চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে রমজান মাসের ইফতারকে ঘিরে অনেকটা নির্বাচনি আমেজ বইতে শুরু করেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইফতারের আয়োজন করছেন। পিছিয়ে নেই এলডিপিসহ ছোট দলের বড় নেতারাও। এটা রমজান মাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি পাওনা এবং আমেজ যোগ করেছে।
সাধারণ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো চট্টগ্রামের বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাহরি ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন না। কেউ কেউ নিজের মতো করে অসহায় মানুষের মধ্যে পণ্য ও জাকাতের টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই ৫ আগস্টের পর দেশে নেই। তবে তাদের অভাব কিছুটা পূরণ করছেন রাজনীতিক এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকায় নিজেদের মধ্যেই ইফতার আয়োজনের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এ কারণে গরিব-অসহায় মানুষরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। শহরের প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টার, হল, রেস্টুরেন্ট, মফস্বলের স্কুল মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, এলাকার মসজিদ প্রাঙ্গণ, সব জায়গায় প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন চলছে। আবার কোথাও গরিব অসহায়দের মধ্যে সাহরি ও ইফতারের সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কে কাকে সংসদে দেখতে চায়, তাও প্রকাশ করে ফেলছেন। যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তখন যেন তার নেতাকে ভোট দেয় সেই আহ্বানও জানিয়ে রাখছেন তারা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক নুর উদ্দিন নুরু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা যারা বিএনপির রাজনীতি করি, আমাদের জনগণ থেকে বার বার দূরে সরানোর চেষ্টা করেছে। রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারি সামগ্রী কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মানবিক কাজেও বাধা দিয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের জন্য মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে সাধারণ রমজানের ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে।’
এদিকে তৃণমূল পর্যায়ের এসব আয়োজনের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গ্রান্ডওয়ার্ক করে নিচ্ছেন। এলাকাভিত্তিক নির্বাচনি কর্মী জোগাড়ের কাজটিও তারা সেরে ফেলছেন। এসব কর্মীর মাধ্যমেই সাহরি ও ইফতার সামগ্রী বিতরণের টোকেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুঃস্থদের ঘরে। প্রার্থীরাও ছোট আয়োজনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। অনেক প্রার্থী নিজে থেকে নির্বাচনের কথা না বললেও তাদের কর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বহদ্দারহাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে গরিব-অসহায়দের মধ্যে ইফতারিসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। তিনি মঞ্চে ওঠার পর থেকে যতজন সেখানে বক্তব্য রেখেছেন, তাদের সবাই তাকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে উল্লেখ করেছেন।
জানতে চাইলে হাটহাজারী আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এবার বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন না করে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে করছি। যেখানে আমাদের নেতা-কর্মীদের চেয়ে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বেশি। রাতে সাহরি সামগ্রী দিই। এসব আয়োজনে থাকে না কোনো মঞ্চ। আমরা তাদের সঙ্গে মাটিতে বসেই ইফতার করি। তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা শুনি। তারা চান, তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অতিদ্রুত সংসদে যাক। তারা ভোট দিতে চান। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে ইফতার মাহফিলে কিছুটা নির্বাচনি আবহ তৈরি হচ্ছে, এটা বলা যায়।’
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে জামায়াতে ইসলামী অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে অনেক আগে। এ কারণে তাদের প্রার্থীরা সরাসরি ভোট চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ১০ আসনের শুলকবহর এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানান, এই ওয়ার্ডে তিনি আর কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করবেন না। দলের অপর একজন নেতাকে তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এমপি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকাবাসীর জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবেন উল্লেখ করে কিছু প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হেলালী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের কাছে যেতে পারিনি। রমজান মাস উপলক্ষে সাহরি ও ইফতারিসামগ্রী নিয়ে আমরা তাদের কাছে হাজির হচ্ছি। তারাও আমাদের কাছে পেয়ে অনেক খুশি। তারা আমাদেরই ভোট দিতে চান। আমাদেরই নির্বাচিত করতে চান।’
এদিকে গত ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর দক্ষিণ ও মহানগর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) উদ্যোগে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। তিনি তার বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিবিদ এবং বর্তমান প্রশাসনেরও সমালোচনা করেন।