দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের অপকৌশলে লিপ্ত ছিল। ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখন আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সব শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বই প্রকাশ করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, দেশেকে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করে মাফিয়া সরকারের প্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। স্বৈরাচারের ১৫ বছরের দুঃশাসনের কুফল এখনো জনগণকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে হাজারও শহিদের রক্তস্নাৎ বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের পরাজয় হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে, দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি সরকারের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য তিন মাস যথেষ্ট সময় নয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিদিন জনগণকে হার মানতে হয়। তিন মাস সময় তাদের (জনগণ) কাছে মনে হতে পারে তিন বছরের সমান। বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সব কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র মেরামতে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে, তবে রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী ও স্বাধীন থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনোই জনগণের স্বাধীনতা-ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতায় যথানিয়মে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করে ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। প্রার্থীকে বিজয়ের জন্য জনগণের আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। জনগণের রায় পেতে হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রে জনগণের আদালত ও রাষ্ট্রীয় আদালত- এই দুটি কার্যক্রম শক্তিশালী করা গেলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্পকে তিনি এ অভিনন্দন জানান।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। নতুন সত্তা পেয়েছিল। নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। চব্বিশের ৫ আগস্ট আরেকটি বিপ্লব ও অভ্যুত্থান ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদের কবল থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অতি অল্প সময়ে মধ্যে প্রয়োজনীর সংস্কার শেষে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। অতিদ্রুত সেই সংস্কারগুলো করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ১৬ বছর ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আমরা পালন করতে পারিনি। এই দিবস জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ৫ আগস্ট বিপ্লব হয় নাই। এটা ধারাবাহিকতা হয়েছে। বিপ্লব হয়েছে ৭ নভেম্বর। এটা (৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার) হয়েছে অভ্যুত্থান। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি। আমরা মাঠ ছাড়ি নাই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এটা বিএনপির কোনো দিবস (৭ নভেম্বর) না। এই দিবসটি দেশের জনগণের দিবস। জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে এ দিবসটি পালন করত। আজকের এই দিবসকে স্বীকৃত দিয়ে বর্তমান সরকার কিংবা যে সরকার আসবে তারা যথাযথভাবে পালন করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/এমএ/