নাটোরের সিংড়া উপজেলা বিএনপির জনসভার মঞ্চে দেখা গেল সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চাচাতো শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে। আর মঞ্চে তাকে দেখে আশ্চর্য হয়েছেন অনেকেই। প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।
উপজেলা বিএনপির দাবি, তারা ডা. ফারজানা রহমানকে খেয়াল করেননি। তাকে দাওয়াতও করা হয়নি।
যদিও এটা মানতে নারাজ নেতা-কর্মীরা। কেননা, তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে উপজেলা বিএনপির আগামীর নেত্রী হিসেবে!
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া কোর্ট মাঠে উপজেলা বিএনপি জনসভার আয়োজন করে। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
ওই সভামঞ্চেই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় দৃষ্টিকে। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কেউ মন্তব্য বা প্রতিবাদ না করলেও চলে আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও বিএনপির কর্মীরা জানান, দৃষ্টি পলকের চাচা শ্বশুর প্রভাষক আনিছুর রহমানের মেয়ে। এ ছাড়া সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুর ভাতিজি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দৃষ্টি তার দুলাভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে চলতেন। সিংড়ায় তিনি একটি ক্লিনিকের পরিচালক। লাইসেন্সবিহীন ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নিউজ করতে গেলে তিনি সংবাদকর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। চাচাতো দুলাভাই পলকের প্রভাব খাটিয়ে ২০২০ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নামমাত্র ভাড়ায় দখল করে ক্লিনিক করেছেন।
সিংড়া পৌর বিএনপির সদস্যসচিব তায়েজুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা এমন একজন নারী মঞ্চে ওঠার সুযোগ পায় কীভাবে? এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
দৃষ্টির স্টেজে উপস্থিতি নিয়ে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও তার চাচা আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, ‘তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। মঞ্চে প্রায় দেড় শ লোকের মধ্যে কখন ওঠেন তা আমরা খেয়াল করিনি।’
এ বিষয়ে জনসভায় উপস্থিত কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতা জানান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোল ই আফরোজ কলেজের সাবেক ভিপি শামীম ওই জনসভা সঞ্চালনা করেন। তিনি দৃষ্টিকে উপজেলা বিএনপির আগামীর নেত্রী বলেও পরিচয় করিয়ে দেন। দাওয়াত না পাওয়া কাউকে এমনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দাবি সঠিক নয়। আবার তাকে কেউ খেয়াল করেনি এটাও সঠিক নয়। বরং দৃষ্টিকে বিএনপি নেতাদের পাশেই বসতে দেওয়া হয়েছে। পলকের চাচাশ্বশুর হওয়ায় পলক ও কনিকার যাবতীয় জমিজমা দেখভাল করছেন আনু। এ ছাড়া পলকের শ্যালক রুবেলের বালুমহালও দেখাশোনা করছেন আনু।
উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা দাউদার মাহমুদ জানান, উপজেলা বিএনপির গ্রুপিং চক্র মিথ্যা অভিযোগে দিয়ে তাকে বহিষ্কার করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তিনি। তবে দৃষ্টির স্টেজে ওঠার বিষয়টি কেউই মেনে নিতে পারেনি বলে জানান দাউদ।
পলকের শ্বশুর কাশেম, দৃষ্টির বাবা আনিছুর এবং উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনু আপন ভাই।
কামাল মৃধা/জোবাইদা/অমিয়/