
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামী ২ জুন। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেটের মূল দর্শন, অগ্রাধিকার খাতসমূহ, রাজস্ব বৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কার ও করনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা
খবরের কাগজ: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটের মূল দর্শন কী হবে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট হবে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য। অর্থাৎ এবারের বাজেট বরাবরের মতো গতানুগতিক হবে না। ঋণনির্ভরতা যথাসম্ভব কমিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানোর মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির একটা উদ্যোগ থাকবে এবারের বাজেটে। একই সঙ্গে বাজেটে অযাচিত ব্যয়হ্রাস বা অপচয় রোধেরও একটা প্রচেষ্টা থাকবে। তবে এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্যই থাকবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। ইতিপূর্বে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ কার্যত এর সুফল পায়নি। কাজেই এবারের বাজেটে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের বাস্তবায়নযোগ্য একটা প্রচেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে নিরাপত্তাবেষ্টনী বাড়িয়ে প্রান্তিক মানুষের জীবন যাপনকে কীভাবে সহজ করা যায় তার একটি প্রচেষ্টা থাকবে এবারের বাজেটে। একই সঙ্গে বাজেটে বৈষম্য কমিয়ে সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নানামুখী পদক্ষেপ থাকবে।
খবরের কাগজ: এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ কী ? চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। আমরা আশা করছি, ৯ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হব। বিশ্বায়নের যুগে নানা কারণে বৈশ্বিকভাবে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঋণের বোঝায় জর্জরিত ভঙ্গুর একটা অর্থনীতি পেয়েছিলাম। সেখান থেকে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন বা উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো কাজ করছি। দেশি-বিদেশি ব্যক্তিদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা। সরবরাহ গতিশীল রাখতে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের একটি অংশ নানা কায়দায় চাঁদা আদায় করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে। এরাই আবার বাজারে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। এদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা অর্থনীতির ব্যাপার নয়। এগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। সেক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশও অনুকূল রাখা দরকার। কিছু একটা হলেই লোকজন কাজ ফেলে রাস্তায় বসে যায়। সব দাবিদাওয়া পূরণ করা তো সরকারের পক্ষে একবারেই সম্ভব নয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা শুনলে তখন বেসরকারি যারা আছেন তারাও বলবেন, আমরা কী দোষ করেছি? আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। দাবিদাওয়ার বিষয় আসতে পারে। কিন্তু কাজকর্ম ফেলে রাস্তা বন্ধ করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা, অর্থনীতির ওপরও বড় রকমের বিরূপ প্রভাব ফেলে। আগের সরকার কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যা কিছু একটা করে দিয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব।
খবরের কাগজ: এবারের বাজেটে কোন কোন খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশের স্বাস্থ্য খাত সবসময়ই অবহেলিত থাকে। যদিও স্বাস্থ্যসেবায় টাকা কম দেওয়া হয়, তা নয়। কিন্তু এর সঠিক বাস্তবায়ন সেভাবে দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে অথবা নষ্ট হয়, অর্থাৎ সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হয় না বললেই চলে। এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু মৌলিক বিষয় পরিচালনা ব্যয় বাজেটে নিয়ে আসার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রকল্পনির্ভর না হয়ে এবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিচালনায় বাজেট বরাদ্দ বেশি হবে। শিক্ষা ও জনকল্যাণে বাজেট বরাদ্দ বাড়বে। তবে রাতারাতি সব ক্ষেত্রেই বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়। সবকিছুর সঙ্গে একটা সমন্বয় করেই এবারের বাজেট তৈরি করা হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা বাড়ানো হবে।
খবরের কাগজ: এর আগে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজেটের আকার বড় করা হতো। সে তুলনায় এবারের বাজেট আকারে ছোট হচ্ছে। এটি কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাজেট খুব বড় হচ্ছে অথবা খুব ছোট হচ্ছে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের নামে কালক্ষেপণ, ভোগান্তি, অপচয় রোধে অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা ঋণনির্ভরতা কমিয়ে এনে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে একটা ‘ব্যাল্যান্স’ করেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বাজেট খুব বড় না হলেও খুব বেশি ছোট হবে না।
খবরের কাগজ: দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আসন্ন বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ থাকবে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। তবে কর্মসংস্থান বলতে আমি বলব শুধু চাকরি নয়, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা গুরুত্ব দেব। এ ছাড়া আমাদের মূল লক্ষ্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসাবান্ধব একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা। দেশে তরুণদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত করা হবে। মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা থাকবে। এটি করা গেলে প্রত্যেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাশাপাশি বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবে। সে ক্ষেত্রে আমরা তরুণদের জন্য স্টার্টআপ ফান্ড ব্যবস্থা করেছি। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল আছে। প্রয়োজনে তহবিল আরও বাড়ানো হবে। আগের মতো শুধু বড় বড় প্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে, এমনটি আর হবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। এর আগে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় অনেক ভালো উদ্যোক্তা পিছিয়ে পড়েছেন। এবার এসব সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া হবে। সরকারের আয় বাড়াতে বাজেট বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে আশা করা যায়।
খবরের কাগজ: বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ থাকবে কি না।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ নেই। এসব উৎস বন্ধে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব। একটা উদাহরণ দিয়ে আমি বলি- যে দামে জমি কেনাবেচা হয়, সে দামে জমির দলিল হয় না। ৪-৫ কোটি টাকার জমি দেখা যায় দলিলপত্রে ৭০ লাখ দেখানো হয়। আমরা বলেছি, যে দামে বিক্রি হবে সে দামেই জমির নিবন্ধন বা দলিল হবে। সেটা না হলে কেনাবেচায় দুই পক্ষই বিপদে পড়ে। অনেকে আবার দেখেছি ঘুষটুষ দিয়ে এখান থেকে পার পেয়ে যায়। এসবের মারপ্যাঁচে নানা রকম সমস্যা হয়। এ প্রবণতা বন্ধ করতে ইতোমধ্যেই আমি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছি। এতে সবার আয় যেমন বৈধ হবে; সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।
খবরের কাগজ: আইএমএফ কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কর আদায় বাড়াতে গিয়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর কোনো চাপ বাড়বে বলে আপনি মনে করেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: জনগণ যে কর দেয় তার বড় একটা অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় না। সেসব অর্থ বেশির ভাগই আদায়কারী কর কর্তাদের পকেটে চলে যায়। এ ধরনের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। কয়েক দিন আগে একজন কমিশনার ১০০ কোটি টাকা করের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা ছাড় দেখিয়েছে। এর মধ্যে কত নিজে তিনি নিয়েছেন বা কি করেছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এসব প্রতিবন্ধকতা অনেকদিন থেকেই চলে আসছিল। এবারের বাজেটে এগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি কর ফাঁকি বন্ধেরও উদ্যোগ থাকবে। তাছাড়া করছাড়ও কমিয়ে আনা হবে। ফলে জনগণের ওপর অকারণ বাড়তি চাপ থাকবে না।
খবরের কাগজ: আগামী বাজেটে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে কী কী থাকছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ইতোমধ্যে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে দুটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আলাদা নতুন আইন হয়েছে। এ নিয়ে নানান রকম হইচইও হয়েছে। ইতোমধ্যে আমানতকারীদের বহু টাকা বেহাত হয়েছে। দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অর্থ কীভাবে পরিশোধ করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকিগুলোও একে একে করা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সরকার আলাদা তহবিল গঠন করবে। অনেকেই না বুঝে সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমরা তো বুঝেশুনেই কাজগুলো করছি। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতিতে একটা গতি সঞ্চার হয়েছে। ভঙ্গুর একটা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে হলেও কিছুটা সময় লাগে। আমরা চেষ্টা করছি। আমি সবসময়ই বলি, কিছু কাজ, কিছু সংস্কার আমরা করে দিয়ে যাব। একটা দিকনির্দেশনা অবশ্যই থাকবে। নির্বাচন-পরবর্তী সরকার এসে যেন সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কাজেই অযথা বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টি না করে সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হবে। দোষত্রুটি না খুঁজে বরং নিজেদের মধ্যে একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে।
খবরের কাগজ: দেশের ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এ থেকে সুরক্ষা পেতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা ঠিক যে, মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা খুবই নেতিবাচক হয়ে গিয়েছিল। নেতৃত্বের সংকট ছিল অধিকাংশ ব্যাংকে। সেটা ধীরে ধীরে আস্থার জায়গায় ফিরে আসছে। আমরা বেশ কিছু ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানকে সরিয়ে নতুন লোক দিয়েছি। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ হয়েছে। এটা ভালো কাজে দেবে। ব্যাংক খাতের কয়েকটা দিক নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। একটা হচ্ছে সম্পদ উদ্ধার। সেজন্য একটা বিশেষ তহবিলও করা হচ্ছে। টাকা ফেরতের পাশাপাশি এ তহবিল থেকে জনহিতকর কাজ করা হবে। পাচার হওয়া বিপুল অঙ্কের অর্থ ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসাও বেশ কঠিন কাজ। এসব কাজে কিছু জটিলতা থাকে। তবে আমরা ইতোমধ্যেই আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশকে কাজে লাগানো হবে। তবে একটা কথা বলতে পারি যে, আমানতের টাকা সবাই ফেরত পাবেন। সেজন্য সময় লাগবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। একটা ট্রেন্ড চলে এসেছিল স্টক একচেঞ্জে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার লভ্যাংশ নয় বরং শেয়ার বেচাকেনার একটা গেম প্ল্যান শুরু করেছিল। সেই সুযোগটা বড় ব্যবসায়ী অথবা বড় বড় জুয়াড়িরা নিয়েছে। ফলে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মূলধন হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে হবে শেয়ারবাজার কোনো নিয়মিত আয়ের উৎস নয়। অনেকে মনে করেন, আমি শেয়ার কিনব, মাস শেষে লাভে বিক্রি করব। এসব কোনো দেশেই চলে না। এসবের ফলে দেখা গেছে অনেকের ৮০ টাকার শেয়ার এখন ২০ টাকায় নেমে গেছে। ইতোমধ্যে আমি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। তারা সেখান থেকে একটি অংশ ইন্টারেস্ট বাবদ ও একটি অংশ বাজারে বিনিয়োগ করবে বলেছে। আমি আশাবাদী শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
খবরের কাগজ: এবারের বাজেট নিয়ে আপনার প্রত্যাশার কথা বলুন।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবার বাজেট গতানুগতিক হবে না, কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। বাজেট আকার-আয়তনে খুব বড় অথবা খুব বেশি ছোট হবে না। পর্যালোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেমন- শিক্ষা স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর প্রাধান্য থাকবে বাজেটে। সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশা পূরণের দিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেটে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষ দুমুঠো খেয়েপরে স্বস্তিতে বসবাস করতে পারে। কাজেই বলা যায়,এবারের বাজেট কার্যত সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে জনবান্ধব ও বাস্তবমুখী একটি বাজেট হবে।
খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।