অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে তাতে জাতি আশান্বিত।’
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় তারা এ কথা বলেন।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার ‘জাতি এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের সফল হতেই হবে’ মন্তব্যের প্রতি সহমত প্রকাশ করে তারা বলেন, ‘এই অভিযানে রাষ্ট্র সংস্কারে ব্যর্থ হলে দেশ ও জাতি প্রচণ্ড রকমের হতাশায় নিমজ্জিত হবে। একই সঙ্গে আবারও কোনো স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিবাদী শাসকের আবির্ভাব ঘটবে। সমগ্র দেশ ও জাতি কঠিন অন্ধকারে ধাবিত হবে।’
নেতারা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও জনআকাঙ্ক্ষার নির্বাচন প্রয়োজন হলেও চলমান ব্যবস্থায় তা আশা করা খুবই কঠিন। তাই বাংলাদেশে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। প্রধান উপেদেষ্টার ভাষণে সেই পদক্ষেপের কথা শুনে জাতি অনেকটাই আশাবাদী।’
ন্যাপ নেতারা বলেন, ‘জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তৈরির জন্য একটি পথরেখা ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন ও কমিশন প্রধানদের নাম ঘোষণা করে এসব কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে আশাবাদী করেছেন। এই অবস্থায় বর্তমান সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যে সহযোগিতার আহ্বান করেছেন দলগুলোর সেই সহযোগিতা করা উচিত।’
তারা বলেন, ‘শহিদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের পুরোপুরি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে কোনো নির্বাচন জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না। প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তৈরির জন্য যে কাজ শুরু করেছেন তা শেষ করার জন্য যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত সময় দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, দেশের আমূল সংস্কার এখন সময়ের দাবি এবং তা করতেই হবে। পতিত সরকারের ১৬ বছরে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। এসব নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য শুভ কোনো ফল বহন করবে না। রাষ্ট্র সংস্কারের পর দেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত সরকার পাবার সুযোগ তৈরি হতে পারে। ’
নেতারা আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের আলোকে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সূচনার অন্তত শুরু হোক। এই সংস্কার ছাড়া শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দ্রুত নির্বাচন হলে ভিন্ন মোড়কে আবার একদলীয় শাসন কায়েম হয়ে যেতে পারে। সবাই মিলে পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি সত্যিকারের সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের জন্য যেমন নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রয়োজন তেমনি রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথায়, এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিরাট আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যেতে পারে।’
সালমান/