বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জবাবদিহি ছাড়া কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ সাধন করতে পারবে না। সেই জন্য তারা চায় গণতান্ত্রিক সরকার।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মোড়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এক বিশাল র্যালি পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ভোটের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে, দায়বদ্ধতা থাকবে। জবাবদিহিহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারে না। গণমুখী সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রাণের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। তাদের জেলে যেতে হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছেন। গুমের শিকার হয়েছেন। আপনারা কেউ জেলে যাননি। আমাকেও জেলে যেতে হয়েছে বারবার। সুতরাং সংস্কারের নামে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করা যাবে না।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের মানুষ শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ৭ নভেম্বর ছিল স্বাধীনতার মাস। সিপাহি-জনতার বিপ্লব আন্দোলনের মাধ্যমে শহিদ জিয়াকে মুক্ত করার পর এক নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি হলো। সেই দেশটির নাম হলো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বাংলাদেশ, মুক্তবাজার অর্থনীতির বাংলাদেশ, আইনের শাসনের বাংলাদেশ, নিরাপত্তার বাংলাদেশ, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই ধারায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কিছু লোক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা দণ্ড দিয়ে জেলে রেখেছেন। বিএনপির ৬০ লাখের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুন, হত্যার মাধ্যমে নিরাপত্তাহীন ও পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিলেন। সে দিনও আবার খালেদা জিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এ কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। এরপর তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ জাতি আন্দোলনে নামে। ছাত্র-জনতা আবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে পরাস্ত করেছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সব দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে।
১৫ বছর আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন অনেক গল্প শুনছি, গল্পের কোনো শেষ নেই। ওরা নাকি এটা করেছে, ওটা করেছে। প্রত্যেক দিন নতুন নতুন গল্প শুনছি।’
অনির্বাচিত সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কষ্ট বুঝবে না। এটা বুঝতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে। জনগণ দুই বেলা খেতে পারছে না, বুঝতে হবে।
নতুন নতুন ‘বয়ান’ শুনছেন উল্লেখ করে প্রবীণ এ নেতা বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান একটা বয়ান দিয়ে স্বৈর সরকার চালিয়েছিলেন। সেই বয়ানের নাম ছিল বাকশাল। সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারবে না, সংবাদপত্র থাকতে পারবে না, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে তিনি কিছু দিন চালিয়েছিলেন। পরে এরশাদ এসে আরেকটি বয়ান দিয়েছেন। তাকে আমরা পরাজিত করেছি। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদও টিকতে পারেননি।
এবার আবার একটি বয়ান শুনছি। এ বয়ানে বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তার কথা নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে তাদের সরকার নির্বাচন করবে, সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে, সেই বয়ান নেই। বলা হচ্ছে সংস্কারের বয়ান। সংস্কারের কথাও সর্বপ্রথম বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আবারও সংস্কারের কথা বলেছি। আমরা সবাই মিলে একটি স্বচ্ছ সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। এই সংস্কারে সবকিছু আছে। আপনারা যা বলছেন সেসব আছে, তার বাইরেরও আছে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় আপনাদের চেয়ে আমরা বেশি আগ্রহী। যেসব সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। যেসব সংস্কারের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য হবে না, সেসব বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে কারও কোনো অধিকার নেই। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে এক দফা ছিল না। জুলাইয়ের ২৩ তারিখে ১ দফা ঘোষণা করেছিলেন তারেক রহমান। আমরা সবাই তখন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এরশাদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মাহবুবের রহমান শামীম, মীর হেলাল, গোলাম আকবর খন্দকার, মোহাম্মদ হালিম আবুল হাসেম বক্কর প্রমুখ।