আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গোপালগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে, তা না হলে সেখানকার প্রশাসনের কারও চাকরি থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অথচ তার দোসররা এখনো সক্রিয়। তারা গোপালগঞ্জে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এই সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হয়ে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করেছিল। তাদের শায়েস্তা করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় রকমের অঘটন ঘটাতে পারে।’
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে ‘দেশে বেকারত্ব মহামারি নিরসনে অন্তবর্তী সরকারের কাছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার ওপর দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই সরকার সফল হলে জনগণের জন্য ভালো হবে, আর ব্যর্থ হলে দেশের মানুষকে ভুগতে হবে। তাই সরকারকে সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা করা উচিত। গণঅধিকার পরিষদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছি এবং ভবিষ্যতেও দেবে।’
তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় এসেছে নতুন ডিসির ৪৯ জনই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, তাদের প্রশাসনে রেখে দেশ সংস্কার সম্ভব না। ছাত্র-জনতা দেশকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে, এখন যুবকদের দায়িত্ব হবে তাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। বর্তমানে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে ২৫ বছর বয়স হতে হয়, তরুণদের সুযোগ দিতে কমিয়ে ২১ বছর করতে হবে। আগামীতে সংসদে কমপক্ষে ১৫০ জন তরুণ এমপি থাকতে হবে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী সুবিধাভোগীদের সরিয়ে আওয়ামী সুবিধাভোগীদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটা শহিদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’
সভায় আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন ও ২২ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন। আর ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম।
প্রস্তাবগুলো হলো- সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত চাকরি ও কর্মসংস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া। চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও আইসিটি সেক্টরে তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। সব চাকরিতে আবেদন ফি, জামানত ও বয়সসীমামুক্ত চাকরির ব্যবস্থা এবং ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অসদুপায়ে নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ করা। তরুণদের সম্পৃক্ত করে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আন্তজার্তিক বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদ জামানতে সুদবিহীন ঋণ দেওয়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশের মোট ঋণের ৫০ শতাংশ ঋণ দিতে হবে। বেকার তরুণদের জন্য ভাতা দেওয়া। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে শতভাগ চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে হবে। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিতদের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বা সুদমুক্ত ঋণসুবিধার আওতায় বিদেশে পাঠাতে হবে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাড. সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/সালমান/