বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু আমাদের মাঝে নেই। তাকে আমাদের সামনে আসতে দেওয়া হয় না। তাকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। তার চিকিৎসা বিষয়ে বাংলাদেশের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘তাকে অবিলম্বে বিদেশে নেওয়া দরকার।’ বারবার বলার পরও জেনেশুনে একটা মানুষকে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে- এটা ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে। আজকে বিভিন্নজনের বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে এবং আসবে। ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে যে, যারা তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবে। ‘যখন সুযোগ আসবে ইনশাআল্লাহ তাদের বিচার হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মির্জা আব্বাস।
রবিবার (২৬ মে) গুলশানের লেকশোর হোটেলে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর লেখা ইংরেজি গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইভ, হার স্টোরি’ এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, এই সরকার বারবার যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকতে দেবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সরকার থাকলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না, যদি এদেশের সাধারণ মানুষ সচেতন না হয়।
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এত নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সঙ্গে করতে পারে, এটা বলা যায় না। আমি এখানে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে (বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক) দেখতে পাচ্ছি। আমি তাকে (খালেদা জিয়াকে) হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তারা (চিকিৎসকরা) দেখিয়েছিলেন… হার্টে বাইপাস করা যাচ্ছে না, কিন্তু সেটা একটা বিকল্প তারা করছেন, যাতে রক্ত জমে ব্লক হয়ে মারা না যান। সেরকম করে একটা প্যাসেজ (জায়গা) তৈরি করা। দেখে আমার এত খারাপ লেগেছিল যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকে রাখতে পারে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। ‘শেখ হাসিনা সেটা দেখেছেন, তাতো আমি বলি না। কিন্তু তিনি জানেন না, তা হতে পারে না। কারণ, তিনি প্রতিনিয়ত খবর তো রাখেন। রাখার পরও এই নিষ্ঠুর আচরণ করেন।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। চোখ দেখাতে প্রেসিডেন্ট ফ্যামিলিসহ চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে। আরও অনেক নেতা যখন-তখন চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানিতে। অথচ বেগম জিয়াকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা একটা প্রতিশোধ। এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আজকে নিজের জন্মভূমিতে বন্দি। আমি মনে করি বাংলাদেশও বন্দি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ইতি প্রকাশনার প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর সহধর্মিণী দিনারজাদি বেগম।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান।