অন্তবর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় রাখতে একটি বিশেষ মহল চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ইতোমধ্যে বিশেষ মহল তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা নাকি একবারে দেশটাকে সংস্কার করে পরিবর্তন করে ফেলবে। তাহলে তো জনগণের দরকার নেই, পার্লামেন্টের দরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা জনগণ মানবে না।’
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত ‘দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট : উচ্চকক্ষের গঠন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি পত্রিকায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট জরিপ করে দেখিয়েছে- যতদিন খুশি এই সরকার থাকুক। আমি জানিনা তারা কীভাবে এই জরিপ করলো। কিন্তু জনগণতো এটা মেনে নেবে না। জরুরি সংস্কার শেষ অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের দেওয়ার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’
নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির প্রস্তাবনাকে নতুন চক্রান্ত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মধ্যে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারাও বলছেন নতুন দল গঠন করতে হবে। তাহলে তারা কীভাবে নিরপেক্ষ হবে? নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে, নতুন সরকারের দীর্ঘমেয়াদী সময় নিয়ে ক্ষমতায় থাকার কথাও বলা হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সুযোগ পেয়েছি তা নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার গত ১৫বছর ক্ষমতায় থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে ফেলছে।’
তিনি নূন্যতম যে সংস্কার প্রয়োজন তা করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেন। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হলে অবশ্যই পার্লামেন্ট প্রয়োজন। পার্লামেন্ট না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। ফলে দ্রুত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর সেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোথায় কোন জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে। তখন সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে নাকি সংশোধন হবে সেটা সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।’
অভ্যুত্থানের পরে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শহিদদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজকে দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষার পরে ১৫ থেকে ১৭ বছর নির্যাতিত হয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্যাতিত হয়ে বিদেশে আছেন। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারদের হয়ে যারা কাজ করেছে তাদের সে সমস্ত জায়গা থেকে অপসারণ করা হয়নি। অতি দ্রুত তাদের চিহ্নি করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আলোচনাসভায় বক্তারা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ‘এ রকম সংসদে দেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।’
শফিকুল ইসলাম/জোবাইদা/অমিয়/