ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জোগানোর পরও অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ ও কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের নানা হুমকি, পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয় সত্ত্বেও রাজপথে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছে৷ তার পরও কিছু রাজনৈতিক দল, সরকারের কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের আওয়ামী লীগের দোসর বলে অভিহিত করেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ অন্যায়, অপবাদ আমরা কোনোভাবে মেনে নেব না। আমরা এর প্রতিবাদ করব। সারা দেশে আমাদেরও লোক আছে। আমাদের হয়তো শেষ করে দেওয়া হবে। তবুও আমরা প্রতিবাদ করব।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জি এম কাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে জাতীয় পার্টির কাকরাইলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের দোষারোপ করেছেন জাপা চেয়ারম্যান।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (২ নভেম্বর) একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, সেই আয়োজনকে ঘিরে গতকাল রাতে ছাত্র-জনতার ব্যানারে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বেনিয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল জাতীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুর করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা জানতে পারি, পরে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনির, ইসমাইল, আনোয়ারের নেতৃত্বে আরেকটি দল আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করে।’
বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা এবং সেই সরকারের অংশীদার হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে চলমান রাষ্ট্র সংস্কার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে রংপুরে সমন্বয়কদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় সমাবেশের ডাক দেয় জাতীয় পার্টি। এর প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যার দিকে জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করে বিক্ষুব্ধরা। তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে আসেন। জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিংয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের, যেন ২ নভেম্বর জাতীয় পার্টি মহাসমাবেশ করতে না পারে। মিছিলটি পার্টি অফিসের সামনে এলে দলটির নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় সংঘর্ষে ১০-১৫ জন আহত হন। এরপর সমন্বয়করা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাপার কার্যালয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়, ভাঙচুর করে এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খোদাই করা ছবি ও দলের লোগো শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমরা মহাসমাবেশ করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে বৈধভাবে অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। একটি কুচক্রী মহল আগামীকালের যে মহাসমাবেশ নির্ধারিত ছিল, সেটাকে নস্যাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে। জাতীয় পার্টি জীবন দিয়ে হলেও সেই সমাবেশ করবে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘সংবিধানের ৩৭ এবং ৩৮ এ দুটি ধারায় রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং এ দেশের নাগরিক হিসেবে সব ধরনের সভা-সমাবেশ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে জাতীয় পার্টির। সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব (রংপুর বিভাগ) ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের।
জয়ন্ত/সালমান/