
ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে আমরা যা পেয়েছি এর চেয়ে স্পষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। প্রথমত, আমাদের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হয়েছিল এবং ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, লেবারদের পছন্দের মাধ্যমে আমাদের টোরি পতনের পাতা ওল্টাতে হয়েছিল। তৃতীয়ত, আমাদের দেশ পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বুধবারের ব্যয় পর্যালোচনা সেই পুনর্গঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী করেছে। এটি ব্রিটেনের পুনর্নবীকরণের জন্য বড় একটি বিনিয়োগ। এতে কর্মজীবী মানুষের হাতে আরও অর্থ থাকবে। তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি আরও গর্ব থাকে এবং সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আরও আশা থাকবে। মানুষ এটি পাওয়ার জন্যই ভোট দিয়েছে। সম্পদ এবং সুযোগ কেবল কয়েকটি শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
এর মানে হচ্ছে, স্কটল্যান্ডের মার্সিসাইড এবং পূর্ব উপকূলে কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প। এ ছাড়া নটিংহ্যামশায়ারে পারমাণবিক সংযোজন ও ওয়েলসে রেল সংযোগে বিনিয়োগ। উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিম মিডল্যান্ডস, ম্যানচেস্টার, দক্ষিণ এবং পশ্চিম ইয়র্কশায়ার সর্বত্র নতুন মেট্রো প্রকল্প। লেবার পার্টির বার্তা স্পষ্ট। প্রতিটি সম্প্রদায়কে এখন গতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধির উৎস হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের ভুল বুঝবেন না। আমাদের এখন দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে। এ সরকারের প্রথম কাজ ছিল ব্রিটিশ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা। আমাদের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হয়েছিল। আমাদের সরকারি আর্থিক সংস্কার করতে হয়েছিল। আমাদের কঠিন কিন্তু ন্যায্য লেবারদের পছন্দের বাজেট দিয়ে পৃষ্ঠাটি ওল্টাতে হয়েছিল। কেউ চায় না যে, কর বৃদ্ধি পাক। কিন্তু রাজনীতি হলো যার যার পছন্দের বিষয়। তাই যখন আমরা বেসরকারি স্কুল ও দ্বিতীয় বাড়ির মালিকদের আরও বেশি অবদান রাখতে বলি, তখন আমরা একটি ন্যায্য উপায় বেছে নিই।
গত সপ্তাহে আমরা ঘোষণা করেছি যে, সর্বজনীন ঋণের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে বিনামূল্যে স্কুল খাবার দেওয়া হবে। এর ফলে ১ লাখ শিশু দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে। এ ছাড়া যেসব বাবা-মা কষ্টে থাকে তাদের ৫০০ পাউন্ড দেওয়া হবে। তাছাড়া অনেক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আপনার সন্তান যেদিন একমাত্র ক্ষুধা অনুভব করবে তা জেনে সান্ত্বনা পাওয়া যাবে যে, শেখার ক্ষুধাই তার একমাত্র ক্ষুধা। এই পার্থক্যটিই আমাদের নির্বাচিত করে। এটি সম্ভব, কারণ আমরা নয় মাস আগে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আমার পরিবর্তন পরিকল্পনার প্রতিটি সাফল্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। প্রতিটি ব্রেকফাস্ট ক্লাব খোলা, প্রতিটি গর্ত ভরা, প্রতিটি হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছে- এ ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। পরিবর্তন এবং স্থিতিশীলতা কোনো চাপের মধ্যে নেই। তাদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের বিরোধীদের দিকে তাকান। তারা সেই রসায়নে বিশ্বাস করে, যেখানে বলা হয়, কর কমতে পারে এবং ব্যয় বাড়তে পারে। এটা ঠিক সেই ধরনের আর্থিক কল্পনা, যা প্রথমেই ব্রিটেনকে পতনের কাদার মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনে আমরা স্পষ্ট ছিলাম- আমরা আর কখনো শ্রমজীবী মানুষকে এর মধ্যদিয়ে যেতে দেব না। আমরা কখনো বেপরোয়াভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়কে পুনর্নবীকরণের সুযোগ হাতছাড়া করব না।
ব্যয় পর্যালোচনাটি কেন তা দেখায় এবং এটি নিরাপত্তা দিয়ে শুরু হয়। আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তা এবং আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা- এ সরকার আপনাকে নিরাপদ রাখার জন্য বিনিয়োগ করছে। যখন কেউ চাকরি-ঝুঁকির মুখে পড়ে তখন আমরা তাদের সুরক্ষা দিচ্ছি, যেমনটি আমরা ব্রিটিশ স্টিলের ক্ষেত্রে করেছি। আমরা দেশীয় পরিচ্ছন্ন শক্তি এবং জীববিজ্ঞানে বিনিয়োগ করে নতুন সুযোগ তৈরি করছি। ব্রিটেন এখন প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার মধ্যে আছে।
আমরা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে সবচেয়ে টেকসই বৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি। একটি ‘প্রতিরক্ষা লভ্যাংশ’ প্রকাশ করছি যা আমাদের শিল্পকে উজ্জীবিত করবে। ন্যাশনাল হেলথ সায়েন্স (NHS)-এ রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ পাবে। সেরা স্ক্যানার, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি আমাদের NHS কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমরা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।
শেষেরটা আমার কাছে খুবই ব্যক্তিগত। লজ্জাজনকভাবে বছরের পর বছর ধরে টোরিরা নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ার পর ৮০ শতাংশেরও বেশি ব্রিটিশ এখন বিশ্বাস করেন যে, নিজের বাড়ির মালিকানা ‘অধিকাংশ মানুষের জন্য অসাধ্য’। এটি জাতীয় জরুরি অবস্থা- বাড়ির মালিকানার স্বপ্ন সবার মধ্যেই থাকা উচিত। যদি আমরা আরও বাড়ি তৈরি না করি, তাহলে গৃহহীনতা বৃদ্ধি পাবে। শিশু অস্থায়ী বাসস্থানে বেড়ে উঠতে বাধ্য হবে। লাখ লাখ সাধারণ পরিবার তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হবে। এটি শ্রমিক শ্রেণির আকাঙ্ক্ষার জন্য বড় বিপর্যয় হবে এবং আমি তা পরিবর্তন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমি জানি, জীবনযাপনের জন্য সংগ্রাম করা কতটা কষ্টের। ছোটবেলায় আমার পরিবারের ফোন লাইন নিয়মিতভাবে কেটে দেওয়া হতো। কারণ টাকা ফুরিয়ে গেলে বিল এড়িয়ে যাওয়াটা ছিল সবচেয়ে সহজ বিষয়। কিন্তু যেহেতু আমাদের নিজের বাড়ি ছিল, তাই আমাদের কাছে সবসময় নিরাপত্তার একটা ভিত্তি ছিল যা দিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারতাম।
আজকের তরুণ শ্রমিক শ্রেণিও একই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। এটি মৌলিক শ্রম ন্যায্যতা। আপনি যদি আপনার প্রথম বাড়ি কিনতে যান এবং একটি তরুণ পরিবার হোন অথবা আপনার হাসপাতালে পুরোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও কঠোর পরিশ্রম করছেন এমন একজন নার্স হোন, ব্রিটেনের উচিত আপনাকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া।
এই ব্যয় পর্যালোচনা এটাই প্রদান করে। এটি দেশজুড়ে সুযোগকে আরও সুষ্ঠুভাবে ছড়িয়ে দেয়।
প্রতিটি সম্প্রদায়ের শ্রমজীবী মানুষের সম্ভাবনাকে সমর্থন করে। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি এমন এক অর্থনীতিকে আরও চাঙা করে তোলে, যা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। একটি জাতি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। এখন জনগণের নিরাপত্তা এবং পুনর্নবীকরণ প্রদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমি জানি, আরও অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু এ সপ্তাহে আমরা জাতীয় পুনর্নবীকরণের মিশনে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছি। গত শরতে, আমরা ভিত্তি স্থাপন করেছি। আজ আমরা ব্রিটেনকে দেখিয়েছি যে, আমরা পুনর্গঠন করব।
লেখক: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল