অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস শেষ হতে চললেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ বা রোডম্যাপ প্রকাশ না করায় ক্ষুব্ধ বিএনপি। তবে নির্বাচনি রোডম্যাপের জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গত সোমবার (৪ নভেম্বর) বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, উপদেষ্টারা ইতোমধ্যে বলা শুরু করেছেন যে, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উশখুশ করছেন। তারা নানা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। তখন উপস্থিত দু-একজন সদস্য বলেন, মনে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেবে না। তাদের বক্তব্যও সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের মতোই বিরাজনীতিকরণের ‘মাইনাস টু’ পথে হাঁটতে চাইছে সরকার। নানা ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ থাকা উচিত বলে বৈঠকে উপস্থিত কেউ কেউ মনে করেন। তারা বলেন, কিন্তু নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে দেবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তখন স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য বলেন, এর জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করা যেতে পারে। এরপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য গত রবিবার এক স্মরণ সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবারও চক্রান্ত করে কিছু করার চেষ্টা করতে যাবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। একবার বিরাজনীতিকরণ মাইনাস টু করার খুব চেষ্টা করা হয়েছিল। আবারও ওই রাস্তায় (বিরাজনীতিকরণ) যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ১৬ বছরের বিনা ভোটের সরকারকে মানেনি, এখন এই সরকারকেও দীর্ঘদিন মানবে না। রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী সংস্কার করবেন, কতদিন সময় লাগবে, কোনো ছলচাতুরী ছাড়াই তা স্পষ্ট করুন। জাতিকে ধোঁয়াশা-অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, আমরা তো সেটা মেনে নেব না। অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করুন।’
নির্ভরযোগ্য সূত্র আরও জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন এবং ৮ নভেম্বর র্যালি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন বিষয়ে কোনো কিছু বলছে না। ফলে দেশে গণতন্ত্রের সংকট তৈরি হলে আবারও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। তাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরাজনীতিকরণের পথে হাঁটতে চাইছে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করার ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ মানবে না।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাত ৮টায় এ বৈঠক শুরু হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।