হলো যে, বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ড পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কর, এক মন্ত্রণালয় এবং একজন প্রশাসনিক চেয়ারম্যানের অধীনে। ভারতে তা নয়, সেখানে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ করের প্রশাসন আলাদা। ভারতে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরোক্ষ কর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেও ভারতের কর বিভাগ বাস্তবায়নকারী হিসেবে স্বশাসিত। কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পলিসি প্রেসক্রিপশন ও থ্রেসহোল্ড দেওয়ার ব্যাপারে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও একটা শক্তিশালী অবস্থান যেমন আছে তেমনি রাজ্য পর্যায়ে আছে স্থানীয় কর আইন ও ব্যবস্থাপনার সমান্তরাল প্রণয়ন ও প্রয়োগের সুযোগ। 

আরেকটি হলো হিসাব সংরক্ষণ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশেরও আছে, কিন্তু হিসাব পদ্ধতি, কোম্পানির আইন সবমিলিয়ে দেশগুলোতে একটা টেকসই সংস্কৃতি গড়ে উঠলেও সে সড়কে বাংলাদেশের ওঠার প্রয়াস প্রলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এক হাতে হয়। তাই এখানে ডিসক্রিয়েশনারি পাওয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগত বিষয়গুলো অনেক জটিল, স্বেচ্ছা ব্যাখ্যা আচারি ও নিবর্তনমূলক হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে আইনের ব্যাখ্যা ধোঁয়াশে হয়ে যায়। ভারতে, ভিয়েতনামে, মালয়েশিয়ায় ওই সমস্যা তেমন একটা নেই। তারা অনেকটা স্বচ্ছ, সংহত একটা আধুনিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়েছে। 

ভারতে পরোক্ষ কর ব্যবস্থাপনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কারণ দেশটির দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আমদানি-রপ্তানির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানই হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে যেহেতু শুল্কের ও মূল্য সংযোজন করের বিষয় জড়িত। সেহেতু সে মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছে শুল্ক ও ভ্যাট দপ্তরকে। ভ্যাট আইন প্রণয়ন ও প্রবর্তনে বাংলাাদেশ যথেষ্ট ধীর এবং এখনো দোটানায়। ভ্যাট মধ্যস্বত্ব ভোগকারীদের দখল থেকে সরকারি তহবিলে আনার আইনকানুন, কলাকৌশল যেন সহজে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বাংলাদেশে আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো যে, মূল্য নির্ধারণ কিংবা ট্যারিফ ঠিক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন এনবিআর শুল্ক কর হার নির্ধারণ ও আরোপের সময় সেটিকে তেমন একটা আমলে নেয় না।

 একইভাবে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক পরিশোধসংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন জারি করতে গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আনতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের মধ্যে মতামতের রশি টানাটানিতে শুল্ক আহরণ মাঠে মারা যায়। এ ঝামেলা ভারতে নেই, নেই মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়, ভিয়েতনামের পরিস্থিতি আরও স্বচ্ছ ও সাবলিল। ভারতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই আমদানি-রপ্তানি বিধির আলোকে শুল্ককরাদি আরোপ করে। ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায় শুল্কায়ন সিদ্ধান্তদানকারী টায়ার বা লেয়ার অনেক কম। অধিকাংশ দেশে ট্যারিফ কমিশন শুল্ক আরোপ থেকে শুরু করে সবকিছু দেখে। বাংলাদেশের ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে এনবিআরের সুযোগাযোগ নেই। গণশুনানি করে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু শুল্ক আরোপ করে এনবিআর। এ জটিলতা নিরসনে সংস্কারের কথা বলা হলেও তাতে খুব একটা অগ্রগতি নেই। 

কর ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে আছে ভিয়েতনাম। দেশটির করব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের মৌল পার্থক্য হলো ব্যক্তি এবং কর্পোরেট কর সম্পূর্ণ ব্যক্তি বা কোম্পানির ওপরই অর্পিত। কর পরিশোধ তাদের দায়-দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি যা ঘোষণা দেবে, তার ভিত্তিতেই কর আরোপ হবে। কালেভদ্রে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা দ্রুত নিরীক্ষা ও নিরসন করা হয়। নিরসনের স্বাধীনতা সেখানে দেওয়া আছে। ব্যক্তিকরের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সাল সেলফ অ্যাসেসমেন্ট বাংলাাদেশে প্রবর্তনের সময় মনে করা হয়েছিল, ব্যক্তি করদাতাদের যদি কর অফিসে এসে রিটার্ন পূরণ করতে হয় তাতে অনেক সময় লাগে এবং জনে জনে এভাবে পরীক্ষা করে নেওয়াও সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ইউনিভার্সল সেলফ ডিক্লারেশন সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না- এ অনুযোগ-অভিযোগ সন্দেহে অডিটের নামে করদাতাদের বারবার ডাকা হচ্ছে। 

এতেই কর প্রদানে আগ্রহ ও দায়িত্বশীলতায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। ব্যক্তিকে যে ঘোষণা করার অধিকার দেওয়া হলো, শেষপর্যন্ত পারস্পরিক সংশয়-সন্দেহ-হয়রানির অভিযোগের ভাগাড়ে পড়ে অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নোটিস পেয়ে অফিসে গিয়ে ধন-সম্পদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে করদাতারা অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে প্রায়শই অভিযোগ উঠছে। আবার করদাতারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না বলে রাষ্ট্র ও রেভিনিউয়ের স্বার্থে তাদের ডাকতে হচ্ছে। সীমিত লোকবলসম্পন্ন কর বিভাগের মনোযোগ ও সময় বিদ্যমান করদাতাদের পেছনে ব্যয়িত হচ্ছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য এখানে। সেখানে আয়করের ক্ষেত্রে বলে দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ব্যক্তির, কোম্পানির। কর যা দেওয়া হবে, কর অফিস তাই নেবে। এভাবেই চলছে। কোনো কোনো সময় অভিযোগ পেলে সেটি খতিয়ে দেখা হয়। বাংলাদেশের মতো গরপরতা অডিট করা হয় না সেখানে। সেখানে কর আইন বেশ সু-সংজ্ঞায়িত এবং বিস্তৃত। সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা আছে সবকিছু। ফলে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগগুলো তেমন নেই। প্রতি বছর সংস্কার ও সহজীকরণের দিকেই তাদের মনোযোগ বেশি।

বাংলাদেশে সহজীকরণের প্রয়াস চলছে তো চলছেই, পদ্ধতি সাপোর্ট করছে না। ঘুরে-ফিরে দেখা যায় একটা আন্ত-অবিশ্বাস বিরাজ করছে। পরস্পরকে এড়িয়ে যাওয়ার এবং ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। এ ধরনের ঘটনা ভিয়েতনামে খুব কম। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও সহজ ও পদ্ধতিমাফিক করায়ন ও আহরণের এবং বিভিন্ন কর রেয়াতের ব্যবস্থাও আছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য হলো এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক কর সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা থাকলেও রাজস্ব বিভাগের কাছে গিয়ে বাস্তবে তা আরেক রকম মনে হয়। 

একটার সঙ্গে আরেকটার সঙ্গতি নেই। ভিয়েতনামে এ ধরনের জটিলতা ও অসঙ্গতি খুব একটা নেই। রাজস্ব বিভাগ যা বলছে, সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানও তাই বলছে। ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আসার পেছনে এই নীতিগত সংহতি একটা বড় ভূমিকা রাখছে।

কর ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছি- সবার মধ্যে এ বোধটা তৈরি করা জরুরি। এ সামাজিক উপলব্ধিতে সবাইকে আসতে হবে। আসার জন্য এনাবলিং এনভারনমেন্ট তৈরি করতে হবে। বছর দুই আগ থেকে কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যবাধতা জুড়ে দেওয়ায় চাকরিজীবীরা সবাই কিন্তু করের আওতায় এসেছে। তেমনি ট্রেড বডি সমিতি, বাড়ির মালিক সমিতির ওপর সদস্যদের কর দেওয়ার দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে। একজন কর পরিদর্শক সুনির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্টসংখ্যক বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য তলব করতে পারে। পুলিশ বিভাগ, বাড়িওয়ালা থেকে ভাড়াটে সবার তথ্য, কার বাড়িতে কারা থাকে, কয়জন থাকে, সবার তথ্য নিচ্ছে। এগুলো এখন স্থানীয় থানা নিচ্ছে। কর প্রশাসনও সহজেই এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। এভাবে তথ্য সংগ্রহ করেই এনফোর্স করতে হবে। এনফোর্স করার দুর্বলতাতেই কিন্তু মানুষ ফাঁকি দেওয়ার ফুরসত পায়।

আরেকটা বিষয় হলো, করের হার যৌক্তিক হওয়া উচিত। করের ভার যাতে সহনীয় থাকে, সেজন্য কর হার কমাতে হবে। যাতে মানুষ কর দিতে উৎসাহিত হয়। করের হার সুষম করে করের আওতা বাড়ানো যায়। এখন কড়াকড়ি করা হয়, তাদের ওপর যারা কর দিচ্ছে। যারা দিচ্ছে না তাদের ওপর নজরদারি নেই। কারও কারও কর দেওয়াটা অনেকটা পিকিউনারি পানিশমেন্টের মতো হওয়া ঠিক নয়। 

আরেকটা বিষয় আছে সেটি হলো আনুষ্ঠানিক রাজস্ব পরিশোধের বাইরে অনানুষ্ঠানিক লেনদেন বেশি হওয়ার পরিবেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস এবং করভার বেশি হয়। এর বিপরীতে সেই অনুপাতে সেবা পায় না মানুষ। আমরা শুধু ইনফর্মাল ট্রেড শব্দটি শুনেছি, অর্থনীতিতে ইনফর্মাল রেভিনিউ নামে একটা শব্দ বেশ মোটাতাজা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় বাড়তি খাইখরচের রিসিট দেওয়া হয়। স্পিড মানি বা অন্য কোনো নাম দিয়ে বলা হয়, শুল্ক যে দিয়েছেন তা ঠিক আছে, কাজটা আরেকটু গতিশীল করার জন্য কিছু অর্থ দিতে হবে। তার জন্য বিশেষ রঙের একটা স্লিপ আলাদাভাবে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেখানে হিসাব থাকছে সবকিছুর। এ দেশে প্রায় ক্ষেত্রেই নির্ধারিত হারের বাইরে আলাদাভাবে বাড়তি অর্থ লেন দেন হয় তার কোনো হিসাবায়ন নেই। এ ধরনের অস্বচ্ছতা দূর করতে রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে কিছুটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটিকে বেগবান করা এখন সময়ের দাবি। 

করদাতা যখন আগের অর্থবছরের রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তখন নতুন হারে তা দিতে হচ্ছে। এরকম বাড়তি হারের বিষয়টি তিনি আগে অবহিত ছিলেন না। বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকালে এ ব্যাপারে তার প্রস্তুতি ছিল না। এটি কর প্রয়োগ, প্রক্রিয়া ও হিসাবায়ণের ক্ষেত্রে জটিলতার অন্যতম একটি কারণ। করদাতাকে একসঙ্গে প্রশিক্ষিত, উৎসাহিত ও বারবার অবহিত করা যায় না। আয়কর পরিপত্র-১ জারিতে বিলম্ব করেও তাতে কিছু কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা নিরসনে ব্যাখ্যার অবকাশ থেকে যায়। 
দক্ষ লোকবল নিয়ে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি বিভাগ পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ২০০৮ সালের দিকে রাজস্ব বোর্ডের লোকবল ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাব রাখা হয়। 

লোকবল ও কাঠামো প্রায় ২-৩ গুণ বৃদ্ধি করার যে প্রস্তাব তখন রাখা হয়েছিল তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৩ সালের দিকে। সেখানে দক্ষ ও উপযুক্ত লোকবল নিয়োগ দিতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে, যারা সেখানে নিয়োগ পাবেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না পেয়ে তারা এই কাজ কতটুকু করতে পারবেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। বিশেষ করে রাজস্ব বিভাগে যারা কাজ করবেন তাদের মেধা ও দক্ষতা আর দশটা দপ্তর বা বিভাগের চাইতে বিশ্লেষণ ক্ষমতায়, পারঙ্গমতায় অবশ্যই বেশি হওয়া আবশ্যক। ’৮০-এর দশকে বিশেষ বিবেচনায় একটি বিশেষ পর্যায়ের কিছু কর্মচারী এ বিভাগে আত্মীকৃত হন। দুই দশক তাদের সঠিকতা নির্ণয় ও আত্মীকরণ যৌক্তিকতা প্রমাণ উপলক্ষে রজ্জুকৃত প্রায় ৮ ডজন মামলার ফেরে পড়ে রাজস্ব বিভাগে প্রারম্ভিক পর্যায়ে কর্মকুশল কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে উপযুক্ত ও দক্ষ লোকবলের অভাবে ন্যায্য রাজস্ব আহরণ শেষঅবধি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে ধকল সইতে হচ্ছে।

রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় আইনসংগত স্বচ্ছতার আলোকে গতিশীলকরণের স্বার্থে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আইন ও প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা যথা বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। বিশেষ করে কর আহরণ প্রক্রিয়ার যেসব আইনি জটিলতা সেটা ঠিকমতো সংস্কারের মাধ্যমে স্পষ্ট করা না গেলে সমস্যা থেকেই যাবে। অন্তত এ অবস্থায় রেখে ব্যাপক কর আদায়ের যে কথা চিন্তা করা হয়ে থাকে তা অর্জন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আইনের আর্থ-প্রশাসনিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কিছু অসম্পূর্ণতা ও ফাঁকফোকর থেকে থাকে তা সংশোধন করা না গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। 

লেখক: সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম
ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ

মানুষকে ভাষা দিয়ে চেনা যায়, চেনা যায় ক্ষমতা দিয়েও। ভাষা বরঞ্চ অধিক বাঙ্ময়, ক্ষমতার চেয়ে। মুখ খুললেই বক্তার পরিচয় হেসে-খেলে কিংবা রেগে-মেগে বের হয়ে আসে। ভাষা পারে চুম্বকের মতো কাছে টেনে নিতে এবং যন্ত্রের মতো ঠেলে দিতে পারে দূরে। কাছে টেনে নেওয়াটা বিশেষভাবে ঘটে প্রবাসে; প্রবাসে বাঙালি মাত্রই বাঙালির মিত্র, শত্রুতে পরিণত হওয়ার আগে। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে, আমারও আছে বলে দাবি করতে পারি। আজ থেকে ৬৭ট্টি বছর আগে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম পড়তে। তখন আমরা পাকিস্তানি। সেই পরিচয়েই গিয়েছি ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে। উর্দুভাষী যে পাকিস্তানিরা সহযাত্রী ছিল আমার, তাদের কারও কারও সঙ্গে যে বন্ধুত্ব হয়নি তা নয়, হয়েছে। কিন্তু বিদেশে পা দিয়ে বাঙালি মাত্রকেই বন্ধু মনে হয়েছে, সে বাঙালি যে রাষ্ট্রেরই নাগরিক হোক; ভারত-পাকিস্তান তখন শত্রুর সম্পর্ক, কিন্তু সেই শত্রুতা ভারতীয় বাঙালিদের আপনজন ভাবার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়নি।

 পরে, একাত্তর সালে, ভাষার টানের আত্মীয়তাটা আবার দেখেছি, হিন্দু ধর্মের মানুষ মাত্রই কাফের ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে; তবে এমন ঘটনা গল্পে নয় বাস্তবেই ঘটেছে, বিমানবিহারীকে তার নাম শুনে তারা ছেড়ে দিয়েছে, বিহারি ভেবে, কিন্তু তাজুল ইসলামকে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখেছে লোকটা জয় বাংলার মানুষ কি না সেটা জানার জন্য। ১৬ ডিসেম্বরের পরে নিজের চোখে দেখেছি কাপ্তানবাজারের কসাইপাড়ার যে বিহারিরা কসমখাওয়া পাকিস্তানি ছিল, বাঙালি নিধন যাদের ধর্মীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিহারি এবং অবশ্যই হিন্দিভাষী হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যদের কী অসামান্য দোস্তালি। জড়িয়ে ধরছে, গলাগলি করছে, টেনে নিয়ে চা খাওয়াচ্ছে, পাটনা ও মুঙ্গেরের খবর আদান-প্রদান করছে। ধর্ম ও রাষ্ট্র মিথ্যা হয়ে গেছে ভাষার হাতে পড়ে। হ্যাঁ, ভাষা এ ক্ষমতা রাখে বৈকি। রাখতে থাকবে।

তবু অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার চেয়ে বেশি জোরদার হয় রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থের শক্তি। সেই শক্তি ক্ষমতা রাখে ভাষাকে জব্দ করার। বাঙালিরা যে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়েছে সেটা ভাষার কারণে নয়, ক্ষমতার কারণে। ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্র ও রাজনীতির হাতে, সেই ক্ষমতার বলীয়ান যারা ভূখণ্ডকে তারা দুই টুকরা করে ছেড়েছে। আর বাংলাদেশেও বাঙালিরা যে এক নয়, তার কারণ কারও হাতে ক্ষমতা আছে, কারও হাতে ক্ষমতা নেই। ক্ষমতাবানরা আগে ছিল অবাঙালি, এখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা বাঙালি পরিচয়েই এসেছিল বটে, কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে বাংলাভাষা ব্যবহার করছে কম, কথাবার্তায় বাংলা বলে ইংরেজি মিশিয়ে। যার কথায় যত বেশি ইংরেজি শব্দ, বুঝতে হবে সে ব্যক্তি তত অধিক ক্ষমতাবান। অন্য প্রমাণের দরকার পড়ে না, ওই একটি প্রমাণই যথেষ্ট, এ সত্য প্রমাণের জন্য যে ক্ষমতাবানরা বাঙালি থাকছে না, থাকতে চাইছে না, যতই উঠছে ততই বিচ্যুত হচ্ছে তাদের আদি বাঙালিত্ব থেকে। এ ভূখণ্ডের আদিবাসীরা আগের কালে ক্ষমতাবঞ্চিত ছিল, এখনো তাই। বাংলা ভাষা যখন রাষ্ট্রভাষা হয় তখনো তা রাষ্ট্রের ভাষা হয় না। কেননা রাষ্ট্র ও ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। রয়েছে তাদের হাতে, যারা বাংলা বলতে অনাগ্রহী।

ক্ষমতা যে ভাষার চেয়ে জোরদার, সে অভিজ্ঞতা লাভ ওই আমার প্রথম প্রবাসকালেই ঘটেছিল, ঢাকায় ফেরার পথে বাঙালির শহর কলকাতায় থেমে। কলকাতায় এসেছিলাম জল ও স্থলপথে। জাহাজে যে কয়জন বাঙালি ছিল সবার সঙ্গেই খাতির জমেছিল, আমরা তিন বাঙালি তো একই কেবিনে থেকেছি, ২০ দিন। করাচিতে একজন নেমে গেছে, সে জাহাজ ধরবে অস্ট্রেলিয়ার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবব্রত আর আমি বম্বে (মুম্বাই) হয়ে এসেছি কলকাতায়। হাওড়া রেল স্টেশনে পা দিয়েই মনে হলো দেশে ফিরেছি। আমার ছেলেবেলার একটা অংশ কলকাতায় কেটেছে, ১৩ বছর পরে সেখানে এসে আপনজনদের দেখতে পেলাম, যদিও কাউকেই আমি চিনি না, এক দেবব্রতকে ছাড়া।

 বিকেলে পরিচিত রাস্তাঘাটে হাঁটাহাঁটি করেছি, চৌরঙ্গী এলাকায় কোনো সিনেমা হলে পাওয়া না যাওয়ায় ভবানীপুরে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেছি। সন্ধ্যার পরে দেবব্রতের সঙ্গে ধর্মতলা, গড়ের মাঠ, পদ্মার ধার, এসব জায়গায় পায়চারি করেছি। অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা ঘটল পরের দিন সকালে। অতিপ্রত্যুষে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের লোক আমাকে জমা রেখে গেছে গ্র্যান্ড হোটেলে, পরদিন সকালে তাদের ড্রাইভার এসে নিয়ে যাবে দমদম বিমানবন্দরে। বাক্সপেঁটরা নিয়ে নিচে নেমে দেখি হোটেলের কাউন্টারে কাজ করছেন এক বাঙালি ভদ্রলোক। আমি উৎফুল্ল হয়ে তার কাছ থেকে বিদায় চেয়েছি, যেন আপনজন। তিনি বললেন, ‘বিলের টাকা দিন’। আমি বললাম, ‘সে তো দেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।’ তিনি কাগজপত্র নাড়াচাড়া করে বলেন, ‘না, তেমন কোনো চিঠি তার টেবিলে নেই।’

গোলমাল আঁচ করে অপেক্ষমাণ ড্রাইভারটি এগিয়ে এসে জানতে চাইল ঘটনা। সে লোক কলকাতার আদিবাসী, কথা বলে বাংলার সঙ্গে উর্দু মিশিয়ে; কাউন্টারের ভদ্রলোককে সে বলল, ‘কোনো অসুবিধা নেই, আমার সত্যবাদিতার বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়ে থাকলে ফোন করে আমার সাহেবের সঙ্গে কথা বললেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ বলে ফোন নম্বর দিল এবং আশ্বস্ত করল যে, তার সাহেবকে অবশ্যই বাসায় পাওয়া যাবে; এত সকালে যাবেন আর কোথায়, নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছেন। ঘুমন্ত ইংরেজ সাহেবকে জাগানো ঠিক হবে কি না, এ ব্যাপারে হোটেলের বাঙালি কর্মচারীটিকে দ্বিধান্বিত দেখে লোকটি পকেট থেকে তার সচিত্র পরিচয়পত্র বের করে বলল, ‘এই যে আমার নাম-ঠিকানা, সব লিখে নিন, দরকার হলে আমি সই করে দিচ্ছি। কিন্তু আর বিলম্ব করবেন না। করলে প্লেন ধরা যাবে না।’ এতে কাজ হলো। ড্রাইভারটি সই করল, আমি মুক্ত হলাম।

পথিমধ্যে সে তার মিশ্রিত ভাষায় আমাকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করল। পার্টিশনের পরে সে ঢাকায় গিয়েছিল, কিন্তু নকরির সুবিধা না দেখে অল্পদিন পরে ওয়াপস চলে এসেছে। সে মুসলমান, সেই হিসেবে আমার নিকটজন, তাই বলেছে কথাটা। কথাটা হলো, আমি মস্তবড় ভুল করেছি কাউন্টারে বাংলা বলে। আমি হচ্ছি ব্রিটিশ কাউন্সিলের গেস্ট, ফিরছি লন্ডন থেকে কিন্তু সেটা বোঝা যাবে কী করে, বাংলা বললে? যদি বাংলায় কথা না বলে ইংরেজিতে দাপট দিতাম, তাহলে দেখা যেত কত সহজে কাজ হচ্ছে। কাউন্টারের ভদ্রলোক এতসব কথা বলতেন না, চোখ তুলে তাকাতেনও না, ঘাড় গুঁজে কুইকুই করে আমাকে বিদায় দিতেন।

 এ আলোচনা আর যাতে না এগোয় সেই লক্ষ্যে আমি ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করি, জানতে চাই ঢাকা তার কাছে কেমন লেগেছে। বলল, না, ঢাকা তার মোটেই ভালো লাগেনি, খুবই গরিব শহর। দেখি বেশ দাপটের সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছে, একে তো কলকাতার বাসিন্দা, তদুপরি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। শহর ছেড়ে শহরতলির ভেতর দিয়ে চলছে গাড়ি, চারপাশে মানুষ জেগে উঠছে, তাদের ভাষা বাংলা, কিন্তু তাদের হাতে ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা অবাঙালির হাতে। গ্র্যান্ড হোটেলের নিম্নপদস্থ কর্মচারীটিই শুধুই বাঙালি, তার ওপরের সবাই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয়। ওই অবস্থানে থাকলে আমিও হয়তো অমন আচরণই করতাম, কাউন্টারে বাঙালি ভদ্রলোক যেমনটা করেছেন আমার সঙ্গে।

এটা ১৯৬০ সালের কথা। তার পর অবস্থার যে বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে তাতে সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গে এখন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়, আরও বড় খবর এই যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঠিক করেছে অফিস-আদালতে এখন থেকে বাংলা ব্যবহার করা হবে, ইংরেজির পরিবর্তে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়, সে ভারতের একটি প্রদেশ মাত্র, সীমানা পার হলেই বাংলাভাষা হারিয়ে যায়, রবীন্দ্রনাথ পরিণত হন একজন প্রাদেশিক কবিতে। একদিন তার গান ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছিল, কিন্তু সেটা অতীতের ব্যাপার, একালে হলে পেত না। একালে অন্য ক্ষমতা তো বটেই, সাংস্কৃতিক ক্ষমতাও চলে গেছে অন্যদের হাতে। আগের দিনে বাঙালি লেখকরা ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় লিখতেন। কেননা, দেশ তখন প্রত্যক্ষরূপে পরাধীন ছিল এবং পরাধীনতাকে তারা পরাধীনতা বলেই জানতেন। আজকের দিনের পরাধীনতাটা অপ্রত্যক্ষ, যে জন্য পরাধীনতাকে স্বাধীনতা বলে মনে করা সম্ভব হচ্ছে। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মাইকেল পরিচয় ফেলে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মধুসূদন হতে চেয়েছিলেন, আজকের দিনের কোনো মাইকেল অমনটি করবেন না। তিনি বরঞ্চ তার মধুসূদনত্বকেই বর্জন করতে চাইবেন। মাইকেল সত্তাকে উচ্চে তুলে ধরবেন; লিখবেন ইংরেজিতেই কেননা, ওই ভাষার ক্ষমতা বেশি, বাজারের কারণে। কোনো গ্লানি নেই।
বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গে প্রাদেশিক ভাষাই থাকবে, যতই উচ্চে উঠুক না কেন। প্রাদেশিক ভাষা হবে, সরকারি হবে না। 

তাছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষমতাও তো বাঙালির হাতে নেই, যে হোটেলের মালিক অবাঙালি, তার বাঙালি কর্মচারীটির সাধ্য কি সেই মালিকানায় পরিবর্তন আনে, সে বেচারা বাঙালি গ্রাহক দেখলে বরঞ্চ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, ভাবে ঠকাবে, নয়তো পালাবে বিল বাকি রেখে। বড় দোকানেও এমনই ঘটনা। কর্মচারীটি বাঙালি, ক্যাশবাক্স নিয়ে বসে রয়েছে অবাঙালি। বাঙালি কর্মচারী অবাঙালি ক্রেতা পেলে খুশি হয়, বাঙালি আগন্তুক দেখলে ধরে নেয় নাড়াচাড়া করবে, কিনবে না। সব মিলিয়ে সত্যটা এই যে, দপ্তরে যাই হোক, ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার মোটামুটি নিষিদ্ধ।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটারদের পক্ষে টানতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
ভোটারদের পক্ষে টানতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার

গণতন্ত্রে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একমাত্র পদ্ধতি। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য মাঝে-মধ্যে এ ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে। গত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হলো দেশে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে সেই পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কবে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন- এ প্রশ্নের এখনো স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে এখনো পুরোপুরি ঐকমত্য নেই। একাংশের মধ্যে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিও যেমন রয়েছে, তেমনি অন্য অংশের নেতারা এ বিষয়ে সংস্কার এবং বিচারের প্রসঙ্গে যৌক্তিক সময় নিতে বলছেন।

নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে- এ বিষয়ে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতামত এবং অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনীতিতে তারা এখন বিশেষ ফ্যাক্টর। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের এ দলটি আলাদা ধরনের গুরুত্ব বহন করছে বলে পরিষ্কার ধারণা করা যায়। সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন এখন এ দলটির মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তারা কখন কীভাবে নির্বাচন চাইবে, কোন সময় চাইবে, কোন শর্তে চাইবে, সংস্কার এবং বিচারের আগে না পরে- এ ধরনের অনেক বিষয়ের সঙ্গেও সরকারের সদিচ্ছার প্রসঙ্গটি জড়িত বলে অনেকেই মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেটি মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেমন সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি, ঠিক তেমনি কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক রোডম্যাপ যথাযথভাবে ঘোষণা করেনি। আবার  নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি থাকলেও তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সিগন্যাল পায়নি বলে বিভিন্ন বক্তব্য থেকে আমরা জেনেছি। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে কিংবা নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। চোখে পড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক রোডম্যাপ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে জনগণ পাচ্ছে না। জনগণের কাছেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বার্তা পৌঁছাচ্ছে না। 

যেকোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণ সাধন করা। এ ক্ষেত্রে জনগণ যেভাবে চান ঠিক সেভাবেই তাদের কাজ করতে হয়। নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক হলেই যেসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাও কিন্তু নয়। রাজনীতিতে টানাপোড়েন বাড়তে থাকলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়তে থাকবে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে একটি যথাযথ এবং ন্যায্য দিকে হাঁটতে হবে। কারণ যথাযথ রাস্তায় হাঁটতে না পারলে কোনোভাবেই দেশে ইতিবাচক রাজনীতির সূত্রপাত হবে না। এ কারণে প্রয়োজন একটি উইন উইন পরিস্থিতির। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক পক্ষকেই বিশেষ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে হবে। সব পক্ষ থেকে ছাড় দিতে না পারলে কোনোভাবেই উইন উইন পরিস্থিতি আশা করা যায় না। 

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শতাধিক নিবন্ধনহীন এবং ব্যক্তিনির্ভর দল রয়েছে। ইতোমধ্যেই নতুন ১৪৭টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে। সেসব দলের অধিকাংশেরই কোনো অফিস নেই, আবার অফিস থাকলেও সভাপতির নিজের বাসার ড্রয়িংরুম অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমসূত্রে জানতে পেরেছি। অনেক দল রয়েছে যেগুলোর সভাপতির নাম পাওয়া যায় কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের নাম পাওয়া যায় না। এ ছাড়া বিদ্যমান নিবন্ধিত অনেক দলই সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দল। নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছাড়া আর কারও তেমন জনসমর্থন নেই। বাকি দলগুলোর তেমন একটা জনসমর্থন না থাকলেও দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড রয়েছে। এদের তৎপরতা দেখা যায় শুধু নির্বাচন মৌসুম এলেই। নির্বাচনের আগে এ দলগুলোর কদর বেড়ে যায়। বড় দলগুলোর সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়া, নির্বাচনে মনোনয়ন এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির দর কষাকষি চলে। 

যেকোনো রাজনৈতিক দল বৈধ এবং সাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠন করেও ক্ষমতায় আসে এবং আসার চেষ্টা করে। আমাদের দেশে বিদ্যমান নামসর্বস্ব দলগুলোর কোনো জনসমর্থন নেই। 
আমরা আশা করব, বাংলাদেশের বিদ্যমান এবং নবগঠিত রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিকার অর্থেই জনগণের জন্য কাজ করবে। 

এমনকি সব দল এবং দলের নেতারা সহনশীল হবেন, সংযত হবেন। অতীত বা বিগত দিনগুলোর অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর কল্যাণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবেন, যাতে দেশ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারায় চলতে পারে, যাতে দেশে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার মতো অবস্থা ভবিষ্যতে সৃষ্টি না হয়। রাজনীতিতে টানাপোড়েন বাড়তে থাকলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়তে থাকবে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে একটি যথাযথ এবং ন্যায্য দিকে হাঁটতে হবে। কারণ যথাযথ রাস্তায় হাঁটতে না পারলে কোনোভাবেই দেশে ইতিবাচক রাজনীতির সূত্রপাত হবে না। এ কারণে প্রয়োজন একটি উইন উইন পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক পক্ষকেই বিশেষ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে হবে। সব পক্ষ থেকে ছাড় দিতে না পারলে কোনোভাবেই উইন উইন পরিস্থিতি আশা করা যায় না। 

ভোটের রাজনীতিতে বিজয়ী হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হলো সাংগঠনিক ভিত্তি এবং জনসমর্থন। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত না হলে এবং জনসমর্থন না থাকলে সেই দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে না। উল্লেখ্য, নতুন দলগুলোর উচিত সাধারণ মানুষের জন্য ব্যতিক্রম চিন্তা বা জনমুখী কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বাস্তবতাবিবর্জিত রাজনৈতিক দর্শনের কারণেও অনেক দল মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না। ফলে জনসমর্থনও বাড়ে না। এতে নির্বাচনের ফলও নেতিবাচক হয়। 

কাজেই নতুন নতুন রাজনৈতিক ভাবাদর্শ সৃষ্টির যে প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করছি, সেটি সত্যিকার অর্থে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করবে কি না- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। জনসমর্থন বাড়ানোর রাজনৈতিক কর্মসূচি গঠনই রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল কার্যক্রমের কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে মাশুল দিতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবেই চিন্তা করুক না কেন, দিনশেষে তাদের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবেই। 

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

বিনিয়োগবান্ধব অনুকূল পরিবেশ রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হবে

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:২১ পিএম
বিনিয়োগবান্ধব অনুকূল পরিবেশ রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হবে
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। আর এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত অনেক কম। এক দশক ধরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে আছে। এ খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু করণীয় আছে। প্রথমত; দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই ভালো করতে হবে। দ্বিতীয়ত; অবকাঠামো, ট্রান্সপোর্টসহ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি এবং সর্বোপরি রিজার্ভের কথা চিন্তা করলে- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। দীর্ঘ সময় ধরেই অর্থনীতি প্রতিকূলতায় রয়েছে, যা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা না গেলে আগামীতে অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আমার মতে, অর্থনীতিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের চেষ্টা চলছে এবং এটা আবশ্যক। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত হলো, আমাদের বৈদেশিক বিনিময় হারের ক্রমাগত অবমূল্যায়ন হচ্ছে, সেটি স্থিতিশীল করা। এ জন্য আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। অনেকেই আমদানি কমানোর কথা বলতে পারে। তবে আমদানি কমালে আমাদের মতো দেশে, যেখানে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশই শিল্পের কাঁচামাল বা মধ্যবর্তী পণ্য- সে ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। কাজেই অর্থনীতিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য এখনই কার্যকর ও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানি কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে কিছুটা প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। এই ধারা অবশ্যই যেন বজায় থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে সক্ষম হই, তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকতার পথে ফিরে আসবে। 

বেশ কয়েক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও কয়েকবার মুদ্রানীতি পরিবর্তন করেছে। যদিও বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সমন্বয় সাধন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মূল্য বৃদ্ধি করে পণ্যের চাহিদা হয়তো কমানো যাবে। কিন্তু পণ্যের জোগান যদি একই সঙ্গে বৃদ্ধি না পায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। 

দেশের সাধারণ জনগণ বর্তমানে তীব্র চাপ ও সংকটের মধ্যে দিন যাপন করছে। উচ্চ মধ্যবিত্তের মানুষ হয়তো তাদের সঞ্চয় ভেঙে জীবনযাত্রার মানটা রক্ষা করতে পারে। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোনো সঞ্চয় নেই। সাধারণ মানুষের জীবনমান ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের ফলে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ চরম সংকট ও অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। অনেক পরিবার তাদের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। কেউবা তুলনামূলক কম পুষ্টিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করছে। অধিকাংশ দরিদ্র মানুষই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে জর্জরিত। প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপনের মান ফিরিয়ে আনতে এই শ্রেণির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হলো, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হওয়া নিশ্চিত করা। এজন্য যথাযথ নজরদারি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে দ্রুতই জনবান্ধবমূলক কর্মসূচি বা পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মজুরি বৃদ্ধির হার সেভাবে বাড়ছে না। মূল্যস্ফীতি আর মজুরি বৃদ্ধির এই পার্থক্যের কারণে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সফল হতে হলে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। পণ্য পরিবহনকালে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির জন্য রাস্তায় রাস্তায় পণ্য চলাচলকালে এসব চাঁদাবাজি অনেকটাই দায়ী। বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের এ ধরনের কারসাজি বন্ধে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। ফলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করতে হয়। অধিকাংশ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন এবং সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার সম্মুখীন হতে হয়। নির্দিষ্ট সময় প্রকল্পগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারে না বলে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদিত পণ্য অনেক সময়ই উপযোগিতা হারায়। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নয়ন অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। পণ্যের দাম নির্ভর করে চাহিদার সরবরাহের ওপর। আমাদের চাহিদাও অনেকটা কমে গেছে মনে হচ্ছে। কেননা, ব্যাংকে ঋণের সুদহার বেড়েছে, সরবরাহ বাড়েনি। তা ছাড়া পণ্য সরবরাহে সমস্যা আছে। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পরও দাম কমছে না বরং বাড়ছেই। বর্তমানে নীতিনির্ধারক যারা আছেন তাদের এ ব্যাপারে আরও অধিক মাত্রায় তৎপর হতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যায়। বিনিয়োগ কমে গেলে উৎপাদন কমে যাবে। আর উৎপাদন কমে গেলে কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হবে না। আর সবার জন্য উপযুক্ততা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম কোনোভাবেই কাজে আসবে না। কাজেই মূল্যস্ফীতির অভিঘাত রক্ষার পাশাপাশি আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার এবং শক্তি, তাতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অন্তত ৪ থেকে ৫ শতাংশ বিনিয়োগ হতে হবে। এই বিনিয়োগ হতে হবে ব্যক্তি খাতে। আমার মতে, বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত মাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে রপ্তানি খাতে সংকোচন প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। পণ্য রপ্তানি খাত সংকুচিত হলে তা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। রপ্তানি আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার বা মান কমে যেতে পারে। স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে সেটা আবার মূল্যস্ফীতিকে ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে। কাজেই রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে চাঙা করতে হলে রপ্তানি খাতকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিকমাত্রায় গতিশীলতা বৃদ্ধি করা দরকার। 

দেশের পুঁজিবাজার সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চয়ই কাজ করছে। আমি মনে করি, সাধারণ মানুষকে অর্থাৎ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনেবুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। তাদের ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। এখানেও যারা দুর্নীতি করবে অথবা আগে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের জরিমানাসহ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা সচেতন না থেকে বিভিন্ন অপপ্রচার ছড়ায়, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আমাদের সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে যদি আমরা সমন্বয় করতে পারি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং নিয়মানুযায়ী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আশা করা যায় যে, প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে একটি স্থিতিশীল পরিবেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে। 

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

কেন এই মানবিক অবক্ষয়?

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০২:২১ পিএম
কেন এই মানবিক অবক্ষয়?
শিহাব শাহরিয়ার

সম্ভবত কয়েক বছর আগে কোনো একটি নাটকের সংলাপ ছিল ‘হচ্ছেটা কী?’ আসলেই হচ্ছেটা কী? আমরা কী দেখছি? অস্থির হয়ে যাচ্ছে চারপাশ। কী যেন শুরু হয়েছে, মানুষের মধ্যে ভয়াবহ এক উন্মাদনা, জিঘাংসা, পশুর আচরণ লক্ষ করছি আমরা? একের পর এক নির্মম, নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেই চলেছে। ছেলে মাকে, মেয়ে বাবাকে, বাবা সন্তানকে, ভাই ভাইকে, স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে খুন করছে। রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্কের পবিত্র বন্ধন। কেন? মাগুড়ার নিভৃত গ্রামের অবুঝ শিশু আছিয়া, নরপশুরা নির্মমভাবে তাকে ধর্ষণ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল। চরম বেদনায় হাসপাতালে কাতরাতে কাতরাতে শেষ হয়ে গেল তার ক্ষণিকের জীবন। জীবন কি এতই ঠুনকো এবং সস্তা হয়ে গেছে? সারা দেশে এরকম অসংখ্য ধর্ষণ হচ্ছে। বিশেষ করে আছিয়ার বয়সী অসংখ্য শিশুকে ধর্ষণ করে আবার অনেককে মেরেও ফেলছে। বীভৎস ও ভয়াবহ শব্দ দুটিই এখানে খাটে। যারা ধর্ষিত হচ্ছে, রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, বাড়িঘরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং অমানসিক নির্যাতনে মারা যাচ্ছে- এটি কি কাম্য? অথচ এ ঘটনাগুলো অহরহ ঘটছে। একজন মানুষের মৃত্যু যেন পানিভাতের মতো হয়ে গেছে। একজনের জন্য কান্না থামার আগেই ঘটে যাচ্ছে আরেকটি ঘটনা। প্রিয়জন হারিয়ে যে পথ চলতে হয়, তা শুধু একা হয় না- তা হয় শোকের ভারে পাথরের মতো কঠিন।

বর্তমান সময়ে মানুষ যেন নিজের রাগ আর ইচ্ছার দাস হয়ে উঠেছে। মন চাইছে তো কারও গায়ে হাত তুলছে, কাউকে নির্যাতন করছে, কিছু ভাঙছে, কিছু ধ্বংস করছে। যখন যা ইচ্ছা করছে, তাই করছে। কিন্তু একবারও কি ভাবছেন- যাকে আঘাত করছেন, তিনি হয়তো আপনার জন্মদাতা বাবা অথবা গর্ভধারিণী মা? তিনি হতে পারেন আপনার ভাই, আপনার মেয়ের বয়সী কেউ, আপনার পড়শি, সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি কিংবা দেশের একজন কৃতী সন্তান। এমনকি তিনি যদি হন একজন রিকশাচালক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা সাধারণ চাকরিজীবী। তবু কি তাকে এভাবে নিঃসংকোচে আঘাত করার অধিকার আপনার আছে? কোথাও কোথাও তো তাকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছেন- এ কেমন মানুষ হওয়া?

মানবিক মূল্যবোধ তবে কি বিদায় নিল সমাজ থেকে? এই বাংলাদেশ কি আমাদের কাম্য? সবাই জানি, নৈরাজ্য কখনো শান্তি আনে না, স্বস্তি দেয় না সমাজে। আমরা এও জানি, পুকুরে ঢিল দিলে সেখান থেকে উত্থিত ঢেউ ধীরে ধীরে পাড়ের সবখানেই খাবি খায়। এও জানি, পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে, সেই আগুনের তাপ বা উত্তাপ আপনারও লাগে। তাই কোনো হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ বা অস্থিরতা যেকোনো সুস্থ সমাজকে নষ্ট করে। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেজন্য আমাদের এগোতে হবে সুন্দর করে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং কাজের মাধ্যমে। হত্যা-ধ্বংস, নৈরাজ্য সেই অভিযাত্রাকে পিছিয়ে দেয়।   

এসব অস্থিরতা, নৈরাজ্য, হত্যা, মারামারিকে ইদানীং যেটিকে হচ্ছে ‘মব সন্ত্রাস’। এসব ঘটনা কি শুধুই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ঘটছে? নাকি এর পেছনে আছে আরও গভীর কোনো সামাজিক, নৈতিক বা মানসিক অবক্ষয়ের কারণ? আমাদের প্রশ্ন করা দরকার- এই হিংসা, অমানবিকতা আসলে কোথা থেকে আসছে? নাকি পরস্পরের প্রতি প্রেমহীনতার কারণে, হচ্ছে? এসব ভাববার সময় হয়েছে। কারণ, আপনার পছন্দ না আপনি একজন শিক্ষককে পিটাচ্ছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পিটাচ্ছেন, একজন যুবককে, যে ব্যবসা করছে, তার সঙ্গে মব করে তাকে তুলে দিচ্ছেন, একজন নারীর চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দিয়ে তারপর লাথি মারছেন, একজন বাসযাত্রী ছাত্রীকে ধর্ষণ করছেন, একজন রিকশাওয়ালার রিকশাটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন, একটি চায়ের দোকান ভেঙে দিচ্ছেন, এতে কি হচ্ছে? এতে এককথায় সুন্দর সমাজ গঠনে অন্তরায় হচ্ছে। আমাদের কি একটু ভাবতে হবে না যে, আমরা যে কাজটি করছি, সেটি করলে ভালো হবে না খারাপ হবে? কারণ আপনি আমি আমরা সবাই সমাজের অংশ। বিশেষ করে আমাদের সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্ম, যারা আগামীর কাণ্ডারি, তাদের কোনো ধ্বংসাত্মক কাজে ঠেলে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর, আমাদের আছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। সংস্কৃতির সড়ক পরিষ্কার রাখতে হবে। 

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর এ ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারই চাই।’ এ চাওয়া তো সবার। এটাকে বলে স্বপ্ন, প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। আপনি তো একজনের স্বপ্নকে নষ্ট করতে পারেন না। কেউ যদি অন্যায় করে তাকে আইন দেখবে। আপনি আইন হাতে তুলে নেবেন কেন? ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দেশের মানুষ খুব অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। বিশেষ করে গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের প্রচণ্ডভাবে নৈতিক স্খলন ঘটছে। আমরা মুরুব্বিকে সম্মান করছি না, মান্য করছি না, একই সঙ্গে ছোটদেরও গণ্য করছি না। এ কথা সত্য যে, তথ্যপ্রবাহের অবাধ স্রোতে তরুণ প্রজন্ম গা ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা অনলাইন থেকে ভালোটা নিচ্ছে না, এর কুফলটা নিয়েই দৌড়াচ্ছে। তাদের আমরা নৈতিকভাবে জীবন গঠন সম্পর্কে সবক দিতে পারছি না? আমাদের তো সবারই জানা যে, একটি আদর্শভিত্তিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা খুবই প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। নীতির প্রশ্নে যেমন আপস চলে না, তেমনি অন্যায়ের ক্ষেত্রেও না। তাই সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয় ঢুকে পড়েছে, তা আর অবহেলার জায়গা নেই। এসব ব্যাধিকে এখনই ছেঁটে ফেলতে হবে, কেটে ফেলতে হবে, শুদ্ধ করতে হবে, কারণ এগুলো ক্যানসারের মতো- যদি সময়মতো রোধ না করা যায়, পুরো সমাজকেই গ্রাস করে ফেলবে।

যদি প্রতিদিন অশান্তি, খারাপ খবর, হত্যা-ধ্বংস, অপরাধের আয়নায় মুখ দেখি, তাহলে সূর্যের আলো আমাদের আলোকিত করবে কি? আমরা খারাপে খারাপে ডুবে গেলে, আমাদের উদ্ধার করবে কে? আসলে ডুবে যাওয়া বা সেখান থেকে উদ্ধার এই পর্যন্ত আমাদের যেন যেতে না হয়। যতটুকু পিছিয়ে গেছি আর যেন সেদিকে না যাই। আমরা মনে রাখি, আমি একজন স্বতন্ত্র মানুষ, আমার নিজস্ব স্বপ্ন আছে, আমার পরিবার ও সমাজ আছে, সেই স্বপ্ন নিয়ে ত্রিমাত্রিক মঞ্চে সাজাব। দেশটা সুন্দর, এখন আমরা যদি সুন্দর হই তাহলেই মঙ্গল। এ কথা ঠিক, রাজনৈতিক আপ-ডাউন, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, ব্যক্তিক দুঃখ-কষ্ট থাকবেই। এজন্য সব সময় সংগ্রাম করতে হয়। আসুন আমরা যার যার কাজে আনন্দ খুঁজি। অন্যের ক্ষতি না করি, অন্যায়, অপরাধ থেকে দূরে সরে থাকি। আমার ছেলেমেয়ে, ভাই-ভাতিজা এবং পড়শির সন্তানকে বলি, তোমরা নিজের জীবন গঠনে ব্যস্ত থাকো। ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলা শেখো। ব্যক্তিটি তুমি, দেশটি তোমার, কাজেই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে এ দুটিকে এগিয়ে নেবে। তুমি ঠিক মানেই, তোমার পৃথিবী ঠিক।

লেখক: কবি

আরজি করের ধর্ষণকাণ্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
আরজি করের ধর্ষণকাণ্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির একটি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে (আরজি কর হাসপাতাল) এক নারী ডাক্তারকে (পিজিটি) ধর্ষণ করে হত্যা। এরপর একটি অকিঞ্চিৎকর উপনির্বাচনে জয়ের পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতার উন্মত্ত আস্ফালন দেখাতে গিয়ে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে বোমা মেরে খুন। আর মাত্র দিন কয়েক আগে সরকারি আইন কলেজে এক ছাত্রীকে ওই কলেজেরই সিনিয়র এবং ইউনিয়নের তিন সদস্যের নির্মম দলবদ্ধ ধর্ষণ। এ তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল এবং সেই দলের ঘনিষ্ঠ নেতারা। দুটি ঘটনাই ঘটেছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর। গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে শিশু, মেডিকেল ছাত্রী, আইনের ছাত্রীদের ওপর উপর্যুপরি পাশবিক অত্যাচারের ঘটনা আর কতদিন দেখতে হবে রাজ্যবাসীকে।

 এ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কারণ ওপরের তিনটি ঘটনায় একটিতেও দোষীদের শাস্তি হয়নি। ফলে জনমানসে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলাহীন, সর্বাত্মক অরাজক এ পরিস্থিতিই এখন এ রাজ্যের স্বাভাবিকতা।
তামাহা ছিল মাত্র ৯ বছরের এক নিষ্পাপ শিশু। রাজনীতি বোঝেনি, সভা-সমিতির কথা জানত না। তবু তাকে প্রাণ দিতে হলো; শুধু এ কারণে যে, তার পরিবার ছিল রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরে। নদিয়া জেলার কালীগঞ্জে এ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছে কয়েকজন তৃণমূল নেতা।

এটি শুধু একটি খুনের ঘটনা নয়। এটি এক নির্মম বার্তা; এ রাজ্যে জন্মপরিচয়ও কাউকে রাজনৈতিক ‘শাস্তি’ থেকে রক্ষা করতে পারে না। রাজনীতি এমন স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে শিশুরাও ক্ষমতার প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে। শুধু ক্ষমতা না পাওয়ার কারণে প্রতিবাদ করলেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে। তামান্নার মৃত্যু যেন সেই রাজনৈতিক প্রতিপত্তির নিঃশব্দ ঘোষণা। এ ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয়, ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর নামে ভোট নেওয়া গেলেও, এক ‘মা’-এর সন্তানের নিরাপত্তা কেউ নিশ্চিত করে না। প্রশ্ন জাগে, এক শিশুর মৃত্যু যদি সরকারকে না নাড়ায়, তবে আর কী হলে তারা সাড়া দেবে?

তামান্নার রক্ত এখনো শুকোয়নি, তার মধ্যেই কলকাতার এক আইন কলেজে এক ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। অভিযুক্ত আবারও এক তৃণমূল ছাত্রনেতা। শিক্ষাঙ্গনের মতো জায়গায়ও যদি নারীর নিরাপত্তা না থাকে, তবে রাজ্যের ‘উন্নয়ন’, ‘সুশাসন’ বা ‘অভিযান’- সবকিছুর ওপরই বড় প্রশ্নচিহ্ন ওঠে। তামান্না জন্মসূত্রে ‘অপরাধী’, আর সেই কলেজছাত্রী শুধু নারী বলেই ‘দোষী’? এ রাজনীতির অন্ধকার ছায়ায় নারীর সুরক্ষা আজ সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যদি এ প্রশ্ন তোলেন, আপনাকেই বলা হবে ‘বড় যন্ত্রকারী’।

 কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর এক বছরও কাটেনি। এবার দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। তাদের মধ্যে একজন কলেজের সাবেক ছাত্র এবং বর্তমান কর্মী। অন্য দুজন এখনো ওই কলেজে পড়ে। এই তিনজনেরই তৃণমূলযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্যের শাসক দল মেনে নিয়েছে, মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে এও জানিয়েছে, এখন কোনো পদে নেই তিনি। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় দোষীদের কড়া সাজা দাবি করেছে তৃণমূল। ধর্ষণের এ ঘটনায় বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে বলেও দাবি তাদের।

গত বছর আরজি কর আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল ১৪ আগস্ট রাতে ‘রাত দখল’-এর কর্মসূচি থেকে। লাখ লাখ মানুষের মতো দক্ষিণ কলকাতার এ আইন কলেজ থেকেও বেশকিছু ছাত্রছাত্রী ওই কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেসবুক লাইভও করেছিলেন। সেই পড়ুয়াদের অনেকেই বলেন, মনোজিৎ মিশ্র এবং তার দলবল তখন ফেসবুক ধরে তালিকা বানিয়েছিলেন কারা সেই রাত দখলের আন্দোলনে গিয়েছিলেন। তারপর তাদের ফোন করে কলেজে ডেকে পাঠান মনোজিৎ।

রাত দখলে অংশ নেওয়ার জন্য হুমকি, এমনকি মারধরও চলে বলে অভিযোগ। এক ছাত্র প্রতিবাদ করায় তাকে লেক মলের সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মনোজিতের অনুগামীদের বেধড়ক মারের জেরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব ঘটনায় অপহরণ, মারধরসহ আরও নানা ধারায় মামলা হয় মনোজিৎদের দলবলের নামে। কিন্তু তার কেশও ছুঁতে পারেনি পুলিশ।

দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণে অভিযুক্ত মনোজিৎ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে পুরোনো এসব অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে। অভিযোগ, ওই কলেজ ক্যাম্পাসে মনোজিৎ এতটাই প্রভাবশালী যে, তার মুখের ওপরে কথা বলতে পারতেন না কলেজের সার-ম্যাডামরাও। মনোজিতের হাতে মার থেকে অচৈতন্য হয়ে পড়া ওই ছাত্র এদিন বলেন, ‘আমরা অন্তত ১০-১২ জন ছাত্রছাত্রী এমন আছি, যারা ওর ভয়ে গত এক বছর ধরে ক্যাম্পাসেই ঢুকতে পারি না। আমাদের অপরাধ, কেন আমরা রাত দখলের আন্দোলনে গিয়েছিলাম।’ শুধু রাত দখল কর্মসূচি নয়, কলেজে মনোজিতের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই ক্যাম্পাসে, এমনকি ক্যাম্পাসের বাইরে মারধর করে মনোজিৎ ওই ছাত্রছাত্রীদের কলেজ, ছাড়া করতেন বলে অভিযোগ।
পুলিশের খাতায় অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে মনোজিতের নামে। 

২০১৭ সালে কলেজে ভাঙচুর চালানো, তার পর ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ভাঙচুরের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে মনোজিতের। প্রয়াত প্রিন্সিপাল দেবাশীস চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে মনোজিৎকে ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে একবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্তত তিনবার মনোজিৎকে সাসপেন্ড করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাকে বাগে আনা যায়নি কখনোই।

আইন কলেজের ঘটনা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নির্যাতিতার মেডিকেল পরীক্ষা হয়। সেখানের চিকিৎসকদের বক্তব্য, পুলিশ যখন নির্যাতিতাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছিল, তার গলায় কামড়ের দাগ ছিল। শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। যৌনাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। নির্যাতিতার বিবরণ গ্রহণের সময়ও চিকিৎসকদের কাছে তরুণী উল্লেখ করেছেন যে, তাকে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল। একজন ধর্ষণ করে, বাকি দুজন দাঁড়িয়ে ছিল। গত ২৫ জুন রাতে কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গতকালই নির্যাতিতা তার বয়ানে জানিয়েছেন, কী ঘটেছিল সেদিন। প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন অভিযুক্ত। তরুণী প্রাণপণে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তার প্যানিক অ্যাটাক হয়, শ্বাসকষ্ট হতে থাকে।

অভিযুক্তদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে একটা ইনহেলার এনে দেয়। সাময়িক সুস্থ বোধ করলে ওই ছাত্রী বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তাকে জোরপূর্বক গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তখন সামনে দাঁড়িয়েছিল বাকি দুই অভিযুক্ত। অভিযুক্তরা ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ড করে রাখে ব্ল‍্যাকমেইল করার জন্য। নির্যাতিতার বয়ানেই ওঠে এসেছে প্রতি মুহূর্তের বীভৎসতার বর্ণনা।

কালীগঞ্জের ঘটনা- গত ১৯ জুন কালীগঞ্জে বিধানসভার উপনির্বাচন ছিল। ২৩ তারিখ ছিল ভোট গণনা। সেদিন ফল পুরোপুরি ঘোষিত হওয়ার আগেই কালীগঞ্জে শাসক দল তৃণমূলের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিজয় মিছিল বের করা হয়। অভিযোগ, সেখান থেকে সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছিল। যে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্নার। তার পরিবার সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তামান্নার মা গাওয়ালকেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। শনিবার গাওয়ালের গ্রেপ্তারের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘গাওয়াল এখানকার মূল মাথা। ওর নির্দেশে বোমা হামলা হয়েছে। তবে ওর ওপরও মাথা আছে, পুলিশ সেটাও তদন্ত করে দেখুক। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশ সব জানতে পারবে।’

বুখ সভাপতির গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, ‘দুষ্কৃতদের কোনো দল হয় না। কে কোন দলের সমর্থক, দেখার দরকার নেই। যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ। দলীয়ভাবে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।’ তবে শাসক দলকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কৃষ্ণনগর নদিয়া উত্তরের বিজেপির সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস বলেন, ‘বড় মাথাদের আড়াল করতে চুনোপুঁটিদের বলি দেওয়া হচ্ছে। যারা এত দিন ধরে গোটা এলাকাকে সন্ত্রস্ত করে রাখল, ভোটে যাদের তৃণমূল ব্যবহার করল, সেই মস্তানবাহিনীর শিকড় পর্যন্ত পৌঁছোনোর ক্ষমতা পুলিশের নেই। তবু এই গ্রেপ্তারি মানুষকে কিছুটা ভয়মুক্ত করবে।’

কসবা দলবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছেন আরজি করের নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা। তাদের অভিযোগ, অপরাধীদের মাথায় সরকারের হাত আছে।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বলেন, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কসবা দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা আমাদের কাছে লজ্জার। একসময় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সবাই গর্ব করতেন। বিদেশেও সুনাম ছিল। এখন শিক্ষাব্যবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমন ঘটনা বারবার ঘটায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্নাম আরও বাড়ছে।
আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর মা বলেন, আরজি কর হাসপাতালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আমার মেয়েকে সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল।

 সেই ঘটনার প্রতিবাদে লড়াই-আন্দোলন সবকিছুই দেখেছিলেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। এত আন্দোলন হওয়ার পরও লাভ কী হলো? সেই তো অপরাধ ঘটেই চলেছে। অপরাধীদের মাথায় যদি সরকারের হাত থাকে তাহলে তো অপরাধের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। এ নিয়ে আরজি করে নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বলেন, এটাই তো নিয়ম। কোনো ঘটনা ঘটলেই শাসক দল দায় ঝেড়ে ফেলবে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলছি না। এ অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আমার মেয়ের মৃতুর এক বছর হতে চলল। অথচ আসল অপরাধীদের এখনো খুঁজে পাওয়া গেল না। তিনি আরও বলেন, আসল অপরাধীদের সরকারি মদদে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের মাথায় সরকারের হাত রয়েছে। 

এ রকম ঘটনায় প্রভাবশালী তকমা বারবার ফিরে আসছে। প্লেট কালচার কিংবা শাসকদলের দাপাদাপি এখনো বন্ধ হয়নি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে সুর চড়িয়েছেন আরজি করের নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবাও। তিনি বলেন, যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তার মধ্যে টিএমসিপির এক নেতাও রয়েছে। ক্ষমতা এবং টাকার অপব্যবহার বেড়ে গেছে। যার ফলে এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। সরকারের নজরদারির অভাব রয়েছে। 

নজরদারির বদলে সরকার যেন অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমার মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রথম থেকেই পুলিশ প্রশাসন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখনো সেটাই চলছে। আমরাও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার কিছু করবে না। মানুষকেই বুঝে নিতে হবে। এটা আমরা ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।

লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক