দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলকে 'বিসর্জন দিয়েছেন' বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ৷
বুধবার (১ মে) মোহাম্মদপুর টাউন হল প্রাঙ্গণে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি৷
এদিনের সভায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের উদ্দেশে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তিনি বলেন, নির্বাচন আসলে দালালি করবেন আর দোষ চাপাবেন নেতাকর্মীদের ওপর। আপনি সমাঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করে দলকে বিসর্জন দিয়েছেন। জনগণ আজ জানে আপনি কেন নির্বাচনে গিয়েছিলেন, কী সুবিধার বিনিময়ে।
জি এম কাদেরকে হুশিয়ার করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কোনো আন্দোলন- সংগ্রামে যাবেন না, জেল খাটবেন না, শুধু উত্তরাধিকার দাবি করে পদ আকড়ে থাকতে চাইবেন আর দালালি করবেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন, তা হবে না। আপনার বিচার একদিন হবে। ক্ষমা পাবেন না।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জি এম কাদের বুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর৷ পূর্ণ বয়স্ক যুবক হওয়া সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধে জি এম কাদের কেন অংশ নেননি সভায় সেই প্রশ্নও তুলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ৷
একাত্তরের এই বীর গেরিলা যোদ্ধা বলেন, ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে পতাকা আমরা অর্জন করেছি এখন আপনি পার্টিকে বিক্রি করে দালালি করার মাধ্যমে সেই পতাকা ওড়াচ্ছেন বাড়িতে- গাড়িতে।
মহান মে দিবসের প্রেক্ষাপটে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দিবসের আলোচনা সভায় শুধু শ্রমিকদের কথা বলা হয়। পরবর্তীতে কেউ তাদের কথা মনে রাখেনা। শিশু শ্রমিকদের কথা কেউ বলে না। রাজপথে না নামলে শ্রমিকদের দাবি কোনোদিন আদায় হবে না।
জাতীয় পার্টির (রওশন) প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সভাপতিত্বে উক্ত আলেচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাপার একাংশের কো- চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম সারোয়ার মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক, এম এ কুদ্দুস খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাকসহ আরও অনেকে৷
আলোচনা সভা শেষে মোহামমদপুরের টাউন হল প্রাঙ্গণে পথচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরণ করেন কাজী ফিরোজ রশিদ।
বুধবার দুপুরে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টি। এতে জাপার একাংশের কো- চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির ভাইস- চেয়ারম্যান ও জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাকে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ৷ পরে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয় ৷
জুলাইয়ে শহিদ সাইমনের পরিবারকে বিএনপি নেতা মিল্টনের ঈদ উপহার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় জুলাই আন্দোলনে শহিদ সন্দ্বীপের সন্তান সাইমনের পরিবারকে কোরবানির জন্য ছাগল ঈদ উপহার দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন।
শুক্রবার (৬ জুন) জুমার নামাজের পর তিনি সাইমনের মা রহিমা বেগমের হাতে এ ঈদ উপহার তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান, যুবনেতা মোবারক হোসেন রাজু, যুবনেতা মোহাম্মদ জুয়েল, ছাত্রনেতা আরফিন, তানভীন ফারুক তামিমসহ অনেকেই।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহিদ পরিবারের পাশে ঈদ উপহার নিয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আজ আমাদের সন্দ্বীপের সন্তান শহিদ সাইমনের পরিবারের জন্য ঈদ উপহার নিয়ে এসেছি।
শহিদ সাইমন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নিহত হন। তার বাড়ী সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায়।
পুশইন ভারতের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি শংঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পুশইন বা জোর করে লোক পাঠানোর বিষয়টি ভারতের মাস্টার প্ল্যানের অংশ।’
শুক্রবার (৬ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন বিবর্তন আমরা দেখছি। গত মে মাসে বিএসএফের হাতে ছয়জন বাংলাদেশি নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি পরিচয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে।’
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সৎ প্রতিবেশিসুলভ আচরণের পরিপন্থি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত কখনোই প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে চায় না। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা পরিকল্পিতভাবে পুশইনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা, সীমান্তহত্যা ও জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার - সবকিছু এরই অংশ।’
ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার চোখে নয়, বরং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দেখে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই। এক সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এভাবে ভারতীয় নাগরিকদের ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রিজভী বলেন, এবারের ঈদুল আজহা ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভয়, আতঙ্ক, গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের আগ্রাসী থাবা থেকে দেশবাসী অনেকটাই স্বস্তিতে ঈদের উৎসবে সামিল হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। - বাসস
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল
ময়মনসিংহে নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে যতসামান্য পড়ালেখা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলেছে একই কমিটির পদধারী ছয় নেতা। এর মাধ্যমে নবগঠিত কমিটির নেতাদের বিভক্তির বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে।
কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ পাঠানোর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) সকালে লিখিত অভিযোগটি খবরের কাগজের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, অভিযোগপত্রে ছয়জন পদধারী নেতা স্বাক্ষর করেছেন। তারা হলেন- নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাইমুর আরেফিন পাপন, মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুদ আলম (মাসুদুল আলম মাসুদ), নাদিম সারোয়ার টিটু, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুজ্জামান সরকার শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল।
অভিযোগের একাংশে তারা উল্লেখ করেন - যারা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, কমিটিতে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি যতসামান্য পড়ালেখা করেছেন। এছাড়া তিনি বিগত সময়ে নৌকার পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। যার ভিডিওফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
আরও বলা হয় - রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো মেরামতে বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে ২৪ নম্বর দফায়, বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগে সভাপতির কোনো ছাত্রত্ব না থাকাসহ যতসামান্য পড়ালেখা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এদিকে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সুজা উদ্দিন চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাওয়ার বিষয়টি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করলেও এর চেয়ে বেশি কোনো অভিযোগ তুলেননি ওই ছয় নেতা।
অভিযোগপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, গত ১৮ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের (উত্তর ছাত্রদল) কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগপত্রের বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। যতসামান্য পড়ালেখা করা নেতার নেতৃত্ব কর্মীরা মেনে নিতে চায় না। নেতৃত্বনির্ভর ছাত্রদলের রাজনীতি সবাই দেখতে চায়। যেই পদের জন্য যিনি উপযুক্ত না, তাকে ওই পদ দেওয়া ঠিক না। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’
একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল বলেন, ‘ছাত্রদলে নেতৃত্ব দেওয়া কোনো নেতার যদি যতসামান্য পড়ালেখা থাকে, তাহলে এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এমন নেতার নেতৃত্ব মেনে নিতে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। কারণ, যেসব নেতা কিংবা কর্মীরা পড়ালেখা চলমান রেখেছেন, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন, তাদের পক্ষে এমন নেতার নেতৃত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
নবগঠিত কমিটির তালিকা ও এই কমিটির নেতার স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র
উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নিহাদ সালমান দুনন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার আগে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অনেককিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। নবগঠিত কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের পড়ালেখা নিয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে কমিটি ঘোষণা করেছেন।’
নবগঠিত কমিটির সাধারণত সম্পাদক এ কে এম সুজা উদ্দিন বলেন, ‘আমি ফুলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলাম। আমাকে একবার শোকজ করলেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দিয়েছিলাম। দল অনেক যাচাই-বাছাই করে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে আমাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে।’
একই কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি কখনোই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করিনি। যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, সেটিতে সুপার এডিট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এসএসসি পাস করতে পারিনি, এটি অসত্য। বিগত সময়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা থাকাসহ নানা কারণে খুব বেশি পড়ালেখা করা হয়নি। তবে কোন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি, তা বলতে চাই না।’
নুরুজ্জামান সোহেলের গ্রামের বাড়ি জেলার গৌরীপুর উপজেলায়। তিনি গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মদ তায়েবুর রহমান হিরন।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভিডিওটি ছড়িয়েছে এই ভিডিওতে নুরুজ্জামান সোহেল উপস্থিত থাকার বিষয়টি সত্য। তিনি তখন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি বাসার কক্ষে অবস্থান করছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার যতদুর মনে আছে, সোহেল ২০০২ সালে গৌরীপুরের আর কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তখন পাস করতে পারেনি সোহেল। কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হয়েছে কিনা এই মুহুর্তে মনে নেই। তবে সোহেল এসএসসি পাস করতে না পেরে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি, ২০১২ সালে ময়মনসিংহে উন্মুক্ত, টেকনিক্যাল অথবা মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করেছে। এরপর তিনি কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এইচএসসি পাস করেছে কিনা, তা জানা নেই।’
এর আগে গত ১৫ মে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ, উত্তর, মহানগর, আনন্দমোহন কলেজ ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। উত্তর জেলা ছাত্রদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নূরুজ্জামান সোহেল সভাপতি ও এ কে এম সুজা উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া কমিটির অন্যরা হলেন- সিনিয়র সহসভাপতি নাইমুর আরেফিন পাপন, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুদ আলম (মাসুদুল আলম মাসুদ), নাদিম সারোয়ার টিটু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান সরকার শাওন, রাসেল আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল ও দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। তাদের অব্যাহত সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য কামনা করি। ঈদ মোবারক।’
তিনি লেখেন, “ঈদুল আজহা অর্থ ত্যাগের উৎসব। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ত্যাগ করা। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, মাংস বা রক্ত কোনোটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, ‘পৌঁছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা’। বিশ্বাসী মানুষের পবিত্র ইচ্ছা হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু কোরবানি দেয়। আত্মশুদ্ধি, আত্মতৃপ্তি আর আত্মত্যাগের সুমহান বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই ঘুরে আসে পবিত্র ঈদুল আজহা। দ্রব্যমূল্য, সামাজিক অনাচার ও নানামুখী সংকটের অভিঘাত সত্ত্বেও দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মন ঈদের অমলিন আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ। দেশের জনগণ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদের এক কঠিন সময় পার করেছে। গত বছর ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদী চক্রের পতনের পর দেশে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশে এবার মানুষ ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। ফ্যাসিবাদী আমলে তাঁবেদার অপশক্তির অবৈধ ক্ষমতা লোভের কারণে রাষ্ট্র ও সমাজে নীতি, নৈতিকতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটে। এখন সকলে মিলে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নত নৈতিকতা ও পাহাড়সম বৈষম্য দূরীভূত করতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে সর্বত্র। যেন বেপরোয়া লুটপাট, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত এ চেয়ারম্যান লেখেন, ‘ত্যাগের উৎসব হলো ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কোরবানী। পশু কোরবানী হলো চিত্তশুদ্ধি ও পবিত্রতার একটি মাধ্যম। ধৈর্য ও বিশ্বাসের পরীক্ষার ঐতিহ্যের ধারা বেয়েই কোরবানি মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে। ঈদুল আজহার ত্যাগের চেতনা সমাজে ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। কোরবানির যে মূল শিক্ষা তা আমরা যদি নিজ জীবনে প্রতিফলিত করে মানব কল্যাণে ব্রতী হই তাহলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করতে পারবো। বিশ্বাসীদের সে চেষ্টায় আত্মনিবেদিত থাকতে হবে।
কোরবানী ঈদ বিশ্ববাসী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। উৎসব হলো সর্বজনীন, এর প্রাঙ্গণে সমবেত হয় সব মানুষ। উৎসব মানুষকে পরস্পরের সাথে শুভেচ্ছাবোধে উদ্বুদ্ধ করে।
বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা কঠিন হবে। মূল্যস্ফীতির তীব্রতা, খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, গৃহস্থালীতে পানি, গ্যাস ও বিদ্যূতের তীব্র সংকটে জনজীবন সীমাহীন দুর্দশায় নিপতিত। স্বল্প আয়ের মানুষরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনযাপন করছে। ঈদের আনন্দের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে-সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের আনন্দের উৎসব ভাগ করে নিতে হবে এক কাতারে সবাইকে ।
ঈদুল আযহা সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, সমাজে সৃষ্টি হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই প্রার্থনা জানাই। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’