সিলেট মহানগর বিএনপির কাউন্সিলের ২০ মাস পর ঘোষণা করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে ১৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময়কে ‘সুদিন’ আখ্যা দিয়ে এই কমিটি ঘোষণার পরই অভিযোগ ওঠে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাননি বিগত কমিটির পদধারী এবং আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা নেতা-কর্মীরা। এই কমিটি প্রকাশের পর পদবঞ্চিত নেতাদের পক্ষে ক্ষুব্ধ কর্মীদের একটি অংশ গত রবিবার রাতে সিলেট নগরীতে বিক্ষোভও করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। গত জুলাইয়ে নাসিম হোসাইনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আবারও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হলো। এমনকি সদস্য পদেও স্থান পাননি দলের দুর্দিনে বিএনপির ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাত নেতা, সিসিকের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
কমিটি প্রকাশের পর খবরের কাগজের কাছে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন পদবঞ্চিত নেতা। সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই কমিটির ব্যাপারে আমার কোনো ক্রিয়াও নেই প্রতিক্রিয়াও নেই। এই কমিটির বিষয়ে আমি কোনোভাবেই অবগত না। তাই কমিটিতে কে পদ পেল, কে পেল না এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে আমি রাজি না।’
দুঃখ প্রকাশ করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সদস্য সালেহ আহমদ খসরু। তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটি দেখার পর আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে, ওই ছেলেগুলোর মুখগুলো। গুলিকে উপেক্ষা করে তারা পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল মারছে। সেই যুবকগুলো যখন কমিটিতে থাকে না তখন আমার মতো ৬৪ বছরের রাজনীতি করা মানুষের কমিটিতে না থাকার কোনো আক্ষেপ নেই। শুধু দুঃখ আমার একটাই, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতায় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বৈষম্যের শিকার। আরিফুল হক চৌধুরীর মতো নেতা যে কমিটিতে সম্মানিত সদস্য হতে পারেন না, তখন পুলিশের গুলিতে আমার যে রক্ত ঝরেছিল সে রক্তের ফোটা উৎসর্গ করলাম বৈষম্যের শিকার সব নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে।’
‘এই কমিটিতে বিগত আন্দোলনে যারা ছিলাম তারা তেমন কেউ নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কমিটির ১৬৯ জনের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতজন আন্দোলনকারী নেতা আছেন কমিটিতে। আর বাকি ১৫০ জনই আছেন যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ঘরে বসে ছিলেন।
সালেহ আহমদ খসরু আরও বলেন, ‘দল একটি কমিটি দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। যারা আমাকে এই কমিটিতে আনেনি, তারাও বলতে পারবে না যে আন্দোলন-সংগ্রামে আমি পিছনে ছিলাম। আমি হাসিনা সরকারের আমলের পুলিশের গুলি খেয়েছি। ৪৬ বছরের রাজনীতি করার পর আজও বৈষম্যের শিকার হতে হয় আমাকে। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল আজকের এই দেশ এবং ১৭ বছরের সংগ্রামের ওপর দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত করেছি আমরা। তাহলে কি আমরা নিজ দলেই বৈষম্যের শিকার হলাম? দলের নেতার ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ এত ছোটখাটো বিষয় দেখার কোনো সুযোগ তার নেই। কিন্তু যারা এই জিনিসটা করলেন, তাদের কি একবারও বিবেক সাড়া দেয়নি যে, আমরা কাদেরকে কমিটিতে আনছি আর কাদেরকে ফেলে দিচ্ছি!’
সিলেট মহানগর বিএনপির গত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখনো আমাদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতাদের নেতৃত্বে সংকল্পবদ্ধ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিগত আন্দোলনে যারা কোনো কিছুতেই যুক্ত ছিলেন না, অনেকেই আবার আওয়ামীঘেঁষা ছিলেন, এমন মানুষও কমিটিতে এসেছেন। আমরা ঘোষিত কমিটির বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ পথচলাকে মসৃণ করার জন্য ওয়ার্ড পর্যায়েও যেসব ত্যাগী নেতা-কর্মী বাদ পড়েছেন তাদের সংযোজন করার দাবিতে আমরা বিক্ষোভ করেছি। তবে আমরা অবশ্যই দলের নীতি-আদর্শ মানতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’