ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’- উক্তিটি আপত্তিকর

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:১২ পিএম
‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’- উক্তিটি আপত্তিকর
মাসুদ আহমেদ

দেশের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবী, চিন্তাশীল ব্যক্তি, লেখক, গবেষক এবং রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন ধরে সমস্বরে একটি কথা বলে আসছেন। তা হলো এই যে, আমাদের দেশে নাকি বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই দেশে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে বিচারহীনতাই যদি মূল কথা হতো তাহলে ৬৪টি জেলা কারাগার এবং কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতি রাতে দু-তিনজন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতো না। প্রতিদিন আদালতের রায়ে নানা মেয়াদের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড হতো না। প্রতিদিন সারা দেশে গড়ে সাড়ে ৪০০টির মতো নতুন মামলা দায়ের হতো না। হাজার বিচারপ্রার্থী ফিরে পেতেন না তার জমির ওপর বিতর্কিত অধিকার, চাকরি, পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড বা বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। দুই যানবাহনের ফাঁকে পড়ে অঙ্গ হারানো কোনো বিচারপ্রার্থী লাভ করতেন না ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক।

 থানার ভেতর সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে খুন করে ফেলার অপরাধে ১৪ বছরের দণ্ড কার্যকর হতো না একাধিক পুলিশ কর্মচারীর ওপর।রাজনৈতিক গণ্ডগোলে প্রতিপক্ষকে খুন করার অপরাধে প্রতিরক্ষাবাহিনীর উঁচু পদের কর্মচারীর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হতো না। ২৬ বছর পর হলেও সগিরা মোর্শেদের হত্যাকারীর চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হতো না। খোরপোষ বা বিয়ের ক্ষতিপূরণের আদেশ পেতেন না দেশের হাজার হাজার অসহায় নারী। বছরে অন্তত কয়েক শ সরকারি কর্মচারী সরকার বনাম তাদের মামলায় শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে তাদের চাকরিসংক্রান্ত জটিলতার অনুকূল রায় পেতে পারতেন না। সম্ভ্রমহারা কিছু সংখ্যক হলেও গ্রামবাংলার প্রান্তিক নারী আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতেন না। এখন কথা হলো যারা বিচার করেন সেই বিচারকের সংখ্যা এ দেশে ১ হাজার ৭০০। 

এ কাজে সহায়তা করতে পারেন এমন সাধারণ উকিল থেকে বিদেশে পাস করা ব্যারিস্টারের সংখ্যা ৯২ হাজার। অন্যদিকে দেশে চলমান বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ। প্রতিদিন নিষ্পন্ন হওয়ার পরও বছরে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে এ সংখ্যা ২-৩ লাখ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, এ মামলা রাজনৈতিক মামলার সংখ্যার বাইরে। এ মামলার উপজীব্য কী? প্রধানত ভূমির অধিকারসংক্রান্ত দেওয়ানি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সীমানা প্রতিষ্ঠা করাজনিত বিবাদ থেকে উদ্ভুত ফৌজদারি মামলা। এ মামলা শতকরা ৯০ ভাগ। বাকি ১০ ভাগ পাওনা অর্থ আদায়, নারী নির্যাতন, খুন ও গুম, মাছ ধরার বিবাদ, পুলিশের গুলিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, চাকরি ফেরত, সড়ক দুর্ঘটনা, বিতর্কিত কর আদায়, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি ইত্যাদি। বিচারকপ্রতি গড়ে বিচার্য মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৪৭০।

যেকোনো কর্মদিবসে প্রতিটি সহকারী জজ থেকে শুরু করে জেলা জজের পক্ষে তিনটির বেশি মামলার শুনানি গ্রহণ করা অসম্ভব। আর যদি এই কর্মদিবসে কোনো মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত থাকে তাহলে সেটির অংশবিশেষ পাঠ করে শোনানোর পর বিচারকের পক্ষে আর কোনো কাজ করার সময় থাকে না। ওই একই দিনে গড়ে আরও সাতটি নতুন মামলা দায়েরের ফলে তার গড় বিচার্য মামলার সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পেতে থাকে। থানায় অসাধারণ মামলা জটের কারণে পুলিশ প্রায়ই মামলা নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে আদালত সাধারণত এ মামলা গ্রহণের আদেশ দেন। পুলিশকে তখনই এ মামলাটি লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কোনো বিচারকের দায়িত্বভারে তুলনামূলক কম সংখ্যক অর্থাৎ ২ হাজার ৪৭০-এর কম মামলার বিচার করার দায়িত্ব থাকলেও এ কারণে যেসব বিচারকের কাঁধে মামলার সংখ্যা এর চেয়ে বেশি তার কোনো অংশ বিচারের জন্য এখানে প্রেরণ করা সম্ভব নয়।

 কারণ আইনি বাধা। একজন বিচারক সম্পূর্ণ আন্তরিক ও দক্ষ হলেও কী গতিতে কতগুলো মামলার বিচারকাজ তিনি পরিচালনা করতে পারেন তার প্রাথমিক ধারণা এখান থেকে করা যাচ্ছে। বিচার কাজে সময় লাগার আরও কিছু কারণ আছে। অভিযুক্তর পলাতক থাকা, অভিযুক্তের বিদেশে পালিয়ে থাকা, ইচ্ছাকৃত সাক্ষী গরহাজির থাকা, বিচারপ্রার্থীর সাক্ষীকে এবং বিচার প্রার্থীকে অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক হুকমি দেওয়া, উকিলদের গাফিলতি, দুর্বল চার্জশিট প্রণয়ন, খুন ও ধর্ষণ মামলায় ডাক্তার, ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ, অস্ত্র বিশেষজ্ঞ বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি নিশ্চিত করায় অসুবিধা, তদন্তকারী কর্মকর্তার মৃত্যু বা অবসর গ্রহণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 

এ ছাড়া মামলার এ অসাধারণ জটের ফলে কোনো বিচারকের পক্ষেই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কোনো মামলার প্রথম বা পরবর্তী শুনানির তারিখ স্থির করা অসম্ভব। অসৎ জিআরও (জেনারেল রেজিস্টার অফিসার-পেশকার) এ ক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী কিংবা অভিযুক্তের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে এ তারিখকে এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকেন। ফলে অভিযুক্ত, বিচারপ্রক্রিয়াকে যতদূর সম্ভব পিছিয়ে রাখতে পারেন। এর আইনি সুবিধা রয়েছে। যেমন কোনো অভিযুক্ত ৬০ বছর বয়স অতিক্রান্ত করতে পারলে বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও লঘু দণ্ড দিতে পারেন। যেমন- রহস্যজনক একটি মহলের আদেশে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কাজ ২৬ বছর স্থগিত থাকার ফলে সগিরা মোর্শেদ হত্যা কাণ্ডের আসামি তার বয়স ৬০ বছর পার করে সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। 


এই পরিপ্রেক্ষিতে শাজনিন সম্ভ্রমহানি ও খুনের মামলায় ১৮ বছর, আহসান উল্লাহ মাস্টার খুনের মামলায় ১২ বছর সময় লাগে দণ্ড কার্যকর করতে। প্রচণ্ড সামাজিক চাপে ওসি প্রদীপ, কিংবা নোয়াখালীর নুসরাত খুনের মামলা একাদিক্রমে আদালত কর্তৃক শুনানি গ্রহণের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করা হয়েছিল। ফলে ওই দুটি মামলার বিচার দ্রুত গতিতে হয়। কিন্তু এর ফলে আইনের দৃষ্টিতে ‘সবাই সমান’ এবং ‘আগে এলে আগে পাবেন’- বিচারের এই নীতি সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘিত হয় যা অন্যায়। কারণ একাদিক্রমে শুনানি গ্রহণের ফলে ওই দুই বিচারকের আদালতে ওই তারিখগুলোয় নিষ্পন্নের জন্য মামলাগুলোর কোনো শুনানি গ্রহণ না হওয়ায় ওগুলোর রায় পেতে বিচারপ্রার্থীরা অন্যায় বিলম্বের শিকার হন।

বিচারের সময় লাগার আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। বিচার বিভাগ একটি অবকাশকালীন বিভাগ। অন্যান্য বিভাগ থেকে তাদের ছুটির মেয়াদ তিন মাস অতিরিক্ত। ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা নানাদিক বিবেচনায় এ বিধান প্রবর্তন করেন। কারণ বিচার কোনো তড়িঘড়ির বিষয় নয়। অনেক মামলাতেই এটি উভয় পক্ষের বাঁচা-মরার বিষয়। তাই এজলাশের বাইরে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করে বিচারকরা যাতে মামলার সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিষয় নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করে সঠিক দণ্ড বিধান করতে পারেন, সেই সুযোগ দেওয়ার জন্য এই অতিরিক্ত ছুটির বিধান করা হয়েছিল। ২০১১ সালে আমিন বাজারে ঢাকার দুই তরুণ পবিত্র শবেবারাতের রাতে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার সময় গ্রামবাসীর পিটুনিতে খুন হন। এ মামলার প্রাথমিক রায় হতে ঠিক ১৩ বছর সময় লেগেছে। কোনো মামলায় গড়ে অভিযুক্ত এবং সাক্ষীর সংখ্যা ৫২ জন করে হয়। পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে এই ৫২ জনের সম্পূর্ণ তথ্য এবং মামলার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত, সাক্ষ্য, দণ্ডবিধির ধারা, ঘটনাস্থল, সময়, ঠিকানা, এনআইডি, বাব-মার নাম ইত্যাদি সংবলিত চার্জশিট প্রণয়ন করতে সাধারণত ২ থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। এর আরেকটি কারণ এই যে, একই তদন্তকারী কর্মকর্তার কাঁধে অনেক সময় ২০টি পর্যন্ত মামলার তদন্তভার ন্যস্ত থাকে। এসব মিলিয়ে লাখ লাখ সাধারণ মামলার বিচার হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। আসলে এটি দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত নয়, এটিই প্রয়োজনীয় সময়। কারণ বিচারক সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট না হয়ে একটি মামলার দণ্ডবিধান করতে পারেন না।

আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচারক নিজেই মামলার স্বার্থের সঙ্গে জড়িত থাকেন। যেমন নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা। এ মামলার বিচারক এবং বিবাদীপক্ষের উকিল শ্রী পরেশ চন্দ্র মামলাকে সম্পূর্ণ অন্যায় সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে বাবু পরেশ চন্দ্র সরকারি উকিলকে খুন করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। কারণ পিপি মামলাটিকে  ঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ কথা জানাজানি হয়ে গেলে হাই কোর্টের কঠোর হস্তক্ষেপে বিচারপ্রক্রিয়া ঠিক পথে ফিরে মামলার আসামি একজন লে. কর্নেল (অব.) এবং তার সঙ্গীদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। আইন অনুযায়ী পরবর্তী স্তর হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও ডেথ রেফারেন্স ইত্যাদি পার হয়ে রায় কার্যকর হতে গড়ে আরও ৫-৭ বছর সময় লাগে। যেমন ওসি প্রদীপ এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের কাজটি যথাক্রমে ৪ ও ৭ বছর ধরে অপেক্ষমাণ। এর প্রধান কারণ উচ্চতর আদালতে বিচারকের সংখ্যা মামলার তুলনায় একান্ত স্বল্প। ফলে শুনানির সুযোগ পেতে বিচারপ্রার্থীদের এ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। 

বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি কোনো ক্রাশ প্রোগ্রামের অংশ হতে পারে না। কোনো ব্যক্তিকে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একজন বিচারক সৃষ্টি করা এক বা দুই দশকের বিষয় নয়। আমরা সুদান, বুরুন্ডি, মাদাগাস্কার বা বুরকিনাফাসো নই যে, অ্যাকশন অ্যাকশন  ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ বলে কোনো অপরাধের দণ্ড বিধান করে তখনই তা কার্যকর করে দেব। এত পুরোনো, প্রতিষ্ঠিত এবং অসংখ্য মামলায় রায় দেওয়া প্রধান বিচারপতি ও ছয়জন অন্যান্য বিচারপতিকে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা হয়েছে। আবার এত বছর ধরে বিচার করা মামলার (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) সব আসামি যখন এই যুক্তিতে খালাস পান যে, মামলাটি ঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি, তখনো বোঝা যায় যে, মামলায় আসলে বিলম্ব বলে কোনো শব্দ নেই। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সময় দিতেই হবে। অল্টারনেট ডিসপিউট রেজল্যুশন পদ্ধতিতে যে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলোর উপজীব্য একান্তই অগভীর। তা সামগ্রিক মামলা জটের পরিস্থিতির কোনো উন্নতির সূচক নয়। 

জাস্টিস ডিলেইড ইস জাস্টিস ডিনাইড- যুক্তিযুক্ত বলে প্রতিয়মান হলেও ‘জাস্টিস হারিড ইজ জাস্টিস বারিড’-এর সত্যতাও মনে রাখা আবশ্যক। আদালতের সংখ্যা যুক্তিযুক্তভাবে বৃদ্ধি করে এবং জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার মাধ্যমে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করা যেতে পারে। তার পরও জনগণের সংস্কৃতিও একটি বিষয়। কারণ সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা ৬৬ লাখ এবং তাদের মামলার সংখ্যা বছরে ৩০৬টি। সে অনুপাতে আমাদের মামলার সংখ্যা হওয়া উচিত ৮ হাজার ৮০৯টি। অথচ রয়েছে ৪২ লাখ।

 বিশেষ করে একই আয়তনে বছরে ২২ লাখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জমিসহ নানাবিধ সম্পদ, নারী ও অধিকারের ওপর অনধিকার প্রবেশ বা এনক্রোচমেন্টের সংখ্যা অবশ্যম্ভাবীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তা নিরসনের জন্য আদালতের প্রতি আস্থা রেখে মানুষ তার দারস্থ হচ্ছেন। এবং আদালতের রায়ে মানুষ সন্তুষ্ট বলেই নতুন মামলা প্রতিদিনই দায়ের হচ্ছে। কাজেই শিরোনামের উক্তিটি বিচার বিভাগের প্রতি একটি অযৌক্তিক মনোভাবের পরিচায়ক। বিচারকরা তাদের জ্ঞান এবং সম্পদ অনুযায়ী বিচারপ্রার্থীদের সেবা করে চলছেন। ক্লায়েন্টের পাহাড়সম চাপ বিবেচনায় তা প্রশংসনীয়।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রজাতন্ত্রের সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল
[email protected]

বদলে যাচ্ছে সফলতার ধারণা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
বদলে যাচ্ছে সফলতার ধারণা

সাফল্য মানেই কি শুধু অনেক টাকা আর বড় চাকরি? আগে হয়তো এমনটাই ভাবা হতো। কিন্তু এখন দুনিয়া বদলাচ্ছে, আর তাই বদলাচ্ছে সফলতার মানেও। বিশ্বায়নের এ যুগে দেশগুলো কাছাকাছি আসছে, ইন্টারনেট সবকিছু সহজ করে দিয়েছে, আর আমাদের পুরোনো ধ্যানধারণাগুলোও পাল্টাচ্ছে। সমাজই আসলে ঠিক করে দেয় কোনটা সাফল্য, কোনটা নয়। আর এ ভাবনাটা একেক জায়গায় একেকরকম। আমাদের বাংলাদেশও এখন অনেক বদলাচ্ছে- অর্থনীতি, মানুষজন, সংস্কৃতি- তাই এখানেও সফলতার ধারণাটা বদলে যাচ্ছে।

আমাদের দেশে বা আরও অনেক জায়গায় আগে সাফল্য বলতে বোঝাত সংসার চালানো, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া আর সমাজে একটু মাথা উঁচু করে বাঁচা। যাদের জমি ছিল, গবাদি পশু ছিল বা সরকারি চাকরি ছিল, তাদেরই লোকে সফল বলত। এগুলো ছিল চোখে দেখা জিনিস, যা দিয়ে জীবন চালানো যেত। পরিবারের বড়দের কথা, ধর্মের নিয়ম আর ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চল- এসবই ঠিক করে দিত কী অর্জন করলে লোকে বাহবা দেবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারি বড় কর্তা হওয়াটা শুধু টাকার জন্যই নয়, সম্মানের জন্যও খুব দরকারি ছিল।

কিন্তু বিশ্বায়ন সবকিছুকে অনেক বড় করে দিয়েছে। এখন টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক আর বিদেশে যাওয়া-আসা মানুষের সামনে নতুন নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের তরুণরা এখন দুনিয়ার খবর রাখছে, আর তারা দেখছে শুধু টাকা থাকলেই সফল হওয়া যায় না। এখন অনেকেই নিজের শখ পূরণ করা, সমাজে কিছু করা, সবার কাছে পরিচিত হওয়া আর নিজের মতো করে বাঁচার মধ্যেই সফলতা খুঁজে নিচ্ছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক- এসব প্ল্যাটফর্ম সাফল্যের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এখন অনেকেই অনলাইনে জনপ্রিয় হয়ে, ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে বা নতুন টেক কোম্পানি বানিয়ে সফল হচ্ছে। আগে যারা হয়তো সুযোগ পেত না, তারাও এখন এ প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে টাকা কামাচ্ছে আর পরিচিতি পাচ্ছে। তবে এখানেও সমস্যা আছে, অনেক সময় শুধু দেখানোর জন্যই লোকে সফল সাজার চেষ্টা করে, আর রাতারাতি বিখ্যাত হওয়াটা সবসময় টিকে থাকে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও অনেক বদলেছে। পোশাক কারখানা হয়েছে, বিদেশ থেকে আমাদের লোকেরা টাকা পাঠাচ্ছে, আর অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা বা এনজিওর সাহায্যে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। নারীরা এখন কারখানায় কাজ করছে, গ্রামের অনেক মেয়ে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে সংসারে সাহায্য করছে। এতে তাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বাড়ছে, আর সাফল্য মানে যে শুধু ঘর সামলানো নয়, এটাও সবাই বুঝতে পারছে।

তবে সবকিছুর পরও বৈষম্য কিন্তু থেকেই যাচ্ছে, বরং নতুন রূপে দেখা দিচ্ছে। নতুন ধরনের সাফল্য পাওয়ার সুযোগ সবার জন্য সমান নয়। এটা নির্ভর করে কে কোন পরিবারে জন্মেছে, কোথায় থাকে, ছেলে না মেয়ে এবং কে কতটুকু পড়াশোনা করেছে তার ওপর। গ্রামের ছেলে হয়তো বিদেশে গিয়ে টাকা পাঠানোকেই বড় সাফল্য মনে করে। আবার শহরের ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা হয়তো বিদেশ থেকে পড়ে এসে বড় কোম্পানিতে যোগ দেওয়া বা নতুন ব্যবসা শুরু করাকে সাফল্য ভাবে। তাই একেকজনের কাছে সাফল্যের মানে একেকরকম, আর এর ঝুঁকিও আলাদা।

পড়াশোনাকে এখনো অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু এর মানেও আগের মতো নেই। এখন অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হয়েছে, কোচিং সেন্টার আর নতুন নতুন কারিকুলাম এসেছে। ভালো রেজাল্ট করার চাপ অনেক বেশি, কিন্তু অনেকেই ভাবছে এত পড়াশোনা করেও ভালো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকছে, আর তাই লোকে ভাবছে শুধু ভালো ডিগ্রি থাকলেই লাভ নেই, দরকারি কিছু শিখতে হবে।

এ পরিবর্তনের কারণে পরিবারেও সমস্যা হচ্ছে। বাবা-মা হয়তো এখনো চান ছেলেমেয়ে সরকারি চাকরি করুক বা তাড়াতাড়ি বিয়ে করুক। কিন্তু নতুন প্রজন্ম হয়তো শিল্পী হতে চায়, অনলাইনে বিখ্যাত হতে চায় বা সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। আগের আর এখনকার প্রজন্মের চিন্তাভাবনার এ পার্থক্য সমাজে একটা টানাপোড়েন তৈরি করছে।

ধর্ম আর নীতিবোধ এখনো আমাদের সমাজে সফলতার সংজ্ঞায় প্রভাব ফেলে। কেউ কেউ মনে করে টাকা থাকলেই বুঝি আল্লাহ খুশি থাকেন বা সে খুব ভালো লোক। আবার অনেকে মনে করে শুধু টাকা আর নাম কামানোর পেছনে ছোটাটা ঠিক নয়। ইসলাম ধর্মে বিনয়, সমাজের প্রতি দায়িত্ব আর মনের শান্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা পশ্চিমা দেশের শুধু নিজের জন্য সফল হওয়ার ধারণার চেয়ে আলাদা। ধর্মের গুরুরাও এসব নিয়ে কথা বলেন এবং কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, সে বিষয়ে মানুষের ধারণা গড়ে তোলেন।

টিভি, সিনেমা, বিজ্ঞাপন- এগুলোও সাফল্যের গল্প শোনায়। গ্রামের ছেলে শহরে এসে বড় চাকরি পেল, গ্রামের মেয়ে বড় শিল্পী হলো, বা রিকশাওয়ালার ছেলে বিসিএস ক্যাডার হলো- এমন গল্পগুলো আমাদের দেখায় যে, চেষ্টা করলে আর প্রতিভা থাকলে যে কেউ জীবনে উন্নতি করতে পারে। কিন্তু এর আড়ালে যে কত বাধা আছে, সেটা অনেক সময় দেখানো হয় না।

এখন অনেকেই বিদেশে থাকছে বা দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তারা শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও নিজেদের প্রমাণ করতে চায়। যারা বিদেশে থাকে, তারা একদিকে দেশের সংস্কৃতি ধরে রাখতে চায়, আবার অন্যদিকে নতুন দেশের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে চায়। যারা কাজের জন্য বিদেশে যায়, তাদের জন্য সাফল্য মানে পরিবারকে টাকা পাঠানো আর নতুন জায়গায় টিকে থাকা।

সরকার আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও সফলতার নতুন নতুন ধারণা তৈরি করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া, তরুণদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া বা নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রকল্পগুলো আসলে সাফল্যের নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও ক্ষমতায়ন বা উন্নয়নের কথা বলে আমাদের সমাজের লক্ষ্য ঠিক করে দিতে সাহায্য করছে।

যারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে, পরিবেশ বাঁচানোর চেষ্টা করছে বা নারী-পুরুষের সমতার জন্য লড়ছে- তারাও নতুন এক ধরনের সাফল্য দেখাচ্ছে। তারা হয়তো অনেক টাকা কামাচ্ছে না, কিন্তু সমাজের ভালোর জন্য তাদের কাজকে লোকে এখন সম্মান জানাচ্ছে। এখানে সাফল্য মাপা হচ্ছে কে কতটা সমাজকে দিতে পারল, পরিবেশের জন্য কী করল বা কতটুকু সৎ থাকতে পারল, তার ওপর ভিত্তি করে।
তবে দামি জিনিস কেনার আর লোক দেখানোর চল এখনো কমেনি। পুঁজিবাদী সমাজে বাজারই সবকিছুর নিয়ম ঠিক করে দেয়, আর সাফল্য মানে অনেক সময় ভালো পোশাক পরা, দামি গাড়ি কেনা বা বড় বাড়িতে থাকা। এতে অনেকেই চাপে পড়ে যায়, অনেক কষ্ট করে হলেও লোকজনকে দেখাতে চায় যে, সে সফল।

সাফল্যের এই বদলে যাওয়া ধারণাগুলো আমাদের মনেও প্রভাব ফেলছে। যখন সমাজ বারবার সফলতার মানদণ্ড বদলায়, তখন সফল হওয়ার চাপও বাড়ে। ব্যর্থ হওয়ার ভয়, পিছিয়ে পড়ার চিন্তা আর অন্যদের কাছে ভালো সাজার আকাঙ্ক্ষা আমাদের অস্থির করে তোলে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ছে, যা প্রমাণ করে সফলতার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের কতটা মানসিক ধকল পোহাতে হচ্ছে।

মোটকথা, বিশ্বায়নের যুগে সাফল্যের সামাজিক সংজ্ঞাটা সবসময় বদলাচ্ছে এবং এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটা একদিকে আমাদের ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মধ্যেকার টানাপোড়েন, অন্যদিকে নিজের ভালো চাওয়া আর সবার ভালোর কথা ভাবার মধ্যেকার পার্থক্য এবং স্থানীয় জীবন আর বিশ্ব দুনিয়ার স্বপ্নের প্রতিফলন। বাংলাদেশে এ সবকিছু ঘটছে এক নতুন শক্তি, সৃষ্টিশীলতা আর আকাঙ্ক্ষার মধ্যদিয়ে। সাফল্য এখন আর একটা নির্দিষ্ট পথ নয়, এটা অনেক সম্ভাবনার সমষ্টি- যা নির্ভর করে কে কোথায় আছে, তার চারপাশের মানুষজন কেমন এবং সে নিজে কী ভাবছে তার ওপর।
সমাজ যত এগোবে, সাফল্যের ধারণাও তত বদলাবে। 

আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে এ ধারণাগুলো সবার জন্য ভালো হয়, মানুষ হিসেবে আমাদের মূল্য দেয় এবং ন্যায্যতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সবার জন্য একই রকম সফলতার সংজ্ঞা ঠিক না করে, বরং যার যার পথকে সম্মান জানানো উচিত, বিভিন্ন ধরনের অবদানকে মূল্য দেওয়া উচিত এবং এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেখানে সবাই নিজের মতো করে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এভাবেই বাংলাদেশ এবং পুরো পৃথিবী সফল হওয়ার আরও মানবিক আরও সুন্দর মানে খুঁজে পাবে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী
[email protected]

রপ্তানি বড় ধরনের চাপে পড়বে

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
রপ্তানি বড় ধরনের চাপে পড়বে
সেলিম রহমান

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপের যুক্তরাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্ত আরোপিত হলে তা হবে আমাদের জন্য চরম অর্থনৈতিক ধাক্কা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। এর ফলে আগে যেখানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, সেখানে এখন দ্বিগুণেরও বেশি দিতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়টি বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।

এই পারস্পরিক শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতাও স্পষ্ট নয়, যা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। এখনো জানা যায়নি বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশ- যেমন ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ওপর কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। 

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দফায় ১৪টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত হারই সর্বোচ্চগুলোর একটি। অন্যদের ক্ষেত্রে হার কম হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধায় পড়বে। এতে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ চেইন-পরিকল্পনাও জটিল হয়ে উঠবে।

পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আরও গভীর। বাড়তি খরচের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের দেশে অর্ডার স্থানান্তর করতে পারেন। তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশ তাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শুল্ক আলোচনা যেভাবে হয়েছে তাতে বাংলাদেশ কোনো সুবিধাজনক অবস্থান আদায় করতে পারেনি। ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল পরিবেশে আরও দুর্বল করে তুলবে। তার পরও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। 

পাশাপাশি বহুমুখী ও কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পোশাক খাতের বাইরের শিল্প গড়ে তোলা এখন অত্যাবশ্যক। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। এই বিষয়গুলো অনেক দিন থেকে বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে আমাদের মতো দেশের ভালো প্রস্তুতি না থাকলে বড় ধরনের চাপে পড়তে হবে। 

লেখক: সানেমের নির্বাহী পরিচালক

দর-কষাকষি করতে হবে

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
দর-কষাকষি করতে হবে
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারপ্রধান যেহেতু বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আলোচনা করতে হবে। ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই সেই পর্যন্ত দর-কষাকষি করতে হবে। যাতে ভিয়েতনামের কাছাকাছি যাওয়া যায়। ভিয়েতনামও হয়তো দর-কষাকষি করে এই পর্যায়ে এসেছে। তাই আমাদের সরকারকেও সেভাবে এগোতে হবে। তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় ঝুঁকিতে পড়বে দেশ। 

বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হতে চলায় ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। 

এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। কাজেই এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো

কতটুকু গিলতে পারব তা দেখার বিষয়

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:২৫ এএম
কতটুকু গিলতে পারব তা দেখার বিষয়
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঘোষণা করেছেন। কাজেই সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে জোরালোভাবে দর-কষাকষি করতে হবে। তবে দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। তারা এমন জটিল ও কঠিন শর্ত দিল, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। যেটা ভিয়েতনামে দেওয়া হয়েছিল। তারা পূরণ করতে পারলেও আমরা সেই কঠিন শর্ত পূরণ করতে পারব না। 

এ ছাড়া চীন, পাকিস্তানসহ যারা প্রতিযোগিতামূলক বাজার দখল করে আছে, তাদেরও দেখতে হবে। অনেক দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বসিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতার বাজার স্লো হয়ে যাবে। তারা কী শর্ত উল্লেখ করেছে, সেটাও দেখার বিষয়। এটা যেহেতু জানা যায়নি। তাই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা কতটুকু গিলতে পারব তা দেখার বিষয়। 

তারা গ্লোবালি (সারা বিশ্বে) শুল্ক আরোপের কথা বলেছে। এতে সবাই চাপে পড়বে। বিভিন্ন দেশে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের দেশে ৩৫ শতাংশ। যা ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। এখনো মাঝে কিছুদিন সময় আছে। এই সময় কাজে লাগাতে হবে। 

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান      

ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম
ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ

মানুষকে ভাষা দিয়ে চেনা যায়, চেনা যায় ক্ষমতা দিয়েও। ভাষা বরঞ্চ অধিক বাঙ্ময়, ক্ষমতার চেয়ে। মুখ খুললেই বক্তার পরিচয় হেসে-খেলে কিংবা রেগে-মেগে বের হয়ে আসে। ভাষা পারে চুম্বকের মতো কাছে টেনে নিতে এবং যন্ত্রের মতো ঠেলে দিতে পারে দূরে। কাছে টেনে নেওয়াটা বিশেষভাবে ঘটে প্রবাসে; প্রবাসে বাঙালি মাত্রই বাঙালির মিত্র, শত্রুতে পরিণত হওয়ার আগে। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে, আমারও আছে বলে দাবি করতে পারি। আজ থেকে ৬৭ট্টি বছর আগে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম পড়তে। তখন আমরা পাকিস্তানি। সেই পরিচয়েই গিয়েছি ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে। উর্দুভাষী যে পাকিস্তানিরা সহযাত্রী ছিল আমার, তাদের কারও কারও সঙ্গে যে বন্ধুত্ব হয়নি তা নয়, হয়েছে। কিন্তু বিদেশে পা দিয়ে বাঙালি মাত্রকেই বন্ধু মনে হয়েছে, সে বাঙালি যে রাষ্ট্রেরই নাগরিক হোক; ভারত-পাকিস্তান তখন শত্রুর সম্পর্ক, কিন্তু সেই শত্রুতা ভারতীয় বাঙালিদের আপনজন ভাবার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়নি।

 পরে, একাত্তর সালে, ভাষার টানের আত্মীয়তাটা আবার দেখেছি, হিন্দু ধর্মের মানুষ মাত্রই কাফের ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে; তবে এমন ঘটনা গল্পে নয় বাস্তবেই ঘটেছে, বিমানবিহারীকে তার নাম শুনে তারা ছেড়ে দিয়েছে, বিহারি ভেবে, কিন্তু তাজুল ইসলামকে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখেছে লোকটা জয় বাংলার মানুষ কি না সেটা জানার জন্য। ১৬ ডিসেম্বরের পরে নিজের চোখে দেখেছি কাপ্তানবাজারের কসাইপাড়ার যে বিহারিরা কসমখাওয়া পাকিস্তানি ছিল, বাঙালি নিধন যাদের ধর্মীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিহারি এবং অবশ্যই হিন্দিভাষী হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যদের কী অসামান্য দোস্তালি। জড়িয়ে ধরছে, গলাগলি করছে, টেনে নিয়ে চা খাওয়াচ্ছে, পাটনা ও মুঙ্গেরের খবর আদান-প্রদান করছে। ধর্ম ও রাষ্ট্র মিথ্যা হয়ে গেছে ভাষার হাতে পড়ে। হ্যাঁ, ভাষা এ ক্ষমতা রাখে বৈকি। রাখতে থাকবে।

তবু অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার চেয়ে বেশি জোরদার হয় রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থের শক্তি। সেই শক্তি ক্ষমতা রাখে ভাষাকে জব্দ করার। বাঙালিরা যে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়েছে সেটা ভাষার কারণে নয়, ক্ষমতার কারণে। ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্র ও রাজনীতির হাতে, সেই ক্ষমতার বলীয়ান যারা ভূখণ্ডকে তারা দুই টুকরা করে ছেড়েছে। আর বাংলাদেশেও বাঙালিরা যে এক নয়, তার কারণ কারও হাতে ক্ষমতা আছে, কারও হাতে ক্ষমতা নেই। ক্ষমতাবানরা আগে ছিল অবাঙালি, এখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা বাঙালি পরিচয়েই এসেছিল বটে, কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে বাংলাভাষা ব্যবহার করছে কম, কথাবার্তায় বাংলা বলে ইংরেজি মিশিয়ে। যার কথায় যত বেশি ইংরেজি শব্দ, বুঝতে হবে সে ব্যক্তি তত অধিক ক্ষমতাবান। অন্য প্রমাণের দরকার পড়ে না, ওই একটি প্রমাণই যথেষ্ট, এ সত্য প্রমাণের জন্য যে ক্ষমতাবানরা বাঙালি থাকছে না, থাকতে চাইছে না, যতই উঠছে ততই বিচ্যুত হচ্ছে তাদের আদি বাঙালিত্ব থেকে। এ ভূখণ্ডের আদিবাসীরা আগের কালে ক্ষমতাবঞ্চিত ছিল, এখনো তাই। বাংলা ভাষা যখন রাষ্ট্রভাষা হয় তখনো তা রাষ্ট্রের ভাষা হয় না। কেননা রাষ্ট্র ও ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। রয়েছে তাদের হাতে, যারা বাংলা বলতে অনাগ্রহী।

ক্ষমতা যে ভাষার চেয়ে জোরদার, সে অভিজ্ঞতা লাভ ওই আমার প্রথম প্রবাসকালেই ঘটেছিল, ঢাকায় ফেরার পথে বাঙালির শহর কলকাতায় থেমে। কলকাতায় এসেছিলাম জল ও স্থলপথে। জাহাজে যে কয়জন বাঙালি ছিল সবার সঙ্গেই খাতির জমেছিল, আমরা তিন বাঙালি তো একই কেবিনে থেকেছি, ২০ দিন। করাচিতে একজন নেমে গেছে, সে জাহাজ ধরবে অস্ট্রেলিয়ার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবব্রত আর আমি বম্বে (মুম্বাই) হয়ে এসেছি কলকাতায়। হাওড়া রেল স্টেশনে পা দিয়েই মনে হলো দেশে ফিরেছি। আমার ছেলেবেলার একটা অংশ কলকাতায় কেটেছে, ১৩ বছর পরে সেখানে এসে আপনজনদের দেখতে পেলাম, যদিও কাউকেই আমি চিনি না, এক দেবব্রতকে ছাড়া।

 বিকেলে পরিচিত রাস্তাঘাটে হাঁটাহাঁটি করেছি, চৌরঙ্গী এলাকায় কোনো সিনেমা হলে পাওয়া না যাওয়ায় ভবানীপুরে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেছি। সন্ধ্যার পরে দেবব্রতের সঙ্গে ধর্মতলা, গড়ের মাঠ, পদ্মার ধার, এসব জায়গায় পায়চারি করেছি। অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা ঘটল পরের দিন সকালে। অতিপ্রত্যুষে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের লোক আমাকে জমা রেখে গেছে গ্র্যান্ড হোটেলে, পরদিন সকালে তাদের ড্রাইভার এসে নিয়ে যাবে দমদম বিমানবন্দরে। বাক্সপেঁটরা নিয়ে নিচে নেমে দেখি হোটেলের কাউন্টারে কাজ করছেন এক বাঙালি ভদ্রলোক। আমি উৎফুল্ল হয়ে তার কাছ থেকে বিদায় চেয়েছি, যেন আপনজন। তিনি বললেন, ‘বিলের টাকা দিন’। আমি বললাম, ‘সে তো দেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।’ তিনি কাগজপত্র নাড়াচাড়া করে বলেন, ‘না, তেমন কোনো চিঠি তার টেবিলে নেই।’

গোলমাল আঁচ করে অপেক্ষমাণ ড্রাইভারটি এগিয়ে এসে জানতে চাইল ঘটনা। সে লোক কলকাতার আদিবাসী, কথা বলে বাংলার সঙ্গে উর্দু মিশিয়ে; কাউন্টারের ভদ্রলোককে সে বলল, ‘কোনো অসুবিধা নেই, আমার সত্যবাদিতার বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়ে থাকলে ফোন করে আমার সাহেবের সঙ্গে কথা বললেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ বলে ফোন নম্বর দিল এবং আশ্বস্ত করল যে, তার সাহেবকে অবশ্যই বাসায় পাওয়া যাবে; এত সকালে যাবেন আর কোথায়, নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছেন। ঘুমন্ত ইংরেজ সাহেবকে জাগানো ঠিক হবে কি না, এ ব্যাপারে হোটেলের বাঙালি কর্মচারীটিকে দ্বিধান্বিত দেখে লোকটি পকেট থেকে তার সচিত্র পরিচয়পত্র বের করে বলল, ‘এই যে আমার নাম-ঠিকানা, সব লিখে নিন, দরকার হলে আমি সই করে দিচ্ছি। কিন্তু আর বিলম্ব করবেন না। করলে প্লেন ধরা যাবে না।’ এতে কাজ হলো। ড্রাইভারটি সই করল, আমি মুক্ত হলাম।

পথিমধ্যে সে তার মিশ্রিত ভাষায় আমাকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করল। পার্টিশনের পরে সে ঢাকায় গিয়েছিল, কিন্তু নকরির সুবিধা না দেখে অল্পদিন পরে ওয়াপস চলে এসেছে। সে মুসলমান, সেই হিসেবে আমার নিকটজন, তাই বলেছে কথাটা। কথাটা হলো, আমি মস্তবড় ভুল করেছি কাউন্টারে বাংলা বলে। আমি হচ্ছি ব্রিটিশ কাউন্সিলের গেস্ট, ফিরছি লন্ডন থেকে কিন্তু সেটা বোঝা যাবে কী করে, বাংলা বললে? যদি বাংলায় কথা না বলে ইংরেজিতে দাপট দিতাম, তাহলে দেখা যেত কত সহজে কাজ হচ্ছে। কাউন্টারের ভদ্রলোক এতসব কথা বলতেন না, চোখ তুলে তাকাতেনও না, ঘাড় গুঁজে কুইকুই করে আমাকে বিদায় দিতেন।

 এ আলোচনা আর যাতে না এগোয় সেই লক্ষ্যে আমি ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করি, জানতে চাই ঢাকা তার কাছে কেমন লেগেছে। বলল, না, ঢাকা তার মোটেই ভালো লাগেনি, খুবই গরিব শহর। দেখি বেশ দাপটের সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছে, একে তো কলকাতার বাসিন্দা, তদুপরি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। শহর ছেড়ে শহরতলির ভেতর দিয়ে চলছে গাড়ি, চারপাশে মানুষ জেগে উঠছে, তাদের ভাষা বাংলা, কিন্তু তাদের হাতে ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা অবাঙালির হাতে। গ্র্যান্ড হোটেলের নিম্নপদস্থ কর্মচারীটিই শুধুই বাঙালি, তার ওপরের সবাই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয়। ওই অবস্থানে থাকলে আমিও হয়তো অমন আচরণই করতাম, কাউন্টারে বাঙালি ভদ্রলোক যেমনটা করেছেন আমার সঙ্গে।

এটা ১৯৬০ সালের কথা। তার পর অবস্থার যে বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে তাতে সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গে এখন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়, আরও বড় খবর এই যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঠিক করেছে অফিস-আদালতে এখন থেকে বাংলা ব্যবহার করা হবে, ইংরেজির পরিবর্তে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়, সে ভারতের একটি প্রদেশ মাত্র, সীমানা পার হলেই বাংলাভাষা হারিয়ে যায়, রবীন্দ্রনাথ পরিণত হন একজন প্রাদেশিক কবিতে। একদিন তার গান ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছিল, কিন্তু সেটা অতীতের ব্যাপার, একালে হলে পেত না। একালে অন্য ক্ষমতা তো বটেই, সাংস্কৃতিক ক্ষমতাও চলে গেছে অন্যদের হাতে। আগের দিনে বাঙালি লেখকরা ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় লিখতেন। কেননা, দেশ তখন প্রত্যক্ষরূপে পরাধীন ছিল এবং পরাধীনতাকে তারা পরাধীনতা বলেই জানতেন। আজকের দিনের পরাধীনতাটা অপ্রত্যক্ষ, যে জন্য পরাধীনতাকে স্বাধীনতা বলে মনে করা সম্ভব হচ্ছে। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মাইকেল পরিচয় ফেলে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মধুসূদন হতে চেয়েছিলেন, আজকের দিনের কোনো মাইকেল অমনটি করবেন না। তিনি বরঞ্চ তার মধুসূদনত্বকেই বর্জন করতে চাইবেন। মাইকেল সত্তাকে উচ্চে তুলে ধরবেন; লিখবেন ইংরেজিতেই কেননা, ওই ভাষার ক্ষমতা বেশি, বাজারের কারণে। কোনো গ্লানি নেই।
বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গে প্রাদেশিক ভাষাই থাকবে, যতই উচ্চে উঠুক না কেন। প্রাদেশিক ভাষা হবে, সরকারি হবে না। 

তাছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষমতাও তো বাঙালির হাতে নেই, যে হোটেলের মালিক অবাঙালি, তার বাঙালি কর্মচারীটির সাধ্য কি সেই মালিকানায় পরিবর্তন আনে, সে বেচারা বাঙালি গ্রাহক দেখলে বরঞ্চ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, ভাবে ঠকাবে, নয়তো পালাবে বিল বাকি রেখে। বড় দোকানেও এমনই ঘটনা। কর্মচারীটি বাঙালি, ক্যাশবাক্স নিয়ে বসে রয়েছে অবাঙালি। বাঙালি কর্মচারী অবাঙালি ক্রেতা পেলে খুশি হয়, বাঙালি আগন্তুক দেখলে ধরে নেয় নাড়াচাড়া করবে, কিনবে না। সব মিলিয়ে সত্যটা এই যে, দপ্তরে যাই হোক, ক্ষমতার বলয়ে বাংলার প্রবেশাধিকার মোটামুটি নিষিদ্ধ।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়